Episode 11639 words0 views

নিশাচর প্রহরী : প্রথম অধ্যায়

This entry is part 1 of 8 in the series নিশাচর প্রহরীপুরোনো লাইব্রেরির শেষ প্রহরী কলকাতার এক পুরোনো গলির শেষ প্রান্তে, প্রায় জীর্ণ হয়ে যাওয়া এক বিশাল অট্টালিকার ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে ‘জ্ঞানদীপ’ লাইব্রেরি। এককালে এটি ছিল শহরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, যেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাঠকের আনাগোনা লেগেই থাকত। সারি সারি বইয়ের তাক, কাঠের মেঝেতে পাঠকের পায়ের মৃদু শব্দ, আর বাতাসে ভেসে বেড়ানো পুরোনো কাগজের মিষ্টি গন্ধ—সব মিলিয়ে এক জীবন্ত জ্ঞানালয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার জৌলুস ফিকে হয়ে এসেছে। আধুনিকতার ঝলমলে আলো আর ডিজিটাল স্ক্রিনের যুগে, কাগজের বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে। এখন সেখানে পাঠক তো দূরের কথা, দিনের বেলাতেও দু-চারটে কাক-চিল ছাড়া আর কারও দেখা মেলে না। লাইব্রেরির বিশাল কাঠের দরজাগুলো এখন প্রায়শই বন্ধ থাকে, আর তার গায়ে জমেছে ধূলোর পুরু আস্তরণ, যেন এক গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, যেন সময় এখানে থমকে গেছে, এক অদৃশ্য প্রাচীর তাকে ঘিরে রেখেছে। লাইব্রেরির ছাদ থেকে মাঝে মাঝে পলেস্তারা খসে পড়ত, দেয়ালগুলোতে স্যাঁতসেঁতে দাগ, আর জানালার কাঁচগুলো বহুদিনের অযত্নে ঘোলাটে হয়ে গিয়েছিল। প্রতিটি কোণে যেন এক দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে ছিল, যা পুরোনো দিনের গৌরব আর বর্তমানের নীরবতার মধ্যে এক অদ্ভুত বৈপরীত্য তৈরি করত। বাতাসে ভেসে বেড়াত এক অদ্ভুত মিশ্র গন্ধ—পুরোনো কাগজের সাথে মিশে থাকত স্যাঁতসেঁতে দেয়ালের গন্ধ, আর তার সাথে একরকম চাপা, মৃত গন্ধ, যা অরুণের স্নায়ুতে এক অজানা ভয় জাগিয়ে তুলত। এই বিশাল, নীরব লাইব্রেরির শেষ প্রহরী অরুণ। বয়স তার ষাটের কোঠায়, চুল পেকে সাদা হয়ে গেছে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, যা তার গভীর চিন্তাশীল চোখগুলোকে আরও রহস্যময় করে তোলে। গত চল্লিশ বছর ধরে সে এই লাইব্রেরির দেখভাল করছে। তার জীবন বলতে এই লাইব্রেরিই। এখানেই তার সকাল হয়, এখানেই রাত নামে। বইয়ের গন্ধ, পুরোনো কাগজের মচমচে শব্দ আর নীরবতার গভীরে লুকিয়ে থাকা ফিসফিসানি—এগুলোই তার একমাত্র সঙ্গী। অরুণ অবিবাহিত, তার কোনো নিকটাত্মীয়ও নেই। ছোটবেলায় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সে তার বাবা-মাকে হারিয়েছিল, এবং সেই স্মৃতি তাকে আজও তাড়া করে বেড়ায়। লাইব্রেরির বইগুলোই ছিল তার একমাত্র আশ্রয়, তার ক্ষতবিক্ষত আত্মাকে শান্ত করার একমাত্র উপায়। সে বিশ্বাস করত, প্রতিটি বইয়ের ভেতরে এক নতুন জীবন লুকিয়ে আছে, যা তাকে তার অতীতের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। সে প্রতিদিন সকালে এসে লাইব্রেরির প্রতিটি তাক সযত্নে ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করে, বইগুলো গুছিয়ে রাখে। তার কাছে প্রতিটি বই শুধু কাগজের স্তূপ নয়, যেন একেকটি জীবন্ত সত্তা, একেকটি গল্প, একেকটি ইতিহাস। সে জানে কোন তাকে কোন লেখকের বই আছে, কোন বইয়ের পাতা হলুদ হয়ে গেছে, আর কোন বইয়ের মলাট আলগা হয়ে ঝুলে আছে। সে তাদের নীরব বন্ধু, তাদের বিশ্বস্ত অভিভাবক, তাদের গোপন কথাগুলোর একমাত্র শ্রোতা। অরুণ প্রায়শই বইয়ের পাতায় হাত বুলিয়ে দিত, যেন সে তাদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছে, তাদের পুরোনো গল্পগুলো শুনতে চাইছে। তার মনে হতো, এই বইগুলোই তার একমাত্র সত্যিকারের বন্ধু, যারা কখনো তাকে ছেড়ে যাবে না। তার প্রতিদিনের কাজ কেবল ঝাড়পোছ করা নয়, বরং প্রতিটি বইয়ের সাথে এক অদৃশ্য কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া, তাদের নীরব অস্তিত্বকে অনুভব করা। দিনের বেলা লাইব্রেরিটা একরকম, আর রাত নামলে তার রূপ যায় পাল্টে। যখন শেষ আলোটুকুও মিলিয়ে যায়, আর বাইরের কোলাহল স্তব্ধ হয়ে আসে, তখন লাইব্রেরির ভেতরে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে আসে। এই নীরবতা সাধারণ নীরবতা নয়, এর মধ্যে যেন হাজারো গল্প, হাজারো চরিত্র শ্বাস নেয়। অরুণ প্রায়শই অনুভব করে, পুরোনো বইয়ের তাক থেকে যেন মৃদু ফিসফিসানি ভেসে আসছে, পুরোনো দিনের পাতার মচমচ শব্দ যেন বাতাসে ভাসছে। কখনও কখনও তার মনে হয়, বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে ছায়ামূর্তি হেঁটে বেড়াচ্ছে, যেন গল্পের চরিত্ররা তাদের পাতা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে, নিজেদের অসম্পূর্ণ গল্পগুলো শেষ করার জন্য। প্রথম প্রথম অরুণ ভাবত, এ হয়তো তার একাকীত্বের ফল, মনের ভুল। তার বয়স হয়েছে, হয়তো দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি দুর্বল হয়ে আসছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই অনুভূতিগুলো আরও স্পষ্ট হতে শুরু করল। রাতের বেলা যখন সে লাইব্রেরির করিডোর ধরে হেঁটে যেত, তার মনে হতো যেন অদৃশ্য চোখ তাকে অনুসরণ করছে, তার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন নীরবতার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। কখনও কখনও সে দেখত, কোনো বইয়ের পাতা হঠাৎ করেই উল্টে যাচ্ছে, বা কোনো তাক থেকে একটা বই আলগা হয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে, অথচ সেখানে কোনো বাতাস নেই, এমনকি জানালাও বন্ধ। একবার তো সে স্পষ্ট শুনতে পেল, একটি পুরোনো কবিতার বই থেকে যেন কেউ মৃদুস্বরে কবিতা আবৃত্তি করছে, কিন্তু যখন সে উৎস খুঁজতে গেল, শব্দটা মিলিয়ে গেল, শুধু এক হিমশীতল নীরবতা তাকে ঘিরে রইল। তার মনে এক চাপা ভয় আর কৌতূহল দানা বাঁধতে শুরু করল। সে বুঝতে পারছিল, এই লাইব্রেরিতে কিছু একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে, যা তার চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতার বাইরে। এই ঘটনাগুলো তাকে ঘুমাতে দিত না, তার মনকে এক অজানা আশঙ্কায় আচ্ছন্ন করে রাখত। সে অনুভব করত, লাইব্রেরির প্রতিটি কোণ যেন এক অজানা শক্তির দ্বারা আচ্ছন্ন, যা তাকে এক গভীর রহস্যের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তার মনে হতো, লাইব্রেরির প্রতিটি ছায়া যেন এক অজানা জীবন্ত সত্তার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা তার পরিচিত জগতের বাইরে। তবে, এই নীরবতার মাঝে সম্প্রতি এক নতুন উপদ্রব দেখা দিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে, এক অদ্ভুতদর্শন বৃদ্ধ প্রায় প্রতিদিনই লাইব্রেরির সামনে এসে দাঁড়ান। তাঁর নাম প্রফেসর মিত্র। লম্বা, রোগা গড়ন, কাঁধে একটি পুরোনো চামড়ার ব্যাগ, আর চোখে মোটা কাঁচের চশমা। তাঁর তীক্ষ্ণ চোখজোড়া লাইব্রেরির জীর্ণ দেয়াল ভেদ করে যেন ভেতরের রহস্য উন্মোচন করতে চাইত। অরুণ প্রথম দিকে তাকে একজন কৌতূহলী পথচারী ভেবেছিল, কিন্তু প্রফেসর মিত্রের উপস্থিতি ক্রমশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠছিল। তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইব্রেরির বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতেন, কখনও মৃদু হাসতেন, কখনও আবার তাঁর চোখজোড়া এক অশুভ আভায় ঝলসে উঠত। অরুণ তাকে দেখেও না দেখার ভান করত, কিন্তু প্রফেসর মিত্রের উপস্থিতি তার স্নায়ুতে এক চাপা উত্তেজনা তৈরি করত। এক রাতে, অরুণ লাইব্রেরির প্রধান হলঘরে বসে পুরোনো একটা বইয়ের মলাট সেলাই করছিল। বাইরে তখন ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে, বিদ্যুতের ঝলকানিতে পুরোনো কাঠের জানালাগুলো কেঁপে উঠছিল, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি তাদের ধাক্কা দিচ্ছে। প্রতিটি বজ্রপাত লাইব্রেরির নীরবতাকে আরও গভীর করে তুলছিল। হঠাৎ করেই সে অনুভব করল, তার পেছনের তাক থেকে একটা ঠান্ডা বাতাস এসে তাকে ছুঁয়ে গেল। বাতাসটা এতটাই ঠান্ডা ছিল যে তার মেরুদণ্ড দিয়ে এক শিহরণ বয়ে গেল, যেন বরফের মতো ঠান্ডা কোনো অদৃশ্য হাত তাকে স্পর্শ করেছে। সে দ্রুত ঘুরে তাকাল, কিন্তু কিছু দেখতে পেল না। শুধু দেখল, একটি পুরোনো, মোটা চামড়ার মলাটের বই, যেটা সে বহু বছর ধরে একই জায়গায় দেখে আসছে, সেটা যেন মৃদু আলো ছড়াচ্ছে। আলোটা এতটাই ক্ষীণ যে, যদি অরুণ গভীর মনোযোগ না দিত, তাহলে হয়তো দেখতেই পেত না। বইটির মলাটে কোনো নাম লেখা ছিল না, শুধু কিছু অদ্ভুত, দুর্বোধ্য প্রতীক খোদাই করা ছিল, যা দেখে মনে হচ্ছিল কোনো প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। অরুণ বহুবার এই বইটি হাতে নিয়েছে, কিন্তু এর ভেতরে কী আছে তা বুঝতে পারেনি। এটি লাইব্রেরির সবচেয়ে পুরোনো এবং রহস্যময় বইগুলির মধ্যে একটি ছিল। বইটি যেন তাকের মধ্যে অন্য সব বই থেকে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তার চারপাশে একরকম অদৃশ্য শক্তি খেলা করছিল। সেই প্রতীকগুলো যেন অরুণের দিকে তাকিয়ে ছিল, তাদের মধ্যে একরকম চাপা শক্তি লুকিয়ে ছিল। বইটির নাম ‘অস্তিত্বের ডায়েরি’। অরুণ জানে, এই বইটি বহু বছর ধরে কেউ স্পর্শ করেনি। এটি একটি পুরোনো, হাতে লেখা পুঁথি, যার ভাষা অনেকটাই দুর্বোধ্য, যেন কোনো বিলুপ্ত ভাষার শেষ চিহ্ন। অরুণ বহুবার চেষ্টা করেছে এটি পড়তে, কিন্তু সফল হয়নি। আজ এই আলো দেখে তার কৌতূহল বেড়ে গেল। তার মনে হলো, এই আলো যেন তাকে ডাকছে, তাকে কিছু বলতে চাইছে, যেন বইটির ভেতরে কোনো জীবন্ত সত্তা তার সাথে যোগাযোগ করতে চাইছে। সে সাবধানে বইটি তাক থেকে নামাল। কিন্তু বইটি যেন তাক থেকে সরতে চাইল না, এক অদৃশ্য শক্তি তাকে আটকে রেখেছিল। অরুণকে আরও শক্তি প্রয়োগ করতে হলো, যেন সে কোনো প্রাচীন বাঁধন ছিন্ন করছে। তার হাতের পেশীগুলো টানটান হয়ে উঠল, যেন সে কোনো অদৃশ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে লড়াই করছে। অবশেষে, একটি মৃদু কম্পনের সাথে বইটি তার হাত থেকে আলগা হলো। বইটি তার হাতের তালুতে এসে পড়তেই তার শরীর দিয়ে এক তীব্র বিদ্যুতের ঝলক বয়ে গেল, যেন সে কোনো প্রাচীন শক্তির সাথে সংযুক্ত হয়েছে। বইটি হাতে নিতেই অরুণ অনুভব করল, তার শরীর দিয়ে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল, যেন বিদ্যুতের এক ঝলক তার শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ল। বইয়ের মলাট যেন জীবন্ত হয়ে উঠল, তার হাতের তালুতে এক উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল, যা তার হৃদপিণ্ডকে দ্রুত স্পন্দিত করে তুলল। সে বইটি খুলল। ভেতরে পুরোনো, হলুদ হয়ে যাওয়া পাতাগুলো যেন এক অদৃশ্য শক্তির দ্বারা নড়াচড়া করতে লাগল, যেন তারা নিজেদের গল্প বলতে চাইছে। পাতার পর পাতা উল্টে যেতে লাগল দ্রুত, যেন বইটা নিজেই কিছু দেখাতে চাইছে, তার ভেতরের রহস্য উন্মোচন করতে চাইছে, অরুণের সামনে এক নতুন জগতের দ্বার খুলতে চাইছে। হঠাৎ করেই, একটি পাতা থেকে এক ঝলক তীব্র নীল আলো বেরিয়ে এসে অরুণের চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দিল। আলোর ঝলকানিতে লাইব্রেরির পুরোনো আসবাবপত্রগুলো যেন ক্ষণিকের জন্য জীবন্ত হয়ে উঠল, তাদের ছায়াগুলো অদ্ভুত ভঙ্গিতে নাচতে লাগল। বাতাসে এক তীব্র ধাতব গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল, যেন কোনো প্রাচীন যন্ত্র জেগে উঠেছে। হঠাৎ করেই একটি পাতা এসে থামল, যেখানে একটি অদ্ভুত চিত্র আঁকা ছিল—একটি গোলক, যার চারপাশে অসংখ্য ছোট ছোট বিন্দু ঘুরছে, আর মাঝখানে একটি খোলা বই। চিত্রের নিচে কিছু দুর্বোধ্য প্রতীক আঁকা ছিল, যা অরুণের কাছে আরও রহস্যময় মনে হলো। অরুণ অবাক হয়ে দেখল, চিত্রটি থেকে একটি হালকা নীলচে আভা বেরিয়ে আসছে, যা লাইব্রেরির অন্ধকার হলঘরকে আলোকিত করে তুলছে। এই আলো যেন লাইব্রেরির পুরোনো ধূলো আর অন্ধকারের মধ্যে এক নতুন জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছিল, এক নতুন আশার ঝলক। কিন্তু এই আলোর মধ্যে একরকম শীতলতাও ছিল, যা অরুণের মনে এক চাপা ভয় জাগাচ্ছিল। তার মনে হলো, এই গোলকটি যেন কোনো প্রাচীন রহস্যের প্রবেশদ্বার, যা তাকে এক অজানা বিপদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। চিত্রটি থেকে একটি মৃদু গুঞ্জন ভেসে আসছিল, যা অরুণের মনকে এক গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন করে তুলল। সে জানত না, এই গোলক তাকে কোথায় নিয়ে যাবে, কিন্তু তার কৌতূহল তাকে থামতে দিল না। অরুণ বুঝতে পারল, এই বই সাধারণ কোনো বই নয়। এর মধ্যে কিছু একটা রহস্য লুকিয়ে আছে, যা এতদিন তার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। তার মনে হলো, এই লাইব্রেরির নীরবতা, এই ফিসফিসানি, এই ছায়ামূর্তি—সবকিছুর পেছনেই এই বইয়ের কোনো না কোনো ভূমিকা আছে। সে জানত না কী অপেক্ষা করছে তার জন্য, কিন্তু তার মন তাকে বলল, এই বইয়ের রহস্য উন্মোচন করা তার দায়িত্ব। কারণ সে এই ‘জ্ঞানদীপ’ লাইব্রেরির শেষ প্রহরী, এবং সম্ভবত একমাত্র আশার আলো, যা এই জীর্ণ লাইব্রেরিকে তার পুরোনো গৌরব ফিরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এই দায়িত্বের পেছনে কী ভয়ঙ্কর সত্য লুকিয়ে আছে, তা সে তখনো জানত না। তার মনে হলো, সে যেন এক গভীর, অন্ধকার খাদে পা রাখতে চলেছে, যার তলদেশ সে দেখতে পাচ্ছে না। এই খাদে পা রাখার অর্থ ছিল, তার পরিচিত জগতের সমস্ত ধারণাকে পেছনে ফেলে আসা, এক অজানা বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া। তার অতীতের যন্ত্রণা, তার একাকীত্ব যেন এই রহস্যের সাথে মিশে এক নতুন পথ খুলে দিচ্ছিল। (চলবে)

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion