Episode 15274 words3 views

অধ্যায় ১৫: উপসংহার

কয়েক মাস পর। কলকাতা শহরের কোলাহল। অরিন্দম, রিয়া আর সোহম তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তারা জানত, তারা আর কখনোই স্বাভাবিক হতে পারবে না। সেই দ্বীপ তাদের ভেতর থেকে কিছু একটা কেড়ে নিয়েছে, চিরদিনের জন্য। সরকারিভাবে, তাদের অভিযানকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে দেখানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে তাদের নৌকা ডুবে যায় এবং রশিদ ভাই ও বিক্রম চ্যাটার্জী সমুদ্রে হারিয়ে যান। সেই নতুন দ্বীপটিকে 'ভূতাত্ত্বিকভাবে অস্থিতিশীল' এবং 'অশনাক্ত হিংস্র প্রাণী'র উপস্থিতির কারণে নিষিদ্ধ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আসল সত্যিটা কিছু সরকারি ফাইলের মধ্যে চাপা পড়ে গেছে। তিনজনই এখন কাউন্সেলিং নিচ্ছে। কিন্তু কোনো চিকিৎসকই তাদের মনের গভীরের আতঙ্কটা বুঝতে পারছিলেন না। তারা তিনজন একে অপরের সাথে ছাড়া আর কারো সাথে স্বস্তি পেত না। কেবল তারাই জানত সেই ভয়ঙ্কর সত্যটা। একদিন সন্ধ্যায় অরিন্দম তার স্টাডি রুমে বসেছিলেন। তিনি একটি স্যাটেলাইট ইমেজ দেখছিলেন। এটা সেই দ্বীপের ছবি। সরকারিভাবে দ্বীপটার কোনো নাম দেওয়া হয়নি, কিন্তু গোপন নথিতে, অরিন্দমের অনুরোধে, দ্বীপটার নামকরণ করা হয়েছে 'রশিদ'স পয়েন্ট'। ছবির দিকে তাকিয়ে অরিন্দমের শরীরটা কেঁপে উঠল। তিনি জানেন, ওই সবুজ, শান্ত দেখতে দ্বীপটার গভীরে কী লুকিয়ে আছে। নৈঃশব্দ্য। আর সেই নৈঃশব্দ্যের গভীরে অপেক্ষা করছে চোখবিহীন, কাস্তের মতো নখরওয়ালা সেই শিকারীরা। হঠাৎ রাস্তার উপর একটা গাড়ির টায়ার ফাটার তীব্র শব্দ হলো। "ফটাস!" শব্দটা শুনেই অরিন্দম চেয়ার থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন। তার হৃৎপিণ্ডটা ধড়াস ধড়াস করতে লাগল, শরীরটা ঠাণ্ডা ঘামে ভিজে গেল। এক মুহূর্তের জন্য তার মনে হলো, তিনি আর কলকাতায় নেই, তিনি ফিরে গেছেন সেই 'নিঃশব্দ দ্বীপ'-এর ভয়ঙ্কর নৈঃশব্দ্যের রাজ্যে, যেখানে একটা ছোট্ট শব্দই ডেকে আনে নিশ্চিত মৃত্যু। শহরের কোলাহলের মধ্যেও তিনি সেই দ্বীপের জমাট বাঁধা নৈঃশব্দ্যকে অনুভব করতে পারছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, এই আতঙ্ক থেকে তার মুক্তি নেই। কারণ কিছু জায়গা, কিছু সত্য আবিষ্কার না হওয়াই মানবজাতির জন্য মঙ্গলজনক।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion