"এ কী!" অনিমেষবাবু বললেন। "এ তো অষ্টধাতুর নয়! এ তো সাধারণ কালো পাথর।"
"না," অর্ক মূর্তিটা হাতে নিয়ে বললো। "এটা বড্ড ভারী। এটা সাধারণ পাথর নয়। এটা উল্কাপিণ্ড। এই পাথর দিয়েই ঈশ্বরচন্দ্রের ঠাকুরমা প্রথম বেদিটা বানিয়েছিলেন। এর জ্যোতিষ মূল্য হীরের চেয়েও বেশি।"
"বাবু!" বাইরে থেকে শম্ভু জ্যাঠার চিৎকার ভেসে এলো। "বীরেন্দ্রনারায়ণ নিজে এসেছে!"
ঠাকুরঘরের দরজায় বীরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী দাঁড়িয়ে। তার হাতে একটা দোনলা বন্দুক। তার জামাকাপড় পাঁকে মাখামাখি। সে বুঝতে পেরেছে, তাকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। তার চোখ দুটো জ্বলছে।
"খুব চালাক ভেবেছিলে, না? আমার লোক দিঘিতে পাঁক ঘাঁটবে, আর তুমি আসল জিনিস নিয়ে পালাবে?" বীরেন্দ্রনারায়ণ হাসলেন। "আমি জানতাম, টোপটা তুমি গিলবে না। তাই আমি তোমার পেছনেই ছিলাম।"
"সব শেষ, বীরেন্দ্রবাবু," অনিমেষবাবু বললেন। "আপনার প্রপিতামহের পাপ আজ সবার সামনে।"
"পাপ? হাহ্!" বীরেন্দ্রনারায়ণ বন্দুকটা অর্কর দিকে তাক করলেন। "ব্যবসা করতে গেলে ওসব পাপ-পুণ্য দেখতে নেই। মূর্তিটা আমার হাতে তুলে দাও, ছোকরা।"
"যদি না দিই?" অর্ক শান্তভাবে বললো। সে মূর্তিটা আড়াল করে দাঁড়িয়েছে।
"তাহলে তোমার পূর্বপুরুষের পাশেই তোমার জায়গা হবে।"
বীরেন্দ্রনারায়ণ ট্রিগারে আঙুল রাখলেন।
"না!" শম্ভু জ্যাঠা কোথা থেকে শক্তি পেয়ে ছুটে এসে বীরেন্দ্রনারায়ণের বন্দুক ধরা হাতটা চেপে ধরলেন।
গুলি চললো। কিন্তু সেটা অর্কর গায়ে লাগলো না। লাগলো ঠাকুরঘরের ছাদের একটা পুরনো কড়িকাঠে।
আর ঠিক তখনি, ঘটলো ঘটনাটা।
পুরনো বাড়িটা এই ধাক্কা আর সহ্য করতে পারলো না। পঁচিশ বছরের অবহেলা, গুপ্তধনের ভার, আর পাপের ভারে ঠাকুরঘরের ছাদটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে শুরু করলো।
"পালাও!" অর্ক চিৎকার করে অনিমেষবাবুকে ঠেলে দিলো।
অনিমেষবাবু আর অর্ক গর্ত থেকে বেরিয়ে এলেন। শম্ভু জ্যাঠা বীরেন্দ্রনারায়ণকে জাপটে ধরে আছেন।
"জ্যাঠা! বেরিয়ে আসুন!" অর্ক চিৎকার করলো।
"না, বাবু," শম্ভু জ্যাঠা হাসলেন। তার বুক দিয়ে রক্ত পড়ছে। বীরেন্দ্রনারায়ণের ছোরার আঘাত। "আজ এই পাপীটার সাথেই আমার শেষ। রায়চৌধুরী বাড়ির নুন আমি শোধ করলাম। জয় মা ব্রহ্মাণী!"
একটা প্রকাণ্ড পাথরের চাঁই ওপর থেকে খসে পড়লো। বীরেন্দ্রনারায়ণের আর্তচিৎকার আর শম্ভু জ্যাঠার জয়ধ্বনি ধুলো আর পাথরের তলায় চাপা পড়ে গেলো।
ঠাকুরঘরটা... সেই অভিশপ্ত ঘরটা... একটা আস্ত কবরখানা হয়ে গেলো।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion