Episode 11749 words0 views

রহস্যের ঘেরাটোপ

১৯৮০ সালের এক শান্ত সকাল। কলকাতা শহরের উত্তরে, পুরোনো বনেদি বাড়িগুলোর এলাকায়, সুরজিৎ ব্যানার্জীর বাড়ির পেছনের পুকুরে একটি মৃতদেহ পাওয়া গেল। সুরজিৎ বাবু, যিনি এলাকায় একজন শান্ত এবং সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন, এই ঘটনায় হতবাক হয়ে যান। তার দীর্ঘদিনের শান্ত জীবনটা যেন এক মুহূর্তে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। বহু পুরোনো বনেদি প্রথা আর আধুনিকতার মিশ্রণে গড়া সুরজিৎ বাবুর জীবন, এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় যেন একটা বিশাল প্রশ্নচিহ্নের সামনে এসে দাঁড়ালো। মৃতদেহটি ছিল একটি অল্প বয়সী মেয়ের, নাম তার রূপা। পরনে ছিল একটি নামী বেনারসি শাড়ী, আর হাতের আঙুলে একটা বহুমূল্য আংটি – একটা পুরনো দিনের চিহ্ন, যা পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা বলত। বেনারসি শাড়িটি তার শরীরে খুব যত্নে রাখা হয়েছিল, যেন তাকে কেউ সাজিয়ে দিয়েছে মৃত্যুর জন্য। আংটিটা ছিল একটা পারিবারিক সম্পদ, যা সাধারণত বাড়ির বড় বউয়ের হাতে দেখা যায়। রূপার মতো একটি অল্প বয়সী মেয়ের কাছে এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মনে হলো এটা আত্মহত্যা, কিন্তু ইন্সপেক্টর রয়, একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ অফিসার, ঘটনাস্থলে এসে খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারলেন এটা সাধারণ আত্মহত্যা নয়, বরং একটা ঠান্ডা মাথার খুন। তার অভিজ্ঞ চোখ মৃতদেহের কিছু অস্বাভাবিক চিহ্ন ধরে ফেলল, যা সাধারণ আত্মহত্যার ক্ষেত্রে দেখা যায় না। রূপার গলার কাছে একটা হালকা দাগ ছিল, যেন কেউ তাকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেছিল। তার পায়ের কাছে কিছু ঘাস ছিঁড়ে ছিল, যা ধস্তাধস্তির প্রমাণ দেয়। তার হাতের নখের নীচে কিছু চামড়া পাওয়া যায় যা ধস্তাধস্তির সময় অপরাধীর শরীর থেকে এসেছিল। সুরজিৎ বাবুর পরিবার, স্ত্রী কবিতা, আর দুই ছেলে – সৌম্য ও শুভ্র, সবাই পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিল। সুরজিৎ বাবু, যিনি একসময় কলেজের অধ্যাপক ছিলেন, এখন একটি ছাপাখানার মালিক। তার পুরোনো দিনের কিছু রাজনৈতিক পরিচয় ছিল, যেটা নিয়ে এলাকায় নানান গুঞ্জন শোনা যেত। শোনা যায়, ছাত্র থাকাকালীন তিনি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন, এবং সেই সময়ের কিছু ঘটনা তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি একসময় ছাত্র আন্দোলনে খুব সক্রিয় ছিলেন, এবং তার বক্তৃতা বহু তরুণকে অনুপ্রাণিত করত। কিন্তু একটা বিশেষ ঘটনার পর তিনি রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এবং অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। সেই ঘটনাটি ছিল একটি রাজনৈতিক সমাবেশে সংঘর্ষ, যেখানে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গুরুতরভাবে আহত হন, এবং সুরজিৎ বাবু প্রত্যক্ষদর্শী হয়েও কিছু করতে পারেননি। এই ঘটনার পর তিনি এতটাই ভেঙে পড়েন যে রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। কবিতা দেবী, সবসময় একটু চাপা স্বভাবের ছিলেন, কিন্তু তার শান্ত চোখের গভীরে একটা অন্যরকম ভয় দেখা যাচ্ছিল। তিনি বেশিরভাগ সময়টা বাড়ির ভেতরেই কাটাতেন, সংসারের কাজ আর ঠাকুরের পূজায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। তার মুখ দেখে মনে হত, যেন তিনি বহু বছর ধরে কোনো গভীর দুঃখ বয়ে বেড়াচ্ছেন। কবিতা দেবী আসলে তার স্বামীর অতীত এবং তার রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিয়ে সর্বদা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি চাইতেন তার স্বামী একটি শান্ত জীবন যাপন করুক, কিন্তু তার অতীতের ছায়া প্রায়শই তাদের বর্তমানকে তাড়া করে ফিরত। বড় ছেলে সৌম্য, কলেজে পড়ত, বেশীরভাগ সময় বন্ধুদের সাথে কাটাতো, আর ছোট ছেলে শুভ্র, একটু অন্তর্মুখী ছিল, নিজের ঘরে বই নিয়ে থাকত। সে বাইরের জগতের থেকে নিজেকে গুটিয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করত। তার ঘরে বিভিন্ন ধরনের বই ছিল – সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, এবং রহস্য উপন্যাস। শুভ্রর বিশেষত্ব ছিল সে খুব সহজেই যে কোনো জটিল রহস্যের সমাধান করতে পারত, কিন্তু তার এই প্রতিভা সে সবসময় নিজের মধ্যে চেপে রাখত।   তদন্ত যত এগোতে থাকলো, ততই নতুন নতুন রহস্যের জট খুলতে শুরু করলো। ইন্সপেক্টর রয় জানতে পারেন, মৃত রূপা আসলে সুরজিৎ বাবুর ছোটবেলার বন্ধুর মেয়ে, এবং সে প্রায়ই তাদের বাড়ি আসত। সুরজিৎ বাবুর বন্ধু, রাজীব, একসময় তাদের খুব কাছের ছিল, কিন্তু একটা ঘটনার পর তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সেই ঘটনাটি ছিল একটি রাজনৈতিক সংঘর্ষ, যেখানে রাজীব গুরুতর আহত হয়েছিলেন, এবং সুরজিৎ বাবু তাকে সাহায্য করতে পারেননি। এই নিয়ে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরায়। রাজীব আসলে ছিলেন একজন আদর্শবাদী মানুষ, যিনি সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর তিনি ধীরে ধীরে হতাশ হয়ে পড়েন, এবং তার মনে একটা গভীর ক্ষোভ জন্ম নেয়। রূপা প্রায়ই সুরজিৎ বাবুর কাছে আসত তার বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে, হয়তো সে তার বাবার জীবনের সেই অধ্যায় সম্পর্কে কিছু জানতে চাইত। সে তার বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিল। ইন্সপেক্টর রয় জানতে পারেন যে রাজীব তার মৃত্যুর আগে একটি ডায়েরি লিখতেন, যেখানে তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ, সমাজের প্রতি তার হতাশা এবং সুরজিৎ বাবুর প্রতি তার মিশ্র অনুভূতির কথা লিখেছিলেন। সেই ডায়েরিটি আজও উদ্ধার করা যায়নি, এবং এটি সম্ভবত এই মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হতে পারে। সুরজিৎ বাবুর ডায়েরীতে কিছু অস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেল, যা থেকে মনে হচ্ছিলো তিনি কোনো গোপন কথা জানতে পেরেছিলেন। ডায়েরীর কয়েকটি পাতা ছেঁড়া ছিল, আর কিছু অংশে এমন কথা লেখা ছিল যা সহজে বোঝা যায় না। ইন্সপেক্টর রয় সেই অস্পষ্ট কথাগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ প্যাটার্ন খুঁজতে শুরু করলেন। তিনি মনে করতেন, এই ডায়েরী হয়তো এই রহস্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। ডায়েরীর একটি পাতায় লেখা ছিল, “সেই রাতে সব শেষ হয়ে গিয়েছিল…বিশ্বাসঘাতকতা…প্রতিশোধ…”। এই কথাগুলো ইন্সপেক্টর রয়ের মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। তিনি ভাবেন, সুরজিৎ বাবু আসলে কার বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলছেন? এবং কিসের প্রতিশোধের কথা বলা হয়েছে? ডায়েরির অন্য একটি অংশে লেখা ছিল, “আলো নিভে গেলে, সত্যের পথও হারিয়ে যায়…”, যা ইন্সপেক্টর রয়ের মনে গভীর সন্দেহের সৃষ্টি করে। তিনি মনে করেন, এই কথাগুলোর মধ্যে একটি গভীর দার্শনিক ইঙ্গিত রয়েছে, যা হয়তো এই মামলার মূল রহস্যের সাথে জড়িত। বাড়ির পেছনের পুরোনো আম বাগান, যেখানে রূপা প্রায়ই একা যেত, সেখানে একটা পোড়া সিগারেটের টুকরো পাওয়া গেল, যেটা বাড়ির লোকেদের কেউ ব্যবহার করে না। সিগারেটের ব্র্যান্ডটা ছিল খুব সাধারণ, যা থেকে মনে হয় খুনী কোনো সাধারণ ঘরের মানুষ। প্রতিবেশীরা জানালো, ঘটনার দিন রাতে তারা সুরজিৎ বাবুর বাগান থেকে একটা চিৎকার শুনতে পেয়েছিল, কিন্তু তারা মনে করেছিল সেটা হয়তো কোনো বন্য জন্তুর ডাক। একজন প্রতিবেশী অবশ্য জানান যে তিনি একটি দ্রুতগতির গাড়ি দেখেছেন সুরজিৎ বাবুর বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে, কিন্তু তিনি গাড়ির নম্বর প্লেটটি দেখতে পাননি। ইন্সপেক্টর রয় জানতে পারেন যে সেই রাতে এলাকার বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল, এবং তার ফলে চারদিকে একটি রহস্যময় অন্ধকার নেমে এসেছিল। তিনি মনে করেন, এই ঘটনাটি খুনির জন্য একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল, কারণ অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে অপরাধী সহজেই তার কাজ সেরে ফেলতে পারত। রহস্য আরও ঘনীভূত হয় যখন ইন্সপেক্টর রয় জানতে পারেন, সুরজিৎ বাবুর বন্ধু রাজীব, মানে মৃত রূপার বাবা, বহু বছর আগে এক দুর্ঘটনায় মারা যান, কিন্তু সেই ঘটনাটিও আসলে একটি পরিকল্পিত হত্যা ছিল। আর সেই ঘটনার সাথে সুরজিৎ বাবুর অতীতের একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। রাজীব আসলে একটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন, এবং তিনি কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করতে চেয়েছিলেন, যা দলের কিছু প্রভাবশালী নেতার জন্য বিপজ্জনক ছিল। সেই তথ্যগুলো ছিল একটি জমি দুর্নীতি সংক্রান্ত, যেখানে দলের কয়েকজন বড় নেতা জড়িত ছিলেন। রাজীব এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন, এবং সেই কারণেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ইন্সপেক্টর রয় আরও জানতে পারেন যে সুরজিৎ বাবু এবং রাজীব দুজনেই এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে সুরজিৎ বাবু পিছিয়ে যান। এই ঘটনা রাজীবের মনে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করে, এবং তিনি মনে মনে সুরজিৎ বাবুর প্রতি প্রতিশোধের আগুন জ্বালতে থাকেন। তদন্তের গভীরে গিয়ে, ইন্সপেক্টর রয় জানতে পারেন সুরজিৎ বাবু এবং তার স্ত্রী কবিতার মধ্যে একটা জটিল সম্পর্ক ছিল। কবিতা দেবী, বাইরে থেকে শান্ত স্বভাবের মনে হলেও, আসলে তিনি খুব বুদ্ধিমতী এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করার জন্য যেকোনো কিছু করতে পারতেন। তিনি তার স্বামীর পুরোনো দিনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ এবং তার সাথে রাজীবের সম্পর্কের বিষয়ে অনেক কিছু জানতেন। তিনি হয়তো ভয় পেয়েছিলেন যে রূপার আসা যাওয়ার কারণে সেই পুরোনো ঘটনাগুলো আবার সামনে চলে আসবে, এবং তার সাজানো সংসার ভেঙে যাবে। কবিতা দেবী আসলে তার স্বামীর অতীত নিয়ে খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তিনি মনে করতেন, সুরজিৎ বাবুর জীবনে অন্য কোনো নারীর স্থান নেই। কবিতা দেবী গোপনে রূপার উপর নজর রাখছিলেন এবং তার গতিবিধি সম্পর্কে খবর রাখছিলেন। তিনি জানতে পারেন যে রূপা তার বাবার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করতে চায় এবং সেই জন্য সুরজিৎ বাবুর সাহায্য নিতে প্রায়ই তাদের বাড়ি আসে। এই বিষয়টি কবিতা দেবীর মনে তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি করে। সুরজিৎ বাবুর দুই ছেলে, সৌম্য আর শুভ্র, তাদেরও নিজস্ব কিছু রহস্য ছিল। সৌম্য, কলেজের ছাত্র, আসলে একটি গোপন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিল, এবং সে তার বাবার অতীতের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল। সে ভয় পেত যদি তার বাবার নাম কোনো বিতর্কিত ঘটনায় জড়ায়, তাহলে তার নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। সৌম্যর রাজনৈতিক দলের আদর্শ তার বাবার আদর্শের থেকে অনেক আলাদা ছিল, এবং সে তার বাবার রাজনৈতিক অতীতকে একটি বোঝা মনে করত। সৌম্য আসলে তার বাবার রাজনৈতিক পরিচিতি ব্যবহার করে নিজের দলের জন্য সুবিধা আদায় করতে চেয়েছিল, কিন্তু একই সাথে সে ভয় পেত যদি তার বাবার অতীত প্রকাশ হয়ে যায়, তবে তার নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুভ্র, ছোট ছেলে, যে সবসময় বই নিয়ে থাকত, আসলে সে একজন অসাধারণ প্রতিভাবান, এবং সে তার বাবার ডায়েরীর অস্পষ্ট কথাগুলোর মানে বুঝতে পারত। সে হয়তো এই রহস্যের সমাধান করতে পারত, কিন্তু সে সবসময় নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকত, এবং তার মনে একটা গভীর ভয় কাজ করত। শুভ্র আসলে ছোটবেলা থেকেই খুব সংবেদনশীল ছিল, এবং বাইরের জগতের কঠোরতা তাকে ভীত করত। সে তার বাবার ডায়েরি এবং অন্যান্য বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে ভালোবাসত, এবং এর মাধ্যমে সে তার চারপাশের জগতকে বোঝার চেষ্টা করত। শেষপর্যন্ত, অনেক বাধা আর বিপত্তির পর, ইন্সপেক্টর রয় আসল অপরাধীকে খুঁজে বের করেন। খুনী ছিল আসলে কবিতা দেবী। জানা যায়, তিনি তার স্বামীর পুরোনো সম্পর্কের কথা জানতে পারেন এবং ভয় পান যে তার সংসার ভেঙে যাবে। তাই তিনি রূপাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তিনি রূপাকে আম বাগানে ডেকে পাঠান, এবং সেখানে একটি ধস্তাধস্তির পর, তিনি রূপাকে পুকুরে ফেলে দেন। কিন্তু কবিতা দেবী একা ছিলেন না। এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিল তার বড় ছেলে সৌম্য। সৌম্য আসলে তার মায়ের পরিকল্পনা জানত এবং সেও চেয়েছিল তার বাবার অতীত চাপা থাকুক। সে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিল, এবং সে মনে করত তার বাবার অতীত তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সৌম্য মায়ের প্রতি তার আনুগত্য এবং নিজের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার মধ্যে দোটানায় ভুগছিল। তবে গল্পের শেষ এখানেই নয়। একটি অপ্রত্যাশিত মোড় আসে যখন ইন্সপেক্টর রয় আবিষ্কার করেন যে এই ঘটনার সাথে আরও অনেক বড় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র জড়িত, যা সেই সময়কার সমাজ এবং ক্ষমতার অন্দরমহলের অনেক গোপন কথা ফাঁস করে দেয়। রাজীবের মৃত্যু আসলে ছিল একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ, এবং সুরজিৎ বাবুও আসলে পরিস্থিতির শিকার ছিলেন। তিনি হয়তো তার বন্ধুর মৃত্যুর বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতেন, যা তাকেও বিপদে ফেলতে পারত। ইন্সপেক্টর রয় জানতে পারেন, রাজীব যে জমি দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করতে চেয়েছিলেন, তাতে তৎকালীন সমাজের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত ছিল। এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের ক্ষমতা এবং প্রভাব ব্যবহার করে এই ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, এবং এর জন্য তারা যেকোনো মূল্যে রাজি ছিল। এই রহস্য শুধুমাত্র একটি খুনের ঘটনা ছিল না, বরং এটি ছিল সেই সময়ের সমাজের প্রতিচ্ছবি, যেখানে ক্ষমতা, প্রেম, আর বিশ্বাসঘাতকতা মিলেমিশে এক জটিল ধাঁধার সৃষ্টি করেছিল। ইন্সপেক্টর রয় এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে বুঝতে পারেন, কলকাতার এই পুরোনো বনেদি বাড়িগুলোর পেছনে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা গল্প, যা হয়তো কোনোদিনও সামনে আসবে না। এই ঘটনা তাকে সেই সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক মূল্যবোধ, এবং পারিবারিক জটিলতা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে বাধ্য করে। তিনি উপলব্ধি করেন যে সমাজের উপরিতলের শান্ত এবং সাধারণ চেহারার নীচে অনেক গভীর এবং জটিল রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে, যা শুধুমাত্র সময়ের সাথে সাথে প্রকাশ পায়।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion