অনির্বাণ আর অর্ঘ্য দ্রুত মন্দিরের বাইরে এলো। “অরিজিৎ আমাকে মারতে আসছে, অর্ঘ্য।” অনির্বাণ বললো।
“আমাদের ওকে থামাতে হবে।” অর্ঘ্য বললো। “কিন্তু ওর উদ্দেশ্য যদি তুমি হও, তাহলে ও কোথায় আসবে?”
অনির্বাণ মনে মনে তার বাবার ডায়েরির কথাগুলো ভাবলো। “গুরুচরণ তার ক্ষমতার শীর্ষে থাকার সময় একটা বিশেষ আচারের জন্য একটা জায়গা ব্যবহার করত। সেই জায়গাটা ছিল সুন্দরবনের গভীরে, একটা ছোট দ্বীপ, যেখানে একমাত্র অমাবস্যার রাতে যাওয়া যেত, যখন নদীর জল কমে যেত।”
“আজ অমাবস্যা!” অর্ঘ্য বললো।
“ওর লক্ষ্য সম্ভবত সেই দ্বীপ। ও সেখানেই শেষ আচারটা সম্পন্ন করবে।” অনির্বাণ বললো।
তারা দ্রুত নৌকা নিয়ে সেই দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সুন্দরবনের নদীপথ অন্ধকার। চারদিকে ম্যানগ্রোভের নিস্তব্ধতা। বাতাস যেন এক অদ্ভুত বার্তা বয়ে আনছে।
দ্বীপের কাছে পৌঁছাতে রাত গভীর হলো। নদীর জল সত্যিই নেমে গেছে। তারা নৌকা থেকে নেমে দ্বীপের দিকে এগোলো। দ্বীপটি ছোট। সেখানে একটি পুরনো, ভাঙা কাঠামো দেখা গেল। গুরুচরণ হয়তো সেখানেই তার আচারের জন্য প্রস্তুত হতো।
কাঠামোর ভেতরে প্রবেশ করতেই তারা অরিজিৎকে দেখতে পেলো। অরিজিৎ একা ছিল। তার চোখে এক অদ্ভুত উন্মাদনা। তার হাতে একটি ধারালো ছুরি। সে একটি ছোট বলির বেদি মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে মন্ত্র পাঠ করছিল। তার পাশে অনির্বাণের বাবা সহ পাঁচজনের ছবি রাখা।
“অরিজিৎ!” অনির্বাণ চিৎকার করলো।
অরিজিৎ চমকে উঠলো। তার চোখে এক উন্মাদ হাসি। “তুমি এসেছো! নিশীথ আমাকে বলেছিল তুমি আসবে। তুমিই শেষ পাপী। তোমার বাবার পাপের প্রায়শ্চিত্ত আজ হবে!”
“তোমার বাবা কোনো পাপ করেনি, অরিজিৎ! সে কেবল তোমার গুরুচরণের উন্মাদনাকে থামাতে চেয়েছিল!” অনির্বাণ বললো। “গুরুচরণ তোমাদের ভুল শিখিয়েছিল। নিশীথ মন্ত্রের উদ্দেশ্য ধ্বংস নয়, সৃষ্টি।”
“মিথ্যে কথা!” অরিজিৎ চিৎকার করলো। “ওরা সবাই নিশীথকে অসম্মান করেছিল! এই খুনগুলো নিশীথের নির্দেশ! আমি নিশীথের দূত!”
অরিজিৎ অনির্বাণের দিকে ছুটে এলো তার হাতে থাকা ছুরি নিয়ে। অর্ঘ্য দ্রুত তার বন্দুক বের করে গুলি করার চেষ্টা করলো, কিন্তু অরিজিৎ এতটাই দ্রুত ছিল যে তাকে ধরা কঠিন ছিল।
অনির্বাণ কৌশলী ছিল। সে অরিজিতের আক্রমণ থেকে বাঁচলো। “অরিজিৎ, তোমার গুরুচরণ তোমাদের মিথ্যা বলে শক্তি অর্জনের চেষ্টা করেছিল। সেই রাতে সে নিজেই মারা গিয়েছিল তার অপপ্রয়োগের কারণে। আর যারা মারা গেছে, তারা সবাই ছিল নিরপরাধ!”
“না! গুরুচরণ মারা যায়নি! সে নিশীথের সাথে মিশে গেছে! আমি তার কাজ শেষ করছি!” অরিজিৎ পাগলের মতো হাসলো।
তাদের মধ্যে এক ভয়াবহ লড়াই শুরু হলো। অরিজিৎ উন্মাদ এবং বেপরোয়া। অনির্বাণ তাকে কথা দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলো, তার মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করলো। অর্ঘ্য সতর্ক ছিল, সঠিক সুযোগের অপেক্ষায়।
লড়াইয়ের এক পর্যায়ে, অরিজিৎ একটি ধারালো পাথরের উপর পিছলে পড়লো। অনির্বাণ সুযোগ পেয়ে তাকে জাপটে ধরলো। অর্ঘ্য ততক্ষণে এগিয়ে এসে অরিজিৎকে নিরস্ত্র করলো। অরিজিৎ ধস্তাধস্তি করতে লাগলো, কিন্তু তাদের শক্তি তাকে থামিয়ে দিল।
অরিজিৎ মাটিতে পড়ে চিৎকার করতে লাগলো, “তোমরা নিশীথকে থামাতে পারবে না! নিশীথের অভিশাপ তোমাদের গ্রাস করবে!”
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion