Episode 21673 words0 views

নিশাচর প্রহরী : দ্বিতীয় অধ্যায়

বইয়ের পাতার ফিসফিস ‘অস্তিত্বের ডায়েরি’ হাতে নিয়ে অরুণ স্তম্ভিত হয়ে বসে রইল। নীলচে আভাটি ক্রমশ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছিল, আর তার সাথে সাথে লাইব্রেরির ভেতরে এক অদ্ভুত সুর বাজতে শুরু করল। সুরটা যেন হাজারো পুরোনো গল্পের সম্মিলিত ফিসফিসানি, যা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। সুরটা কখনও মৃদু গুঞ্জনের মতো, কখনও আবার তীব্র আর্তনাদের মতো শোনাচ্ছিল, যেন প্রতিটি বই তাদের ভেতরের আবেগ প্রকাশ করছে, তাদের চাপা ভয় আর যন্ত্রণা প্রকাশ করছে। অরুণ অনুভব করল, লাইব্রেরির প্রতিটি বই যেন এই সুরের সাথে তাল মিলিয়ে কাঁপছে, তাদের মলাট থেকে মৃদু আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে, যা হলঘরের প্রতিটি কোণকে আলোকিত করে তুলছিল। কিন্তু এই আলোয় একরকম অস্থিরতা ছিল, যেন তারা কোনো বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাতাসে ভেসে বেড়ানো পুরোনো কাগজের গন্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠল, যেন লাইব্রেরি নিজেই তার সমস্ত পুরোনো স্মৃতি উগরে দিচ্ছে। সে সাবধানে বইটির আলোকিত পাতাটি স্পর্শ করল। তার আঙুলের স্পর্শে চিত্রটি যেন জীবন্ত হয়ে উঠল। গোলকের চারপাশে ঘুরতে থাকা বিন্দুগুলো দ্রুত ঘুরতে শুরু করল, আর মাঝখানের খোলা বইটি থেকে একটি উজ্জ্বল আলোর রেখা বেরিয়ে এসে অরুণের দিকে ধেয়ে এল। আলোটি এতটাই তীব্র ছিল যে অরুণ চোখ বন্ধ করে ফেলল, তার মনে হলো যেন সে এক অন্য মাত্রায় প্রবেশ করছে, তার শরীর যেন বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আলোটি তাকে আঘাত করল না, বরং তার চারপাশে একটি বৃত্ত তৈরি করল, যা তাকে এক অদ্ভুত উষ্ণতায় ঘিরে রাখল, যেন এক অদৃশ্য সুরক্ষা বলয়। তবে এই উষ্ণতার মধ্যেও একরকম চাপা উত্তেজনা ছিল, যেন সে এক অজানা যাত্রার মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তার মনে হলো, সে যেন কোনো প্রাচীন জাদুর ফাঁদে আটকা পড়েছে, যেখানে তার নিজের ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই। যখন সে চোখ খুলল, সে দেখল সে আর লাইব্রেরির প্রধান হলঘরে নেই। তার চারপাশটা বদলে গেছে। সে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল করিডোরে, যার দু’পাশে সারি সারি বইয়ের তাক। কিন্তু এই তাকগুলো ‘জ্ঞানদীপ’ লাইব্রেরির তাকের মতো জীর্ণ নয়। এগুলি উজ্জ্বল, ঝকঝকে, এবং প্রতিটি বইয়ের মলাট থেকে এক অদ্ভুত দ্যুতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। করিডোরের ছাদ এত উঁচু যে তার শেষ দেখা যায় না, যেন এটি অনন্তের দিকে চলে গেছে, আর মেঝেতে যেন তারাদের আলো বিছানো, যা দেখে মনে হচ্ছিল যেন সে গ্যালাক্সির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। করিডোরের বাতাসে এক মিষ্টি, পুরোনো কাগজের গন্ধ ভাসছে, যা অরুণের মনকে শান্ত করে তুলল, কিন্তু তার মনে একরকম কৌতূহল আর বিস্ময় দানা বাঁধছিল। করিডোরের দেয়ালগুলো যেন জীবন্ত ছিল, তাদের উপর অসংখ্য ভাষার অক্ষর নাচছিল, যা মানুষের চোখের পক্ষে বোঝা অসম্ভব। অরুণ বুঝতে পারল, সে ‘অস্তিত্বের ডায়েরি’র মাধ্যমে অন্য কোনো এক জগতে প্রবেশ করেছে। তার মন বিস্ময়ে ভরে গেল। সে সাবধানে করিডোর ধরে হাঁটতে শুরু করল। প্রতিটি বইয়ের তাকের পাশ দিয়ে যেতেই সে শুনতে পেল, বইগুলো যেন নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলছে। সে কান পেতে শুনল, আর অবাক হয়ে দেখল, সে তাদের ভাষা বুঝতে পারছে। তাদের কণ্ঠস্বর ছিল মৃদু, কিন্তু তাদের কথায় ছিল এক গভীর বেদনা, এক চাপা ভয়, যেন তারা কোনো ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন। “নতুন একজন এসেছে,” একটি পুরোনো মহাকাব্যের বই ফিসফিস করে বলল, যার মলাটে ধুলোর বদলে যেন তারার গুঁড়ো লেগে আছে, তার পাতাগুলো যেন সময়ের সাথে সাথে আরও উজ্জ্বল হয়েছে। কিন্তু তার কণ্ঠে ছিল একরকম দীর্ঘশ্বাস, যেন সে বহু যুদ্ধের সাক্ষী। তার পাতা থেকে একরকম মৃদু আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল, যা তার ভেতরের গল্পকে প্রকাশ করছিল। “সে কি আমাদের রক্ষা করতে এসেছে?” একটি রোম্যান্টিক উপন্যাসের বই প্রশ্ন করল, তার পাতাগুলো যেন ভয়ে কাঁপছে, তার ভেতরের প্রেম কাহিনি যেন বিপন্ন, তার কণ্ঠস্বরে ছিল একরকম আকুতি। তার মলাটে একটি গোলাপের ছবি ছিল, যা এখন প্রায় বিবর্ণ। “ছায়ারা তো সব কেড়ে নিচ্ছে,” একটি ইতিহাসের বই দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তার মলাট যেন সময়ের ভারে নুয়ে পড়েছে, তার প্রতিটি পাতায় যেন হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার আর্তনাদ। “আমাদের অস্তিত্ব মুছে যাচ্ছে, আমরা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছি। ওরা আমাদের গল্পগুলোকেও বিকৃত করছে, তাদের মূল অর্থ নষ্ট করে দিচ্ছে।” অরুণ বুঝতে পারল, এই বইগুলো জীবন্ত। তারা যেন তাদের ভেতরের গল্পগুলো নিয়েই কথা বলছে। সে আরও এগিয়ে গেল। করিডোরের শেষে সে দেখতে পেল একটি বিশাল খোলা জায়গা, যেখানে অসংখ্য বই বাতাসে ভাসছে, আর তাদের পাতা থেকে আলোর রেখা বেরিয়ে আসছে। এই আলোর রেখাগুলো যেন একে অপরের সাথে মিশে এক অদ্ভুত নকশা তৈরি করছে, যা দেখে মনে হচ্ছিল যেন এক বিশাল, জীবন্ত ব্রেন, যা সমস্ত জ্ঞান আর স্মৃতি ধারণ করে আছে। কিন্তু এই উজ্জ্বলতার মধ্যেও একরকম অস্থিরতা ছিল, যেন এই জ্ঞানও বিপন্ন। বাতাসে একরকম চাপা গুঞ্জন ভেসে আসছিল, যা অরুণের মনে এক অজানা আশঙ্কার সৃষ্টি করছিল। হঠাৎ করেই তার সামনে একটি ছায়ামূর্তি ভেসে উঠল। মূর্তিটি মানুষের মতো দেখতে, কিন্তু তার শরীরটা যেন কালো ধোঁয়ায় তৈরি, যা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছিল, কখনও মানুষের মুখ, কখনও বীভৎস প্রাণীর রূপ ধারণ করছিল। তার চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছে লাল আলোয়, যেন দুটি জ্বলন্ত অঙ্গার, আর তার মুখ থেকে একরকম ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে আসছিল, যা অরুণের শরীরকে ঠান্ডা করে দিচ্ছিল, তার শ্বাসরোধ করে দিচ্ছিল। অরুণ ভয়ে পিছিয়ে গেল, তার হৃদপিণ্ড দ্রুত স্পন্দিত হতে লাগল, তার মনে এক তীব্র আতঙ্ক জাগল। এই ছায়ামূর্তিটি যেন তার সমস্ত ভয়কে মূর্ত করে তুলেছিল। তার উপস্থিতি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে করিডোরের আলোও যেন ম্লান হয়ে আসছিল। “কে তুমি?” ছায়ামূর্তিটি একটি গভীর, খসখসে স্বরে প্রশ্ন করল। তার স্বর যেন লাইব্রেরির পুরোনো দেয়াল থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, অরুণের কানে যেন বিষ ঢেলে দিচ্ছিল, তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিতে চাইছিল। তার প্রতিটি শব্দে ছিল একরকম প্রাচীন ক্ষমতা, যা মানুষের মনকে গ্রাস করতে পারে। ছায়ামূর্তিটির কণ্ঠস্বর যেন অরুণের মনের গভীরে প্রবেশ করছিল, তার সমস্ত দুর্বলতাকে উন্মোচন করছিল। অরুণ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “আমি অরুণ, ‘জ্ঞানদীপ’ লাইব্রেরির প্রহরী।” তার কণ্ঠস্বর কিছুটা কাঁপছিল, কিন্তু সে নিজেকে দৃঢ় রাখার চেষ্টা করল, তার চোখে ছিল দৃঢ় সংকল্প, যা তার ভয়কে আড়াল করছিল। ছায়ামূর্তিটি যেন হাসল। তার হাসিটা ছিল ঠান্ডা আর নিষ্ঠুর, যেন হাজারো বছরের জমে থাকা অন্ধকারের হাসি, যা অরুণের মেরুদণ্ড দিয়ে এক শিহরণ বয়ে গেল। “প্রহরী? তুমি কি জানো তুমি কোথায় এসেছ? এটা বইয়ের জগৎ, যেখানে গল্পরা প্রাণ পায়। আর আমরা, ছায়ারা, এই প্রাণ কেড়ে নিই। আমরা অস্তিত্বের শূন্যতা থেকে উঠে আসি, তোমাদের ভুলে যাওয়া স্মৃতিই আমাদের খাদ্য। আমরা তোমাদের গল্পগুলোকে বিকৃত করি, তাদের অর্থ মুছে দিই, তাদের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিই।” অরুণ প্রশ্ন করল, “কেন? তোমরা কেন এমন করছ?” তার মনে এক তীব্র ক্রোধ জাগল, এই ছায়ারা তার প্রিয় লাইব্রেরিকে ধ্বংস করছে, তার প্রিয় বইগুলোর অস্তিত্ব কেড়ে নিচ্ছে, তাদের পবিত্রতাকে নষ্ট করছে। “কারণ আমরা অন্ধকার। আমরা স্মৃতি খাই, আমরা গল্প খাই। যখন কোনো গল্প ভুলে যায়, যখন কোনো চরিত্র হারিয়ে যায়, তখন আমরা শক্তিশালী হই।” ছায়ামূর্তিটি অরুণের দিকে আরও এক পা এগিয়ে এল, তার কালো ধোঁয়াময় শরীর থেকে একরকম ঠান্ডা শক্তি বিচ্ছুরিত হচ্ছিল, যা অরুণের শ্বাসরোধ করে দিচ্ছিল, তার আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছিল। “আর তোমার লাইব্রেরিটা তো এখন ভুলেই গেছে সবাই। তাই আমরা সেখানেও প্রবেশ করেছি। তোমার লাইব্রেরি এখন আমাদের খেলার মাঠ, যেখানে আমরা আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করি, এবং তোমাদের অস্তিত্বকে গ্রাস করি।” ছায়ামূর্তিটির প্রতিটি শব্দ যেন অরুণের মনে এক তীব্র বিষাদ জাগিয়ে তুলছিল, যেন সে তার সমস্ত আশা কেড়ে নিতে চাইছে। অরুণ বুঝতে পারল, এই ছায়ামূর্তিগুলোই ‘জ্ঞানদীপ’ লাইব্রেরির ভেতরে দেখা যাওয়া রহস্যময় ছায়া। তারাই বইয়ের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, আর তাই লাইব্রেরিটা জীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তার মনে এক দৃঢ় সংকল্প জন্ম নিল। সে এই ছায়াদের থামাতে হবে, তার লাইব্রেরিকে বাঁচাতে হবে, এই বইয়ের জগৎকে রক্ষা করতে হবে, এবং সমস্ত গল্পের পবিত্রতা ফিরিয়ে আনতে হবে। “আমি তোমাদের এটা করতে দেব না,” অরুণ দৃঢ় কণ্ঠে বলল। তার কণ্ঠস্বরে এখন কোনো ভয় ছিল না, শুধু দৃঢ়তা, যা তার ভেতরের শক্তিকে প্রকাশ করছিল, তার আত্মবিশ্বাসকে জাগিয়ে তুলছিল। ছায়ামূর্তিটি তার দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকাল। “তুমি একা কী করবে? তুমি তো শুধু একজন মানুষ। এই জগৎ তোমার জন্য নয়। তুমি আমাদের শক্তির কাছে তুচ্ছ, তুমি আমাদের থামাতে পারবে না। তোমার নশ্বর জীবন আমাদের কাছে কিছুই নয়।” ছায়ামূর্তিটির চোখ থেকে এক তীব্র লাল আলো বেরিয়ে এল, যা অরুণের আত্মাকে বিদ্ধ করতে চাইল। ঠিক তখনই, অরুণের পাশ থেকে একটি উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি বেরিয়ে এল। সে দেখল, একটি পুরোনো রূপকথার বই থেকে একটি ছোট, উজ্জ্বল পরী বেরিয়ে এসেছে। পরীটির ডানা ছিল প্রজাপতির মতো স্বচ্ছ, আর তার শরীর থেকে সোনালী আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল, যা অন্ধকার করিডোরকে আলোকিত করে তুলছিল। তার নাম আভা। আভা তার চারপাশে ঘুরতে লাগল, আর তার ডানা থেকে সোনালী গুঁড়ো ঝরে পড়ল, যা ছায়ামূর্তির দিকে ধেয়ে গেল, যেন আলোর তীর। ছায়ামূর্তিটি যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠল, যেন আলো তাকে আঘাত করছে, তার কালো ধোঁয়াময় শরীর থেকে একরকম বিকট শব্দ বের হলো। আভা ছিল প্রাচীন রূপকথার এক রক্ষক, যার অস্তিত্ব মানুষের বিশ্বাসে বাঁধা। তার চোখে ছিল জ্ঞানের গভীরতা আর অদম্য সাহস। “ও একা নয়,” আভা একটি মিষ্টি, ঝনঝনে স্বরে বলল, তার কণ্ঠস্বর যেন হাজারো ঘণ্টাধ্বনির মতো শোনাচ্ছিল, যা অরুণের কানে এক নতুন আশার সঞ্চার করল। “আমরা আছি ওর সাথে। আমরা গল্পের চরিত্ররা, আমরা আমাদের অস্তিত্বের জন্য লড়ব। আমরা আমাদের গল্পকে মরতে দেব না, আমরা আমাদের বিশ্বাসকে হারাতে দেব না। আমাদের গল্পই আমাদের শক্তি, যা তোমরা কখনো বুঝতে পারবে না।” ছায়ামূর্তিটি গর্জন করে উঠল। “তোমরা শুধু কাল্পনিক চরিত্র! তোমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। তোমরা শুধু মানুষের মস্তিষ্কের কল্পনা, তোমরা অস্তিত্বহীন, তোমরা আমাদের কাছে খেলনা মাত্র। তোমাদের অস্তিত্ব আমাদের হাতে!” “আমাদের ক্ষমতা আমাদের গল্পে,” আভা বলল। “আর গল্পরা কখনো মরে না, যদি কেউ তাদের মনে রাখে। যতক্ষণ একজন মানুষও আমাদের মনে রাখবে, আমরা ততদিন বেঁচে থাকব। আমাদের গল্পই আমাদের শক্তি, আমাদের অস্তিত্ব। তোমরা আমাদের গল্পকে বিকৃত করতে পারো, কিন্তু ধ্বংস করতে পারবে না। আমাদের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্যই তোমাদের জন্য বিষ।” অরুণ বুঝতে পারল, এই আভা তাকে সাহায্য করতে এসেছে। সে তার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। আভা তাকে ইশারা করে করিডোরের গভীরে যেতে বলল, যেখানে আরও অন্ধকার আর রহস্য লুকিয়ে ছিল, কিন্তু যেখানে তাদের আশার আলোও লুকিয়ে ছিল। অরুণ ছায়ামূর্তিটির দিকে শেষবারের মতো তাকাল, তার চোখে ছিল দৃঢ় সংকল্প, তারপর আভার দেখানো পথে হাঁটতে শুরু করল। ছায়ামূর্তিটি তাদের অনুসরণ করতে চাইল, কিন্তু আভার আলোর কারণে সে পিছিয়ে গেল, তার কালো ধোঁয়া বাতাসে মিলিয়ে যেতে লাগল। সে জানত না কী অপেক্ষা করছে তার জন্য, কিন্তু সে একা ছিল না। বইয়ের চরিত্ররা তার সাথে ছিল, আর তাদের সম্মিলিত শক্তি হয়তো ছায়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট। তার মনে হলো, এই যাত্রা শুধু তার লাইব্রেরিকে বাঁচানোর জন্য নয়, বরং সমস্ত গল্প আর স্মৃতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, যা মানব সভ্যতার ভিত্তি, এবং যা ছায়াদের মূল লক্ষ্য। এই যাত্রা ছিল এক অজানা পথে, যেখানে প্রতিটি মোড়ে বিপদ লুকিয়ে ছিল, এবং প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল এক নতুন রহস্যের উন্মোচন। অরুণের পুরোনো জীবনের সমস্ত অর্থ যেন এই নতুন বাস্তবতার সাথে মিশে যাচ্ছিল। তবে, করিডোরের এক গভীর অংশে, যেখানে আলো প্রায় পৌঁছায় না, সেখানে একটি অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি লুকিয়ে ছিল। তার আকৃতি মানুষের মতো, কিন্তু তার চোখগুলো জ্বলজ্বল করছিল এক অদ্ভুত, পরিচিত লাল আলোয়। এটি ছিল প্রফেসর মিত্রের ছায়া, যিনি অরুণের প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তাঁর মুখে এক শীতল হাসি, যেন তিনি এই পরিস্থিতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখছে। তিনি যেন এই বইয়ের জগতের গভীরে প্রবেশ করার জন্য অরুণের যাত্রাকে ব্যবহার করছিলেন। (চলবে)

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion