Episode 11594 words0 views

প্রথম অধ্যায় : স্মৃতির শহরে প্রত্যাবর্তন

স্থান: উত্তরপাড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। অরুণ মিত্র তার দোতলার প্রশস্ত বারান্দার আরামকেদারায় বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধটা গঙ্গার দিক থেকে ভেসে আসা শীতল হাওয়ার সাথে মিশে এক অদ্ভুত মাদকতা তৈরি করেছে। আকাশে মেঘ সরে গিয়ে তারাগুলো ফুটে উঠেছে। ঘরের ভেতরে, ডিম লাইটের নরম আলোয় সে দেখতে পাচ্ছে তার স্ত্রী রিয়া আর তাদের চার বছরের মেয়ে শারদীয়াকে। শারদীয়া তার মায়ের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে, তার ছোট্ট আঙুলগুলো রিয়ার শাড়ির আঁচল আঁকড়ে ধরে আছে। রিয়ার খোলা চুলগুলো বালিশের ওপর ছড়িয়ে আছে, কয়েকটি strand তার মুখের ওপর এসে পড়েছে। এই শান্ত, পরিপূর্ণ দৃশ্যটার দিকে তাকিয়ে অরুণের মনে হলো, জীবনটা কত অদ্ভুত! ঠিক দশ বছর আগে, এই সেপ্টেম্বরেই, সে এক অন্য মানুষ ছিল, এক অন্য জগতে। যে মানুষটা হাসতে ভুলে গিয়েছিল, ভালোবাসায় বিশ্বাস হারিয়েছিল। রিয়া এসে তাকে নতুন করে শ্বাস নিতে শিখিয়েছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে চোখ বন্ধ করল। স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠল সেই পুজোর দিনগুলো, যা তার জীবনটাকে ওলটপালট করে দিয়েছিল… (স্মৃতির গভীরে…) লন্ডনের ক্যানারি হোয়ার্ফে অবস্থিত জে.পি. মরগ্যানের ছত্রিশ তলার কোণার অফিসটা ছিল অরুণ মিত্রের কাঁচের দুর্গ। সেই দুর্গের বাইরে, টেমসের ওপর দিয়ে যখন কুয়াশার চাদর নেমে আসত, অরুণ মিত্র তখন তাকিয়ে থাকত ব্লুমবার্গ টার্মিনালের সবুজ-লাল সংখ্যাগুলোর দিকে। তার জগৎটা ছিল এক শীতল, হিসেবি জগৎ—যেখানে আবেগের স্থান ছিল না, ছিল শুধু লাভ-ক্ষতির অঙ্ক। দশ বছর আগে যে ছেলেটা প্রেসিডেন্সি কলেজের ঘাসে বসে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা পড়ত (“অবনী, বাড়ি আছো?”), সে আজ ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের বাইরে কিছু পড়ার কথা ভাবতেও পারে না। তার সাফল্য ছিল আকাশছোঁয়া, কিন্তু তার একাকীত্ব ছিল অতলস্পর্শী। এই নির্বাসনের বীজ রোপিত হয়েছিল এক শ্রাবণ সন্ধ্যায়, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে। অদিতি রায়, তার প্রথম প্রেম, যার চোখে ছিল নিউ ইয়র্কের স্বপ্ন আর কথায় ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ধার, সেদিন তার হাত ছেড়ে দিয়েছিল। “কলকাতা একটা আবেগের চোরাবালি, অরুণ,” অদিতি বলেছিল তার সেই নিখুঁত ইংরেজিতে, “এই শহরটা একটা সুন্দর, decaying museum piece। আমি এখানে আমার প্রতিভাকে পচাতে পারব না। I want to build empires, not write epitaphs for them.” অদিতির সেই কথাগুলো অরুণের পুরুষ অহংকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছিল। সে নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিল। তার সাথে যোগ হয়েছিল তার বাবা, অনিরুদ্ধ মিত্রের নিরন্তর চাপ। “আমি যা পারিনি, তুই করে দেখাবি। বিদেশে না গেলে তোর কোনো দাম নেই। এই শহরে পড়ে থেকে শুধু ইউনিয়নের ঝাণ্ডা ধরবি আর চায়ের দোকানে আড্ডা দিবি।” বাবার প্রত্যাশা আর ভাঙা প্রেমের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অরুণ পাড়ি দিয়েছিল লন্ডনে। সে হয়ে উঠেছিল ঠিক সেইরকম একজন মানুষ, যার জন্য অদিতি তাকে ছেড়ে গিয়েছিল—সফল, বাস্তববাদী এবং আবেগহীন। তার জীবনে প্রেম এসেছিল, কিন্তু ভালোবাসা আসেনি। ক্যাথরিন, তার ব্রিটিশ সহকর্মী, ছিল তার নিখুঁত পার্টনার—তাদের সম্পর্কটা ছিল এক সুন্দর ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরের ব্যক্তিগত স্পেসে হস্তক্ষেপ করার কোনো নিয়ম ছিল না। এই দশ বছরে অরুণ কলকাতাকে প্রায় মুছেই ফেলেছিল তার মন থেকে। কিন্তু তার মা, মিনতি দেবী, তাকে ভোলেননি। প্রতি বছর পুজোর আগে তার ফোন আসত, “এবার অন্তত আয় বাবা।” প্রতিবারই অরুণ কোনো না কোনো কাজের অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যেত। কিন্তু এবছর সেপ্টেম্বরের শুরুতে, মায়ের গলার স্বরটা ছিল অন্যরকম। “তোর বাবা সেদিন সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল। বয়স হচ্ছে তো। সারাদিন কেমন চুপ করে থাকে। আমি আর একা এই বাড়িটাকে আগলে রাখতে পারছি না। তুই যদি এবার না আসিস, আমি ভাবব আমার ছেলেটা আর বেঁচে নেই।” মায়ের এই কান্নাভেজা কথাগুলো অরুণের ভেতরের কঠিন বরফের দেওয়ালে প্রথম ফাটল ধরিয়েছিল। সেদিন রাতে, তার বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে, টেমসের ঠান্ডা হাওয়ার মধ্যে তার প্রথমবার মনে হয়েছিল, সে আসলে কীসের পেছনে ছুটছে? এই কাঁচের দুর্গ, এই সংখ্যার জগৎ—এটাই কি তার জীবনের শেষ কথা? তাই বহু বছর পর, এক অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সে কলকাতার টিকিটটা কেটেই ফেলেছিল। লন্ডন থেকে কলকাতার নয় ঘণ্টার ফ্লাইটটা অরুণের কাছে অনন্তকাল বলে মনে হচ্ছিল। বিজনেস ক্লাসের আরামদায়ক আসনে বসেও সে স্বস্তি পাচ্ছিল না। জানালার শাটারটা নামানো, কেবিনের ভেতরটা কৃত্রিম আলোয় আলোকিত। তার চারপাশে ছিল এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা—শুধু এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিনের একটানা নিচু গুঞ্জন। এই শব্দটা গত দশ বছর ধরে তার জীবনের আবহ সঙ্গীতের মতো হয়ে গেছে—একঘেয়ে, আবেগহীন এবং যান্ত্রিক। সে তার ল্যাপটপটা খুলেছিল হংকং অফিসের পাঠানো একটা জরুরি ফাইন্যান্সিয়াল মডেল দেখবে বলে। সংখ্যা, গ্রাফ আর প্রজেকশনের জটিল জগৎ—যে জগতে সে রাজা। কিন্তু আজ, ত্রিশ হাজার ফুট উচ্চতায়, এই সংখ্যাগুলো তার কাছে অর্থহীন বলে মনে হচ্ছিল। সে ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিয়ে সামনের স্ক্রিনে মন দিল। একটা হলিউডি অ্যাকশন সিনেমা চলছিল। গাড়ির বিস্ফোরণ, গোলাগুলি, আর নায়কের অবাস্তব বীরত্ব—কিছুই তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারল না। তার মনে হলো, তার নিজের জীবনটাও এই সিনেমার মতোই—বাইরে থেকে দেখলে খুব চাকচিক্যময়, কিন্তু ভেতরে আসলে কোনো গল্প নেই। বিরক্ত হয়ে সে ফোনটা হাতে নিল। গ্যালারিতে স্ক্রল করতে করতে একটা ছবির ওপর তার চোখ আটকে গেল। গত মাসে কোম্পানির অ্যাওয়ার্ড নাইটের ছবি। সে একটা দামী আরমানি স্যুট পরে ক্যাথরিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে, দুজনের হাতেই শ্যাম্পেনের গ্লাস, ঠোঁটে পেশাদারী হাসি। ছবিটার দিকে তাকিয়ে তার মনে হলো, সে যেন দুটো রোবটকে দেখছে, যারা সুখী হওয়ার অভিনয় করছে। আঙুলের সামান্য ছোঁয়ায় ছবিটা বদলে গেল। ফোনের মেমোরির কোনো এক গভীরে লুকিয়ে ছিল একটা পুরোনো, স্ক্যান করা ছবি। ঝাপসা, রঙচটা। উত্তরপাড়ার মাঠে সে আর তার বন্ধুরা—সবাই কাদামাখা, বৃষ্টিতে ভেজা। সদ্য একটা গোল দিয়ে সে চিৎকার করছে, আর বন্ধুরা তাকে জড়িয়ে ধরেছে। সেই ছবিতে কোনো নিখুঁত অ্যাঙ্গেল ছিল না, ছিল না কোনো পেশাদারী হাসি। ছিল শুধু নির্মল, বাঁধনছাড়া আনন্দ। দুটো ছবির মধ্যেকার দশ বছরের ব্যবধানটা অরুণের কাছে এক শতাব্দীর মতো দীর্ঘ মনে হলো। প্লেনটা যখন কলকাতার আকাশে প্রবেশ করল, তখন পাইলটের ঘোষণা ভেসে এলো। অরুণ জানালার শাটারটা তুলল। নীচে, অন্ধকারের বুকে, জোনাকির মতো জ্বলে-নিভে আছে লক্ষ লক্ষ আলো। এই আলোর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে তার বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল। একটা অদ্ভুত ভয় আর তার সাথে এক অজানা কৌতূহল—এই শহরটা কি তাকে আর চিনতে পারবে? দমদম বিমানবন্দরে নামার পর কলকাতার প্রথম অনুভূতিটা ছিল তীব্র। প্লেনের শীতল, নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ থেকে বের হয়েই একটা ভ্যাপসা, আর্দ্র বাতাসের ঢেউ তার মুখে এসে লাগল। এই हवाটা ভারী, এর মধ্যে মিশে আছে জলীয় বাষ্প, ধুলো আর লক্ষ লক্ষ মানুষের নিঃশ্বাস। ইমিগ্রেশনের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সে দেখছিল চারপাশের মানুষগুলোকে। সবার চোখেমুখে বাড়ি ফেরার আনন্দ, প্রিয়জনের সাথে মিলিত হওয়ার অধীর আগ্রহ। আর সে দাঁড়িয়ে ছিল একা, একজন দর্শকের মতো। ব্যাগেজ ক্লেইম থেকে সুটকেসটা নিয়ে সে যখন এক্সিট গেটের দিকে এগোল, তখন তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হচ্ছিল। কাঁচের দরজার ওপারে ছিল এক জনসমুদ্র। দরজাটা খুলতেই একটা সম্মিলিত শব্দতরঙ্গ তাকে আঘাত করল—হাজারো মানুষের গুঞ্জন, ট্রলির চাকার ঘর্ষণের শব্দ, ট্যাক্সি ড্রাইভারদের হাঁকডাক, আর তার সাথে মিশে থাকা মিষ্টি পোড়া চায়ের গন্ধ, ডিজেলের তীব্র ধোঁয়া, বাসি ফুলের মালা আর নর্দমার এক ভ্যাপসা গন্ধের এক অদ্ভুত ককটেল। এই তীব্র, জীবন্ত বিশৃঙ্খলার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। ভিড়ের মধ্যে সে তার বাবা-মাকে খুঁজছিল। হঠাৎ সে দেখল, ব্যারিকেডের ওপারে তার মা দাঁড়িয়ে আছেন, তার উদ্বিগ্ন চোখ দুটো প্রত্যেকটা বেরিয়ে আসা যাত্রীর মুখ খুঁটিয়ে দেখছে। মায়ের পাশে বাবা দাঁড়িয়ে, মুখে একটা কাঠিন্যের মুখোশ, কিন্তু তার চোখ দুটোও অস্থির। অরুণ এগিয়ে যেতেই মা তাকে দেখতে পেলেন। “অরু!”—তার গলার স্বরটা ভিড়ের শব্দকে ছাপিয়ে গেল। মিনতি দেবী তাকে জড়িয়ে ধরে যখন নিঃশব্দে কাঁদছিলেন, তখন অরুণ অনুভব করল, এই দশ বছরে তার মা কতটা বুড়িয়ে গেছেন, শরীরটা কেমন হালকা হয়ে গেছে। সে খুব শান্ত ভাবে মায়ের পিঠে হাত রাখল। কীভাবে এই ধরনের আবেগঘন মুহূর্তে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়, তা সে প্রায় ভুলেই গেছে। বাবা এগিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রাখলেন। তাদের দুজনের মধ্যে কোনো কথা হলো না, শুধু একটা সংক্ষিপ্ত, কিন্তু গভীর দৃষ্টি বিনিময় হলো। সেই দৃষ্টিতে ছিল দশ বছরের জমে থাকা অভিমান, প্রত্যাশা আর না বলতে পারা অনেক কথা। গাড়িতে করে বাড়ি ফেরার পথটা ছিল এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। এয়ারপোর্টের ঝকঝকে রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি যখন ভিআইপি রোডে পড়ল, তখন অরুণ দেখল শহরটা কতটা বদলে গেছে। আকাশছোঁয়া বিল্ডিং, শপিং মল, ফ্লাইওভারের জাল—এসবের সাথে তার চেনা কলকাতার কোনো মিল নেই। কিন্তু উল্টোডাঙা পার হওয়ার পর থেকে ছবিটা বদলাতে শুরু করল। পুরোনো বাড়ি, রাস্তার ধারের চায়ের দোকান, দেওয়ালে আঁকা রাজনৈতিক স্লোগান—এই সেই কলকাতা, যাকে সে ছেড়ে গিয়েছিল। গাড়ির মধ্যে একটা অস্বস্তিকর নীরবতা। বাবা জিজ্ঞেস করলেন, “তোর প্রমোশনটা কবে ডিউ?” অরুণ সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল, “সামনের বছর।” মা বললেন, “রোগা হয়ে গেছিস খুব। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিস না, তাই না? আজ তোর জন্য চিংড়ির মালাইকারি করেছি।” অরুণ হাসার চেষ্টা করল। এই দশ বছরে তাদের মধ্যে কথা বলার বিষয়গুলোও যেন সীমিত হয়ে গেছে। বাবা বোঝেন শুধু কেরিয়ারের ভাষা, আর মা বোঝেন শুধু স্বাস্থ্যের। এর বাইরে যে একটা মানুষের মন থাকতে পারে, সেই খবরটা হয়তো তারা আর রাখেন না। তাদের উত্তরপাড়ার বাড়িটা ছিল গঙ্গার ঠিক ধারে। একটা পুরোনো দিনের দোতলা বাড়ি, যার গায়ে সময়ের ইতিহাস লেখা। বাড়িতে ঢোকার মুহূর্তে একটা পরিচিত গন্ধ তার নাকে এসে লাগল—পুরোনো বই, নারকেল তেল, ধূপ আর মায়ের হাতের রান্না করা পাঁচফোড়নের এক মিশ্রিত সুবাস। এই গন্ধটা তার শৈশবের, তার কৈশোরের। এই গন্ধটা ‘বাড়ির’ গন্ধ। নিজের ঘরে ঢুকে সে দেখল, সবকিছু প্রায় একইরকম আছে। শুধু তার ছোটবেলার ছবির ফ্রেমে ধুলো জমেছে, আর বইয়ের раকে মাকড়সা জাল বুনেছে। সে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়াল। গঙ্গার ওপারে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের চূড়া আবছা দেখা যাচ্ছে। ঘাটে নৌকা বাঁধা, মাঝিরা অলস দুপুরে গল্প করছে। এই দৃশ্যটা দেখতে দেখতেই সে বড় হয়েছে। আজ এতদিন পর এই দৃশ্যটা দেখে তার মনে হলো, সে যেন এক অচেনা পর্যটক, যে ভুল করে নিজের ফেলে আসা জীবনের মিউজিয়ামে ঢুকে পড়েছে। সে তার পুরোনো কাঠের আলমারিটা খুলল। ভেতরে রাখা তার কলেজের টি-শার্ট, একটা পুরোনো ক্রিকেট ব্যাট। ব্যাটটা হাতে নিতেই তার মনে পড়ল, কীভাবে এই পাড়ার মাঠে সে বন্ধুদের সাথে খেলত। জয়ের পর চিৎকার, আর হারের পর একে অপরের ওপর দোষ চাপানো—সেই দিনগুলো কোথায় হারিয়ে গেল? বইয়ের শেলফ থেকে সে তার প্রিয় জীবনানন্দ দাশের কবিতার বইটা বের করল। পাতা ওল্টাতে গিয়ে দেখল, ভেতরে একটা শুকনো গোলাপের পাপড়ি রাখা। কার দেওয়া, কবেকার—কিছুই মনে পড়ল না। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। পুজোর প্রথম দু-দিন, পঞ্চমী আর ষষ্ঠী, তার কাটল এক ধরনের ঘোরের মধ্যে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শিরা তাকে দেখতে আসছিল। তাদের চোখেমুখে ছিল বিস্ময়, কৌতূহল আর কিছুটা ঈর্ষা। “একেবারে সাহেব হয়ে গেছিস তো!” “বিলেতে কি কোনো মেমসাহেবকে বিয়ে করেছিস?”—এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সে ক্লান্ত এবং বিরক্ত হয়ে পড়ছিল। সে বারবার তার আইফোনটা দেখছিল, লন্ডনের অফিসের ইমেল চেক করছিল, যেন এই পরিচিত জগৎ থেকে পালানোর একটা রাস্তা খুঁজছিল। সে বুঝতে পারছিল, সে শারীরিকভাবে ফিরে এলেও, মানসিকভাবে সে তখনও লক্ষ মাইল দূরে, টেমসের ধারে দাঁড়িয়ে আছে। সে ঘরে ফিরেছে, কিন্তু তার ‘বাড়ি’ ফেরা এখনও বাকি। (চলবে)  

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion