Episode 12218 words4 views

দ্বাদশ অধ্যায়: শিকড়ের টান

এক মাস পর। অর্ক মিত্র কলকাতার ফ্ল্যাটে বসে আছে। তার সামনে সেই "ব্রহ্মাণী" মূর্তিটা। আর সেই উল্কাপিণ্ডের বেদিটা। পুলিশি তদন্ত, মিডিয়ার ভিড়— সব সামলে সে ফিরে এসেছে। বীরেন্দ্রনারায়ণের সাম্রাজ্য তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। তার ম্যানেজার রতনই সব কুকীর্তির সাক্ষী দিয়েছে। দেবীতীর্থের বাড়িটা এখন সিল করা। ওটা আর থাকার যোগ্য নয়। অর্ক ল্যাপটপ খুললো। সেই সতেরো তলা কন্ডোমিনিয়ামের নকশা। সে ওটার ওপর মাউস রাখলো। তারপর 'ডিলিট' বাটনটা টিপে দিলো। সে আর কংক্রিটের বাক্স বানাতে চায় না। সে একটা নতুন ফাইল খুললো। নাম দিলো— "দেবীতীর্থ জনকল্যাণ ট্রাস্ট ও শম্ভু-ঈশ্বর স্মৃতি সদন"। সে ভাঙা বাড়িটার একটা নতুন নকশা আঁকতে শুরু করলো। এটা কোনো কন্ডোমিনিয়াম হবে না। এটা হবে একটা লাইব্রেরি, একটা মিউজিয়াম আর একটা স্কুল। শম্ভু জ্যাঠা আর ঈশ্বরচন্দ্রের নামে উৎসর্গ করা। উল্কাপিণ্ডটা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, আর হীরা দুটো বিক্রি করে এই ট্রাস্টের ফান্ড তৈরি হবে। অর্ক তার বাবার লেখা চিঠিটা আবার বের করলো। "শিকড়কে ভুলে থাকতে নেই।" অর্ক হাসলো। সে আর শিকড়কে ভোলেনি। সে বুঝতে পেরেছে, তার আর্কিটেকচারের আসল উদ্দেশ্য শুধু কাঁচ আর স্টিলের জঙ্গল তৈরি করা নয়, তার আসল উদ্দেশ্য হলো স্মৃতিকে, ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখা। সে উত্তরবঙ্গের টিকিট বুক করলো। ব্রহ্মাণী দেবীর মূর্তিটা তার ব্যাগে। তাকে আবার তার নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংস্কারের কাজ আবার শুরু করতে হবে। এবার আর গুপ্তধনের লোভে নয়, এবার ইতিহাসের টানে, শিকড়ের টানে। সে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion