Episode 12365 words1 views

দ্বাদশ অধ্যায়: শিরোনাম

পরের দিন 'মেট্রো ক্রনিকল'-এর প্রথম পাতা জুড়ে একটা ছবি ছিল। বালিগঞ্জের সেই ভিক্টোরিয়ান বাড়িটার। শিরোনাম: "কলকাতার বুকে কসাই ভাস্কর: সৌন্দর্যের আড়ালে সিরিয়াল কিলার, উদ্ধার ১৫টি 'মুখোশ'।" অনন্যা বোসের বাইলাইন। সারা শহর তোলপাড়। ডক্টর অরিন্দম রায়ের এই ভয়ঙ্কর 'গ্যালারি'র কথা শুনে মানুষ শিউরে উঠেছিল। পুলিশি তদন্তে জানা গেল, গত সতেরো বছর ধরে অরিন্দম রায় এই কাজ করে চলেছেন। উঠতি মডেল, অভিনেতা-অভিনেত্রী, যারা 'নিখুঁত' হওয়ার লোভে তার কাছে আসত, তাদেরকেই তিনি টার্গেট করতেন। তিনি প্রথমে তাদের প্লাস্টার কাস্ট নিতেন। তারপর তাদের সার্জারির নামে অজ্ঞান করে, তাদের মুখটা কেটে... সংরক্ষণ করতেন। আর শরীরটা... তার "মাস্টারপিস"-এর জন্য ব্যবহার করতেন বা 'ক্লিনিক্যাল ওয়েস্ট' হিসেবে পুড়িয়ে ফেলতেন। মিসেস গোমেস ছিলেন এই কেসের মূল সাক্ষী। তিনি অরিন্দম রায়ের বাবার আমল থেকে ওই বাড়িতে ছিলেন। তিনি জানতেন অরিন্দমের এই 'শখ'-এর কথা। প্রথমে তিনি ভয়ে চুপ করে থাকলেও, রিয়ার ঘটনাটা তাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। রিয়ার ডায়েরিটা তিনিই প্রথম খুঁজে পান এবং পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু ধরা পড়ে যান। এক সপ্তাহ পর। অনন্যা গঙ্গার ঘাটে বসে আছে। আজ রিয়ার শ্রাদ্ধ ছিল। তার মুখটা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেহটা নয়। শুভ তার পাশে এসে বসল। শুভর হাতে ব্যান্ডেজ। "কেমন আছিস?" "আছি," অনন্যা গঙ্গার দিকে তাকিয়ে বলল। "চ্যাটার্জি ফোন করেছিলেন। অরিন্দম রায় জেলের ভেতর আত্মহত্যা করেছেন। সেলের দেওয়ালে নিজের রক্ত দিয়ে একটা মুখ আঁকার চেষ্টা করছিলেন। পারফেক্ট ফেস।" অনন্যা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। "তোর স্টোরিটা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের জন্য নমিনেশন পেয়েছে," শুভ বলল। অনন্যা হাসল। একটা ক্লান্ত হাসি। "জানিস শুভ, ওই ল্যাবে, অরিন্দম রায় যখন আমার দিকে সিরিঞ্জটা নিয়ে এগোচ্ছিল, তখন ও একটা কথা বলেছিল। বলেছিল, আমার চোখে আগুন আছে। জীবন আছে। ও ঠিকই বলেছিল।" সে উঠে দাঁড়াল। "চল। অনেক কাজ বাকি। রঞ্জন বাবু আজকেও একটা নতুন অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছেন।" "কী?" "শহরের নতুন আর্ট গ্যালারি উদ্বোধন।" শুভ অবাক হয়ে অনন্যার দিকে তাকাল। "তুই যাবি?" "যাব। ভয়কে জয় না করতে পারলে, ভয়টাকেই মুখোশ বানিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। আমি আর মুখোশের আড়ালে বাঁচতে চাই না। আর তাছাড়া," অনন্যা হাসল, "ওটা আমার বিট (beat)। আর্ট অ্যান্ড কালচার। ওটা আমি ওই সাইকোপ্যাথটার জন্য ছাড়তে পারব না।" অনন্যা আর শুভ ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেল। গঙ্গার জল বয়ে চলেছিল, ঠিক যেমনটা সে তার প্রথম আর্টিকেলে লিখেছিল। কিন্তু আজকের সূর্যাস্তটা অনন্যার কাছে আর শুধু কাব্যিক ছিল না। এটা ছিল একটা প্রতিজ্ঞা। রিয়ার জন্য, তানিয়া দেশাইয়ের জন্য, আর সেইসব না-জানা মুখগুলোর জন্য, যাদের গল্পটা কেউ কোনোদিন লিখবে না।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion