সুব্রত জানে, তার হাতে খুব কম সময় আছে। রণেনবাবু হয়তো খুব শীঘ্রই তার খোঁজ পেয়ে যাবেন। তাই সে ঠিক করে, কাল সকালেই সে পুলিশের কাছে গিয়ে সব কথা বলবে। কিন্তু তার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, পুলিশ কি তাকে বিশ্বাস করবে? তার মনে সন্দেহ জাগে, কারণ সে এতক্ষণ ধরে বেআইনিভাবে তদন্ত করছিল।
সে রাতে সুব্রত একটুও ঘুমাতে পারে না। তার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরপাক খায়, কীভাবে রণেনবাবুকে ধরা যাবে? তার মনে হয়, পুলিশের কাছে যাওয়ার আগে তার আরও কিছু প্রমাণ জোগাড় করা দরকার। এমন কিছু যা রণেনবাবুর সমস্ত অপরাধ প্রমাণ করতে পারে। সে ঠিক করে, সে নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও রণেনবাবুকে ধরবে।
পরদিন সকালে সুব্রত রণেনবাবুর অফিসে যায়। সে জানে, এটাই তার শেষ সুযোগ। অফিসে গিয়ে সে জানতে পারে, রণেনবাবু আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে যাবেন। মিটিংটা হবে শহরের বাইরে একটা গেস্ট হাউসে। গেস্ট হাউসটা নির্জন এলাকায় হওয়ায় সুব্রতর সন্দেহ আরও বাড়ে। তার মনে হয়, রণেনবাবু হয়তো পালানোর ফন্দি আঁটছেন।
সুব্রত ঠিক করে, সে রণেনবাবুর পিছু নেবে। সে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে গেস্ট হাউসের দিকে রওনা দেয়। রাস্তায় যেতে যেতে তার মনে নানা আশঙ্কা জাগে। যদি রণেনবাবু পালানোর চেষ্টা করেন, তাহলে কী হবে? যদি পুলিশ তাকে বিশ্বাস না করে, তাহলে কী হবে? তার মনে হয়, সে যেন একটা মাকড়সার জালে আটকে পড়েছে, যে যত পালাতে চাইছে, তত বেশি জড়িয়ে পড়ছে। ট্যাক্সির ড্রাইভার লোকটা খুব একটা মিশুকে নয়। সে চুপচাপ গাড়ি চালায় এবং সুব্রতর কোনো কথার উত্তর দেয় না।
গেস্ট হাউসের কাছে পৌঁছে সুব্রত দেখে, চারদিকটা বেশ নির্জন। গেস্ট হাউসটা একটা বিশাল বাগানবাড়ির মতো। ভেতরে অনেকগুলো ঘর, আর চারদিকে সবুজ গাছপালা। গেস্ট হাউসটা যেন বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন, একটা অন্য জগৎ। গেস্ট হাউসটা দেখে সুব্রতর গা ছমছম করে।
সুব্রত গেস্ট হাউসের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। তার মনে একটা চাপা উত্তেজনা। কিছুক্ষণ পর সে দেখে, রণেনবাবুর গাড়ি এসে থামে। তিনি গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যান। তার মুখে একটা রহস্যময় হাসি। সুব্রত সাবধানে গেস্ট হাউসের ভেতরে ঢোকে। সে খুব সাবধানে পা ফেলে, যাতে কেউ তার উপস্থিতি টের না পায়।
ভেতরে ঢুকে সুব্রত দেখে, একটা বড় ঘরে মিটিং চলছে। ঘরে রণেনবাবু ছাড়াও আরও কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত। তাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে, তারা সবাই খুব চিন্তিত। সুব্রত দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করে। ঘরের ভেতরে চাপা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
রণেনবাবু উত্তেজিত হয়ে কিছু বলছেন, “আমাদের যে কোনো মূল্যে এই প্রোজেক্টটা শেষ করতে হবে। আর কোনো ভুল আমি সহ্য করব না।” তার গলায় একটা কর্তৃত্বের সুর, যেন তিনি একাই সব কিছুর মালিক। তার কথা শুনে মনে হয়, তিনি যেন কোনো বেপরোয়া রাজা।
অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, “কিন্তু মৃগেনবাবুর মতো দক্ষ লোক তো আমাদের মধ্যে আর নেই। আমরা কী করব?” তার চোখেমুখে হতাশা। তিনি যেন সবকিছু হারিয়ে ফেলেছেন।
রণেনবাবু হেসে বলেন, “চিন্তা করবেন না। আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। খুব শীঘ্রই আমরা নতুন একজন প্রোজেক্ট ম্যানেজার নিয়োগ করব।” তার হাসিটা স্বাভাবিক নয়, যেন তিনি কোনো খারাপ খবর চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তার হাসি দেখে সুব্রতর রক্ত হিম হয়ে যায়।
সুব্রত বুঝতে পারে, রণেনবাবু খুনের পরেও কতটা নির্লিপ্ত। তিনি যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার মনে ঘৃণা জন্মায়। সে ঠিক করে, আজকেই সে এর শেষ দেখবে। আজ হয় রণেনবাবুর শেষ দিন, না হয় তার। সুব্রত মনে মনে তৈরি হয় একটা চূড়ান্ত সংঘর্ষের জন্য।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion