জাদুর বন থেকে শক্তি নিয়ে রোহান ও তার সঙ্গীরা ছায়া প্রভুর দুর্গের দিকে রওনা দিল। দুর্গটি ছিল এলডোরিয়ার সবচেয়ে অন্ধকার এবং বিপজ্জনক স্থানে, যেখানে ছায়া প্রভুর শক্তি সবচেয়ে বেশি ছিল। পথ ছিল বন্ধুর, আর তাদের অনেক বিপদ মোকাবিলা করতে হলো। এই পথ ছিল এলডোরিয়ার সবচেয়ে অভিশপ্ত পথ, যেখানে জীবনের কোনো চিহ্ন ছিল না, কেবল মৃত্যু আর ধ্বংসের চিহ্ন, আর তার প্রতিটি কোণায় ছিল এক অজানা হুমকি, যা তাদের আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছিল।
তারা প্রথমে একটি পোড়া ভূমির উপর দিয়ে হেঁটে গেল, যেখানে গাছপালা সব শুকিয়ে গিয়েছিল এবং মাটি ছিল কালো ও ফাটল ধরা, যেন তা বহু বছর ধরে আগুনে পুড়েছে। বাতাস ছিল বিষাক্ত, তার মধ্যে এক অদ্ভুত দুর্গন্ধ ভেসে আসছিল, যা তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল, যেন তারা কোনো পচা মাংসের গন্ধ পাচ্ছে। আকাশ ছিল ধূসর, আর সূর্যের আলো সেখানে পৌঁছাত না, কেবল একটা অস্পষ্ট, লালচে আভা দেখা যেত, যা দেখে মনে হচ্ছিল যেন রক্ত ঝরছে। তারা দেখল, কিছু অদ্ভুত, বিকৃত প্রাণী তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, যাদের চোখগুলো ছিল লাল এবং জ্বলন্ত। এই প্রাণীগুলো ছিল ছায়া প্রভুর দ্বারা সম্পূর্ণ প্রভাবিত, তাদের শরীর ছিল কঙ্কালসার, আর তাদের প্রতিটি নড়াচড়ায় একটা চাপা শব্দ হচ্ছিল, যেন তারা বাতাসে ফিসফিস করছে। তারা তাদের আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। তাদের মুখ থেকে বিকৃত শব্দ বের হচ্ছিল, যা তাদের মনে ভয় জাগিয়ে তুলছিল, তাদের সবচেয়ে খারাপ ভয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরছিল, তাদের উন্মাদ করে তুলছিল।
আরিয়ান তার তলোয়ার দিয়ে প্রাণীগুলোকে আক্রমণ করল। তার প্রতিটি আঘাত ছিল নির্ভুল এবং শক্তিশালী, তার তলোয়ারের ফলা বাতাসে ঝলমল করছিল, কিন্তু প্রাণীগুলো যেন সহজে মারা যাচ্ছিল না, তারা আবার উঠে দাঁড়াচ্ছিল, তাদের ক্ষতগুলো দ্রুত সেরে যাচ্ছিল। লিয়ানা তার ছুরি দিয়ে দ্রুত তাদের পাশ কাটিয়ে গেল, তার গতি ছিল বিদ্যুতের মতো, আর রোহান তার জাদু ব্যবহার করে আলোর গোলক এবং আগুনের বল তৈরি করে তাদের দিকে ছুঁড়ে দিল। ইভলিন তার ভেষজ জ্ঞান ব্যবহার করে কিছু ধোঁয়া তৈরি করলেন, যা প্রাণীগুলোকে দুর্বল করল এবং তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিল, কিন্তু ধোঁয়াগুলো যেন তাদের মনকেও প্রভাবিত করছিল, তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছিল। তারা একসাথে লড়াই করল, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সমন্বিত এবং কার্যকর। তারা প্রাণীগুলোকে পরাজিত করল, কিন্তু এই লড়াই তাদের অনেক শক্তি ক্ষয় করল, তাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, আর তাদের মনে একটা চাপা ভয় ঢুকে গিয়েছিল, যা তাদের তাড়া করছিল, তাদের আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছিল।
কিছুদূর যাওয়ার পর তারা একটি বড় নদীর কাছে পৌঁছাল। নদীটি ছিল কালো এবং তার জল ছিল বিষাক্ত, তার উপর কোনো জীবনের চিহ্ন ছিল না। নদীর উপর কোনো সেতু ছিল না, এবং তার জল ছিল এত গভীর যে তারা সাঁতরে পার হতে পারত না। নদীর জল থেকে একটা অদ্ভুত, পচা গন্ধ ভেসে আসছিল, যা তাদের বমি ধরিয়ে দিচ্ছিল। নদীর তলদেশে কিছু অস্পষ্ট ছায়া নড়ছিল, যা দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো বিকৃত প্রাণী লুকিয়ে আছে, তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, তাদের আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছে।
"আমরা কীভাবে এই নদী পার হব?" আরিয়ান জিজ্ঞেস করল, তার কণ্ঠে ছিল উদ্বেগ। "এই জল বিষাক্ত, আমরা এর মধ্যে দিয়ে যেতে পারব না। আর এর তলদেশে কী আছে, কে জানে। এটা একটা ফাঁদ হতে পারে, যা আমাদের গ্রাস করবে, আমাদের আত্মাকে টেনে নেবে।"
লিয়ানা নদীর চারপাশে অনুসন্ধান করতে শুরু করল। সে তার চতুরতা ব্যবহার করে একটি গোপন পথ খুঁজে পেল, যা নদীর নিচে দিয়ে যাচ্ছিল। পথটি ছিল একটি ছোট গুহার প্রবেশদ্বার, যা পাথরের আড়ালে লুকানো ছিল। পথটি ছিল অন্ধকার এবং সরু, তার বাতাস ছিল শীতল এবং স্যাঁতসেঁতে, আর তার মধ্যে একটা চাপা গোঙানির শব্দ ভেসে আসছিল, যা তাদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। তারা সাবধানে হাঁটছিল, কারণ তারা জানত যে এখানে যেকোনো সময় বিপদ আসতে পারে। তাদের মনে হচ্ছিল যেন গুহার দেয়ালগুলো তাদের দিকে এগিয়ে আসছে, তাদের গ্রাস করতে চাইছে। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা নদীর অন্য প্রান্তে পৌঁছাল, তাদের শরীর ছিল ঠান্ডা এবং ভেজা, আর তাদের মনে একটা চাপা ভয় ছিল, যে তারা হয়তো এখান থেকে আর জীবিত ফিরতে পারবে না।
নদীর ওপারে ছিল একটি বিশাল পর্বতমালা, যার চূড়াগুলো ছিল কালো এবং তীক্ষ্ণ, যেন তা আকাশের দিকে ছুরি উঁচিয়ে আছে। এই পর্বতমালার উপরেই ছিল ছায়া প্রভুর দুর্গ। দুর্গটি ছিল বিশাল এবং ভয়ঙ্কর, তার কালো পাথরগুলো যেন অন্ধকারকে শোষণ করছিল, আর তার চারপাশে ছিল এক অদ্ভুত কালো মেঘ, যা আকাশকে ঢেকে রেখেছিল, আর তার মধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল, তার শব্দ ছিল ভয়ানক। দুর্গের চূড়াগুলো ছিল ধারালো, যেন তা কোনো দানবের নখ। দুর্গের প্রতিটি কোণায় ছিল এক অদ্ভুত নীরবতা, যা তার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে তুলছিল। দুর্গের দেয়ালগুলো থেকে একটা চাপা গোঙানির শব্দ ভেসে আসছিল, যা তাদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল, তাদের আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছিল।
তারা পর্বতমালার দিকে হাঁটতে শুরু করল। পথ ছিল খাড়া এবং পিচ্ছিল, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল কঠিন। তাদের অনেক পাথর আর বরফের উপর দিয়ে হাঁটতে হলো, তাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল। তারা দেখল, পর্বতমালার উপরে কিছু অদ্ভুত, উড়ন্ত প্রাণী উড়ে বেড়াচ্ছে, যাদের চোখগুলো ছিল লাল এবং জ্বলন্ত। এই প্রাণীগুলো ছিল ছায়া প্রভুর উড়ন্ত অনুচর, তাদের ডানাগুলো ছিল চামড়ার তৈরি, আর তাদের মুখ থেকে বিকৃত শব্দ বের হচ্ছিল, যা তাদের মনে ভয় জাগিয়ে তুলছিল। তারা আকাশ থেকে তাদের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত ছিল, তাদের আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছিল।
"এই প্রাণীগুলো বিপজ্জনক," ইভলিন বললেন, তার কণ্ঠে ছিল সতর্কতা। "এরা আমাদের আক্রমণ করতে পারে। এদের গতি অনেক বেশি। আমাদের অদৃশ্য থাকতে হবে, না হলে আমরা সবাই মারা যাব, আর আমাদের আত্মা ছায়া প্রভুর হাতে চলে যাবে।"
রোহান তার জাদু ব্যবহার করে একটি অদৃশ্য ঢাল তৈরি করল, যা তাদের রক্ষা করল। উড়ন্ত প্রাণীগুলো তাদের দেখতে পেল না, এবং তারা তাদের পাশ দিয়ে উড়ে গেল, তাদের শব্দ বাতাসে মিশে গেল। কিন্তু রোহান অনুভব করল যেন প্রাণীগুলো তাদের উপস্থিতি অনুভব করতে পারছে, আর তারা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, তাদের প্রতিটি নড়াচড়া অনুসরণ করছে। তার মনে হলো যেন ছায়া প্রভুর চোখগুলো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, তার আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছে।
ধীরে ধীরে তারা দুর্গের কাছে পৌঁছাল। দুর্গটি ছিল বিশাল এবং ভয়ঙ্কর, তার কালো পাথরগুলো যেন অন্ধকারকে শোষণ করছিল, আর তার প্রবেশদ্বার ছিল বন্ধ। প্রবেশদ্বারের উপরে কিছু অদ্ভুত প্রতীক খোদাই করা ছিল, যা দেখে মনে হচ্ছিল এটি কোনো প্রাচীন অভিশাপ। প্রতীকগুলো ছিল কালো এবং তাদের থেকে এক অদ্ভুত শক্তি বিচ্ছুরিত হচ্ছিল, যা তাদের মনকে প্রভাবিত করছিল। তাদের মনে হচ্ছিল যেন তারা তাদের সবচেয়ে খারাপ স্বপ্নগুলো দেখছে, তাদের সবচেয়ে প্রিয়জনদের মুখগুলো বিকৃত হয়ে যাচ্ছিল, আর তাদের কানে একটা চাপা ফিসফিস শব্দ শোনা যাচ্ছিল, যা তাদের উন্মাদ করে তুলছিল।
"এই প্রতীকগুলো আমি চিনি," ইভলিন বললেন, তার চোখে ছিল উদ্বেগ। "এগুলো ছায়া প্রভুর প্রতীক। এই প্রতীকগুলো সক্রিয় থাকলে আমরা দুর্গের ভেতরে প্রবেশ করতে পারব না। এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। ছায়া প্রভু এই প্রতীকগুলো দিয়ে আমাদের মনকে প্রভাবিত করতে চাইছে, আমাদের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে চাইছে, আমাদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিতে চাইছে।"
রোহান তার জাদু ব্যবহার করে প্রতীকগুলো নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করল। সে তার মনের শক্তি দিয়ে প্রতীকগুলোতে আলো ছড়াল। ধীরে ধীরে প্রতীকগুলো ফিকে হতে শুরু করল, তাদের রঙ কালো থেকে ধূসর হয়ে গেল, কিন্তু তাদের মধ্যে একটা চাপা যন্ত্রণা ছিল, এবং দুর্গের প্রবেশদ্বার খুলে গেল, তার শব্দ ছিল মৃদু এবং গম্ভীর, যেন কোনো প্রাচীন দানব জেগে উঠছে, তার শ্বাস-প্রশ্বাস শোনা যাচ্ছিল। প্রবেশদ্বারের ভেতরে ছিল গভীর অন্ধকার, যা তাদের গ্রাস করতে চাইছিল। তাদের মনে হচ্ছিল যেন তারা কোনো নরকের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে আছে, যেখান থেকে আর কোনো ফেরা নেই, তাদের আত্মা চিরতরে হারিয়ে যাবে।
তারা দুর্গের ভেতরে প্রবেশ করল। দুর্গের ভেতরে ছিল অন্ধকার এবং শীতল, তার বাতাস ছিল ভারী এবং বিষাক্ত। তাদের চারপাশে ছিল প্রাচীন মূর্তি আর খোদাই করা চিত্র, যা দেখে মনে হচ্ছিল তারা কোনো ভয়ানক গল্প বলছে, তাদের চোখগুলো যেন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, তাদের মনে ভয় জাগিয়ে তুলছিল। দুর্গের প্রতিটি কোণায় ছিল এক অদ্ভুত নীরবতা, যা তার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে তুলছিল। দুর্গের দেয়ালগুলো থেকে একটা চাপা গোঙানির শব্দ ভেসে আসছিল, যা তাদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল, তাদের আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছিল। তারা জানত, তাদের চূড়ান্ত লড়াই খুব কাছে, এবং এই দুর্গ তাদের জন্য এক জীবন্ত দুঃস্বপ্ন হতে চলেছে।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion