Episode 15344 words0 views

পঞ্চদশ অধ্যায়: নিশীথের শান্তি

অরিজিৎকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা নিয়ে আসা হলো। ফরেনসিক পরীক্ষার পর নিশ্চিত হলো যে, সে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাকে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। তার ডায়েরি থেকে জানা গেল, তার ছোটবেলা থেকেই তার গুরুচরণ দ্বারা প্রভাবিত ছিল, এবং সেই রাতের ঘটনার পর সে আরও বেশি উন্মাদ হয়ে ওঠে। সে সত্যিই বিশ্বাস করতো যে, সে নিশীথের দূত। অনির্বাণ সেই প্রাচীন সিন্দুকটি এবং প্রশান্ত মন্ডলের ডায়েরিটা পুলিশের কাছে জমা দিল। পুরো ঘটনা স্পষ্ট হলো। গুরুচরণের ক্ষমতার লোভ, তার মন্ত্রের অপপ্রয়োগ, সেই রাতের দুর্ঘটনা, অনির্বাণের বাবার ট্র্যাজেডি এবং অরিজিতের দীর্ঘদিনের লালিত প্রতিশোধ। অনির্বাণের বাবার সেই পুরনো ছবিটা ছিল না। অনির্বাণ তার বাবার সুস্থতার খোঁজ খবর নিলো। ডাক্তাররা জানালেন, তার বাবা আগের থেকে অনেক ভালো আছেন। অনির্বাণ তার বাবাকে দেখতে গেল। অনির্বাণ তার বাবার দিকে তাকালো। তিনি এখন শান্ত। হয়তো সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতির ভার এখন আর তাকে ততটা পীড়া দেয় না। অনির্বাণ বাবার হাত ধরলো। “বাবা, তুমি কোনো পাপ করোনি।” অনির্বাণ ফিসফিস করে বললো। তার বাবা মৃদু হাসলেন। তার চোখে এক অদ্ভুত শান্তি। অনির্বাণ উপলব্ধি করলো, নিশীথের ছায়া কেবল কিছু খুনির গল্প নয়। এটা প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে এক জটিল সম্পর্কের গল্প। যেখানে বিশ্বাস আর অন্ধত্ব, বিজ্ঞান আর কুসংস্কার, প্রতিশোধ আর প্রায়শ্চিত্ত মিলেমিশে একাকার। অনির্বাণ এখন আগের চেয়ে অনেক হালকা অনুভব করছে। তার কাঁধ থেকে যেন এক বিশাল বোঝা নেমে গেছে। সে তার অতীতকে মেনে নিয়েছে। তার বাবার ট্র্যাজেডির পেছনের সত্য জানার পর সে আর অন্ধকারে নেই। অর্ঘ্য অনির্বাণের কাছে এলো। “সব শেষ হলো, অনির্বাণ।” অনির্বাণ নদীর দিকে তাকিয়ে হাসলো। “হ্যাঁ, অর্ঘ্য। সব শেষ হলো। কিন্তু প্রকৃতির রহস্য আর মানুষের মনের গভীরতা… তার কোনো শেষ নেই।” অনির্বাণ জানে, এই ঘটনা তার জীবনে এক নতুন মোড় এনে দিয়েছে। সে এখন আরও শক্তিশালী, আরও অভিজ্ঞ। অপরাধ মনোবিজ্ঞানের এই অন্ধকার জগতে সে হয়তো আরও অনেক রহস্যের সমাধান করবে। কিন্তু এবার সে একা নয়। তার অতীত তার সঙ্গে আছে, তার শেখা জ্ঞান তাকে পথ দেখাবে। সুন্দরবনের উপর দিয়ে সূর্য ধীরে ধীরে অস্ত যাচ্ছে। রক্তিম আলোয় জঙ্গল আরও রহস্যময় দেখাচ্ছে। নিশীথের ছায়া হয়তো সাময়িকভাবে সরে গেছে, কিন্তু প্রকৃতির বুকে লুকিয়ে থাকা রহস্য আর মানুষের মনের গভীরে থাকা অন্ধকার – তা চিরন্তন। অনির্বাণ এখন প্রস্তুত, সেই ছায়াগুলোর মুখোমুখি হতে, যখনই তারা আবার জেগে উঠবে। ~সমাপ্ত~

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion