অনুরাগের বাঁধন: এক সাহসী প্রেমের গল্প
পর্ব ১
গঙ্গার ঘাটে তখনো ভোরের আলো পুরোপুরি ফোটেনি, কেবল পূব আকাশে হালকা লালচে আভা আকাশের ক্যানভাসে ছবি আঁকছিল, যেন প্রকৃতি নিজেই এক শিল্পী তার তুলির আঁচড়ে নতুন দিনের আগমন বার্তা ঘোষণা করছে, এক নীরব সিম্ফনি বাজছিল মহাবিশ্বের প্রতিটি কোণায়। নদীর বুকে ভাসমান ছোট ছোট নৌকাগুলো কুয়াশার চাদরে ঢাকা, যেন ঘুমন্ত কোনো স্বপ্ন, মৃদু বাতাসের স্পর্শে তারা দুলছিল, এক অলস ছন্দে, তাদের নীরবতা যেন এক গভীর রহস্যের ইঙ্গিত দিচ্ছিল, যা কেবল এই বিশেষ মুহূর্তটির জন্যই সংরক্ষিত, যেন প্রকৃতিও তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হতে প্রস্তুত, এক অলৌকিক দৃশ্যপট তৈরি হচ্ছিল, এক অব্যক্ত সৌন্দর্যে ভরা, যা হৃদয়ে এক অপার্থিব শান্তি এনে দিচ্ছিল। বাতাস তখনও শান্ত, নদীর জল মসৃণ কাঁচের মতো স্থির, শুধু মাঝে মাঝে দু-একটি ছোট ঢেউ এসে ভেজা বালিতে আছড়ে পড়ছিল, তাদের ফিসফিসানি যেন ভোরের নীরবতা ভেঙে দিচ্ছিল, এক অদ্ভুত মায়াময় পরিবেশ তৈরি করছিল, যা কেবল এই বিশেষ মুহূর্তটির জন্যই সংরক্ষিত, যেন প্রকৃতিও তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হতে প্রস্তুত। ভোরের স্নিগ্ধ, ঠান্ডা বাতাস সোনালীর খোলা চুলে এসে বিলি কেটে যাচ্ছিল, তার সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ জাগিয়ে তুলছিল, যেন প্রকৃতি তাকে কোনো গোপন বার্তা দিচ্ছিল, আসন্ন কোনো ঘটনার পূর্বাভাস, যা তার হৃদস্পন্দনকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল, তাকে এক তীব্র প্রতীক্ষায় রেখেছিল, প্রতিটি সেকেন্ড যেন এক অনন্তকাল মনে হচ্ছিল, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস যেন রাহুলের আগমনের জন্য অপেক্ষা করছিল, তার প্রতিটি রক্তবিন্দু রাহুলের জন্য আকুল ছিল, তার প্রতিটি শিরা-উপশিরা যেন রাহুলের স্পর্শ চাইছিল, তার অস্তিত্ব যেন রাহুলের জন্য আকুল ছিল। সোনালী দাঁড়িয়েছিল ভেজা বালির উপর, চোখ দুটি নিবদ্ধ ছিল নদীর ওপারে, যেখানে ভোরের প্রথম রেখা উঁকি দিচ্ছে, যেন নতুন এক দিনের স্বপ্ন দেখছে, নতুন এক ভবিষ্যতের আশায়, এক নতুন জীবনের দিকে তাকিয়ে, যেখানে রাহুল তার পাশে থাকবে, তার হাত ধরে অনন্তকাল হাঁটবে, তাদের জীবন হবে এক অবিচ্ছিন্ন যাত্রা। তার মনটা আজ অস্থির, ঠিক যেন গঙ্গার স্রোতের মতোই চঞ্চল, প্রতিটি মুহূর্তে ঢেউ তুলে যাচ্ছিল, কিন্তু তার অস্থিরতার উৎস এই ভোরের প্রকৃতির কোমলতা নয়, বরং তার হৃদয়ের গভীরে জমে থাকা এক অব্যক্ত আকাঙ্ক্ষা – রাহুলের জন্য তার অপেক্ষা, যে প্রতিটি মুহূর্তে তার জীবনকে পূর্ণতা দেয়, যার উপস্থিতি তার অস্তিত্বকে সংজ্ঞায়িত করে, তার বেঁচে থাকার কারণ, তার একমাত্র লক্ষ্য, তার জীবনের সব কিছু, তার স্বপ্ন ও শান্তি। চোখের গভীরে এক অদম্য তৃষ্ণা, যা ভোরের স্নিগ্ধতাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছিল, কারণ সে জানত, এই মুহূর্তে রাহুল আসবে, তাদের গোপন অভিসারে, যেখানে তাদের ভালোবাসা নতুন করে শ্বাস নেবে, এক গোপন অভয়ারণ্যে, যেখানে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন, কোনো বাধা ছাড়াই, নিজেদের মতো করে বাঁচবে, যেখানে তারা চিরকালের জন্য নিরাপদ।
হঠাৎ, কাঁধের উপর একটি উষ্ণ, দৃঢ় হাতের স্পর্শ। বিদ্যুতের শিহরণ খেলে গেল তার সর্বাঙ্গে, শিরদাঁড়া বেয়ে এক উষ্ণ স্রোত নেমে গেল, তার প্রতিটি লোমকূপ যেন জেগে উঠল, এক তীব্র সংবেদন তাকে আচ্ছন্ন করে দিল, যেন সে এক অজানা জাদু অনুভব করছিল, এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ, যা তাকে রাহুলের দিকে টেনে নিচ্ছিল, তার সব প্রতিরোধ ভেঙে দিচ্ছিল। সোনালীর নিশ্বাস আটকে গেল, তার বুক ধড়ফড় করে উঠল এক অচেনা, তীব্র উত্তেজনায়, যা তাকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে দিল, যেন সে এক স্বপ্ন দেখছে, এক বাস্তব স্বপ্ন, যা সত্যি হতে চলেছে, তার চোখের সামনে, তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে চলেছে। দ্রুত পেছন ফিরতেই দেখল রাহুলকে। সেই পরিচিত চোখ, যা একপলকে তার ভেতরের সব অনুভূতিকে নাড়িয়ে দেয়, যার গভীরতা তাকে এক নিমিষেই হারিয়ে ফেলে, সেই হাসি যা সব দ্বিধা, সব ভয়, সব সংশয়কে ম্লান করে দেয়, এক ঝলকে সব অন্ধকার দূর করে দেয়, এক নতুন আলোর উন্মোচন করে, এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়, তার জীবনকে আলোকিত করে তোলে। রাহুলের চোখে ছিল গভীর অনুরাগ, যা সোনালীর আত্মাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল, তাকে গভীর ভালোবাসার এক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিল, এক অনন্ত বন্ধনের ইঙ্গিত দিচ্ছিল, যেন তারা চিরকালের জন্য এক হয়ে গেছে, এক অটুট বন্ধনে আবদ্ধ, যা কোনোদিনও ভাঙবে না, কোনো শক্তিই তাদের আলাদা করতে পারবে না। তার মুখভঙ্গিতে ছিল এক অস্থির শান্তি, যা কেবল সোনালীর উপস্থিতিতেই সে খুঁজে পেত, যেন সোনালীই তার একমাত্র আশ্রয়, তার শান্তি ও নির্ভরতার উৎস, তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু, তার পৃথিবী, তার সব কিছু, তার জীবনের অর্থ, তার বেঁচে থাকার কারণ।
“একাই চলে এলে, সোনালী?” রাহুলের ফিসফিস হাসি তার কানে মধু ঢালল, যেন সুরের মতো বেজে উঠল, তার কন্ঠস্বরে মিশে ছিল গভীর মমতা আর একরাশ অধিকারবোধ, যা সোনালীর হৃদয়ে এক মিষ্টি ব্যথা জাগিয়ে তুলল, তাকে রাহুলের প্রতি আরও বেশি আকর্ষণ করছিল, এক অদম্য টানে তাকে কাছে টানছিল, তাকে এক নতুন জগতে নিয়ে যাচ্ছিল, যেখানে শুধু তারা দুজন ছিল, আর কেউ ছিল না, শুধু তাদের ভালোবাসা, আর অসীম শান্তি।
সোনালী কোনো উত্তর দিল না। তার দৃষ্টি রাহুলের চোখে আটকে গেল। সেই গভীর, রহস্যময় চোখ, যেখানে সে নিজের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেত, যেখানে তার নিজের সত্তা বিলীন হয়ে যেতে চাইত, যেন তারা এক আত্মার দুটি অংশ, এক দেহ দুই প্রাণ, এক অখণ্ড সত্তা। তাদের পরিচয় মাত্র মাসখানেকের, কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন জন্মান্তরের বাঁধন, এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পড়ে আছে তাদের আত্মারা, যা ছিন্ন করা অসম্ভব, কোনো শক্তিই তাদের আলাদা করতে পারবে না, তাদের বন্ধন ছিল অলঙ্ঘনীয়, অমর, চিরন্তন, অটুট। প্রতিটি দৃষ্টিবিনিময়, প্রতিটি নীরব মুহূর্ত তাদের বোঝাপড়াকে আরও গভীর করে তুলছিল, যেন তারা একে অপরের মনের সব কথা পড়তে পারত, প্রতিটি অব্যক্ত ইচ্ছাকে অনুভব করতে পারত, এক গভীর সংযোগ তাদের মাঝে তৈরি হয়েছিল, যা কোনো শব্দ ছাড়াই সবকিছু বলে দিত, তাদের সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রা দিচ্ছিল, এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছিল, যেখানে তারা দুজন এক হয়ে গিয়েছিল, এক সম্পূর্ণ অস্তিত্ব। রাহুল আলতো করে তার হাতটা ধরল, সোনালীর হাতের প্রতিটি আঙুল যেন রাহুলের হাতের সাথে মিশে গেল, এক নিবিড় বন্ধনে, যা তাদের চিরদিনের জন্য আবদ্ধ করল, তাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করল, তাদের ভবিষ্যৎকে একীভূত করল, তাদের স্বপ্নকে একীভূত করল, তাদের জীবনকে এক করে দিল, তাদের সত্তাকে একীভূত করল। তার উষ্ণ হাতের ছোঁয়ায় সোনালীর রক্তপ্রবাহ যেন আরও দ্রুত হলো, সারা শরীর জুঁই ফুলের মতো কেঁপে উঠল, তার অনুভূতিগুলো তীব্র থেকে তীব্রতর হলো, তাকে এক অন্য জগতে নিয়ে গেল, যেখানে শুধু তারা দুজন ছিল, আর কোনো বাধা ছিল না, কোনো ভয় ছিল না, শুধু অসীম ভালোবাসা, অসীম শান্তি। শহরের ব্যস্ত কোলাহল থেকে দূরে, এই শান্ত ভোর আর গঙ্গার ঘাট তাদের গোপন প্রেমের সাক্ষী, এক গোপন অভয়ারণ্য যেখানে তারা নিজেদের সমস্ত দুর্বলতা নিয়ে নিজেদের মতো বাঁচতে পারত, কোনো ভয় ছাড়া, কোনো বাধা ছাড়া, যেখানে তারা মুক্ত ছিল, তাদের ভালোবাসা ছিল স্বাধীন, অবাধ, উন্মুক্ত, পবিত্র, অটুট।
“কি ভাবছো এত গভীরে?” রাহুল তার আঙুলগুলো সোনালীর আঙুলে জড়িয়ে নিলো, এক নরম অথচ দৃঢ় বাঁধনে, যেন সোনালীকে সে কোনোদিন ছেড়ে দেবে না, যেন তারা চিরকালের জন্য এক হয়ে গেছে, এক অটুট বন্ধনে, যা সময়ের বাঁধনও ছিঁড়তে পারবে না, যা মৃত্যুও আলাদা করতে পারবে না, যা কোনো শক্তিই ভাঙতে পারবে না, যা তাদের চিরদিনের জন্য আবদ্ধ করবে, অনন্তকালের জন্য।
সোনালী ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে বলল, “ভাবছি, এই মুহূর্তটা যদি অনন্তকাল ধরে থাকত। এই শান্তি, এই তুমি, এই অদৃশ্য টান… সব কিছু যেন এক স্বপ্নের মতো, যা আমি কোনোদিনও ভাঙতে দেবো না, যা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয়, আমার জীবনের সবকিছু, আমার বেঁচে থাকার কারণ, আমার স্বপ্ন, আমার ভবিষ্যৎ, আমার অস্তিত্ব।” তার কণ্ঠস্বরে একরাশ ভালোবাসা আর আকুতি স্পষ্ট ছিল, যেন সে এই মুহূর্তটিকে তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ধন মনে করে, যা অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি মূল্যবান, যা দিয়ে সে সবকিছু কিনতে পারত, এক অনন্ত সুখের মুহূর্ত, এক অসীম আনন্দ, এক স্বর্গীয় অনুভূতি, এক অপার্থিব সুখ, এক চূড়ান্ত প্রাপ্তি।
রাহুল এক পা এগিয়ে এসে সোনালীর আরও কাছে দাঁড়ালো, তাদের দেহের দূরত্ব যেন এক ইঞ্চিও ছিল না, তাদের ত্বক একে অপরের উষ্ণতা অনুভব করছিল, এক তীব্র আকর্ষণ তাদের গ্রাস করছিল, তাদের প্রতিটি স্পন্দন একে অপরের সাথে মিশে যাচ্ছিল, এক হয়ে যাচ্ছিল, এক অভিন্ন সত্তা তৈরি করছিল, যা তাদের চিরদিনের জন্য এক করে দিল, তাদের আত্মাকে একীভূত করল। তাদের নিঃশ্বাস একাকার হতে শুরু করল, একে অপরের অস্তিত্ব যেন মিশে যাচ্ছিল, এক হয়ে যাচ্ছিল, তাদের সত্তা যেন একই বিন্দুতে মিলিত হয়েছিল, এক অলঙ্ঘনীয় বন্ধন তৈরি হয়েছিল, যা তাদের চিরদিনের জন্য আবদ্ধ করল। রাহুলের উষ্ণ নিশ্বাস সোনালীর কানের কাছে, তার নরম চুলের উপর দিয়ে নেমে এল, তার ঘাড়ের কাছটায় উষ্ণতা ছড়াল, “শান্তি? নাকি ঝড়, সোনালী? তোমার এই নীরবতাতেও আমি এক তীব্র ঝড় অনুভব করছি, এক গভীর আকাঙ্ক্ষা, যা আমাকে পাগল করে তুলছে, তোমাকে আমার করে পাওয়ার এক উন্মাদনা, যা আমাকে অস্থির করে তুলেছে, আমার সব নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়েছে, আমাকে সম্পূর্ণ আত্মহারা করে তুলেছে, আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে।” তার কন্ঠস্বরে ছিল এক রহস্যময় আবেদন, এক অব্যক্ত আমন্ত্রণ, যা সোনালীর আত্মাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল, তাকে রাহুলের দিকে আরও বেশি টানছিল, তাকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করছিল, তাকে রাহুলের কাছে বিলীন হতে বাধ্য করছিল, তার সব প্রতিরোধ ভেঙে দিচ্ছিল, তার সমস্ত সত্তা রাহুলের প্রতি নিবেদিত হচ্ছিল।
সোনালী হেসে উঠল, তার হাসি যেন ভোরের স্নিগ্ধতাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলল, আর রাহুলের হৃদয়ে ঢেউ তুলল, তাকে আরও কাছে টানল, তার ভেতরের সব অনুভূতি জাগিয়ে তুলল, এক নতুন জীবন দিল, এক নতুন আশার আলো, এক নতুন দিগন্ত, এক নতুন স্বপ্ন, এক নতুন যাত্রা। “হ্যাঁ, ঝড়ই তো! তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকেই তোলপাড় চলছে। এক অস্থির, পাগলাটে ঝড়, যা সবকিছু ওলটপালট করে দিচ্ছে, আমার জীবনে এক নতুন রঙ এনে দিয়েছে, যা আমি আগে কখনো দেখিনি, যা আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে, এক অন্য দিগন্তে নিয়ে গেছে, এক অজানা পথে, যেখানে শুধুই অ্যাডভেঞ্চার, যেখানে শুধু ভালোবাসা আর উন্মাদনা, যেখানে শুধুই জীবন।” রাহুল আলতো করে তার কোমরে হাত রাখল, তার স্পর্শে সোনালীর শরীর যেন আপনাআপনি তার দিকে আরও ঝুঁকে পড়ল, তাদের দেহের রেখাগুলো যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল, এক নিখুঁত সামঞ্জস্য তৈরি হলো, যেন তারা একে অপরের জন্য তৈরি হয়েছিল, এক অখণ্ড অস্তিত্ব, এক অভিন্ন সত্তা। তাদের দৃষ্টি মিশে গেল, চোখে চোখে কথা বলল দু’জন, তাদের চোখেই ছিল তাদের সব কথা, প্রতিটি অব্যক্ত অনুভূতি, এক গভীর বোঝাপড়া তাদের মাঝে তৈরি হয়েছিল, যা কোনো শব্দ ছাড়াই সবকিছু বলে দিত, যা তাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করত, তাদের আত্মাকে একীভূত করত। এই দৃষ্টিতে ছিল আদিম তৃষ্ণা, ছিল তীব্র আকর্ষণ, আর ছিল গভীরতম, অব্যক্ত ভালোবাসা। তাদের দেহ একে অপরের কাছে আসতে চাইছিল, তাদের আত্মা যেন মিলিত হতে চাইছিল, এক হয়ে যেতে চাইছিল, তাদের অস্তিত্ব একে অপরের সাথে মিশে গিয়েছিল, কোনো ভেদ ছিল না, শুধু এক অসীম ভালোবাসা, এক অনন্ত বন্ধন, এক চিরন্তন প্রেম।
রাহুল সোনালীর মুখটা দু’হাতে তুলে ধরল, তার আঙুলগুলো সোনালীর চোয়ালের রেখা বেয়ে ধীরে ধীরে কপালে উঠে গেল। তার বুড়ো আঙুল আলতো করে সোনালীর নরম গাল ছুঁয়ে গেল, এক উষ্ণ স্পর্শ, যা সোনালীর হৃদয়ে শান্তি এনে দিল, তাকে এক তীব্র আবেশে ভাসিয়ে দিল, তাকে এক স্বর্গীয় অনুভূতি দিল, তাকে আত্মহারা করে তুলল, তার সব প্রতিরোধ ভেঙে দিচ্ছিল। সোনালীর চোখ অর্ধনিমীলিত, তাতে এক অদ্ভুত নেশা, এক আবেশ, যা রাহুলকে আরও মুগ্ধ করে তুলল, তাকে সোনালীর গভীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, তার ভেতরের কামনাকে জাগিয়ে তুলছিল, তাকে আত্মহারা করে তুলছিল, তার সব প্রতিরোধ ভেঙে দিচ্ছিল। রাহুলের চোখ গভীর, উন্মত্ত, সে সোনালীর প্রতিটি অভিব্যক্তি যেন মনের গভীরে গেঁথে নিচ্ছিল, প্রতিটি মুহূর্ত ধরে রাখছিল, তার স্মৃতিতে ধরে রাখছিল, যা সে কোনোদিন ভুলবে না, তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে, এক অমর স্মৃতি, এক অটুট বন্ধন। সে সোনালীর কপাল, তারপর চোখ, তারপর গালের উপর আলতো করে চুম্বন করল, প্রতিটি চুম্বন যেন এক একটি অদৃশ্য প্রতিজ্ঞা, এক একটি ভালোবাসার চিহ্ন, এক একটি বাঁধন, যা তাদের চিরদিনের জন্য আবদ্ধ করল, তাদের সত্তাকে একীভূত করল, তাদের আত্মাকে বিলীন করে দিল। সোনালীর শরীর যেন এক গভীর আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে গেল, তার হৃদস্পন্দন দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছিল, সারা শরীরে এক উষ্ণ ঢেউ বয়ে গেল, তাকে এক অন্য জগতে নিয়ে গেল, যেখানে সময় থমকে গিয়েছিল, যেখানে শুধু তারা দুজন ছিল, আর কেউ ছিল না, শুধু তাদের প্রেম। ঠোঁট দুটি একে অপরের দিকে এগিয়ে এলো, যেন এক অবিরাম আকর্ষণে, তাদের অধীর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে, এক চিরন্তন মিলনের জন্য। ভোরের নরম আলো তখনো পুরোপুরি ফোটেনি, কিন্তু তাদের চারপাশে যেন এক নতুন আলোর স্ফূরণ ঘটছিল, এক অপার্থিব ঔজ্জ্বল্য, যা তাদের ভালোবাসার মতো উজ্জ্বল এবং পবিত্র, যা তাদের ঘিরে এক স্বর্গীয় আভা তৈরি করছিল, যেন তারা স্বর্গে বাস করছিল, পৃথিবীতেই এক স্বর্গ, তাদের নিজস্ব স্বর্গ, যা তারা নিজেরাই তৈরি করেছিল। সেই মুহূর্তে সময় থমকে গেল, মহাবিশ্বের সব কিছু যেন তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল, তাদের প্রেমকে অনুভব করছিল, এক নিঃশব্দ দর্শক হয়ে, তাদের ভালোবাসার মহিমা দেখছিল, যা অসীম, যা অনন্ত, যা চিরন্তন। গঙ্গার জল, ভোরের বাতাস, এমনকি আকাশের নীরবতাও যেন তাদের গভীর আলিঙ্গনের সাক্ষী হয়ে রইল, এক অমর প্রেমের গল্প লিখছিল, যা চিরকাল মনে থাকবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। একটি দীর্ঘ, সাহসী চুম্বন, যা তাদের ভেতরের সব না বলা কথা, সব অধরা আকাঙ্ক্ষাকে এক করে দিল, তাদের সত্তাকে একীভূত করল, তাদের আত্মাকে মিলিত করল, তাদের অস্তিত্বকে এক করে দিল। সোনালীর নরম ঠোঁট যেন রাহুলের ঠোঁটের সাথে মিশে গেল, তাদের নিঃশ্বাস একে অপরের গভীরে প্রবেশ করল, এক আত্মিক মিলন ঘটল, যা তাদের অস্তিত্বকে একত্রিত করল, এক অখণ্ড সত্তায় পরিণত করল, যেন তারা একই স্পন্দনে স্পন্দিত হচ্ছিল, একই তালে বাজছিল। এই চুম্বন ছিল তাদের গভীর অনুরাগের প্রতীক, একে অপরের প্রতি তাদের অদম্য আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ। প্রতিটি মুহূর্তে তাদের আত্মারা যেন আরও নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হচ্ছিল, এক অন্যরকম আবেগ তাদের ঘিরে ধরছিল। সেই আলিঙ্গনের উষ্ণতায় সোনালীর শরীর যেন এক নতুন আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে গেল, তার হৃদস্পন্দন দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছিল, সারা শরীরে এক উষ্ণ শিহরণ বয়ে গেল, তাকে এক অন্য জগতে নিয়ে গেল, যেখানে তারা শুধু একে অপরের জন্য ছিল। সেই মুহূর্তের গভীরতা তাদের অস্তিত্বের গভীরে প্রবেশ করল, এক অনাবিল সুখ তাদের গ্রাস করল। এক মুহূর্তের জন্য যেন তারা এই জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের এক নতুন জগতে হারিয়ে গেল, যেখানে শুধু তারা দুজন আর তাদের ভালোবাসা, আর কোনো বাধা নেই, কোনো ভয় নেই, শুধু অবাধ স্বাধীনতা, এক অসীম প্রেম। তাদের দেহের ভাষা তখন তাদের আত্মার ভাষা হয়ে উঠেছিল, প্রতিটি স্পর্শে ছিল অদম্য ভালোবাসা আর এক গোপন প্রতিজ্ঞা, যা তারা চিরকালের জন্য করে রেখেছিল, এক অনন্ত বন্ধনের জন্য, যা কোনোদিনও ভাঙবে না, যা কোনো শক্তিই ছিন্ন করতে পারবে না, যা তাদের অমর করে তুলবে।
সোনালী রাহুলের বাহুতে নিজেকে সঁপে দিল, তার হাত রাহুলের পিঠে উঠে গেল, দৃঢ় আলিঙ্গনে, যেন সে রাহুলকে তার অস্তিত্বের সাথে বেঁধে রাখতে চায়, তাকে কোনোদিনও ছেড়ে দেবে না, সে যেন তার জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, তার শ্বাস-প্রশ্বাস, তার হৃদস্পন্দন, তার বেঁচে থাকার কারণ। তার মন তখন শুধু একটি কথাই বার বার বলছিল, ‘তুমি শুধু আমার, রাহুল। শুধু আমার, চিরকালের জন্য।’ রাহুল তাকে আরও নিবিড়ভাবে আঁকড়ে ধরল, যেন আর কখনো হারাতে দেবে না, যেন সোনালী তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, তার শ্বাস-প্রশ্বাস, তার অস্তিত্ব, তার জীবনের সবকিছু, তার ভবিষ্যৎ, তার সব স্বপ্ন। তাদের ভালোবাসা শুধু কথার বাঁধনে আবদ্ধ ছিল না, তা ছিল প্রতিটি স্পর্শে, প্রতিটি নিশ্বাসে, প্রতিটি নীরব মুহূর্তে, এক গভীর শারীরিক ও আত্মিক সংযোগে। তাদের হৃদস্পন্দন এক তালে বাজছিল, যা যেন প্রকৃতির সাথে এক হয়ে গিয়েছিল, এক প্রেমের সিম্ফনি বাজছিল, যা তাদের চিরন্তন ভালোবাসার প্রতীক, যা তাদের আত্মাকে এক করে দিয়েছিল, তাদের জীবনকে এক নতুন অর্থ দিয়েছিল।
ক্রমশ…..
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion