অন্ধকার গলি ও একটি নিথর ছায়া
কলকাতার শীতের রাত। পৌষের কনকনে ঠান্ডা বাতাস শহরের অলস ঘুমন্ত রাস্তাগুলোর উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। রাত তখন প্রায় দুটো। শ্যামবাজারের সরু গলিগুলো নিস্তব্ধ, কেবল দূরে কোনো কুকুরের একটানা ঘেউ ঘেউ শব্দ আর ট্রামের ঘন্টি মাঝে মাঝে বাতাসের নীরবতা ভাঙছে। পুরনো বাড়িগুলোর জীর্ণ দেওয়াল, লোহার গ্রিল আর স্যাঁতসেঁতে বারান্দাগুলো যেন শতাব্দীর পুরনো কোনো গল্প বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই বাড়িগুলোর প্রতিটি ফাটল, প্রতিটি রঙ ওঠা অংশ যেন সময়ের সাক্ষী। তবে আজ এই নিস্তব্ধতা যেন এক অস্বাভাবিক নীরবতা, যা কানে বাজছে। প্রতিটি ছায়া যেন আরও গভীর, প্রতিটি কোণ যেন কোনো গোপন রহস্য লুকিয়ে রেখেছে, যা শুধু উন্মোচনের অপেক্ষায়। এই নিস্তব্ধতা এতটাই তীব্র যে, নিজের হৃদপিণ্ডের ধুকপুক শব্দও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, যেন হৃদপিণ্ডই একমাত্র জীবিত সত্তা এই নিস্তব্ধতার মধ্যে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় দীর্ঘ ছায়াগুলো যেন আরও দীর্ঘ আর ভীতিকর মনে হচ্ছে, প্রতিটি ছায়া যেন কোনো অশুভ কিছুর পূর্বাভাস।
এই নিস্তব্ধতার মধ্যেই, ২৩/বি, নবীনচন্দ্র দাস লেনের এক দোতলা বাড়ির সামনে একটা ট্যাক্সি এসে থামল। ট্যাক্সির হেডলাইটের আলোয় বাড়ির পুরনো নম্বর প্লেটটা চকচক করে উঠল, তার উপর জমে থাকা ধুলো যেন এক দশকের গল্প বলছে। বাড়ির সামনে একটি ছোট গেট, তার লোহার কপাটগুলো মরচে ধরা, বহুদিনের অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। গেটের পাশে একটি পুরনো গোলাপ গাছ, তার শুকনো ডালপালাগুলো যেন রাতের অন্ধকারে ভৌতিক রূপ ধারণ করেছে। ট্যাক্সি থেকে নামলেন একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক, পরনে দামি পশমের কোট, যা তাঁর আভিজাত্যের পরিচয় বহন করছে, হাতে চামড়ার ব্রিফকেস, যার ভেতরে হয়তো তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের সূত্র লুকিয়ে আছে। তাঁর নাম ডক্টর অমলকান্তি রায়। শহরের একজন স্বনামধন্য প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং ইতিহাসবিদ। তাঁর গবেষণা এবং লেখালেখি তাঁকে আন্তর্জাতিক মহলেও পরিচিতি এনে দিয়েছে, বহু সেমিনারে তিনি প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন, তাঁর বইগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত। তাঁর নাম শুনলে প্রত্নতত্ত্বের জগতে এক ধরনের শ্রদ্ধার ভাব ফুটে উঠত, যেন তিনি এই বিদ্যার একজন জীবন্ত কিংবদন্তী, যার প্রতিটি শব্দকে গুরুত্ব সহকারে শোনা হতো।
অমলকান্তি রায় আজ দীর্ঘদিনের গবেষণার পর একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। গত কয়েক মাস ধরে তিনি একটি প্রাচীন পুঁথি নিয়ে কাজ করছিলেন, যা বাংলার হারিয়ে যাওয়া এক গুপ্তধন এবং এক রহস্যময় সভ্যতার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। এই পুঁথির প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি চিত্র যেন তাঁকে এক নতুন জগতের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, এক অজানা ইতিহাসের গভীরে, যেখানে সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে, এবং প্রতিটি মুহূর্ত যেন এক নতুন রহস্য উন্মোচন করছে। তিনি দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এই পুঁথি নিয়ে ডুবে থাকতেন, তার প্রতিটি রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করতেন, যেন তার প্রতিটি ভাঁজে লুকিয়ে আছে এক মহাজাগতিক সত্য, যা মানবজাতির পরিচিত ইতিহাসকে চিরতরে বদলে দিতে পারে। তাঁর চোখে ছিল এক অদ্ভুত দীপ্তি, যা সাফল্যের কাছাকাছি পৌঁছানোর উত্তেজনাকে জানান দিচ্ছিল, এক ধরনের তীব্র আকর্ষণ যা তাঁকে ঘুমোতে দিচ্ছিল না, বরং আরও বেশি করে এই গবেষণায় নিমজ্জিত করছিল, যেন তিনি এক ঘোরের মধ্যে আছেন। তিনি অনুভব করছিলেন, তিনি যেন এক প্রাচীন শক্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন, যা মানবজাতির পরিচিত ইতিহাসকে বদলে দিতে পারে, এবং তার অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। কিন্তু আজ, এই গভীর রাতে, তাঁর মনে এক অজানা শীতল অনুভূতি খেলা করছিল। তিনি যেন অনুভব করছিলেন, অদৃশ্য কোনো চোখ তাঁকে অনুসরণ করছে, প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে, যেন তিনি একা নন এই নির্জন রাতে। তাঁর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাঁকে সতর্ক করছিল, কিন্তু তিনি বুঝতে পারছিলেন না, এই সতর্কতার উৎস কী, কেন তাঁর মন এত অস্থির, কেন তাঁর শরীর এত ভারি লাগছে, যেন কোনো অদৃশ্য বোঝা তার উপর চেপে বসেছে। তার মনে হচ্ছিল, এই আবিষ্কার হয়তো তাকে এক নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ট্যাক্সি থেকে নেমে তিনি পকেট থেকে চাবি বের করতে গেলেন। তাঁর হাত কাঁপছিল না, কিন্তু তাঁর হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছিল, যেন কোনো আসন্ন বিপদের পূর্বাভাস দিচ্ছিল, এক অদৃশ্য বিপদ যা তার খুব কাছাকাছি, তার নিঃশ্বাসের সাথে মিশে আছে। গলির শেষ প্রান্তের অন্ধকার থেকে একটা ক্ষীণ শব্দ এল, যেন কেউ নিঃশব্দে পা ফেলছে, শুকনো পাতার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মতো, বা কোনো শিকারী তার শিকারের দিকে এগিয়ে আসছে, তার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সতর্ক। অমলকান্তি রায় মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ালেন, তাঁর শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল, যেন বরফ গলা জল তার মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে যাচ্ছে। তিনি চারপাশে তাকালেন, কিন্তু গাঢ় অন্ধকারে কিছুই স্পষ্ট নয়। কেবল বাতাসের ফিসফিস শব্দ আর নিজের হৃদপিণ্ডের দ্রুত স্পন্দন ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাচ্ছিলেন না। তাঁর মনে হলো, তিনি একা নন, কেউ যেন তাঁর নিঃশ্বাসের শব্দও শুনতে পাচ্ছে, তার প্রতিটি নড়াচড়া লক্ষ্য করছে, প্রতিটি চিন্তা পড়ছে। হঠাৎই, গলির শেষ প্রান্ত থেকে একটা ছায়া দ্রুতগতিতে তাঁর দিকে এগিয়ে এল। ছায়াটা এতটাই দ্রুত ছিল যে, অমলকান্তি রায় পুরোপুরি বুঝে ওঠার আগেই তা তাঁর খুব কাছাকাছি চলে এল, যেন এক বিদ্যুৎ চমকের মতো। তিনি কিছু বোঝার আগেই, একটা শক্ত হাত তাঁর মুখ চেপে ধরল। তীব্র ক্লোরোফর্মের গন্ধ তাঁর নাকে এসে লাগল, যা মুহূর্তের মধ্যে তাঁর স্নায়ুকে অবশ করে দিল, তার মস্তিষ্ক যেন কাজ করা বন্ধ করে দিল, তার শরীর যেন নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। তিনি প্রতিরোধের চেষ্টা করলেন, তাঁর শরীর বিদ্রোহ করতে চাইল, তাঁর হাত-পা নেড়ে প্রতিবাদ করতে চাইল, কিন্তু মাংসপেশিগুলো যেন নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল, অবশ হয়ে গেল, যেন তিনি এক অদৃশ্য জালে আটকা পড়েছেন। ব্রিফকেসটা হাত থেকে পড়ে গেল, ভেতরের কাগজপত্র আর কিছু প্রাচীন মুদ্রা ছড়িয়ে পড়ল সিমেন্টের রাস্তায়, চাঁদের আবছা আলোয় সেগুলো চকচক করে উঠল, যেন ছোট ছোট তারার মতো, কিন্তু সেই চকচকানি যেন তার ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এক অশুভ ইঙ্গিত। তাঁর চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে এল, চারপাশের পরিচিত জগৎটা যেন ঘূর্ণায়মান হয়ে উঠল, রঙগুলো মিশে একাকার হয়ে গেল, যেন তিনি এক গভীর খাদে পড়ে যাচ্ছেন, যার কোনো তল নেই। শেষ যে জিনিস তিনি দেখলেন, তা হলো একটা কালো রঙের ভ্যান, যার পেছনের দরজাটা খোলা, আর তার ভেতরের অন্ধকার যেন তাঁকে গ্রাস করতে প্রস্তুত, এক অতল গহ্বর যা তাকে চিরতরে গ্রাস করবে, তার অস্তিত্বকে বিলীন করে দেবে। তারপরই নেমে এল গাঢ় অন্ধকার, সম্পূর্ণ চেতনা হারিয়ে ফেললেন তিনি, তাঁর শেষ অনুভূতি ছিল এক অসহায় আর্তনাদ যা গলার ভেতরেই আটকে গিয়েছিল, এক তীব্র ভয় যা তাঁর শেষ নিঃশ্বাসের সাথে মিশে গিয়েছিল, যেন তার আত্মা শরীর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, এক চিরন্তন নীরবতায়।
পরদিন সকালে, সূর্য যখন কলকাতার আকাশে উঁকি দিচ্ছে, তার সোনালী আলো যখন পুরনো বাড়িগুলোর ছাদে পড়ছে, ডক্টর অমলকান্তি রায়ের বাড়ির সামনে ভিড় জমে গেল। সকালের মিষ্টি বাতাস বইছে, কিন্তু সেই বাড়ির চারপাশে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা আর ভয়, যা বাতাসকে ভারী করে তুলেছে। তাঁর কাজের লোক, রামচরণ, সকালে দরজা খুলতে এসে দেখে, সদর দরজাটা খোলা, ভেতরের সবকিছু এলোমেলো। ডক্টর রায়ের বিছানা ফাঁকা, তাঁর পড়ার টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গবেষণার কাগজপত্র, কিছু বই খোলা অবস্থায় পড়ে আছে, যেন তিনি হঠাৎ করেই উঠে চলে গেছেন, কিন্তু ডক্টর রায় নেই। রামচরণ আতঙ্কিত হয়ে প্রতিবেশীদের খবর দিল, তার কণ্ঠস্বর ভয়ে কাঁপছিল, তার চোখে এক অজানা ভয়, যা তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল, আর তারপরই পুলিশে। রামচরণের মনে হচ্ছিল, এই বাড়িটার বাতাসেই যেন এক অশুভ শক্তি মিশে আছে, যা তাকে দম বন্ধ করে দিচ্ছিল, প্রতিটি নিঃশ্বাসে যেন এক অজানা আতঙ্ক, যা তাকে স্থির থাকতে দিচ্ছিল না, তার শরীর যেন কাঁপছিল।
ইনস্পেক্টর প্রবীর সেন এই কেসের দায়িত্ব পেলেন। প্রবীর সেন, একজন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার। তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং ঠান্ডা মাথার জন্য তিনি পরিচিত। তিনি বহু জটিল কেস সমাধান করেছেন, তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ‘মিস্টার শার্লক’ বলে ডাকত, কারণ তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ছিল অসাধারণ, তিনি প্রতিটি ক্ষুদ্রতম সূত্রকেও গুরুত্ব দিতেন, তার চোখ ছিল বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ। ঘটনাস্থলে এসে তিনি দেখলেন, বাড়িটা তছনছ করা হয়নি, কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। মূল্যবান কোনো জিনিস খোয়া যায়নি, যা সাধারণত চুরির ক্ষেত্রে ঘটে। কিন্তু এই অস্বাভাবিকতাটাই তাঁকে বেশি ভাবাচ্ছিল। এটি সাধারণ চুরির ঘটনা নয়, এর পেছনে আরও গভীর কোনো উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে, যা সাধারণ অপরাধের ধারণার বাইরে, এক বিশাল ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত, এক অজানা খেলা। শুধু ডক্টর রায়ের ব্যক্তিগত ডায়েরিটা পাওয়া যাচ্ছে না। আর রাস্তায় পড়ে থাকা ব্রিফকেসটা থেকে কিছু কাগজপত্র এবং প্রাচীন মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো এখন পুলিশের হেফাজতে। প্রতিটি মুদ্রা, প্রতিটি কাগজ যেন এক নীরব সাক্ষী, যা তাদের কিছু বলতে চাইছে।
“রামচরণ, ডক্টর রায় কি গতকাল রাতে একা ফিরেছিলেন?” প্রবীর সেন জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর গলায় দৃঢ়তা কিন্তু চোখে গভীর পর্যবেক্ষণ। তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রামচরণের প্রতিটি নড়াচড়া লক্ষ্য করছিল, যেন তার প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিতে কোনো গোপন তথ্য লুকিয়ে আছে, যা সে প্রকাশ করতে চাইছে না, বা হয়তো সে নিজেও জানে না, তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
“হ্যাঁ স্যার। উনি তো প্রায়ই রাতে দেরি করে ফেরেন। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তাই ওনার ফেরা টের পাইনি,” রামচরণ ভয়ে ভয়ে বলল, তার চোখ ছলছল করছিল। তার কথায় স্পষ্টতই এক ধরনের চাপা ভয় ছিল, যা সে লুকানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু তার শরীরী ভাষা তা প্রকাশ করে দিচ্ছিল, তার হাত কাঁপছিল, তার শরীর যেন শিউরে উঠছিল।
“ওনার কোনো শত্রু ছিল? বা এমন কেউ, যে ওনার ক্ষতি করতে চাইত?” প্রবীর সেন রামচরণের মুখের দিকে তাকিয়ে তার প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করলেন, তার মনে হচ্ছিল রামচরণ কিছু লুকাচ্ছে, হয়তো সে নিজেও জানে না কী লুকাচ্ছে, বা হয়তো সে এতটাই ভীত যে সত্য বলতে পারছে না, তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, তার চোখ এদিক ওদিক করছিল।
রামচরণ মাথা নাড়ল, “না স্যার। উনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। সবার সাথে ওনার ভালো সম্পর্ক ছিল। পাড়ার সবাই ওনাকে শ্রদ্ধা করত।” তার কণ্ঠস্বরে দৃঢ়তা থাকলেও, চোখ এদিক ওদিক করছিল, যেন সে কোনো অদৃশ্য বিপদ থেকে নিজেকে আড়াল করতে চাইছে, বা যেন সে নিশ্চিত ছিল না তার উত্তরে, তার শরীর যেন কাঁপছিল, তার ঠোঁট কাঁপছিল।
প্রবীর সেন পুরো বাড়িটা খুঁটিয়ে দেখলেন। পড়ার টেবিলে ছড়িয়ে থাকা কাগজপত্রগুলো দেখে মনে হলো, ডক্টর রায় কোনো জরুরি কাজ করছিলেন, হয়তো কোনো নতুন তথ্য আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন, যা তাঁকে গভীর রাত পর্যন্ত জাগিয়ে রেখেছিল, তার প্রতিটি নোট, প্রতিটি অঙ্কন যেন এক গভীর রহস্যের ইঙ্গিত। একটি খোলা ডিরেক্টরিতে একটি প্রাচীন মানচিত্রের ফটোকপি পড়ে আছে, তাতে কিছু অদ্ভুত চিহ্ন আঁকা, যা সাধারণ মানচিত্রের থেকে ভিন্ন, যেন কোনো প্রাচীন রহস্যের ভাষা, যা কেবল নির্দিষ্ট কিছু মানুষই বুঝতে পারে, এক অজানা কোড। মানচিত্রের নিচে একটি খামের উপর লেখা, “অমলকান্তি রায়, ব্যক্তিগত।” খামটি খালি, কিন্তু তার গুরুত্ব প্রবীর সেনের কাছে স্পষ্ট। এর অনুপস্থিতিই যেন এর উপস্থিতির চেয়েও বেশি কিছু বলছিল, যেন এর ভেতরের জিনিসটিই ছিল অপহরণের মূল কারণ, এক অমূল্য সম্পদ যা কারো হাতে পড়া উচিত নয়, যা মানবজাতির ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে।
“এই খামটা কি ডক্টর রায়ের?” প্রবীর সেন জিজ্ঞাসা করলেন, খামটি হাতে নিয়ে পরীক্ষা করতে করতে। খামের কাগজটা পুরনো, তার কিনারাগুলো হলুদ হয়ে এসেছে, তার উপর কিছু অস্পষ্ট দাগ, যেন বহু বছর ধরে এটি ব্যবহৃত হয়েছে।
রামচরণ বলল, “হ্যাঁ স্যার, এটা ওনার চিঠিপত্রের খাম। উনি এটাতে জরুরি কাগজপত্র রাখতেন। অনেক পুরনো খাম, প্রায় ৩০-৪০ বছরের পুরনো, হয়তো তারও বেশি।”
প্রবীর সেন খামটা হাতে নিলেন। ভেতরে কিছু নেই। কিন্তু খামের গায়ে লেগে থাকা একটা সূক্ষ্ম ধুলোর কণা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করল। এটি সাধারণ ধুলো নয়, বরং এক ধরনের লালচে মাটির কণা, যা সাধারণত পাহাড়ী অঞ্চলে, বিশেষ করে হিমালয়ের পাদদেশে দেখা যায়। এই কণাগুলো যেন এক নতুন রহস্যের ইঙ্গিত দিচ্ছিল, এক দূরবর্তী এবং বিপজ্জনক স্থানের সাথে এর সংযোগের সম্ভাবনা। এই কণাগুলো যেন কোনো প্রাচীন অভিশাপের চিহ্ন, যা সময়ের সাথে সাথে তার চিহ্ন রেখে যায়, এক অজানা বার্তা বহন করে, এক নীরব সাক্ষী।
ডক্টর রায়ের ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোনও পাওয়া যাচ্ছিল না। এটি একটি সাধারণ অপহরণের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না। যদি কেবল অপহরণই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে মূল্যবান জিনিসপত্র অক্ষত থাকত না, সেগুলো চুরি হয়ে যেত। তাহলে কি এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? কোনো গভীর ষড়যন্ত্র? প্রবীর সেনের মনে হচ্ছিল, এই অপহরণের পেছনে ব্যক্তিগত কোনো বিদ্বেষ নয়, বরং আরও বড় কোনো স্বার্থ জড়িত, যা হয়তো দেশের নিরাপত্তার সাথেও যুক্ত, বা তার চেয়েও বড় কিছু, যা মানবজাতির ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে, এক মহাজাগতিক রহস্য।
প্রবীর সেনের মনে প্রশ্ন জাগল, ডক্টর রায় কী এমন আবিষ্কারের কাছাকাছি ছিলেন, যার জন্য তাঁকে অপহরণ করা হলো? প্রাচীন পুঁথি, গুপ্তধন, রহস্যময় সভ্যতা – এই শব্দগুলো তাঁর মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল, প্রতিটি শব্দ যেন এক নতুন ধাঁধার জন্ম দিচ্ছিল, প্রতিটি ধাঁধা যেন আরও গভীর এক অতল গহ্বরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি বুঝতে পারছিলেন, এই কেসটা তাঁর দেখা অন্য কোনো কেসের মতো নয়। এর পেছনে গভীর কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে, যা উন্মোচন করা সহজ হবে না, বরং প্রতিটি পদক্ষেপে নতুন বিপদ অপেক্ষা করছে, যা তাঁর জীবনকেও ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে, এমনকি তাঁর পরিচিত জগৎটাকেও বদলে দিতে পারে, এক অজানা সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে, যা তাদের পরিচিত সব ধারণাকে ভেঙে দেবে।
ডক্টর রায়ের সহকর্মী এবং বন্ধু, ডক্টর অনির্বাণ বসু, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলেন। অনির্বাণ বসুও একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ, তবে তাঁর গবেষণা ক্ষেত্র ভিন্ন। তিনি ডক্টর রায়ের সাথে বহু বছর ধরে কাজ করেছেন, তাঁদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো, একে অপরের গবেষণার সঙ্গী, একে অপরের গোপনীয়তার অংশীদার। অনির্বাণ বসুর চোখে মুখে স্পষ্ট উদ্বেগ, যেন তিনি কোনো ভয়ানক সত্যের মুখোমুখি হতে চলেছেন, যা এতদিন অন্ধকারে লুকিয়ে ছিল এবং এখন তা প্রকাশিত হতে চলেছে, তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, তার হাত কাঁপছিল।
“অনির্বাণ বাবু, ডক্টর রায় কি সম্প্রতি কোনো বিশেষ গবেষণায় জড়িত ছিলেন?” প্রবীর সেন জিজ্ঞাসা করলেন, অনির্বাণ বসুর মুখের দিকে তাকিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করলেন। অনির্বাণ বসুর নীরবতা যেন প্রবীর সেনের সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল, যেন তিনি কিছু বলতে চাইছেন কিন্তু পারছেন না, তার ঠোঁট কাঁপছিল, তার চোখ এদিক ওদিক করছিল।
অনির্বাণ বসু চিন্তিত মুখে বললেন, তাঁর কণ্ঠস্বর কাঁপছিল, “হ্যাঁ ইনস্পেক্টর। উনি গত কয়েক মাস ধরে একটি প্রাচীন পুঁথি নিয়ে কাজ করছিলেন। উনি বলছিলেন, এই পুঁথিটা নাকি বাংলার এক হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার গোপন তথ্য ধারণ করে আছে। উনি খুব উত্তেজিত ছিলেন, প্রায়ই বলতেন, ‘অনির্বাণ, এই পুঁথিটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হতে চলেছে। কিন্তু এর সাথে এক বিশাল বিপদও লুকিয়ে আছে। এমন বিপদ, যা আমাদের কল্পনারও অতীত। এটা শুধু ইতিহাস নয়, এটা ভবিষ্যৎও, যা আমাদের পরিচিত সব ধারণাকে ভেঙে দেবে, যা মানবজাতির অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করবে।’ ” অনির্বাণ বসুর কণ্ঠস্বর নিচু হয়ে গেল, যেন তিনি কোনো গোপন কথা বলছেন, যা প্রকাশ্যে বলা বিপজ্জনক, এমনকি ফিসফিস করেও, তার চোখ এদিক ওদিক করছিল, তার শরীর যেন শিউরে উঠছিল।
“পুঁথিটা কোথায়?” প্রবীর সেনের চোখ তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল, তাঁর মনে হলো পুঁথিটিই এই রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু, সবকিছুর মূল, যা এই অপহরণের কারণ।
“সেটা তো আমি জানি না। উনি খুব গোপনীয়তা বজায় রেখেছিলেন। এমনকি আমাকেও সবটা জানাননি। শুধু বলেছিলেন, ‘অনির্বাণ, এমন কিছু পেয়েছি, যা ইতিহাসকে নতুন করে লিখবে। পুরো পৃথিবীর ইতিহাস বদলে যেতে পারে। কিন্তু এই জ্ঞান ভুল হাতে পড়লে তা মানবজাতির জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে। এমন এক শক্তি উন্মোচিত হবে, যা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব, যা ধ্বংসের কারণ হবে, যা আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে, যা মহাবিশ্বের ভারসাম্য নষ্ট করবে।’ ” অনির্বাণ বসু কথা বলতে বলতে যেন আরও বিচলিত হয়ে উঠলেন, তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠল, তার হাত কাঁপছিল, তার শরীর যেন শিউরে উঠছিল, তার চোখ যেন কোনো অশুভ কিছুর দিকে তাকিয়ে ছিল।
“উনি কি কারো সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন? বা কারো কাছ থেকে কোনো হুমকি পেয়েছিলেন?”
“না, আমার জানা নেই। তবে উনি খুব সতর্ক ছিলেন। বলতেন, ‘এই তথ্য যদি ভুল হাতে পড়ে, তাহলে বিপদ হতে পারে। শুধু আমার নয়, অনেকের জীবন বিপন্ন হতে পারে। এমন কিছু শক্তি আছে, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। তারা আমাদের চারপাশে অদৃশ্যভাবে বিচরণ করছে, আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ লক্ষ্য করছে, প্রতিটি চিন্তা পড়ছে, আমাদের স্বপ্নগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে।’ ” অনির্বাণ বসুর কথাগুলো যেন এক অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছিল, যা প্রবীর সেনের মনে এক অজানা ভয়ের জন্ম দিল, এক শীতল অনুভূতি যা তাঁর শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে গেল, যেন তিনি নিজেই সেই অদৃশ্য শক্তির উপস্থিতি অনুভব করছেন, তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।
প্রবীর সেনের কপালে ভাঁজ পড়ল। “বিপদ? কী ধরনের বিপদ?”
অনির্বাণ বসু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, তাঁর চোখ যেন কোনো দূর অতীতের দিকে তাকিয়ে ছিল, “উনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। শুধু বলেছিলেন, ‘প্রাচীন ক্ষমতা, যা আধুনিক যুগেও প্রভাব ফেলতে পারে। এমন ক্ষমতা, যা মানবজাতির জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে। এই পুঁথিটা কোনো সাধারণ পুঁথি নয়, এটা একটা অভিশাপও হতে পারে। এক প্রাচীন অভিশাপ, যা হাজার বছর ধরে সুপ্ত ছিল, এবং এখন তা জেগে উঠেছে, তার ধ্বংসাত্মক শক্তি নিয়ে, যা সবকিছুকে গ্রাস করবে।’ ” অনির্বাণ বসুর শেষ কথাগুলো প্রবীর সেনের মনে এক গভীর ছাপ ফেলল। তিনি অনুভব করলেন, এই কেসটি কেবল অপরাধ তদন্ত নয়, বরং এক প্রাচীন রহস্যের উন্মোচন, এক অতিপ্রাকৃত ঘটনার ইঙ্গিত, যা তাদের পরিচিত বিজ্ঞানকেও চ্যালেঞ্জ করছে, এবং তাদের বিশ্বাসকে ভেঙে দিচ্ছে।
প্রবীর সেনের মনে হলো, তিনি যেন এক গোলকধাঁধার মধ্যে প্রবেশ করছেন, যার প্রতিটি মোড়ে রয়েছে নতুন রহস্য এবং বিপদ। প্রাচীন পুঁথি, হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা, গুপ্তধন, এবং এখন ‘প্রাচীন ক্ষমতা’ ও ‘অভিশাপ’। এই সবকিছুর মধ্যে কি কোনো যোগসূত্র আছে? নাকি এগুলো কেবল ডক্টর রায়ের কল্পনা? কিন্তু তাঁর অপহরণ প্রমাণ করে যে, এটি কল্পনা নয়, বরং এক ভয়ানক বাস্তবতা, যা তাদের পরিচিত জগতের বাইরে, এক অন্ধকার জগতের ইঙ্গিত, এক মহাজাগতিক ষড়যন্ত্র। তিনি অনুভব করলেন, এই কেসটি তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে, যেখানে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ফেলতে হবে, কারণ একটি ভুল পদক্ষেপ তাদের সবাইকে বিপদে ফেলতে পারে, এমনকি মানবজাতির অস্তিত্বকেও।
তিনি ফরেনসিক টিমকে নির্দেশ দিলেন ডক্টর রায়ের বাড়ি এবং আশেপাশের এলাকা ভালোভাবে পরীক্ষা করতে। প্রতিটি কোণ, প্রতিটি ফাটল যেন খুঁটিয়ে দেখা হয়, কোনো ক্ষুদ্রতম সূত্রও যেন বাদ না যায়। তিনি নিজেও আবার রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা কাগজপত্রগুলো দেখতে লাগলেন। একটি কাগজের টুকরো, যা সম্ভবত ব্রিফকেস থেকে পড়েছিল, তাঁর নজরে পড়ল। তাতে একটি অদ্ভুত চিহ্ন আঁকা। চিহ্নটি একটি অসম্পূর্ণ বৃত্তের মতো, যার ভেতরে কিছু রেখা এবং একটি বিন্দুর মতো কিছু রয়েছে। এটি কোনো পরিচিত প্রতীক নয়, কোনো সাধারণ নকশাও নয়। এটি যেন কোনো প্রাচীন সভ্যতার প্রতীক, যা এক অজানা শক্তির ইঙ্গিত দিচ্ছিল। এই চিহ্নটি দেখে প্রবীর সেনের মনে এক অদ্ভুত অস্বস্তি হলো, যেন এটি কোনো অশুভ বার্তা বহন করছে, যা তাঁর মনে এক গভীর ভয়ের জন্ম দিল, এক শীতল অনুভূতি যা তাঁর শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে গেল।
প্রবীর সেন কাগজটি পকেটে রাখলেন। তাঁর মনে হলো, এই চিহ্নটিই হয়তো এই রহস্যের প্রথম সূত্র, এক অদৃশ্য সুতো যা তাঁকে সত্যের দিকে টেনে নিয়ে যাবে, কিন্তু সেই পথ হয়তো অন্ধকার আর বিপদসংকুল, অজানা বিপদে ভরা, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে মৃত্যু অপেক্ষা করছে, এবং যেখানে তাদের পরিচিত সব ধারণা ভেঙে যাবে। তিনি বুঝতে পারছিলেন, এই কেসের গভীরে প্রবেশ করতে হলে তাঁকে ডক্টর রায়ের গবেষণার সূত্র ধরেই এগোতে হবে। আর সেই সূত্র সম্ভবত সেই হারিয়ে যাওয়া পুঁথি, যা এখন নিখোঁজ, এবং সেই অদ্ভুত চিহ্ন।
রাত বাড়ার সাথে সাথে কলকাতার শীত আরও তীব্র হলো। কুয়াশার চাদর যেন শহরকে ঢেকে ফেলছিল, সবকিছুকে এক রহস্যময় আবরণে মুড়ে দিচ্ছিল। প্রবীর সেন তাঁর গাড়িতে বসে ডায়েরিতে নোট নিচ্ছিলেন। ডক্টর অমলকান্তি রায়ের অন্তর্ধান একটি সাধারণ অপহরণ নয়, এর পেছনে রয়েছে এক গভীর ষড়যন্ত্র, এক বিশাল জাল যা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। কিন্তু কে এর পেছনে? এবং কেন? এই প্রশ্নগুলো তাঁর মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল, প্রতিটি প্রশ্ন যেন আরও জটিল প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছিল, প্রতিটি উত্তর যেন আরও নতুন প্রশ্ন তৈরি করছিল, যা তাঁকে আরও গভীরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, এক অন্ধকার অতল গহ্বরে, যার কোনো শেষ নেই। তিনি জানতেন, এই রহস্য উন্মোচন করা সহজ হবে না, এর জন্য তাঁকে বহু অন্ধকার গলির মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে বিপদ অপেক্ষা করছে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়ার পাত্র নন। তাঁর দৃঢ় সংকল্প ছিল, তিনি এই রহস্যের শেষ পর্যন্ত যাবেন, যত বিপদই আসুক না কেন, যত অন্ধকারই তাঁকে গ্রাস করতে চাক না কেন।
অন্ধকার গলি, যেখানে ডক্টর রায় শেষবার দেখা দিয়েছিলেন, সেটি যেন এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার প্রতিটি ইঁট, প্রতিটি দেওয়াল যেন কোনো গোপন কথা লুকিয়ে রেখেছে, যা শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছে। প্রবীর সেন প্রতিজ্ঞা করলেন, তিনি এই রহস্যের গভীরে প্রবেশ করবেন, যত বিপদই আসুক না কেন, যত অন্ধকারই তাঁকে গ্রাস করতে চাক না কেন। এই ছিল তাঁর প্রথম পদক্ষেপ, এক অজানা, বিপদসংকুল পথের দিকে, যেখানে প্রতিটি মোড়ে অপেক্ষা করছে নতুন রহস্য, এবং প্রতিটি রহস্যের পেছনে লুকিয়ে আছে এক ভয়ানক সত্য, যা মানবজাতির পরিচিত ইতিহাসকে বদলে দিতে পারে, এবং তাদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion