Episode 11435 words0 views

একাদশ অধ্যায়: মুক্তি

অনন্যা বুঝতে পারল, তার হাতে আর সময় নেই। সে মরিয়া হয়ে কিছু একটা খুঁজছিল। তার হাতটা পাশের ট্রলিতে রাখা একটা সার্জিক্যাল ট্রে-তে লাগল। একটা স্ক্যালপেল। অরিন্দম রায় সিরিঞ্জটা পুশ করার আগেই, অনন্যা সমস্ত শক্তি দিয়ে স্ক্যালপেলটা তুলে নিল এবং সেটা সোজা অরিন্দম রায়ের হাতে ঢুকিয়ে দিল। "আহ্!" যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলেন অরিন্দম রায়। তার হাত থেকে সিরিঞ্জটা ছিটকে পড়ে গেল। অনন্যা এক মুহূর্তও দেরি করল না। সে অরিন্দম রায়কে ধাক্কা মেরে দৌড় দিল। "ওকে ধর!" অরিন্দম রায় তার অ্যাসিস্ট্যান্টকে চিৎকার করে নির্দেশ দিলেন। অরুণ, যে শুভর ক্যামেরাটা ভাঙছিল, সে অনন্যার দিকে ছুটে এলো। কিন্তু অনন্যা ল্যাব থেকে বেরিয়ে করিডোরে চলে এসেছে। "কোথায় পালাবে?" লোকটা তার পেছনে। অনন্যা 'স্টোরেজ' লেখা দরজাটা দেখতে পেল। সে ওটা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল এবং সাথে সাথে দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিল। ওপাশ থেকে অরুণ দরজায় ধাক্কা মারতে লাগল। অনন্যা হাঁপাচ্ছিল। ঘরটা অন্ধকার। এটা একটা স্টোররুম। কিন্তু এখানেও ওই ফরমালিনের গন্ধ। সে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল। নেটওয়ার্ক নেই। সে মোবাইলের টর্চটা জ্বালাল। এবং যা দেখল, তাতে তার আত্মা শুকিয়ে গেল। এই ঘরটা 'গ্যালারি'র থেকেও ভয়ঙ্কর। এটা বর্জ্যের ঘর। এখানে জারে রাখা মুখ নয়, এখানে ফেলে দেওয়া শরীরগুলো রাখা। বড় বড় কালো প্লাস্টিক ব্যাগে মোড়া। রিয়ার শরীরের বাকি অংশটাও হয়তো এখানেই... কিন্তু তার চোখ আটকে গেল ঘরের এক কোণে। একটা চেয়ারে একজন মহিলা বসে আছেন। তার হাত-পা বাঁধা। মুখে প্লাস্টার লাগানো। অনন্যা এগিয়ে গেল। "মিসেস গোমেস!" মিসেস গোমেস বেঁচে আছেন। তার চোখ খোলা। ভয়ে বিস্ফারিত। অনন্যা তার মুখের প্লাস্টার খুলে দিল। "আপনি? আপনি তো এয়ারপোর্টে গেছিলেন?" মিসেস গোমেস কাশতে কাশতে বললেন। "না। ও... ও আমাকে..." "কী?" "আমি... আমি সব জেনে ফেলেছিলাম। রিয়ার ব্যাপারে। আমি পুলিশকে জানাতে চেয়েছিলাম... তাই ও আমাকে..." অনন্যা মিসেস গোমেসের বাঁধন খুলে দিল। "কীভাবে বেরোব এখান থেকে?" "ওপাশে," মিসেস গোমেস একটা ছোট ভেন্টিলেটরের দিকে দেখালেন। "ওটা দিয়ে... ক্লিনিক্যাল ওয়েস্টের ব্যাগ... বাইরে যায়।" দরজায় ধাক্কার আওয়াজ আরও জোরে হচ্ছে। অরুণ দরজাটা ভাঙার চেষ্টা করছে। "আপনি যান," অনন্যা বলল। "তুমি?" "আমি শুভকে ছাড়া যাব না।" অনন্যা দরজাটা খুলল। অরুণ ধাক্কার চোটে হুমড়ি খেয়ে ভেতরে পড়ল। অনন্যা ঠিক সেই মুহূর্তে ট্রলিতে রাখা একটা বড় ফরমালিনের জার তুলে নিয়ে লোকটার মাথায় মারল। কাঁচ ভেঙে, ফরমালিন ছড়িয়ে লোকটা মেঝেতে পড়ে গেল। অনন্যা ছুটে ল্যাবে ফিরে এলো। অরিন্দম রায় তার হাত চেপে ধরে বসে আছেন। রক্ত পড়ছে। তার সেই শান্ত ভাব আর নেই। তিনি যন্ত্রণায় গোঙাচ্ছিলেন। "তুমি... তুমি আমার সৃষ্টিকে নষ্ট করে দিলে..." তিনি বিড়বিড় করছিলেন। শুভ তখনো অজ্ঞান। "অনন্যা!" দরজার বাইরে থেকে চ্যাটার্জির গলা। "দরজা খুলুন! পুলিশ!" দরজা ভেঙে পুলিশের দলটা বেসমেন্টে ঢুকে পড়ল। চ্যাটার্জি ল্যাবের দৃশ্য দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলেন। 'প্রাইভেট স্টুডিও'-র বীভৎস 'মাস্টারপিস'টা দেখে তার মতো পোড় খাওয়া পুলিশও বমি করে ফেলল। "সবাইকে অ্যারেস্ট করুন," তিনি কোনোক্রমে বললেন। অরিন্দম রায় হাসছিলেন। একটা পাগলের হাসি। "শিল্পী... আমি... অমর... আমার শিল্প অমর..."

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion