Episode 1477 words0 views

প্রথম অধ্যায়: নিস্তব্ধতার আর্তনাদ

চরিত্র পরিচিতি: অনির্বাণ: প্রধান চরিত্র। প্রায় ৩৫ বছর বয়সী। উজ্জ্বল চোখ, কিন্তু মুখে চিন্তার ছাপ। মানুষ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। অবসাদে ভোগে। তবে তার পর্যবেক্ষণ শক্তি এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা অসাধারণ। অর্ঘ্য মিত্র: একজন দক্ষ এবং জেদি পুলিশ ইন্সপেক্টর। প্রায় ৪০ বছর বয়সী। অনির্বাণকে প্রথম থেকেই বিশ্বাস করে এবং তার পাশে থাকে। নন্দিনী: অনির্বাণের প্রাক্তন বান্ধবী/বন্ধু। সাংবাদিক। সাহসী এবং কৌতূহলী। অনির্বাণকে তার শেল থেকে বের করে আনার চেষ্টা করে। ডাক্তার প্রদীপ সাহা: অনির্বাণের পুরনো পরিচিত। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। সুন্দরবনের চরিত্র: স্থানীয় গ্রামবাসী, যারা কিছু প্রাচীন রীতিনীতি এবং বিশ্বাসে আবদ্ধ। তাদের মধ্যে কিছু চরিত্র গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। ঘড়ির কাঁটা রাত দুটোর ঘর ছুঁয়েছে। শহরের বুকে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। হাওয়ায় যেন মৃত্যুর গন্ধ মিশে আছে। দমদমের এক ঘিঞ্জি গলির শেষ প্রান্তে, এক পুরনো জরাজীর্ণ বাড়ির দোতলায়, অনির্বাণ দেবরায় তার পড়ার টেবিলে বসে আছে। মাথার যন্ত্রণাটা ক্রমশ বাড়ছে। কফির খালি মগটা পাশে পড়ে আছে, তার ভেতরের তলানি কফির গন্ধটুকুও নিঃশেষ করে দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই তার এই অবস্থা। ঘুম তার চোখে আসে না। এ্যালার্ম বাজলেই তার মনে হয়, সে ঘুমিয়ে ছিল না, বরং নির্ঘুম রাতের প্রতিটি সেকেন্ড সে অনুভব করেছে। দেওয়াল থেকে উঠে আসা স্যাঁতসেঁতে গন্ধটা অনির্বাণের নাকে এসে লাগছে। তার ঘরটা বরাবরই এমনই। পুরনো বই, ধূলো, কফি আর এক অদ্ভুত নীরবতা – এই নিয়েই তার জগৎ। বাইরে থেকে দেখলে তাকে একজন সাধারণ মধ্যবয়স্ক মানুষ মনে হবে। কিন্তু তার চোখে চোখ রাখলে বোঝা যায়, ভেতরে এক গভীর সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। অপরাধ মনোবিজ্ঞানের গভীর খাদে সে নিজেই এক হারিয়ে যাওয়া আত্মা। পাশের বাড়ির ঘড়িটা ঢং ঢং করে তিনটা বাজালো। হঠাৎ অনির্বাণের ল্যাপটপের স্ক্রিনটা ঝলসে উঠলো। একটি ইমেল। প্রেরক: অর্ঘ্য মিত্র। বিষয়: Urgent. অনির্বাণ ইমেলটি খুললো। অর্ঘ্যর বার্তা সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তীব্র: “অনির্বাণ, আবারও। একই প্যাটার্ন। এবার পার্ক স্ট্রিট। কাল সকালে তোমাকে এসপি অফিসে চাই। খুব জরুরি। অর্ঘ্য।” অনির্বাণ জানে ‘আবারও’ মানে কী। গত এক মাস ধরে শহরে তিনটি নৃশংস খুন হয়ে গেছে। প্রতিটি খুনই রহস্যজনক। কোনো প্রমাণ নেই, কোনো সূত্র নেই। পুলিশ দিশেহারা। আর অর্ঘ্য, কলকাতা পুলিশের অন্যতম সেরা তদন্তকারী অফিসার, বারবার অনির্বাণের শরণাপন্ন হয়েছে। কারণ অনির্বাণ এই খুনের প্যাটার্নগুলো ধরতে পারছিল, যা অন্যদের চোখে ধরা পড়ছিল না। কয়েকদিন আগে গড়িয়াহাটের খুনটা ছিল প্রথম। তারপর লেক টাউনে। আর এখন পার্ক স্ট্রিট। অনির্বাণ ল্যাপটপ বন্ধ করে কপালে হাত রাখলো। তার স্মৃতিতে ভেসে উঠলো প্রথম খুনের দৃশ্যের কিছু ছবি, যা অর্ঘ্য তাকে পাঠিয়েছিল। প্রতিটি খুনের ঘটনাস্থলে একটি অদ্ভুত জিনিস পাওয়া গেছে – একটি নির্দিষ্ট গাছের শুকনো পাতা, যা সুন্দরবনের কোনো এক প্রজাতির। আর তার সঙ্গে একটি ছোট কাগজের টুকরো, যাতে লেখা একটি প্রাচীন বাংলা ধাঁধার অংশ। ধাঁধাগুলো অনির্বাণকে ভাবিয়ে তুলছিল। এই ধাঁধাগুলো সাধারণ নয়, এদের মধ্যে লুকিয়ে আছে গভীর অর্থ, যা অনির্বাণকে মনে করিয়ে দিচ্ছে তার ফেলে আসা অতীতকে। অনির্বাণ বিছানায় উঠলো। ঘুম তার চোখে নেই। পুরনো শেলফ থেকে একটা বই নামালো – ‘সুন্দরবনের লোককথা’। পৃষ্ঠা উল্টাতেই তার চোখে পড়লো এক পরিচিত ছবি। কিছু প্রাচীন রীতিনীতির বর্ণনা, কিছু অদ্ভুত লোকবিশ্বাসের কথা। তার মনে পড়লো, ছোটবেলায় সে শুনেছিল এই ধরনের কিছু গল্প। সে চোখ বন্ধ করলো। স্মৃতির অতল গভীরে যেন ডুব দিল।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion