Episode 6485 words0 views

ষষ্ঠ পর্ব

মিটিং শেষ হওয়ার পরে রণেনবাবু তার ঘরে যান। সুব্রত সাবধানে তার পিছু নেয়। রণেনবাবুর ঘরে ঢুকে সুব্রত দেখে, তিনি একটা ফোন কলে ব্যস্ত। তার কথাগুলো খুব চাপা, যেন তিনি কারো আড়ি পাতার ভয় করছেন। রণেনবাবুর ঘরের পরিবেশটা থমথমে, যেন সেখানে কোনো অশুভ শক্তি লুকিয়ে আছে। “কাজটা হয়ে গেছে তো?” রণেনবাবু জিজ্ঞেস করেন। “ভালো। কেউ যেন কিছু টের না পায়। আর হ্যাঁ, সেই পেনড্রাইভটা খুঁজে বের করো। ওটাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে।” তার গলায় একটা ঠান্ডা, হিসাব করা স্বর। তার কথা শুনে মনে হয়, তিনি যেন কোনো গোপন কোড ব্যবহার করছেন। সুব্রত বুঝতে পারে, রণেনবাবু পেনড্রাইভটার কথা জানেন। তিনি হয়তো জানেন না যে পেনড্রাইভটা এখন তার কাছে। এটাই তার জন্য একটা সুযোগ। এটাই হয়তো তার শেষ চাল। সুব্রত জানে, এই মুহূর্তে তার একটা ভুল পদক্ষেপ সবকিছু নষ্ট করে দিতে পারে। রণেনবাবুর ফোন কল শেষ হওয়ার পরে সুব্রত ঘরে ঢোকে। রণেনবাবু তাকে দেখে চমকে যান। তার মুখের সমস্ত রং যেন এক মুহূর্তে উবে যায়। তিনি যেন একটি ভূঁত দেখেছেন। “তুমি! তুমি এখানে কী করছ?” তিনি চিৎকার করে ওঠেন, তার গলার স্বর তীক্ষ্ণ এবং কর্কশ। তার চিৎকার শুনে মনে হয়, তিনি যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। সুব্রত শান্তভাবে উত্তর দেয়, “আমি এখানে এসেছি আপনার অপরাধের প্রমাণ নিয়ে। আমি জানি আপনি মৃগেনবাবুকে খুন করেছেন।” সুব্রতর স্বর দৃঢ়, কোনো ভয় নেই। তার চোখে একটা আগুনের হলকা, যা রণেনবাবুকেও কাবু করে দেয়। রণেনবাবু প্রথমে অস্বীকার করার চেষ্টা করেন, কিন্তু সুব্রত যখন তাকে ভিডিওটা দেখায়, তখন তিনি চুপ হয়ে যান। তার চোখমুখে পরাজয়ের ছাপ স্পষ্ট। তিনি জানেন, তার আর পালানোর কোনো পথ নেই। “ঠিক আছে, আমি খুন করেছি,” তিনি স্বীকার করেন। “কিন্তু আমার কোনো উপায় ছিল না। মৃগেন আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সে প্রোজেক্টের কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করে দিতে চেয়েছিল।” তার স্বীকারোক্তিতে কোনো অনুশোচনা নেই, বরং একটা যন্ত্রণার ছাপ। তিনি যেন নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। সুব্রত বলে, “তাই আপনি তাকে খুন করলেন? আর আপনি ভেবেছিলেন, আপনার অপরাধ কেউ জানতে পারবে না?” তার গলায় অবিশ্বাস। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না যে একজন মানুষ এত ঠান্ডা মাথায় খুন করতে পারে। রণেনবাবু চুপ করে থাকেন। তার মুখে কোনো কথা নেই। তিনি যেন নিজের তৈরি করা জালে নিজেই আটকে গেছেন। তার নীরবতা তার অপরাধকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। ঠিক তখনই বাইরে পুলিশের গাড়ির আওয়াজ শোনা যায়। সুব্রত আগেই পুলিশকে খবর দিয়েছিল। পুলিশ এসে রণেনবাবুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। রণেনবাবু যখন পুলিশের সাথে যাচ্ছিলেন, তখন তার চোখে সুব্রতর জন্য এক অদ্ভুত দৃষ্টি ছিল, যা সুব্রত কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। সেই দৃষ্টিতে ছিল ঘৃণা, ভয় আর পরাজয়ের মিশ্রণ। সুব্রত হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। অবশেষে মৃগেনবাবুর আত্মা শান্তি পায়। আর সে নিজেও মুক্তি পায় এক ভয়ংকর অভিযোগ থেকে। তার মনে হয়, সে যেন এক দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠেছে। তার মনে শান্তি ফিরে আসে। এরপর সুব্রত আর আগের জীবনে ফিরে যায়নি। সে ঠিক করে, সে এবার থেকে সত্যের পথে চলবে এবং অপরাধীদের মুখোশ খুলে দেবে। তার জীবনের নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়। এই ঘটনা তাকে ভেতর থেকে বদলে দিয়েছে। সে এখন আর সেই শান্ত, সাধারণ মানুষ নেই। সে এখন একজন যোদ্ধা, যে সত্যের জন্য লড়তে প্রস্তুত। সমাপ্ত

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion