রোহান, এক সাধারণ কিশোর, তার একঘেয়ে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তার প্রতিটি দিন ছিল যেন এক পুনরাবৃত্তিমূলক চিত্রনাট্য, যেখানে প্রতিটি দৃশ্য ছিল পূর্বনির্ধারিত এবং একঘেয়ে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা, স্কুলের জন্য তৈরি হওয়া, একরাশ বই আর খাতা নিয়ে স্কুলের পথে হাঁটা—প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল যান্ত্রিক। তারপর ক্লাস, টিফিনের বিরতিতে বন্ধুদের সাথে মামুলি আড্ডা, যেখানে কথার বিষয়বস্তু ছিল সবসময়ই একইরকম, আর অবশেষে বাড়ি ফিরে এসে হোমওয়ার্ক আর রাতের খাবার। এই ছিল তার জগৎ। শহরের কোলাহলপূর্ণ জীবন, ফ্ল্যাটের ছোট ঘর, আর কংক্রিটের জঙ্গল তার মনকে দমিয়ে রাখত, তার শ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসত। সে স্বপ্ন দেখত এক অন্য জগতের, যেখানে অ্যাডভেঞ্চার আর রহস্যে ভরা জীবন, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত ছিল অপ্রত্যাশিত। তার কল্পনা তাকে নিয়ে যেত দূর অজানা রাজ্যে, যেখানে ড্রাগন উড়ে বেড়ায়, জাদুকররা মন্ত্র পড়ে, আর বীরেরা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন মাটিতে দাঁড়িয়ে তার স্বপ্নগুলো যেন ফিকে হয়ে যেত, মনে হতো এগুলি কেবলই অলীক কল্পনা, যা কখনো সত্যি হবে না। তার ভেতরের অস্থিরতা তাকে প্রায়শই গভীর রাতে জাগিয়ে রাখত, যখন শহরের নিস্তব্ধতা তাকে আরও বেশি একা করে দিত, আর জানালার বাইরে অস্পষ্ট ছায়াগুলো যেন তার দিকে তাকিয়ে থাকত, তার মনে একটা চাপা ভয় জাগিয়ে তুলত।
তার একমাত্র আশ্রয় ছিল বই, বিশেষ করে ফ্যান্টাসি আর অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। বইয়ের পাতায় সে হারিয়ে যেত দূর অজানা রাজ্যে, যেখানে ড্রাগন উড়ে বেড়ায়, জাদুকররা মন্ত্র পড়ে, আর বীরেরা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে। প্রতিটি নতুন বই ছিল তার কাছে এক নতুন জগতের প্রবেশদ্বার, এক নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি। সে বইয়ের পাতায় খুঁজে পেত সেই উত্তেজনা, সেই রহস্য, যা তার বাস্তব জীবনে অনুপস্থিত ছিল। তার বইয়ের তাক ছিল তার ব্যক্তিগত অভয়ারণ্য, যেখানে সে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারত বাস্তবতার কঠিন ছোঁয়া থেকে, কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হতো যেন বইয়ের পাতা থেকেও কোনো অস্পষ্ট ফিসফিস শব্দ ভেসে আসছে, যা তাকে কোনো গোপন রহস্যের দিকে ডাকছে।
শহরের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে, এক পুরোনো গলির ভেতরে ছিল 'জ্ঞানের ভান্ডার' নামের একটি জীর্ণ বইয়ের দোকান। দোকানটি ছিল শহরের অন্যতম প্রাচীন এবং অদ্ভুত দোকান। তার বাইরের দিকটা ছিল পুরোনো ইট আর শ্যাওলায় ঢাকা, আর কাঠের দরজাটা ছিল বহু বছরের পুরোনো, যা খুললে একটা কর্কশ শব্দ হতো, যেন কোনো প্রাচীন কবরের দরজা খুলছে, আর তার শব্দে গলিটা যেন কেঁপে উঠত। ভেতরে প্রবেশ করলেই নাকে আসত পুরোনো কাগজ, ধুলো আর এক অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ, যা কেবল পুরোনো বইয়ের দোকানেই পাওয়া যায়, কিন্তু তার সাথে মিশে ছিল একটা চাপা, পচা গন্ধ, যা অস্বস্তি তৈরি করত, যেন কোনো কিছু পচে যাচ্ছে। তাকগুলো ছিল মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উঁচু, হাজার হাজার বইয়ে ঠাসা। প্রতিটি তাকের বইগুলো যেন একে অপরের সাথে মিশে এক রহস্যময় জালের সৃষ্টি করেছে, যেখানে আলোর রেখাগুলো কেবল ধুলোবালি ভেদ করে প্রবেশ করতে পারত, আর অন্ধকার কোণগুলো যেন জীবন্ত ছিল, তাদের মধ্যে কোনো অশরীরী উপস্থিতি লুকিয়ে ছিল। দোকানের মালিক, বৃদ্ধ হরিপদবাবু, ছিলেন একজন অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ। তার চুল ছিল সাদা, আর তার মুখ ছিল বলিরেখায় ভরা। তিনি সারাদিন নিজের মনেই বিড়বিড় করতেন, আর তার মোটা চশমার ফাঁক দিয়ে সবকিছু তীক্ষ্ণ চোখে দেখতেন। তার পোশাক ছিল সবসময়ই ধুলোমাখা, যা দেখে মনে হতো তিনি নিজেই এই বইয়ের স্তূপের একটি অংশ, এক জীবন্ত গ্রন্থাগার, যার চোখগুলো যেন সব গোপন রহস্য জানে, আর তার হাসিটা ছিল কেমন যেন অশুভ। রোহান প্রায়ই স্কুল ছুটির পর এই দোকানে আসত, নতুন কোনো পুরোনো বইয়ের খোঁজে। হরিপদবাবু তাকে বিশেষ স্নেহ করতেন, কারণ রোহানই ছিল তার হাতে গোনা কয়েকজন নিয়মিত ক্রেতার একজন, যে সত্যিই বই ভালোবাসত এবং তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত কৌতূহল, যা হরিপদবাবুও লক্ষ্য করতেন, আর তার মনে একটা চাপা ভয় জাগিয়ে তুলত।
একদিন, রোহান দোকানের সবচেয়ে অন্ধকার কোণায়, যেখানে পুরোনো মানচিত্র আর জীর্ণ পুঁথি স্তূপ করে রাখা ছিল, সেখানে একটি অদ্ভুত মানচিত্র দেখতে পেল। মানচিত্রটি ছিল চামড়ার তৈরি, বহু পুরোনো, তার বয়স যেন শতাব্দীর পর শতাব্দী। তার রঙ ফিকে হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তার পৃষ্ঠে আঁকা অদ্ভুত প্রতীক আর অজানা ভাষার লেখাগুলো রোহানের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। মানচিত্রের চামড়া ছিল নরম, কিন্তু তাতে প্রাচীনত্বের ছাপ স্পষ্ট, তার প্রতিটি ভাঁজে যেন লুকিয়ে ছিল এক অজানা ইতিহাস, যা তার মনকে টানছিল, তাকে এক অজানা রহস্যের দিকে ডাকছিল। সে যখন মানচিত্রটি হাতে নিল, তখন তার হাতে এক অদ্ভুত শীতলতা অনুভব করল, যেন তা কোনো বরফ খণ্ড, আর তার সাথে একটা মৃদু কম্পনও অনুভব করল, যা তার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিল, তার শরীর কাঁপছিল। মানচিত্রের এক কোণায় একটি ছোট, উজ্জ্বল নীল রত্ন খচিত ছিল, যা অন্ধকারেও মৃদু আলো দিচ্ছিল, যেন তার ভেতরে কোনো জীবন্ত শক্তি লুকিয়ে আছে, যা তাকে ডাকছে, কিন্তু সেই আলোতে একটা ভুতুড়ে আভা ছিল, যা তার মনে ভয় জাগিয়ে তুলল। রোহান কৌতূহলবশত মানচিত্রটি হাতে নিল। হরিপদবাবু তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন, তার চোখে এক রহস্যময় ঝলক, যেন তিনি সব জানতেন, আর তার হাসিটা ছিল কেমন যেন অশুভ, যা তার মনে একটা চাপা ভয় জাগিয়ে তুলল।
"কী বাবা, নতুন কিছু খুঁজছ নাকি?" হরিপদবাবু জিজ্ঞেস করলেন, তার কণ্ঠস্বরে এক অদ্ভুত রহস্য, যা রোহানের মনে এক অজানা ভয় জাগিয়ে তুলল, যেন তিনি কোনো গোপন বার্তা দিচ্ছেন, যা তার জীবন বদলে দেবে।
"এটা কীসের মানচিত্র, কাকু?" রোহান জিজ্ঞেস করল, মানচিত্রটি উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে। তার মন যেন এক অজানা টানে ভরে উঠছিল, তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল, তার শরীর কাঁপছিল, তার মনে হচ্ছিল যেন মানচিত্রটি তাকে গ্রাস করতে চাইছে।
"আহ্, ওটা? ওটা তো এক পুরোনো দিনের জিনিস। এককালে নাকি এক জাদুকর ওটা ছেড়ে গিয়েছিল। বহু বছর ধরে পড়ে আছে, কেউ ওটা নেয়নি," হরিপদবাবু বললেন, তার কণ্ঠস্বরে এক দীর্ঘশ্বাস, যেন তিনি কোনো পুরোনো দুঃখের কথা মনে করছেন, কিন্তু তার চোখে ছিল একটা চাপা সতর্কবার্তা, যা তার মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। "কিছু কিছু জিনিস শুধু চোখের দেখা নয়, মনেরও দেখা বাবা। তবে সাবধান, কিছু জিনিস স্পর্শ করলে তার পরিণতি ভালো হয় না। ওটা তোমার জীবন বদলে দিতে পারে, হয়তো চিরতরে, আর সেই পরিবর্তন হয়তো তোমার জন্য ভালো হবে না।" তার শেষ কথাগুলো কেমন যেন একটা সতর্কবার্তা ছিল, যা রোহানের মনে একটা হালকা অস্বস্তি তৈরি করল, যেন অদৃশ্য কোনো বিপদ তার দিকে এগিয়ে আসছে, তার চারপাশে একটা শীতল বাতাস বয়ে গেল, যা তার লোম খাড়া করে দিল।
রোহানের মন কেমন যেন এক অজানা টানে ভরে উঠল। সে মানচিত্রটি কিনতে চাইল। হরিপদবাবু প্রথমে ইতস্তত করলেও, রোহানের আগ্রহ দেখে শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন। "তবে সাবধানে রেখো বাবা," তিনি বললেন, "ওটা সাধারণ কোনো মানচিত্র নয়। এর সাথে অনেক রহস্য জড়িয়ে আছে, যা তোমার কল্পনার বাইরে। আর এর একটা নিজস্ব ইচ্ছা আছে, যা তোমাকে তার দিকে টানবে।" রোহান দোকান থেকে বেরিয়ে আসার সময় তার মনে হলো, যেন কেউ তাকে অনুসরণ করছে, তার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন কেউ লক্ষ্য করছে, তার ঘাড়ের লোম খাড়া হয়ে গেল। সে কয়েকবার পেছনে ফিরে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। শুধু গলির অন্ধকার কোণায় একটা ছায়া যেন দ্রুত মিলিয়ে গেল, যা দেখে মনে হলো যেন সেটা কোনো অশরীরী উপস্থিতি, যা তাকে দেখছে, আর তার মনে একটা চাপা ভয় ঢুকে গিয়েছিল, যা তার হৃদস্পন্দনকে আরও বাড়িয়ে দিল।
রোহান মানচিত্রটি নিয়ে বাড়ি ফিরল। তার মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনা আর এক অজানা ভয়। সে তার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিল, তার হাত কাঁপছিল, তার শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছিল। তারপর মানচিত্রটি বিছানায় বিছিয়ে দিল। মানচিত্রের প্রতিটি রেখা, প্রতিটি প্রতীক যেন তাকে ডাকছিল, এক অজানা অ্যাডভেঞ্চারের ইঙ্গিত দিচ্ছিল, কিন্তু তার সাথে মিশে ছিল এক চাপা ভয়, যা তার মনকে গ্রাস করছিল, তার মনে হচ্ছিল যেন মানচিত্রটি জীবন্ত হয়ে উঠছে, আর তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সে একটি ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়ে প্রতীকগুলো পরীক্ষা করতে লাগল। কিছু প্রতীক তার কাছে পরিচিত মনে হলো, যেমন কিছু জ্যোতির্বিজ্ঞানের চিহ্ন, আবার কিছু একেবারেই অচেনা। মানচিত্রের মাঝখানে একটি বড় গোল চিহ্ন ছিল, যার চারপাশে অদ্ভুত কিছু লেখা। রোহান তার বই থেকে কিছু প্রাচীন ভাষা নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করল, কিন্তু কোনো লাভ হলো না। প্রতিটি অক্ষর যেন তাকে উপহাস করছিল, তার চেষ্টা যেন ব্যর্থ হচ্ছিল। হঠাৎ তার মনে হলো, ঘরের তাপমাত্রা যেন কমে গেছে, একটা শীতল বাতাস যেন তার পাশ দিয়ে বয়ে গেল, যা তার লোম খাড়া করে দিল, আর তার মনে হলো যেন কেউ তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, তার শ্বাস-প্রশ্বাস শুনছে।
রাত গভীর হলো। রোহান মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে ছিল, তার চোখে ঘুম ছিল না, তার মন ছিল অস্থির, তার শরীর কাঁপছিল। বাইরে ঝোড়ো হাওয়া বইছিল, জানালার কাঁচগুলো খটখট করছিল, যেন কোনো অদৃশ্য হাত তাদের উপর আঘাত করছে, আর তার সাথে মিশে ছিল একটা চাপা গোঙানির শব্দ, যা তার মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। হঠাৎ, মানচিত্রের নীল রত্নটি আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল, তার আলো যেন ঘরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়ছিল, কিন্তু সেই আলোতে একটা অদ্ভুত, ভুতুড়ে আভা ছিল, যা তার মনে ভয় জাগিয়ে তুলল, তার মনে হচ্ছিল যেন রত্নটি তাকে গ্রাস করতে চাইছে, তার আত্মাকে টানছে। রত্ন থেকে একটি মৃদু কম্পন অনুভব করল রোহান, যেন মানচিত্রটি জীবন্ত হয়ে উঠছে, আর তার সাথে তার হৃদস্পন্দনও বেড়ে গেল, তার শরীর কাঁপছিল। সে চমকে উঠল, তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। মানচিত্রের গোল চিহ্নটি ধীরে ধীরে আলোকিত হতে শুরু করল, এবং তার চারপাশে থাকা লেখাগুলো জীবন্ত হয়ে উঠল, যেন তারা বাতাসে ভাসছে, তাদের প্রতিটি অক্ষর যেন তাকে ডাকছে, এক অজানা গন্তব্যের দিকে, কিন্তু সেই ডাক ছিল অশুভ, যা তার আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছিল। আলো বাড়তে বাড়তে একসময় ঘরের মধ্যে একটি ঘূর্ণায়মান আলোর প্রবেশপথ তৈরি হলো, যা থেকে এক অদ্ভুত, অপরিচিত গন্ধ ভেসে আসছিল, যা তার নাকে একটা তীব্র জ্বালা ধরিয়ে দিল, আর তার মনে হলো যেন তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রবেশপথের মধ্যে দিয়ে এক ঝলক অন্য জগতের ছবি দেখা গেল – সবুজ বন, উঁচু পর্বত, আর আকাশে উড়ে বেড়ানো অদ্ভুত প্রাণীর ছায়া। কিন্তু সেই ছবির মধ্যে একটা অস্পষ্ট অন্ধকারও যেন লুকিয়ে ছিল, যা দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো অশুভ শক্তি তার দিকে তাকিয়ে আছে, তার আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছে। বাতাসের এক অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধ তার নাকে এসে লাগল, কিন্তু তার সাথে মিশে ছিল একটা পচা পাতার গন্ধ, যা তার মনকে বিভ্রান্ত করছিল, তার মনে হচ্ছিল যেন সে উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে।
রোহান প্রথমে ভয় পেয়েছিল, তার শরীর হিম হয়ে গিয়েছিল, তার হাত-পা কাঁপছিল, তার মনে হচ্ছিল যেন সে কোনো দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছে, কিন্তু এই দুঃস্বপ্ন ছিল বাস্তব, যা তাকে গ্রাস করতে চাইছিল। কিন্তু তার ভেতরের অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মন তাকে টেনে নিয়ে গেল সেই আলোর দিকে। সে ধীরে ধীরে আলোর প্রবেশপথের দিকে পা বাড়াল, তার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল দ্বিধাগ্রস্ত কিন্তু দৃঢ়। তার মনে হচ্ছিল যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি তাকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তার আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছে। যখন সে প্রবেশপথের কাছে পৌঁছাল, আলো তাকে গ্রাস করল। এক মুহূর্তের জন্য সে অনুভব করল যেন সে শূন্যে ভাসছে, তার শরীর হালকা হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তার মনে একটা তীব্র চাপ অনুভব করল, যেন তার মাথা ফেটে যাচ্ছে, আর তার কানে একটা চাপা চিৎকার শোনা যাচ্ছিল, যা তার নিজেরই ছিল, কিন্তু তার মনে হলো যেন তা অন্য কোনো সত্তার। তারপর সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল, যেন সে এক গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল, তার শেষ স্মৃতি ছিল একটা অস্পষ্ট চিৎকার, যা তার নিজেরই ছিল, আর তার মনে হলো যেন সে আর কখনো জেগে উঠবে না, তার আত্মা চিরতরে হারিয়ে গেছে।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion