Episode 10681 words0 views

অধ্যায় ১০: কিংবদন্তির জন্ম

রোহান এলডোরিয়ার নতুন জাদুকর হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করতে লাগল। সে আরিসের কাছ থেকে আরও গভীর জাদু শিখতে শুরু করল, তার জ্ঞান বাড়তে লাগল, এবং এলডোরিয়ার প্রতিটি কোণায় শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করল। তার জাদুর স্পর্শে এলডোরিয়ার মৃতপ্রায় ভূমি আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠল, শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলো আবার জলে ভরে উঠল, এবং অসুস্থ প্রাণীরা সুস্থ হয়ে উঠল। তার প্রতিটি মন্ত্র ছিল এলডোরিয়ার জন্য এক নতুন জীবন, কিন্তু তার সাথে মিশে ছিল এক চাপা সতর্কতা, যে অন্ধকার যেকোনো মুহূর্তে আবার আঘাত হানতে পারে, তার প্রভাব সম্পূর্ণভাবে দূর হয়নি। রোহান এলডোরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করল, মানুষকে সাহায্য করল এবং তাদের সমস্যা সমাধান করল। সে নতুন জাদুর বিদ্যালয় স্থাপন করল, যেখানে তরুণদের জাদু শেখানো হতো, যাতে তারা এলডোরিয়ার ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে পারে। সে এলডোরিয়ার বিভিন্ন জাতির মধ্যে শান্তি স্থাপন করল, যারা ছায়া প্রভুর আগমনের পর একে অপরের সাথে যুদ্ধ করছিল, তাদের মধ্যে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনল। কিন্তু সে জানত, এই শান্তি ভঙ্গুর, এবং যেকোনো মুহূর্তে তা ভেঙে যেতে পারে, কারণ অন্ধকারের বীজ এখনও রয়ে গেছে, তার প্রভাব প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে আছে। আরিয়ান, লিয়ানা এবং ইভলিন তার পাশে ছিল। আরিয়ান তার তলোয়ার দিয়ে এলডোরিয়াকে রক্ষা করত, লিয়ানা তার চতুরতা দিয়ে গোপন বিপদগুলো খুঁজে বের করত, আর ইভলিন তার জ্ঞান দিয়ে মানুষকে নিরাময় করত। তারা চারজন মিলে এলডোরিয়ার নতুন রক্ষক হয়ে উঠল, তাদের নাম এলডোরিয়ার ইতিহাসে অমর হয়ে রইল। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের মনেই ছিল নিজস্ব অন্ধকার, যা তাদের তাড়া করত, তাদের দুর্বলতা তাদের মনে করিয়ে দিত, আর তাদের মনে একটা চাপা ভয় ছিল। রোহান তার নিজের জগতের কথা ভুলে যায়নি। সে মাঝে মাঝে তার পুরোনো মানচিত্রটি দেখত, এবং তার পরিবারের কথা মনে করত। তার মনে এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতি হতো। কিন্তু সে জানত, তার আসল জায়গা এখন এলডোরিয়াতে। সে এই জগৎকে ভালোবাসত, এবং এই জগতের মানুষকে রক্ষা করার জন্য সে তার জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তার মনে একটা চাপা ভয়ও ছিল, যে যদি সে ব্যর্থ হয়, তাহলে এলডোরিয়ার কী হবে, আর কে তাদের রক্ষা করবে, যখন অন্ধকার আবার ফিরে আসবে, হয়তো আরও শক্তিশালী হয়ে। বহু বছর কেটে গেল। রোহান একজন শক্তিশালী এবং জ্ঞানী জাদুকর হয়ে উঠল। তার নাম এলডোরিয়ার প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়ল। মানুষ তাকে 'এলডোরিয়ার রক্ষক' বলে ডাকত, তার নাম ছিল তাদের মুখে মুখে। তার গল্প কিংবদন্তি হয়ে উঠল, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বলা হতে লাগল, শিশুরা তার গল্প শুনে বড় হতো। কিন্তু তার গল্পে একটা চাপা উদ্বেগও ছিল – যে অন্ধকার হয়তো আবার ফিরে আসতে পারে, এবং এই শান্তি হয়তো চিরস্থায়ী নয়, তার জন্য তাদের সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে, প্রতিটি মুহূর্তে। একদিন, রোহান তার পুরোনো পাথরের কাঠামোতে বসে ছিল, যেখানে সে প্রথম আরিসের সাথে দেখা করেছিল। সে তার পুরোনো মানচিত্রটি হাতে নিল। মানচিত্রটি এখন তার কাছে শুধু একটি কাগজের টুকরা ছিল না, এটি ছিল তার যাত্রার প্রতীক, তার পরিবর্তনের প্রতীক, তার নতুন জীবনের প্রতীক। কিন্তু তার নীল রত্নটি মাঝে মাঝে মৃদু কালো আভা দিত, যেন অন্ধকারের চিহ্ন তখনও রয়ে গেছে, যেন ছায়া প্রভু সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়নি, তার আত্মা এখনও এলডোরিয়ার বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। সে অনুভব করল, তার জীবন একটি অসাধারণ অ্যাডভেঞ্চার ছিল। সে একজন সাধারণ কিশোর থেকে এলডোরিয়ার রক্ষক হয়ে উঠেছে। সে তার স্বপ্নকে সত্যি করেছে, যা সে কখনো কল্পনাও করেনি। কিন্তু তার মনে একটা চাপা ভয়ও ছিল, যে এই দায়িত্বের শেষ কোথায়, আর কতদিন তাকে এই বোঝা বইতে হবে, তার আত্মাকে কতটা যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। রোহান আকাশের দিকে তাকাল। দুটি চাঁদ উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছিল, তাদের আলোয় এলডোরিয়া শান্ত দেখাচ্ছিল। সে অনুভব করল, এলডোরিয়া এখন নিরাপদ। সে তার কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু তার যাত্রা শেষ হয়নি। এলডোরিয়াতে সবসময় নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, এবং রোহান সবসময় তাদের মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। সে জানত, তার গল্প কেবল শুরু হয়েছে, এবং এলডোরিয়ার সাথে তার বন্ধন চিরন্তন। তার মনে ছিল এক নতুন দৃঢ়তা, কিন্তু তার সাথে মিশে ছিল এক চাপা উদ্বেগ, যে অন্ধকার হয়তো যেকোনো মুহূর্তে আবার ফিরে আসতে পারে, এবং তাদের আবার লড়াই করতে হবে, হয়তো আরও ভয়ানক শত্রুর সাথে, যা তাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবে। এলডোরিয়াতে শান্তি এবং সমৃদ্ধি বজায় রইল, আর রোহানের কিংবদন্তি চিরকাল বেঁচে রইল। তার সাহসিকতা, তার জ্ঞান, এবং তার আত্মত্যাগ এলডোরিয়ার মানুষের হৃদয়ে চিরকাল অমলিন থাকবে, এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। কিন্তু এলডোরিয়ার মানুষ জানত, তাদের রক্ষক সবসময় সতর্ক থাকবে, কারণ অন্ধকার হয়তো যেকোনো মুহূর্তে আবার ফিরে আসতে পারে, আর তাদের আবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, তাদের আত্মাকে রক্ষা করতে হবে।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion