দুই দর্শনের সংঘাত
“আমার নাম ক্রিস্টফ,” লোকটা এগিয়ে আসতে আসতে বলল। “আর আমরাই হচ্ছি সেই লোক, যারা চায় না এই ইতিহাসটা কোনোদিন দিনের আলো দেখুক।”
ক্রিস্টফের চোখেমুখে কোনো তাড়া ছিল না। সে এমনভাবে এগিয়ে আসছিল, যেন পার্কে হাঁটতে বেরিয়েছে। তার পেছনে তার সশস্ত্র সঙ্গীরা অনীশ আর ইলাকে ঘিরে ফেলল।
“আপনারা ভাবছেন আমরা কারা, তাই তো?” ক্রিস্টফ বাক্সটার পাশে এসে দাঁড়াল। “আমরা কোনো দেশের গুপ্তচর নই। আমরা একটা স্বাধীন সংগঠন। আমাদের নাম ‘দ্য কাস্টোডিয়ানস’। আমাদের কাজ হলো, ইতিহাসের এমন কিছু বিপজ্জনক সত্যিকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা, যা প্রকাশ পেলে পৃথিবীতে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। ‘অপারেশন পোলারিস’ তার মধ্যে অন্যতম।”
“আপনারা…আপনারা এত বছর ধরে এটা পাহারা দিচ্ছেন?” অনীশ অবিশ্বাসের সাথে জিজ্ঞেস করল।
“হ্যাঁ। গ্রিফিন মারা যাওয়ার আগে আমাদের পূর্বসূরীদের এই দায়িত্বটা দিয়ে গিয়েছিল। আমরা বংশপরম্পরায় এই কাজটা করে আসছি। অরুণাভ রায় যখন এই রহস্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন, তখন আমাদের তাকে সরাতে হয়েছিল। আমরা তাকে মারতে চাইনি, শুধু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভদ্রলোক হার্ট অ্যাটাাক করে বসলেন।” ক্রিস্টফের গলায় একবিন্দু অনুশোচনা ছিল না।
“আপনারা খুনি!” ইলা চিৎকার করে উঠল।
ক্রিস্টফ হাসল। “প্রয়োজনের তাগিদে আমাদের অনেক কিছুই করতে হয়, মিস রায়।” সে অনীশের দিকে ফিরল। “আপনি সত্যের পূজারী, তাই না, মিস্টার সেনগুপ্ত? কিন্তু সব সত্য কি প্রকাশ পাওয়ার যোগ্য? আমার প্রপিতামহ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় একজন কূটনীতিক ছিলেন। তিনি এমন একটি সত্য ফাঁস করেছিলেন যা তার মতে ন্যায়সঙ্গত ছিল। ফল? হাজার হাজার নিরীহ মানুষ দাঙ্গায় মারা গিয়েছিল, আর আমার পরিবারকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি আমার পরিবারের সম্মান, সম্পত্তি—সবকিছু হারিয়েছি শুধু একটি ‘সত্য’-এর জন্য। সেদিনই আমি বুঝেছিলাম, মানবসমাজ সত্যের ভার নেওয়ার জন্য তৈরি নয়। স্থিতিশীলতার জন্য কিছু মিথ্যা, কিছু অর্ধসত্য আর কিছু গোপন রহস্যের প্রয়োজন হয়। আমরা সেই স্থিতিশীলতাকেই রক্ষা করি।”
ক্রিস্টফের কথায় এক ধরনের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, যা অনীশকে মুহূর্তের জন্য হলেও ভাবিয়ে তুলল। এটা শুধু ভালো আর মন্দের লড়াই নয়। এটা দুই বিপরীত দর্শনের সংঘাত।
“কিন্তু ইতিহাসকে লুকিয়ে রাখাটাও তো এক ধরনের মিথ্যাচার,” অনীশ পাল্টা যুক্তি দিল। “মানুষের অধিকার আছে নিজের অতীতকে জানার।”
“অধিকার?” ক্রিস্টফ ব্যঙ্গের সুরে হাসল। “অধিকারের চেয়ে অনেক বড় হলো সুরক্ষা। এই নথি প্রকাশ পেলে দুটি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংকট হবে, হয়তো যুদ্ধও লেগে যেতে পারে। হাজার হাজার মানুষ মরবে। সেই দায় কি আপনি নেবেন, মিস্টার সেনগুপ্ত? আপনার ব্যক্তিগত জেদের জন্য এতগুলো জীবনকে বিপদের মুখে ফেলবেন?”
অনীশ চুপ করে গেল। ক্রিস্টফের যুক্তিগুলো তার বিশ্বাসের গভীরে আঘাত করছিল।
“এখন আপনাদের সামনে দুটো রাস্তা আছে,” ক্রিস্টফ তার হাতের পিস্তলটা অনীশের দিকে তাক করল। “বাক্সটা আমাদের হাতে তুলে দিয়ে চুপচাপ এখান থেকে চলে যান। আমরা আপনাদের কোনো ক্ষতি করব না। আর দুই… আপনারা এখানেই পাহাড়ের গভীরে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়তে পারেন।”
অনীশ বুঝতে পারল, এরা তাদের জ্যান্ত ছাড়বে না। তারা একমাত্র সাক্ষী, যারা এই সংগঠনের অস্তিত্ব সম্পর্কে জেনে গেছে।
“আমাদের ভাবার জন্য একটু সময় দিন,” অনীশ বলল, যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করে। সে মরিয়া হয়ে পালানোর একটা পথ খুঁজছিল।
“অবশ্যই,” ক্রিস্টফ বলল। “আপনাদের কাছে পাঁচ মিনিট সময় আছে।”
অনীশ ইলার দিকে তাকাল। ইলার চোখেমুখে ভয়, কিন্তু তার সাথে একটা অদ্ভুত দৃঢ়তাও। সে অনীশের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, “আমার সাথে আসুন। আমি একটা রাস্তা চিনি।”
অনীশ অবাক হয়ে গেল। ইলা তাকে চোখের ইশারায় চেম্বারের এক কোণের দিকে তাকাতে বলল। সেখানে পাথরের দেওয়ালে একটা সরু ফাটল, যা অন্ধকারে প্রায় দেখাই যায় না।
“এটা কোথায় গেছে?” অনীশ ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।
“জানি না। দাদু বলত, এই গুহার অনেক গোপন পথ আছে। এটা হয়তো বাইরে যাওয়ার কোনো রাস্তা।”
“কিন্তু আমরা যাব কী করে?”
“আপনাকে একটা সুযোগ তৈরি করতে হবে,” ইলা বলল। “আমি তৈরি।”
অনীশ ক্রিস্টফের দিকে ফিরল। “ঠিক আছে। আমরা রাজি। আমরা বাক্সটা আপনাদের দিয়ে দেব।”
ক্রিস্টফের মুখে একটা विजयीর হাসি ফুটে উঠল। সে তার লোকদের ইশারা করল বাক্সটা তুলে নেওয়ার জন্য।
আর ঠিক সেই মুহূর্তে, অনীশ তার পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ভারি পাথর তুলে নিয়ে চেম্বারের ছাদে থাকা একটা বিশাল сталаকটাইটের দিকে ছুঁড়ে মারল। পাথরটা লেগে сталаকটাইটটা বিশাল একটা শব্দ করে ভেঙে পড়ল। ক্রিস্টফ আর তার লোকেরা চমকে পেছনে সরে গেল। গুহার মধ্যে ধুলো আর পাথরের কুচিতে ভরে গেল।
এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিল অনীশ আর ইলা। তারা দৌড়ে সেই সরু ফাটলটার দিকে এগিয়ে গেল।
“ধর ওদের!” ক্রিস্টফ রাগে চিৎকার করে উঠল।
দুটো লোক তাদের দিকে ছুটে এল। কিন্তু ফাটলটা এতটাই সরু যে একজন মানুষ কোনোমতে ঢুকতে পারে। অনীশ আগে ঢুকল, তারপর ইলা। তাদের পেছনে লোকগুলো গুলি চালাতে শুরু করল। কিন্তু সরু পথের মধ্যে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো।
ফাটলের ভেতরটা ছিল পিচ্ছিল আর অন্ধকার। তাদের হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে হচ্ছিল। অনীশের কাঁধের ক্ষতটা আবার খুলে গেছে, যন্ত্রণায় তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কিন্তু সে থামল না।
কিছুদূর যাওয়ার পর তারা দেখল, পথটা ওপরের দিকে উঠে গেছে। একটা প্রাকৃতিক চিমনি বা সুড়ঙ্গের মতো।
“আমাদের ওপরে উঠতে হবে,” ইলা বলল।
তারা সেই পাথরের দেওয়াল বেয়ে ওপরে উঠতে শুরু করল। কাজটা ছিল অপ্রাসঙ্গিক কঠিন আর বিপজ্জনক। নিচে তাদের শত্রুরাও সেই সুড়ঙ্গের মুখে এসে পৌঁছেছিল। তারা টর্চের আলো ফেলে তাদের দেখতে পেয়েছিল।
“ওরা পালাচ্ছে! গুলি চালাও!” ক্রিস্টফের গলা শোনা গেল।
কিন্তু সুড়ঙ্গটা এতটাই সংকীর্ণ যে গুলি চালানো প্রায় অসম্ভব। অনীশ আর ইলা তাদের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে ওপরে উঠতে লাগল। অবশেষে, একটা ভেজা মাটির গন্ধ তাদের নাকে এসে লাগল। তারা বুঝতে পারল, তারা বাইরের পৃথিবীর কাছাকাছি এসে পড়েছে।
একটা গাছের শিকড়ের ঝাড় ধরে টেনে অনীশ নিজেকে সুড়ঙ্গের মুখ থেকে বের করে আনল। তারপর সে হাত বাড়িয়ে ইলাকে টেনে তুলল।
তারা দেখল, তারা গুহার প্রবেশপথ থেকে বেশ কিছুটা দূরে, জঙ্গলের মধ্যে একটা জায়গায় এসে পড়েছে। সকালের আলো তখন গাছের পাতা চুঁইয়ে মাটিতে পড়ছে। তারা বেঁচে গেছে।
কিন্তু তাদের হাতে সেই ঐতিহাসিক বাক্সটা নেই। ওটা ক্রিস্টফ আর তার লোকদের হাতেই রয়ে গেছে।
“আমরা হেরে গেলাম, অনীশ,” ইলা হতাশ গলায় বলল। “সবকিছু শেষ হয়ে গেল।”
“না,” অনীশ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল। তার মুখে ছিল এক অদ্ভুত হাসি। “সবকিছু শেষ হয়নি। বরং সবকিছু মাত্র শুরু হলো।”
সে তার পকেট থেকে একটা ছোট, মেটালিক বস্তু বের করল। একটা পেনড্রাইভ।
“আমি যখন বাক্সটা পরীক্ষা করছিলাম, তখন আমি আমার ল্যাপটপের কার্ড রিডার দিয়ে ফাইলগুলোর একটা কপি করে নিয়েছিলাম। আসল নথি ওদের কাছে থাকতে পারে, কিন্তু প্রমাণ আমাদের কাছে।”
ইলার চোখ দুটো আনন্দে আর বিস্ময়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তারা হারেনি। তাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি।
উপসংহার: নতুন ভোরের অপেক্ষা
কয়েক সপ্তাহ পর।
স্থান: নতুন দিল্লির একটি সুরক্ষিত সরকারি ভবন।
অনীশ আর ইলা একটা কনফারেন্স রুমের ভেতরে বসে ছিল। তাদের সামনে বসেছিলেন ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার, মিস্টার অশোক ভার্মা, এবং সেনাবাহিনীর কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
টেবিলের ওপর একটা ল্যাপটপ খোলা, তাতে ‘অপারেশন পোলারিস’-এর স্ক্যান করা নথিগুলো দেখা যাচ্ছে। ঘরের পরিবেশটা গম্ভীর।
মিস্টার ভার্মা ফাইলগুলো থেকে চোখ তুলে অনীশ আর ইলার দিকে তাকালেন। “আপনারা যা করেছেন, তার জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। আপনারা ভারতের ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ উদ্ধার করেছেন।”
“কিন্তু আসল নথিগুলো তো আমরা আনতে পারিনি,” অনীশ বলল। “আর ‘দ্য কাস্টোডিয়ানস’ নামে ওই সংগঠনটা এখনো সক্রিয়।”
“সেটা নিয়ে আপনারা চিন্তা করবেন না,” একজন সেনা কর্মকর্তা বললেন। “আপনাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ঈগলস নেস্ট এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে তল্লাশি চালিয়েছি। আমরা কিছু প্রমাণ পেয়েছি। ক্রিস্টফ বা তার লোকদের ধরতে পারিনি, ওরা খুব চালাক। কিন্তু আমরা ওদের নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছি। ওদের ধরা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
“আর এই নথিগুলো?” ইলা জিজ্ঞেস করল। “এগুলো কি প্রকাশ করা হবে?”
মিস্টার ভার্মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। “না। এখনই নয়। এই তথ্যটা এতটাই স্পর্শকাতর যে, এটা প্রকাশ পেলে আন্তর্জাতিক মহলে একটা বড় ঝড় উঠবে। আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা কাম্য নয়। ক্রিস্টফের কথাগুলো হয়তো পুরোপুরি ভুল নয়। সব সত্য প্রকাশ করার একটা সঠিক সময় থাকে। আমরা এই ফাইলগুলোকে ‘টপ সিক্রেট’ হিসেবে আর্কাইভ করব। হয়তো ভবিষ্যতের কোনো সরকার সঠিক সময়ে এটাকে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেবে।”
অনীশ আর ইলা একে অপরের দিকে তাকাল। তারা কিছুটা হতাশ হলো, কিন্তু তারা পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছিল। সত্যকে শুধু খুঁজে বের করলেই হয় না, তাকে রক্ষা করার দায়িত্বও নিতে হয়।
“তবে আপনাদের অবদান দেশ ভুলবে না,” মিস্টার ভার্মা বললেন। “সরকার আপনাদের দুজনকে সম্মানিত করতে চায়। এবং মিস্টার সেনগুপ্ত, আপনার মতো একজন গবেষককে আমাদের প্রয়োজন। আপনার পারিবারিক ইতিহাস এবং এই অভিযানের অভিজ্ঞতা আপনাকে এক অমূল্য সম্পদে পরিণত করেছে। আপনি কি আমাদের আর্কাইভ ডিপার্টমেন্টে যোগ দিতে রাজি হবেন?”
অনীশের কাছে এটা ছিল একটা স্বপ্নের প্রস্তাব। সে সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল।
মিটিং শেষ হওয়ার পর তারা যখন বাইরে বেরিয়ে এল, তখন দিল্লির আকাশে পড়ন্ত বিকেলের আলো।
“আপনি তো এখন সরকারি লোক হয়ে গেলেন,” ইলা হাসতে হাসতে বলল। “কলকাতা ভুলে যাবেন না তো?”
“কখনোই না,” অনীশ বলল। “আর দার্জিলিং-কেও না। ঈগলস নেস্টের কী হবে?”
“ওটা এখন সরকারি সম্পত্তি। কিন্তু আমি আবেদন করেছি, যাতে ওটাকে একটা হেরিটেজ মিউজিয়াম বানিয়ে দেওয়া হয়। আমার দাদুর এটাই স্বপ্ন ছিল। আমি প্যারিসে হয়তো যেতে পারলাম না, কিন্তু পাহাড়ের ক্যানভাসে নিজের গল্পটা আঁকতে চাই।” ইলার গলায় কোনো আফসোস ছিল না, ছিল এক নতুন আত্মবিশ্বাস।
“খুব ভালো সিদ্ধান্ত,” অনীশ বলল।
তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ পাশাপাশি হাঁটল। অনেক কিছু বলার ছিল, কিন্তু কোনো কথাই যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাদের একসাথে কাটানো ভয়ঙ্কর কিন্তু উত্তেজনাপূর্ণ দিনগুলোর স্মৃতি তাদের মধ্যে একটা অদৃশ্য সেতু তৈরি করে দিয়েছিল।
“আপনি আবার কবে দার্জিলিং আসবেন?” ইলা নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল।
“খুব তাড়াতাড়ি,” অনীশ ইলার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল। “পাহাড়ের ডাক উপেক্ষা করা খুব কঠিন।”
এক বছর পর।
দার্জিলিং-এর আকাশে তখন নতুন সূর্য উঠছে। কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় সোনার মুকুট। ঈগলস নেস্ট এস্টেটটা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিষ্কার, অনেক বেশি জীবন্ত। বাংলোটাকে সারিয়ে তোলা হয়েছে। তার সামনে একটা বড় সাইনবোর্ডে লেখা—’অরুণাভ রায় মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনীশ আর ইলা একসাথে সূর্যোদয় দেখছিল। অনীশ এখন দিল্লির সরকারি আর্কাইভের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আর ইলা এই মিউজিয়ামের কিউরেটর।
“আজও বাতাসটা বইছে,” ইলা অনীশের কাঁধে মাথা রেখে বলল। “কিন্তু আজ আর কান্নার মতো শব্দ হয় না।”
“কারণ পাহাড় তার বুকের বোঝা নামাতে পেরেছে,” অনীশ বলল। “যে সত্যিটা সে এতদিন লুকিয়ে রেখেছিল, সেটা এখন সুরক্ষিত। তার আর কাঁদার কোনো কারণ নেই।”
পাইന് বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওয়ায় তখন এক নতুন সুর। সেটা কান্নার সুর নয়, সেটা মুক্তির সুর। অনীশ ইলার হাতটা শক্ত করে ধরল। তাদের অভিযান হয়তো শেষ হয়েছে, কিন্তু তাদের একসাথে পথ চলা মাত্র শুরু হলো। ইতিহাসের এক অজানা অধ্যায় তাদের মিলিয়ে দিয়েছে, আর তাদের সামনে অপেক্ষা করছে এক নতুন, সুন্দর ভবিষ্যৎ। পাহাড়ের কান্না অবশেষে থেমেছে।
~~সমাপ্ত~~
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion