আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছিল সেদিন। শ্রাবণের অঝোর ধারা যেন শহরের সমস্ত কোলাহল ধুয়ে দিতে চাইছিল। পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে সেই পুরনো কফি শপটায় বসে অর্ক জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল। কাঁচের ওপারে বৃষ্টির ছাঁট, আর ভেতরে উষ্ণ কফির সুবাস। হাতে ধরা বইটার পাতায় চোখ বোলালেও মনটা কেমন যেন অন্যমনস্ক ছিল। এই একাকী বৃষ্টির দুপুরগুলো অর্কের বড্ড প্রিয়। সে প্রায়শই এই কফি শপে আসে, নিজের সাথে সময় কাটাতে, বই পড়তে অথবা শুধু মানুষের আনাগোনা দেখতে।
হঠাৎই একটা মিষ্টি হাসির শব্দে ওর মনোযোগ ভাঙল। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল, একটি মেয়ে সবেমাত্র ভেতরে ঢুকেছে। তার পরনে হালকা নীল রঙের শাড়ি, চুলগুলো বৃষ্টির ছাঁটে সামান্য ভেজা, আর হাতে একটা ছাতা। শাড়ির আঁচল থেকে টুপটাপ জল ঝরছে, আর তার মুখে লেগে আছে এক ঝলক সতেজ হাসি। অর্ক মুগ্ধ হয়ে দেখছিল। মেয়েটি কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেল, কফির অর্ডার দিল, আর তারপর ওর চোখ পড়ল অর্কের দিকে। এক লহমার জন্য দৃষ্টি বিনিময় হলো। অর্ক সামান্য অপ্রস্তুত হয়ে চোখ নামিয়ে নিল, বুকের ভেতরটা কেমন যেন ধুকপুক করে উঠল।
মেয়েটি একটি খালি টেবিল খুঁজছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে কফি শপটা মোটামুটি ভর্তি। অর্কের টেবিলটাই একমাত্র ফাঁকা ছিল, যদিও উল্টো দিকের চেয়ারটা ওর বই আর ব্যাগ দিয়ে ঢাকা ছিল। মেয়েটি ইতস্তত করে অর্কের দিকে তাকাল। তার চোখে এক ধরনের দ্বিধা, কিন্তু মুখে সেই মিষ্টি হাসিটা তখনও লেগে আছে।
“একটু বসতে পারি কি?” তার কণ্ঠস্বরও তার হাসির মতোই মিষ্টি। যেন এক ঝলক তাজা বাতাসের মতো।
অর্ক তড়িঘড়ি বই আর ব্যাগ সরিয়ে বলল, “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। বসুন।” অর্কের মনে হলো, এই মুহূর্তটার জন্যই যেন সে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল।
মেয়েটি বসল। “ধন্যবাদ। বাইরে যা বৃষ্টি, আর কোথাও জায়গা নেই।” তার চোখে কৃতজ্ঞতা।
“হ্যাঁ, হঠাৎই নামল,” অর্ক বলল। “আমি অর্ক। আপনি?”
“আমি রাইমা,” মেয়েটি হাসল। ওর হাসিটা অর্কের মন ছুঁয়ে গেল। মনে হলো, এই হাসিটাই যেন এই বৃষ্টির দুপুরের সব বিষণ্ণতা মুছে দিতে পারে।
তাদের কফি এল। রাইমা তার কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল, “আপনি কি বই পড়ছিলেন?” তার চোখ অর্কের হাতে ধরা বইটার দিকে।
“হ্যাঁ, বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’,” অর্ক বলল। “আপনার প্রিয় লেখক কে?”
“আমারও বিভূতিভূষণ খুব প্রিয়। তবে ইদানীং সমরেশ মজুমদার পড়ছি। বিশেষ করে তার ‘কালবেলা’ সিরিজটা আমার খুব ভালো লাগে,” রাইমা বলল। তার চোখে বই পড়ার আনন্দ স্পষ্ট।
এভাবেই শুরু হলো তাদের কথোপকথন। বই, বৃষ্টি, শহর, ছোটবেলার স্মৃতি—কত কথা যে তাদের মধ্যে হলো! অর্ক জানতে পারল রাইমা আর্ট কলেজের ছাত্রী, ফাইন আর্টস নিয়ে পড়ছে। তার স্বপ্ন একজন সফল চিত্রশিল্পী হওয়া। আর অর্ক একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করে, ক্রিয়েটিভ টিমের সদস্য। তাদের জগৎ সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও, তাদের চিন্তাভাবনা, ভালো লাগা, মন্দ লাগা যেন একে অপরের পরিপূরক। রাইমার চোখে এক ধরনের স্বপ্ন ছিল, যা ওর আঁকা ছবিগুলোর মতোই প্রাণবন্ত। আর অর্কের কথায় ছিল এক গভীরতা, যা তার বিজ্ঞাপনের আইডিয়াগুলোর মতোই সুচিন্তিত।
তারা আবিষ্কার করল, দুজনেরই পুরনো দিনের বাংলা গান খুব প্রিয়। মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর—এই নামগুলো তাদের কথোপকথনে বারবার ফিরে আসছিল। রাইমা বলল, “বৃষ্টির দিনে মান্না দে’র গান শুনতে শুনতে কফি খেতে আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয় যেন সময়টা থেমে গেছে।”
“আমারও,” অর্ক বলল। “আর এই সময়টায় যদি এমন একজন সঙ্গ পাওয়া যায়, যার সাথে মন খুলে কথা বলা যায়, তাহলে তো কথাই নেই।” অর্কের কথায় এক ধরনের ইঙ্গিত ছিল, যা রাইমার চোখ এড়ালো না। রাইমা হাসল, সেই হাসিটা অর্কের হৃদয়ে এক নতুন সুর বাজিয়ে দিল।
বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই। কিন্তু তাদের কথার স্রোতও যেন থামছে না। কফি শেষ হয়ে গেলেও তারা আরও কিছুক্ষণ বসে রইল। রাইমা তার আঁকা কিছু স্কেচের কথা বলল, অর্ক তার নতুন বিজ্ঞাপনের আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করল। তাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত স্বাচ্ছন্দ্য তৈরি হয়েছিল, মনে হচ্ছিল যেন তারা বহুদিনের পরিচিত।
অবশেষে বৃষ্টি যখন সামান্য ধরল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। কফি শপ থেকে বের হওয়ার সময় রাইমা বলল, “আজকের দুপুরটা অনেকদিন মনে থাকবে। এমন অপ্রত্যাশিতভাবে একজন এত ভালো বন্ধুর দেখা পাব ভাবিনি।”
“আমারও,” অর্ক বলল। “আশা করি আবার দেখা হবে।” অর্ক মনে মনে চাইছিল, এই দেখাটা যেন শুধু বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে।
“নিশ্চয়ই,” রাইমা বলল। “আরেকটা বৃষ্টিভেজা কফির জন্য।” তার চোখে এক ধরনের দুষ্টুমি ছিল, যা অর্কের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলল।
রাইমা চলে গেল। অর্ক কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল কফি শপের বাইরে। বৃষ্টির পর ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ আর কফির হালকা সুবাস যেন মিশে একাকার হয়ে গেছে। অর্ক বুঝতে পারছিল, আজকের এই বৃষ্টিভেজা দুপুরটা শুধু একটি কফি খাওয়ার দিন ছিল না, ছিল এক নতুন সম্পর্কের সূচনা। রাইমার হাসি আর তার কথাগুলো যেন অর্কের মনে এক নতুন আশার আলো জ্বেলে দিয়ে গেছে। সে জানত না তাদের গল্প কোন দিকে মোড় নেবে, কিন্তু সে নিশ্চিত ছিল, এই গল্পের শুরুটা ছিল বৃষ্টি, কফি আর এক মিষ্টি হাসির যুগলবন্দী, যা তার জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। সে মনে মনে ঠিক করল, পরেরবার কফি শপে আসার আগে সে বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’ এর সাথে মান্না দে’র কিছু গানও নিয়ে আসবে।
সেই দিনটার পর থেকে অর্ক আর রাইমার মধ্যে একটা অদৃশ্য সুতো যেন তৈরি হয়ে গেল। ফোন নম্বর আদান-প্রদানের পর প্রথম কয়েকদিন শুধু টেক্সটেই কথা হতো। ‘কেমন আছেন?’, ‘বৃষ্টিটা কেমন লাগছে?’—এই সব সাধারণ প্রশ্ন দিয়ে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে তাদের কথোপকথন আরও ব্যক্তিগত হতে শুরু করল। অর্ক রাইমার আঁকা ছবি দেখতে চাইল, আর রাইমা অর্কের বিজ্ঞাপনের আইডিয়াগুলো সম্পর্কে জানতে চাইল।
এক সপ্তাহ পর, অর্কই প্রথম প্রস্তাব দিল আবার দেখা করার। “আরেকটা কফির জন্য?” অর্ক মেসেজ করল।
রাইমা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল, “বৃষ্টি না থাকলেও চলবে!” সাথে একটা হাসির ইমোজি।
পরের শনিবার বিকেলে তারা আবার সেই কফি শপেই দেখা করল। এবার আর বৃষ্টির অজুহাত ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের সাথে কথা বলার আগ্রহ। প্রথম দিনের জড়তা অনেকটাই কেটে গেছে। রাইমা সেদিন পরে এসেছিল একটি উজ্জ্বল হলুদ রঙের কুর্তি, যা তার প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্বের সাথে দারুণ মানিয়েছিল। অর্ক মুগ্ধ চোখে দেখছিল।
তারা কফির সাথে কিছু স্ন্যাকস অর্ডার করল। এবার তাদের কথা আরও গভীর হলো। রাইমা তার আর্ট কলেজের জীবন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, আর তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলল। সে জানাল, তার বাবা-মা চান সে আর্ট নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে একজন শিক্ষিকা হোক, কিন্তু রাইমার স্বপ্ন একজন স্বাধীন চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। এই স্বপ্ন পূরণের পথে যে প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে, সে সম্পর্কেও রাইমা সচেতন। তার চোখে এক ধরনের দৃঢ়তা ছিল, যা অর্ককে মুগ্ধ করল।
অর্কও তার কাজের জগতের কথা বলল। বিজ্ঞাপনের জগতে সৃজনশীলতার পাশাপাশি যে বাণিজ্যিক চাপ থাকে, সে কথা রাইমা মন দিয়ে শুনল। অর্ক বলল, “অনেক সময় এমন আইডিয়া আসে যা হয়তো খুব ভালো, কিন্তু ক্লায়েন্টের বাজেট বা পছন্দ অনুযায়ী সেটাকে বদলাতে হয়। তখন খুব খারাপ লাগে।”
রাইমা সহানুভূতিশীল চোখে তাকাল, “আমি বুঝতে পারছি। শিল্পকলার জগতেও একইরকম। অনেক সময় গ্যালারির চাহিদা অনুযায়ী ছবি আঁকতে হয়, নিজের মনের মতো করে আঁকা যায় না।”
তাদের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া তৈরি হলো। দুজনেই সৃজনশীল জগতের মানুষ, তাই একে অপরের সংগ্রামগুলো তারা সহজেই বুঝতে পারছিল। সেদিন কফি শপ থেকে বেরিয়ে তারা হাতে হাত ধরে পার্ক স্ট্রিটের রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করল। সন্ধ্যা নেমে আসছিল, রাস্তার আলো জ্বলে উঠেছে। মানুষের ভিড়, গাড়ির হর্ন, সব ছাপিয়ে তাদের কথোপকথনই যেন মুখ্য হয়ে উঠেছিল।
রাইমা হঠাৎ অর্কের দিকে তাকিয়ে বলল, “জানেন, আমি কখনও ভাবিনি যে একজন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষের সাথে এত সহজে মিশে যেতে পারব।”
অর্ক হাসল, “আমিও না। মনে হচ্ছে যেন কতদিনের চেনা।”
সেই দিনটা ছিল তাদের সম্পর্কের প্রথম ছোঁয়া। শুধু কথার আদান-প্রদান নয়, মনের আদান-প্রদানও শুরু হয়েছিল সেদিন।
পরের কয়েক মাস অর্ক আর রাইমার জীবন যেন একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেল। তারা শুধু কফি শপেই নয়, শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেত। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ন্যাশনাল গ্যালারি, বোটানিক্যাল গার্ডেন—কোথাও বাদ যেত না। রাইমা অর্ককে তার আর্ট কলেজের প্রদর্শনীতে নিয়ে যেত, যেখানে সে তার আঁকা ছবিগুলো গর্বের সাথে দেখাত। অর্ক মুগ্ধ হয়ে রাইমার কাজ দেখত, তার রঙ আর রেখার জাদুতে সে সত্যিই বিস্মিত হতো। রাইমার ক্যানভাসে ফুটে উঠত জীবন, প্রকৃতি, আর মানুষের মনের গভীরতা।
একদিন রাইমা অর্ককে তার স্টুডিওতে নিয়ে গেল। ছোট একটি ঘর, চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রঙ, তুলি, ক্যানভাস আর অসংখ্য স্কেচবুক। ঘরের এক কোণে একটি ইজেল রাখা, তার উপর একটি অর্ধসমাপ্ত ছবি। অর্ক দেখল, ছবিটিতে একটি বৃষ্টির দিনের কফি শপের দৃশ্য আঁকা হচ্ছে, যেখানে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে মুখোমুখি বসে আছে। অর্ক বুঝল, রাইমা তাদের প্রথম সাক্ষাতের মুহূর্তটিই ক্যানভাসে ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
“এটা… এটা কি আমাদের প্রথম দিনের ছবি?” অর্ক জিজ্ঞেস করল, তার কণ্ঠে এক ধরনের বিস্ময়।
রাইমা হাসল, “হ্যাঁ। সেই দিনটা আমার মনে এমনভাবে গেঁথে গেছে যে আমি চাইছিলাম সেটাকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে।”
অর্ক রাইমার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। “এটা অসাধারণ হচ্ছে, রাইমা। তোমার হাতে যেন জাদু আছে।”
রাইমা অর্কের দিকে তাকাল, তার চোখে এক ধরনের উজ্জ্বলতা। “তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই যেন আমার আঁকার স্পৃহা আরও বেড়ে গেছে। তুমি যেন আমার অনুপ্রেরণা।”
অর্কের বুকটা ভরে উঠল এক অজানা ভালোবাসায়। সে রাইমার হাতটা আলতো করে ধরল। তাদের সম্পর্কের মধ্যে একটা নতুন মাত্রা যোগ হলো। শুধু বন্ধুত্ব নয়, তার চেয়েও গভীর কিছু।
অন্যদিকে, অর্কও রাইমাকে তার অফিসের কিছু প্রজেক্টের কথা বলত। রাইমা মনোযোগ দিয়ে শুনত এবং তার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে মতামত দিত। রাইমার সৃজনশীল ভাবনা অর্কের কাজেও নতুন মাত্রা যোগ করত। একবার অর্ক একটি নতুন বিজ্ঞাপনের আইডিয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল। রাইমা তার সাথে বসে আলোচনা করল এবং কিছু নতুন দৃষ্টিকোণ তুলে ধরল, যা অর্কের সমস্যার সমাধান করে দিল।
তারা একে অপরের পরিবার সম্পর্কেও জানতে শুরু করল। অর্ক তার বাবা-মায়ের কথা বলল, যারা মফস্বলে থাকেন। রাইমা তার বাবা-মায়ের কথা বলল, যারা কলকাতায় থাকেন এবং তার শিল্পকলার প্রতি ভালোবাসাকে সমর্থন করেন, যদিও তাদের স্বপ্ন রাইমা শিক্ষিকা হোক।
একদিন রাইমা অর্ককে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাল। অর্ক প্রথমবার রাইমার বাবা-মায়ের সাথে দেখা করল। রাইমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, আর মা একজন গৃহিণী। তারা অর্ককে খুব উষ্ণভাবে স্বাগত জানালেন। অর্ক দেখল, রাইমার বাড়ির প্রতিটি কোণে শিল্পকলার ছোঁয়া। দেওয়ালে রাইমার আঁকা ছবি, শেলফে বিভিন্ন শিল্পীর বই। অর্ক বুঝতে পারল, রাইমার শিল্পকলার প্রতি ভালোবাসা পারিবারিক ঐতিহ্য থেকেই এসেছে।
সময় যত গড়াচ্ছিল, অর্ক আর রাইমার সম্পর্ক ততই গভীর হচ্ছিল। তাদের প্রতিটি দেখা, প্রতিটি কথোপকথন যেন নতুন নতুন অনুভূতির জন্ম দিচ্ছিল। তারা একে অপরের ছোট ছোট অভ্যাসগুলো জানতে পারছিল, একে অপরের পছন্দ-অপছন্দ বুঝতে পারছিল। অর্ক জানতে পারল, রাইমা সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা না খেলে তার দিন শুরু হয় না, আর রাইমা জানতে পারল, অর্ক রাতে ঘুমানোর আগে একটি বইয়ের পাতা না উল্টালে তার ঘুম আসে না।
এক সন্ধ্যায় তারা গঙ্গার ঘাটে বসেছিল। পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবছিল, গঙ্গার জলে তার লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছিল। মৃদু বাতাস বইছিল, আর দূরে ভেসে আসছিল মন্দিরের ঘণ্টার শব্দ। অর্ক রাইমার কাঁধে হাত রাখল। রাইমা আলতো করে তার মাথাটা অর্কের কাঁধে রাখল।
“অর্ক,” রাইমা ফিসফিস করে বলল, “আমার মনে হয়, আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।”
অর্ক চমকে উঠল। এই কথাটি শোনার জন্য সে হয়তো এতদিন অপেক্ষা করছিল, কিন্তু যখন শুনল, তখন তার বুকটা কেমন যেন কেঁপে উঠল। সে রাইমার দিকে ফিরল, রাইমার চোখে চোখ রাখল। রাইমার চোখে এক ধরনের গভীর ভালোবাসা আর নির্ভরতা।
“আমিও, রাইমা,” অর্ক বলল, তার কণ্ঠস্বর আবেগে রুদ্ধ। “আমিও তোমার প্রেমে পড়েছি।”
সেই মুহূর্তটি ছিল তাদের সম্পর্কের এক নতুন মাইলফলক। তাদের বন্ধুত্ব ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়েছিল। তারা একে অপরের হাত ধরে গঙ্গার পাড় ধরে হাঁটতে শুরু করল। তাদের মনে কোনো দ্বিধা ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা আর নির্ভরতা।
কিন্তু ভালোবাসার পথ সবসময় মসৃণ হয় না। অর্কের কাজের চাপ বাড়তে শুরু করল। নতুন একটি বড় প্রজেক্টের দায়িত্ব তার কাঁধে এল, যার জন্য তাকে প্রায়ই গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হতো। রাইমাও তার ফাইনাল ইয়ারের প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, যার জন্য তাকে দিনরাত স্টুডিওতে কাটাতে হচ্ছিল। তাদের দেখা করার সময় কমে গেল, ফোনেও কথা বলার সুযোগ কম হতো।
একদিন অর্ক রাইমাকে ফোন করল, “রাইমা, আজ রাতে দেখা করতে পারো? খুব দরকার।”
রাইমা দুঃখিত স্বরে বলল, “অর্ক, আমি পারছি না। আমার প্রজেক্টের ডেডলাইন খুব কাছে, আর এখনও অনেক কাজ বাকি।”
অর্ক হতাশ হলো। “ঠিক আছে। বুঝলাম।”
রাইমা অর্কের কণ্ঠস্বরে হতাশা বুঝতে পারল। “তুমি রাগ করছো?”
“না, রাগ করছি না। শুধু একটু মন খারাপ হচ্ছে। তোমাকে মিস করছি.” অর্ক বলল।
“আমিও তোমাকে খুব মিস করছি, অর্ক। কিন্তু কী করব বলো? এই প্রজেক্টটা আমার ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।” রাইমা বলল।
তাদের মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করল। ছোট ছোট ভুল বোঝাবুঝি, সময়ের অভাব—এই সব কিছু তাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে শুরু করল। অর্ক ভাবত, রাইমা হয়তো তাকে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। রাইমা ভাবত, অর্ক হয়তো তার স্বপ্নকে বুঝতে পারছে না।
দূরত্ব বাড়তে বাড়তে একসময় ছোটখাটো ঝগড়াও শুরু হলো। একদিন অর্ক রাইমার স্টুডিওতে গেল। রাইমা তখন তার একটি নতুন ছবিতে মগ্ন ছিল। অর্ক দেখল, রাইমা এতটাই ডুবে আছে যে তার উপস্থিতি সে টেরই পায়নি।
“রাইমা,” অর্ক ডাকল।
রাইমা চমকে উঠল। “ওহ, অর্ক! কখন এলে? আমি তো টেরই পাইনি।”
“হ্যাঁ, তুমি এতটাই ব্যস্ত যে আমার মতো একজন মানুষ ঘরে ঢুকলে তোমার খেয়ালই থাকে না,” অর্ক কিছুটা বিরক্তির সুরে বলল।
রাইমা বুঝতে পারল অর্ক রেগে আছে। “কী বলছো এসব? আমি তো কাজ করছিলাম।”
“কাজ করছিলে, না আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো? আজকাল তো তোমার কাছে আমার জন্য সময় নেই,” অর্ক বলল। তার কণ্ঠে অভিমান স্পষ্ট।
রাইমা তুলিটা রেখে অর্কের দিকে ফিরল। “অর্ক, তুমি এমন কথা কেন বলছো? তুমি জানো এই প্রজেক্টটা আমার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে এড়িয়ে যাচ্ছি না, আমি শুধু আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা করছি।”
“আর আমার স্বপ্ন? আমার ভালোবাসা? সেগুলোর কোনো মূল্য নেই?” অর্ক বলল।
“অবশ্যই আছে! কিন্তু তুমি কেন বুঝতে পারছো না যে এই মুহূর্তে আমার একটু একাগ্রতা দরকার?” রাইমা বলল, তার কণ্ঠস্বরেও এবার বিরক্তি।
তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি বাড়তে লাগল। একসময় রাইমা বলল, “আমার মনে হয় আমাদের একটু বিরতি নেওয়া দরকার। এই মুহূর্তে আমি কোনো সম্পর্কের চাপ নিতে পারছি না।”
রাইমার কথা শুনে অর্ক স্তব্ধ হয়ে গেল। সে এমন কিছু আশা করেনি। তার বুকের ভেতরটা যেন ভেঙে গেল। সে আর কিছু না বলে স্টুডিও থেকে বেরিয়ে এল। রাইমা তাকে ডাকল না।
সেই দিনটা ছিল তাদের সম্পর্কের সবচেয়ে কঠিন দিন। অর্ক বাড়ি ফিরে এসে নিজেকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখল। রাইমাও তার স্টুডিওতে বসে কাঁদছিল। তাদের ভালোবাসা কি তবে এখানেই শেষ?
কয়েক সপ্তাহ কেটে গেল। অর্ক আর রাইমার মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না। অর্কের মন খারাপ থাকলেও সে নিজেকে কাজে ডুবিয়ে রাখল। তার নতুন বিজ্ঞাপনের প্রজেক্টে সে নিজেকে পুরোপুরি নিবেদন করল। তার সৃজনশীলতা যেন আরও ধারালো হয়ে উঠল এই বিরহের আগুনে।
অন্যদিকে, রাইমাও তার ফাইনাল প্রজেক্ট শেষ করল। তার আঁকা ছবিগুলো প্রদর্শনীতে দারুণ প্রশংসা পেল। বিশেষ করে সেই বৃষ্টির দিনের কফি শপের ছবিটি সবার নজর কাড়ল। অনেকেই জানতে চাইল, ছবির পেছনের গল্প কী। রাইমা শুধু হাসত, কোনো উত্তর দিত না। এই ছবিটি ছিল অর্কের সাথে তার ভালোবাসার নীরব সাক্ষী।
প্রদর্শনী শেষ হওয়ার পর রাইমা কেমন যেন শূন্যতা অনুভব করছিল। তার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ সে পেরিয়ে এসেছে, কিন্তু তার জীবনে অর্কের অনুপস্থিতি তাকে পীড়া দিচ্ছিল। সে বুঝতে পারল, অর্কের সাথে তার সম্পর্কটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার রাগ, অভিমান সব যেন ফিকে হয়ে আসছিল।
একদিন রাইমা অর্ককে ফোন করার সিদ্ধান্ত নিল। তার হাত কাঁপছিল। অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর অর্ক ফোন ধরল।
“হ্যালো?” অর্কের কণ্ঠস্বর শান্ত, কিন্তু তাতে কোনো উষ্ণতা ছিল না।
“অর্ক, আমি রাইমা,” রাইমা বলল, তার কণ্ঠস্বর কাঁপছিল।
কিছুক্ষণ নীরবতা। তারপর অর্ক বলল, “বলো।”
“আমি… আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই,” রাইমা বলল। “একবার।”
অর্ক কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, “কোথায়?”
“সেই কফি শপটায়। যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল,” রাইমা বলল।
অর্ক সম্মতি দিল। “ঠিক আছে। কাল বিকেলে।”
পরের দিন বিকেলে রাইমা সেই কফি শপে গেল। অর্ক আগে থেকেই সেখানে বসে ছিল, জানালার বাইরে তাকিয়ে। রাইমা তাকে দেখল, তার বুকের ভেতরটা ধুকপুক করে উঠল। অর্ক আগের মতোই শান্ত, কিন্তু তার চোখে এক ধরনের বিষণ্ণতা।
রাইমা গিয়ে বসল। “কেমন আছো, অর্ক?”
“ভালো,” অর্ক সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল।
“আমার প্রজেক্ট শেষ হয়েছে। প্রদর্শনীতে খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি,” রাইমা বলল।
“শুনে ভালো লাগল,” অর্ক বলল।
রাইমা বুঝতে পারল, অর্ক এখনও রেগে আছে। “আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছো। আমি সেদিন খুব খারাপ ব্যবহার করেছিলাম।”
অর্ক জানালার বাইরে তাকাল। “তুমি যা বলেছিলে, সেটা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল।”
“আমি জানি। কিন্তু আমি তখন খুব চাপে ছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, আমি সবকিছু একসাথে সামলাতে পারছি না। কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার জীবনটা কেমন যেন ফাঁকা লাগছে, অর্ক। আমি তোমাকে মিস করছি।” রাইমা বলল, তার চোখে জল এসে গেল।
অর্ক রাইমার দিকে ফিরল। রাইমার চোখে জল দেখে তার মনটা নরম হয়ে গেল। সে রাইমার হাতটা ধরল। “আমিও তোমাকে মিস করেছি, রাইমা। খুব মিস করেছি।”
সেই মুহূর্তে তাদের সব অভিমান, সব দূরত্ব যেন মুছে গেল। তারা একে অপরের হাত ধরে বসে রইল। কফি শপের বাইরে তখনও বৃষ্টি পড়ছিল না, কিন্তু তাদের মনে যেন এক নতুন বৃষ্টির আগমন হয়েছিল, যা তাদের সম্পর্ককে আবার সতেজ করে তুলল।
সেই দিনের পর থেকে অর্ক আর রাইমার সম্পর্ক আরও মজবুত হলো। তারা বুঝতে পারল, ভালোবাসায় ভুল বোঝাবুঝি আসতে পারে, কিন্তু আসল হলো সেই ভুল বোঝাবুঝি কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা। তারা একে অপরের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠল। অর্ক রাইমার শিল্পকলার প্রতি তার প্যাশনকে আরও বেশি করে সমর্থন করতে শুরু করল, আর রাইমা অর্কের কাজের চাপকে বুঝতে শিখল।
রাইমার ফাইনাল ইয়ার শেষ হওয়ার পর সে একটি আর্ট গ্যালারিতে কাজ করার সুযোগ পেল। এটি তার জন্য একটি বড় সুযোগ ছিল, কারণ এর মাধ্যমে সে আরও অনেক শিল্পীর কাজ দেখতে পারত এবং নিজের শিল্পকলাকে আরও উন্নত করতে পারত। অর্ক তার এই সাফল্যে খুব খুশি হলো।
একদিন অর্ক রাইমাকে নিয়ে গেল একটি বিশেষ জায়গায়। এটি ছিল শহরের বাইরে একটি নিরিবিলি রিসর্ট, যেখানে চারদিকে সবুজ আর শান্ত পরিবেশ। তারা একটি ছোট কটেজে উঠল। রাতে তারা কটেজের বারান্দায় বসেছিল, আকাশে চাঁদ আর তারার মেলা।
অর্ক রাইমার হাত ধরে বলল, “রাইমা, আমি জানি আমাদের পথটা সহজ ছিল না। কিন্তু আমি নিশ্চিত, তুমিই আমার জীবনের সেই মানুষ, যার জন্য আমি এতদিন অপেক্ষা করছিলাম।”
রাইমা অর্কের দিকে তাকাল, তার চোখে ভালোবাসার গভীরতা।
অর্ক তার পকেট থেকে একটি ছোট বাক্স বের করল। রাইমা অবাক হয়ে দেখল। অর্ক হাঁটু গেড়ে বসল। “রাইমা, তুমি কি আমার জীবনসঙ্গিনী হবে? আমার বাকি জীবনটা তোমার সাথে কাটাতে চাই।”
রাইমার চোখে জল এসে গেল। সে মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। “হ্যাঁ, অর্ক। হ্যাঁ!”
অর্ক রাইমাকে জড়িয়ে ধরল। সেই মুহূর্তটি তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত ছিল। চাঁদের আলোয় তাদের ভালোবাসা যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
কয়েক মাস পর, অর্ক আর রাইমার বিয়ে হলো। তাদের বিয়েতে দুই পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা উপস্থিত ছিল। রাইমা পরেছিল একটি লাল বেনারসি শাড়ি, আর অর্ক পরেছিল ধুতি-পাঞ্জাবি। তাদের মুখে ছিল এক অনাবিল হাসি।
বিয়ের পর তারা একটি নতুন ফ্ল্যাটে উঠল। ফ্ল্যাটের এক কোণে রাইমার জন্য একটি ছোট স্টুডিও তৈরি করা হলো, যেখানে সে তার মনের মতো করে ছবি আঁকতে পারত। অর্ক তার অফিসের কাজ সামলে রাইমাকে সাহায্য করত।
রাইমার শিল্পকর্ম ধীরে ধীরে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করল। তার ছবিগুলো বিভিন্ন প্রদর্শনীতে স্থান পেতে লাগল, এবং সে একজন সফল চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করল। অর্কও তার বিজ্ঞাপনী সংস্থায় পদোন্নতি পেল, এবং তার ক্রিয়েটিভ আইডিয়াগুলো আরও বেশি সফল হতে শুরু করল।
তাদের জীবন ছিল ভালোবাসায় পূর্ণ। তারা একে অপরের স্বপ্নকে সমর্থন করত, একে অপরের পাশে থাকত। তাদের সম্পর্ক ছিল একটি খোলা বইয়ের মতো, যেখানে প্রতিটি পাতা ছিল ভালোবাসা, বিশ্বাস আর বোঝাপড়ার গল্প।
অনেক বছর কেটে গেছে। অর্ক আর রাইমা এখন প্রৌঢ়। তাদের একটি ছেলে আছে, অর্জুন, যে এখন কলেজে পড়ে। অর্জুনও তার বাবা-মায়ের মতোই সৃজনশীল, সে ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনা করছে।
একদিন বিকেলে অর্ক আর রাইমা আবার সেই পুরনো কফি শপটায় গেল। কফি শপটা এখনও আগের মতোই আছে, শুধু কিছু নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে। তারা সেই একই টেবিলে বসল, যেখানে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। জানালার বাইরে তখনও বৃষ্টি পড়ছিল না, কিন্তু তাদের মনে যেন সেই দিনের স্মৃতিগুলো সতেজ হয়ে উঠল।
অর্ক রাইমার হাত ধরে বলল, “মনে আছে, রাইমা? সেই দিনটার কথা। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছিল, আর তুমি ভেজা শাড়ি পরে ভেতরে ঢুকেছিলে।”
রাইমা হাসল। “আর তুমি বইয়ের আড়ালে আমাকে দেখছিলে।”
তারা দুজনেই হাসল। তাদের চোখের কোণে হালকা বলিরেখা পড়েছে, চুল সাদা হতে শুরু করেছে, কিন্তু তাদের ভালোবাসার উজ্জ্বলতা এতটুকুও কমেনি।
“আমাদের গল্পটা শুরু হয়েছিল এই বৃষ্টিভেজা কফিতে,” রাইমা বলল।
“আর সেই গল্পটা আজও চলছে,” অর্ক বলল। “আর চলবে।”
তাদের কফি এল। তারা কফিতে চুমুক দিল। কফির উষ্ণতা তাদের মনে এক ধরনের শান্তি এনে দিল। তারা জানত, তাদের জীবনের পথটা হয়তো সবসময় মসৃণ ছিল না, অনেক চড়াই-উতরাই ছিল, কিন্তু তাদের ভালোবাসা ছিল তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
বাইরে তখন সন্ধ্যা নেমে আসছিল। শহরের আলো জ্বলে উঠেছে। কফি শপের ভেতরে মৃদু গান বাজছে। অর্ক আর রাইমা একে অপরের দিকে তাকাল, তাদের চোখে এক ধরনের গভীর তৃপ্তি। তাদের গল্পটা ছিল ভালোবাসার গল্প, স্বপ্নের গল্প, আর এক বৃষ্টিভেজা কফির গল্প, যা তাদের জীবনকে চিরদিনের জন্য বদলে দিয়েছিল।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion