Episode 14377 words1 views

অধ্যায় ১৪: নতুন স্মৃতি

এক মাস পর। 'দ্য সেন্টিনেল' পত্রিকার প্রথম পাতায় খবর: "নিরভানা কর্পোরেশনের পতন। প্রজেক্ট ফিনিক্সের পর্দাফাঁস। ডক্টর অরুণাভ বোস প্রধান সাক্ষী।" স্ক্যান্ডালটা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। নিরভানার সমস্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শহরের জল শোধনাগার এখন সরকারি নিয়ন্ত্রণে। অর্ক ওরফে ডক্টর অরুণাভ বোসকে তার অতীতের কাজের জন্য তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আদালতে সে সবটা স্বীকার করেছিল। সে কীভাবে 'অবলিভিয়ন' তৈরি করেছিল, কীভাবে সে রিয়ার বাবার ওপর ওটা প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছিল, সব। সে যেহেতু নিজেই প্রমাণটা সামনে এনেছিল এবং 'অবলিভিয়ন' তার ওপরও প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাই আদালত তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে কম শাস্তি দিয়েছিল। রিয়া 'দ্য সেন্টিনেল'-এর এডিটর হয়নি। মিস্টার সেনের বিশ্বাসঘাতকতার পর সে মিডিয়ার ওপর থেকেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। সে এখন একটা এনজিও চালায়, যারা কর্পোরেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ে। সেদিন সন্ধ্যায় অর্ক, যে সবে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, রিয়ার সাথে দেখা করতে এল। তাদের দেখা হলো লেক ভিউ রোডের সেই সাদা বাড়িটার সামনে। অনেকক্ষণ কেউ কোনও কথা বলল না। "আমি তোমাকে কোনওদিন ক্ষমা করতে পারব কি না জানি না, অর্ক," রিয়া অবশেষে বলল। "কিন্তু আমি বুঝি, তুমিও পরিস্থিতির শিকার ছিলে।" "আমি প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই, রিয়া। সারাজীবন ধরে।" রিয়া তার দিকে তাকাল। "আমার সাথে কাজ করবে? আমার এনজিওতে?" অর্ক অবাক হলো। "তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারবে?" "বিশ্বাস নয়," রিয়া বলল। "নজরদারি। আমি তোমাকে আমার চোখের সামনে রাখতে চাই, ডক্টর বোস।" রিয়ার ঠোঁটের কোণে একটা হালকা হাসির রেখা দেখা দিল। অর্কও হাসল। "তাই সই।" রিয়া তার হাতে একটা প্যাকেট দিল। ভেতরে একটা ড্রইংবুক আর এক বাক্স রঙপেনসিল। "এটা কীসের জন্য?" "নতুন স্মৃতি তৈরি করার জন্য," রিয়া বলল। "তোমার প্রথম আঁকা ছবিটা হয়তো একটা ড্রাগন ছিল। কিন্তু তোমার শেষ আঁকা ছবিটা এখনও বাকি।" অর্ক ড্রইংবুকটা খুলল। সে রিয়ার দিকে তাকাল। সে জানে, তার হারানো স্মৃতিগুলো একটা অভিশাপ। মিস্টার বসুর কথাটা সত্যি ছিল। কিন্তু সে আর একা নয়। সে একটা পেনসিল তুলে নিল। সে আঁকতে শুরু করল। সে একটা ফিনিক্স পাখি আঁকল। কিন্তু এটা নিরভানার সেই প্রতীক নয়। এটা একটা মুক্ত পাখি, যেটা আগুন থেকে নয়, আলো থেকে জন্ম নিচ্ছে। অর্ক জানে, তার মাথার ভেতরের শূন্যতা হয়তো কোনওদিন পুরোপুরি ভরবে না। সে রিয়ার বাবার মৃত্যুর জন্য আংশিকভাবে দায়ী। এই সত্যিটা তাকে বয়ে বেড়াতে হবে। কিন্তু সে রিয়ার দিকে তাকাল। রিয়াও তার দিকে তাকিয়ে। তাদের দুজনের চোখেই যন্ত্রণা আছে, কিন্তু ঘৃণা নেই। অর্ক ভাবল, হয়তো এটাই তার নতুন শুরু। প্রায়শ্চিত্তের শুরু। সে তার পোড়া ডানা নিয়েই আবার ওড়ার চেষ্টা করতে পারে। সমাপ্ত

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion