রহস্যময় অন্তর্ধান: পর্ব ২
রহস্যের জাল
পরের দিন সকাল। প্রবীর সেন লালবাজারের নিজের অফিসে বসে ছিলেন। তাঁর সামনে ডক্টর অমলকান্তি রায়ের কেস ফাইল খোলা। ফাইলটি যত দেখছেন, ততই রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ডক্টর রায়ের মতো একজন স্বনামধন্য প্রত্নতত্ত্ববিদের এমন নিখোঁজ হওয়াটা সাধারণ ঘটনা নয়। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো বড় কারণ আছে, যা সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে, এক বিশাল ক্ষমতা বা জ্ঞানের আকাঙ্ক্ষা, যা মানবজাতির ভবিষ্যৎকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
তাঁর সহকর্মী, তরুণ সাব-ইনস্পেক্টর অর্জুন মিত্র, কফি নিয়ে ঘরে ঢুকল। অর্জুন সদ্য পুলিশ একাডেমী থেকে পাশ করে বেরিয়েছে, কিন্তু তার বুদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রবীর সেনের চেয়েও বেশি। প্রবীর সেন পুরনো ধাঁচের তদন্তে বিশ্বাসী হলেও, অর্জুনের আধুনিক পদ্ধতিগুলোকেও তিনি স্বাগত জানান, কারণ তিনি জানতেন সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, এবং নতুন প্রজন্মকে সুযোগ দিতে হয়, তাদের মেধা ব্যবহার করতে হয়। অর্জুন তার ল্যাপটপ নিয়ে বসল, তার আঙুলগুলো দ্রুত কিবোর্ডের উপর চলছিল, তার চোখ স্ক্রিনের দিকে স্থির।
“স্যার, ডক্টর রায়ের ফোন কল লিস্ট চেক করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে তিনি বেশ কিছু অপরিচিত নম্বরে কথা বলেছেন। বেশিরভাগই প্রিপেইড নম্বর, যা ট্র্যাক করা কঠিন। মনে হচ্ছে, তারা খুব সতর্ক ছিল, যেন তারা কোনো চিহ্ন রাখতে চায়নি, তাদের পরিকল্পনা ছিল নিখুঁত,” অর্জুন বলল, তার ল্যাপটপের স্ক্রিনে কিছু জটিল ডেটা দেখাচ্ছিল, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা অসম্ভব, এক ধরনের এনক্রিপ্টেড ডেটা।
“কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আছে?” প্রবীর সেন কফিতে চুমুক দিলেন, তার চোখ অর্জুনের স্ক্রিনের দিকে, প্রতিটি ডেটা পয়েন্টকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছিলেন, তার কপালে ভাঁজ পড়ল।
“হ্যাঁ স্যার। বেশিরভাগ কল এসেছে কলকাতা এবং তার আশেপাশে থেকে, কিন্তু একটি নম্বর থেকে বেশ কয়েকটি কল এসেছে, যা দার্জিলিংয়ের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের টাওয়ার থেকে দেখাচ্ছে। এই নম্বরটিই সবচেয়ে সন্দেহজনক, কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে বারবার কল করেছে, যেন তারা কোনো জরুরি বার্তা আদান-প্রদান করছিল।”
প্রবীর সেনের মনে পড়ল সেই লালচে মাটির কণার কথা, যা তিনি ডক্টর রায়ের খামের গায়ে পেয়েছিলেন। দারjeeling, পাহাড়ী অঞ্চল… যোগসূত্রটা স্পষ্ট হতে শুরু করল, যেন ধাঁধার টুকরোগুলো একে অপরের সাথে মিলে যাচ্ছে, এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা, এক অজানা রহস্যের ইঙ্গিত।
“দার্জিলিং? এটা কি কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট?” প্রবীর সেন জিজ্ঞাসা করলেন, তার মনে নতুন প্রশ্ন জাগল, এক নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত, এক নতুন পথের সূচনা।
“সেটা দেখতে হবে স্যার। তবে ওই নম্বরের মালিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। সম্ভবত ভুয়া পরিচয় দিয়ে কেনা হয়েছে। প্রতিটি কলই খুব সংক্ষিপ্ত ছিল, যেন তারা শুধু বার্তা আদান-প্রদান করছিল, কোনো দীর্ঘ কথোপকথন নয়, যেন তারা কোনো গোপন কোড ব্যবহার করছিল।”
“আর ল্যাপটপ? কোনো ট্রেস পাওয়া গেছে?”
“না স্যার। ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন দুটোই অফলাইন। মনে হচ্ছে সেগুলো পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, যেন তারা কোনো ডিজিটাল চিহ্ন রাখতে চায়নি। খুব পেশাদারী কাজ, মনে হচ্ছে তারা প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব ভালো জানে, এবং তারা খুব সতর্ক।”
প্রবীর সেন টেবিলের উপর রাখা অদ্ভুত চিহ্ন আঁকা কাগজটি হাতে নিলেন। চিহ্নটি যেন তাঁকে কিছু বলতে চাইছে, তার প্রতিটি রেখা, প্রতিটি বিন্দু যেন এক গোপন বার্তা বহন করছে, এক অজানা ভাষা। “অর্জুন, এই চিহ্নটা দেখেছো কখনো? ডক্টর রায়ের ব্রিফকেস থেকে পাওয়া গেছে।”
অর্জুন কাগজটি হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখল। তার চোখ কৌতূহলে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। “না স্যার, এটা কোনো পরিচিত প্রতীক বলে মনে হচ্ছে না। কোনো প্রাচীন সভ্যতার প্রতীক হতে পারে, যা আমাদের পাঠ্যপুস্তকে নেই। এটা যেন কোনো গোপন কোড, যা কেবল নির্দিষ্ট কিছু মানুষই বুঝতে পারে, এক হারিয়ে যাওয়া ভাষা।”
“ডক্টর অনির্বাণ বসু বলেছেন, ডক্টর রায় একটি প্রাচীন পুঁথি নিয়ে কাজ করছিলেন, যা বাংলার হারিয়ে যাওয়া এক সভ্যতার গোপন তথ্য ধারণ করে আছে। এই চিহ্নটা হয়তো সেই পুঁথিরই অংশ, বা তার সাথে সম্পর্কিত কোনো প্রতীক, যা পুঁথির রহস্য উন্মোচন করতে সাহায্য করবে।”
“তাহলে আমাদের প্রথম কাজ হলো এই চিহ্ন এবং পুঁথি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। ডক্টর রায়ের গবেষণার উপর নজর দিতে হবে, তার প্রতিটি নোট, প্রতিটি বই, প্রতিটি ফাইল, প্রতিটি চিঠি,” অর্জুন বলল, তার মনে নতুন পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছিল, তার মস্তিষ্ক দ্রুত কাজ করছিল, তার চোখে এক ধরনের দৃঢ় সংকল্প।
“ঠিক বলেছো। অর্জুন, তুমি ডক্টর রায়ের সব প্রকাশিত বই এবং গবেষণা পত্র সংগ্রহ করো। বিশেষ করে তার অপ্রকাশিত কোনো কাজ থাকলে, সেগুলোর খোঁজ নাও। আর ফরেনসিক রিপোর্ট কী বলছে?”
“স্যার, ফরেনসিক টিম জানিয়েছে, ডক্টর রায়ের বাড়িতে কোনো জোরপূর্বক প্রবেশের চিহ্ন নেই। তার মানে, হয় তিনি স্বেচ্ছায় দরজা খুলেছিলেন, অথবা যারা তাকে অপহরণ করেছে, তারা কোনোভাবে তাকে চিনত। আর রাস্তায় যে ব্রিফকেসটা পাওয়া গেছে, তাতে ক্লোরোফর্মের কোনো অবশেষ পাওয়া যায়নি, কিন্তু কিছু সূক্ষ্ম তন্তু মিলেছে, যা কোনো বিশেষ ধরনের পোশাকের অংশ হতে পারে, যা সাধারণত খুব কম দেখা যায়, হয়তো কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর পোশাক, যা তাদের পরিচয় বহন করে। আর গাড়ির টায়ারের ছাপও পাওয়া গেছে, কিন্তু সেগুলো খুব সাধারণ, কোনো বিশেষ গাড়ির নয়, যেন তারা সাধারণ গাড়ি ব্যবহার করে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল, একটি নিখুঁত পরিকল্পনা, যা তাদের অপরাধকে গোপন রাখতে সাহায্য করবে।”
প্রবীর সেনের কপালে ভাঁজ পড়ল। “স্বেচ্ছায় দরজা খুলেছিলেন? এটা অসম্ভব। ডক্টর রায় একজন সতর্ক মানুষ ছিলেন। আর যদি চিনত, তাহলে কেন ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করা হলো? এটা তো পরস্পরবিরোধী, এক জটিল ধাঁধা, যা সমাধান করা কঠিন।”
“হয়তো তারা চায়নি যে তিনি চিৎকার করুন বা কাউকে চিনতে পারেন। অথবা, তারা তাকে বিশ্বাস অর্জন করে ভেতরে ঢুকেছিল, তারপর আক্রমণ করেছে। এটা এক ধরনের কৌশল হতে পারে, যা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, এক নিখুঁত পরিকল্পনা, যা তাদের অপরাধকে গোপন রাখতে সাহায্য করবে,” অর্জুন তার বিশ্লেষণ দিল, তার মনে নতুন নতুন সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল, প্রতিটি সম্ভাবনা যেন আরও জটিল।
“আর সেই লালচে মাটির কণা? ফরেনসিক টিম কিছু বলেছে?”
“হ্যাঁ স্যার। তারা নিশ্চিত করেছে যে এটি হিমালয়ের পাদদেশের মাটির কণা। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং বা সিকিমের কিছু অংশের মাটির সাথে এর মিল আছে। এই মাটির কণাগুলো বিরল, যা নির্দিষ্ট কিছু ভূতাত্ত্বিক অঞ্চলে পাওয়া যায়, এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, যা আমাদের দার্জিলিংয়ের দিকে ইঙ্গিত করছে।”
প্রবীর সেন উঠে দাঁড়ালেন। “দার্জিলিং। এই জায়গাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অর্জুন, তুমি দার্জিলিংয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলো সম্পর্কে খোঁজ নাও। বিশেষ করে এমন কোনো জায়গা, যেখানে সম্প্রতি কোনো নতুন আবিষ্কারের খবর এসেছে বা কোনো গোপন খনন কাজ চলছে। আমাদের প্রতিটি সূত্রকে অনুসরণ করতে হবে, কোনো কিছু বাদ দেওয়া যাবে না, প্রতিটি ক্ষুদ্রতম সূত্র গুরুত্বপূর্ণ।”
অর্জুন মাথা নাড়ল। “ঠিক আছে স্যার। আমি এখনই কাজ শুরু করছি। আমি অনলাইন ডেটাবেস এবং প্রত্নতাত্ত্বিক জার্নালগুলো পরীক্ষা করব, এবং প্রতিটি তথ্য বিশ্লেষণ করব, প্রতিটি কোণ থেকে।”
প্রবীর সেন তার ডায়েরিতে নোট নিলেন: ‘দার্জিলিং, পুঁথি, চিহ্ন, প্রাচীন ক্ষমতা।’ এই শব্দগুলো যেন এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা, যা তাকে এক অজানা গন্তব্যের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, এক রহস্যময় যাত্রার ইঙ্গিত, এক অজানা সত্যের দিকে।
দুপুরের পর প্রবীর সেন ডক্টর অনির্বাণ বসুর সাথে দেখা করতে গেলেন। অনির্বাণ বসু কলকাতার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান। তাঁর অফিস কক্ষে প্রাচীন মূর্তি, পুঁথির প্রতিলিপি আর পাথরের টুকরোতে ভরা, যেন এক ছোটখাটো জাদুঘর। ধুলোর গন্ধ আর পুরনো কাগজের গন্ধ মিশে এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেন সময়ের সাথে সাথে এই কক্ষটিও প্রাচীন হয়ে গেছে, তার প্রতিটি জিনিস যেন এক পুরনো গল্প বলছে।
“অনির্বাণ বাবু, ডক্টর রায়ের ব্যক্তিগত ডায়েরিটা কি আপনি দেখেছেন?” প্রবীর সেন জিজ্ঞাসা করলেন, তার কণ্ঠে এক ধরনের প্রত্যাশা, যেন তিনি জানেন অনির্বাণ বসু কিছু জানেন।
অনির্বাণ বসু মাথা নাড়লেন। “না ইনস্পেক্টর। ওটা উনি খুব ব্যক্তিগত রাখতেন। এমনকি আমাকেও কখনো দেখতে দেননি। তবে উনি মাঝে মাঝে বলতেন, ওতে নাকি ওনার সব ‘গোপন সূত্র’ লেখা আছে। বলতেন, ‘অনির্বাণ, এই ডায়েরিটা আমার জীবনের সব রহস্যের চাবিকাঠি, যা মানবজাতির ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে, এবং যা পৃথিবীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে।’ “
“গোপন সূত্র?” প্রবীর সেনের চোখ কৌতূহলে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
“হ্যাঁ। উনি বলতেন, কিছু তথ্য এতটাই সংবেদনশীল যে, সেগুলো প্রকাশ করা যাবে না। ওগুলো শুধু ডায়েরিতেই লেখা আছে, এবং সেগুলো মানবজাতির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, যদি তা ভুল হাতে পড়ে, এবং তার অপব্যবহার করা হয়।”
প্রবীর সেনের মনে হলো, ডায়েরিটা এই কেসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হতে পারে। যারা ডক্টর রায়কে অপহরণ করেছে, তারা নিশ্চয়ই ডায়েরিটাও নিয়ে গেছে, কারণ তারা জানত এর মূল্য, এবং এর ভেতরের রহস্য, যা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে সাহায্য করবে।
“ডক্টর রায় কি সম্প্রতি কারো সাথে এই পুঁথি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, যিনি এই তথ্যের অপব্যবহার করতে পারতেন? এমন কেউ, যার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল, এবং যিনি ক্ষমতার জন্য সবকিছু করতে পারতেন, এমনকি অপরাধও?”
অনির্বাণ বসু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন, যেন কিছু মনে করার চেষ্টা করছেন, তার মুখে এক ধরনের দ্বিধা, তার চোখ এদিক ওদিক করছিল। “আসলে ইনস্পেক্টর, ডক্টর রায়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র ছিল, নাম রাহুল সেন। সে খুব মেধাবী ছিল, কিন্তু তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল সীমাহীন। সে বিশ্বাস করত, প্রাচীন জ্ঞান ব্যবহার করে ক্ষমতা অর্জন করা যায়, এবং সে এই ক্ষমতার প্রতি খুব আগ্রহী ছিল, যেন সে এর ভেতরের শক্তি অনুভব করতে পারত। সে ডক্টর রায়ের গবেষণার প্রতি খুব আগ্রহী ছিল, বিশেষ করে এই পুঁথিটার প্রতি, যেন সে এর ভেতরের রহস্য উন্মোচন করতে চাইত, এবং তা নিজের জন্য ব্যবহার করতে চাইত।”
“রাহুল সেন? সে এখন কোথায়?” প্রবীর সেনের মনে হলো, তিনি এক নতুন সূত্রের সন্ধান পেয়েছেন, এক নতুন পথের ইঙ্গিত, এক নতুন চরিত্র।
“সে গত কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর সে হঠাৎ করেই একদিন উধাও হয়ে যায়। কোনো খবর নেই, কোনো চিহ্ন নেই। আমরা ভেবেছিলাম সে হয়তো বিদেশে চলে গেছে। শুনেছি সে নাকি কিছু গোপন সংস্থায় কাজ করছে, যারা প্রাচীন রহস্য নিয়ে গবেষণা করে, এবং তাদের উদ্দেশ্য খুব একটা ভালো নয়, তারা ক্ষমতার লোভে অন্ধ, এবং তারা বিপজ্জনক।” অনির্বাণ বসুর চোখে এক ধরনের ভয় ফুটে উঠল, যেন তিনি রাহুলের কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন, তার কণ্ঠস্বর নিচু হয়ে গেল।
“গোপন সংস্থা? কী ধরনের সংস্থা?” প্রবীর সেনের মনে হলো, এই রহস্যের জাল আরও গভীরে বিস্তৃত হচ্ছে, এক বিশাল ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত, এক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।
“আমি ঠিক জানি না। তবে রাহুল বিশ্বাস করত, পৃথিবীতে এমন কিছু প্রাচীন গোষ্ঠী আছে, যারা হাজার হাজার বছর ধরে গোপন জ্ঞান রক্ষা করে আসছে। সে তাদের সাথে যোগ দিতে চেয়েছিল, কারণ সে বিশ্বাস করত তারাই পৃথিবীর আসল ক্ষমতাধর, এবং তারাই মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে।”
প্রবীর সেনের মনে হলো, তিনি এক নতুন সূত্রের সন্ধান পেয়েছেন। রাহুল সেন, গোপন সংস্থা, প্রাচীন জ্ঞান – এই সবকিছুর মধ্যে একটা যোগসূত্র থাকতে পারে, যা এই অপহরণের মূল কারণ, এক ভয়ানক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত।
“রাহুল সেনের কোনো ঠিকানা বা যোগাযোগের তথ্য আছে আপনার কাছে?”
“না ইনস্পেক্টর। সে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে গিয়েছিল। তার পরিবারও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। তবে তার পরিবার হয়তো কিছু বলতে পারবে। তার বাবা-মা এখনো দক্ষিণ কলকাতার এক পুরনো বাড়িতে থাকেন, খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন, এবং তারা তাদের ছেলের জন্য খুব চিন্তিত, তাদের চোখে এক ধরনের হতাশা।”
প্রবীর সেন অনির্বাণ বসুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এলেন। তাঁর মনে হলো, এই কেসটা কেবল অপহরণ নয়, এর পেছনে এক বিশাল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। প্রাচীন পুঁথি, গুপ্তধন, হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা, এবং এখন গোপন সংস্থা ও প্রাচীন ক্ষমতা – এই সবকিছুর মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক আছে, যা মানবজাতির ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে, এমনকি তাদের অস্তিত্বও বিপন্ন করতে পারে, এক মহাজাগতিক যুদ্ধ।
অফিসে ফিরে তিনি অর্জুনকে রাহুল সেনের বিষয়ে খোঁজ নিতে বললেন। “অর্জুন, রাহুল সেন নামে একজন প্রাক্তন ছাত্রের খোঁজ নাও। সে ডক্টর রায়ের গবেষণার প্রতি আগ্রহী ছিল। তার পরিবার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করো। তার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি যোগাযোগ ট্র্যাক করো, কোনো ক্ষুদ্রতম সূত্রও যেন বাদ না যায়, প্রতিটি তথ্য গুরুত্বপূর্ণ।”
অর্জুন দ্রুত কাজ শুরু করল। প্রবীর সেন আবার সেই অদ্ভুত চিহ্ন আঁকা কাগজটি হাতে নিলেন। চিহ্নটি যেন তাঁকে কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু তার ভাষা তিনি বুঝতে পারছেন না, যেন এটি এক প্রাচীন রহস্যের নীরব সাক্ষী, এক অজানা বার্তা বহন করছে, এক গোপন কোড।
রাত বাড়ল। কলকাতার রাস্তাগুলো আবার নিস্তব্ধ হয়ে এল। প্রবীর সেনের মনে হচ্ছিল, তিনি যেন এক অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়াই করছেন। এই শত্রুরা কারা? তারা কী চায়? ডক্টর রায় কোথায় আছেন? এই প্রশ্নগুলো তাঁর মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল, তাকে ঘুমোতে দিচ্ছিল না, তার মন অস্থির ছিল, তার মস্তিষ্ক দ্রুত কাজ করছিল। তিনি জানতেন, এই রহস্যের গভীরে প্রবেশ করতে হলে তাঁকে অনেক ঝুঁকি নিতে হবে। কিন্তু তিনি প্রস্তুত, কারণ তার কাছে সত্য উন্মোচন করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এবং তিনি জানতেন এই যুদ্ধটা তার একার নয়, বরং মানবজাতির জন্য।
পরের দিন সকালে, অর্জুন রাহুল সেনের পরিবারের খোঁজ নিয়ে এল। তার বাবা-মা, সুবোধ সেন এবং রমা সেন, দক্ষিণ কলকাতার একটি জীর্ণ বাড়িতে থাকেন। তাদের সাথে দেখা করতে প্রবীর সেন এবং অর্জুন রওনা দিলেন। বাড়িটি পুরনো, তার দেওয়ালে শ্যাওলা জমেছে, যেন সময়ের সাথে সাথে এটিও জীর্ণ হয়ে গেছে, তার প্রতিটি ইঁট যেন এক পুরনো গল্প বলছে, এক নীরব সাক্ষী।
সুবোধ সেন একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। রমা সেন গৃহিণী। পুত্র হারানোর শোকে তারা দুজনেই ভেঙে পড়েছেন, তাদের চোখে মুখে গভীর দুঃখের ছাপ, তাদের জীবন যেন থমকে গেছে, তাদের চোখে এক ধরনের হতাশা। তাদের বাড়িতে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু তাদের চোখে এখনো তাদের ছেলের প্রতি ভালোবাসা স্পষ্ট, এক অদম্য আশা, এক ক্ষীণ আলো।
“রাহুল কবে থেকে নিখোঁজ?” প্রবীর সেন জিজ্ঞাসা করলেন, তার কণ্ঠে সহানুভূতি, তাদের দুঃখ অনুভব করে।
সুবোধ সেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, তার চোখ ছলছল করছিল, “প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল ইনস্পেক্টর। সে হঠাৎ করেই একদিন উধাও হয়ে গেল। কোনো খবর নেই, কোনো চিঠি নেই। আমরা ভেবেছিলাম সে মারা গেছে, আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল, আমাদের জীবন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল।”
“সে কি ডক্টর অমলকান্তি রায়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত?”
“হ্যাঁ। রাহুল ডক্টর রায়কে খুব শ্রদ্ধা করত। ওনার গবেষণা নিয়ে খুব আগ্রহী ছিল। ডক্টর রায়ও রাহুলকে খুব স্নেহ করতেন, তাকে নিজের ছেলের মতো দেখতেন, তার মেধা দেখে মুগ্ধ ছিলেন, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন।” রমা সেন বললেন, তার চোখে জল গড়িয়ে পড়ল, তার কণ্ঠস্বর কাঁপছিল, তার শরীর যেন শিউরে উঠছিল।
“রাহুল কি কোনো গোপন সংস্থা বা গোষ্ঠীর সাথে জড়িত ছিল?” প্রবীর সেন সরাসরি প্রশ্ন করলেন, তাদের প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য, তাদের চোখে কোনো ভয় আছে কিনা, তাদের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
সুবোধ সেন চমকে উঠলেন। “গোপন সংস্থা? রাহুল এমন কিছু করত বলে তো আমাদের জানা নেই। সে তো খুব সাধারণ ছেলে ছিল, পড়াশোনা নিয়েই থাকত, তার কোনো খারাপ অভ্যাস ছিল না।” তার কণ্ঠে অবিশ্বাস, যেন তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না।
“সে কি প্রাচীন জ্ঞান বা ক্ষমতার বিষয়ে আগ্রহী ছিল?”
“সে এসব নিয়ে খুব পড়াশোনা করত। বলত, প্রাচীনকালে নাকি এমন কিছু জ্ঞান ছিল, যা দিয়ে পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করা যেত। সে বিশ্বাস করত, এই জ্ঞানই মানবজাতির আসল পথ। আমরা এসব বিশ্বাস করতাম না, ভাবতাম ছেলেটা হয়তো বেশি পড়াশোনা করে এসব ভাবছে, তার কল্পনা বেশি, তার মস্তিষ্ক বেশি কাজ করছে।” সুবোধ সেনের গলায় এক ধরনের হতাশা, যেন তিনি তার ছেলেকে বুঝতে পারেননি, তার স্বপ্নগুলোকে, তার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে।
প্রবীর সেন তাদের বাড়িতে খুঁটিয়ে দেখলেন। রাহুল সেনের ঘরে কিছু পুরনো বই আর কাগজপত্র পড়ে আছে। তার মধ্যে একটি বই প্রবীর সেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। বইটির নাম ‘প্রাচীন ভারতের গুপ্তবিদ্যা’। বইটি খুলতেই তার ভেতরে একটি শুকনো পাতা পড়ে ছিল, তাতে সেই অদ্ভুত চিহ্নটি আঁকা। প্রবীর সেনের মনে হলো, তিনি সঠিক পথেই আছেন, যেন প্রতিটি সূত্র তাকে এক নতুন সত্যের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, এক অজানা রহস্যের গভীরে, এক প্রাচীন রহস্যের উন্মোচন।
“এই বইটি কি রাহুলের?” প্রবীর সেন জিজ্ঞাসা করলেন।
“হ্যাঁ ইনস্পেক্টর। সে এসব বই খুব পড়ত, দিনরাত এগুলো নিয়েই থাকত, যেন এগুলোই তার জীবন ছিল, তার সব স্বপ্ন ছিল এই বইগুলোকে ঘিরে,” রমা সেন বললেন।
প্রবীর সেন বইটি হাতে নিলেন। পাতাটি সাবধানে তুলে নিলেন। এটি কোনো সাধারণ পাতা নয়, বরং এক ধরনের প্রাচীন ভেষজ গাছের পাতা বলে মনে হচ্ছে, যা হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে পাওয়া যায়, এবং তার উপর সেই রহস্যময় চিহ্ন। তিনি বুঝতে পারছিলেন, এই চিহ্নটি কেবল একটি প্রতীক নয়, এর পেছনে গভীর কোনো অর্থ লুকিয়ে আছে, যা এক প্রাচীন রহস্যের চাবিকাঠি, এক অজানা শক্তির ইঙ্গিত, এক গোপন বার্তা।
রাহুল সেনের ঘর থেকে একটি পুরনো ডায়েরিও পাওয়া গেল। ডায়েরিটি রাহুলের হাতের লেখায় লেখা। প্রবীর সেন ডায়েরিটি হাতে নিয়ে দেখলেন। প্রথম কয়েক পাতা সাধারণ লেখা, কিন্তু পরের পাতাগুলোতে কিছু অদ্ভুত ছবি আর চিহ্ন আঁকা। তার মধ্যে সেই অসম্পূর্ণ বৃত্তের চিহ্নটিও রয়েছে। ডায়েরির একটি পাতায় লেখা: “পুঁথি, দার্জিলিং, হিমালয়, গুপ্তধন, ক্ষমতা। এই জ্ঞানই আমার পথ। গুরুজি আমাকে পথ দেখাবেন। আমি এই জ্ঞানকে মানবজাতির কল্যাণে ব্যবহার করব, কিন্তু বিপদ অপেক্ষা করছে। অন্ধকার শক্তি আমাকে অনুসরণ করছে।”
প্রবীর সেনের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এই ডায়েরিটিই তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। রাহুল সেনের নিখোঁজ হওয়া এবং ডক্টর রায়ের অপহরণ – এই দুটো ঘটনার মধ্যে একটা গভীর যোগসূত্র আছে, যা এখন স্পষ্ট হচ্ছে, এক বিশাল ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত, এক মহাজাগতিক খেলা।
“এই ডায়েরিটা কি আমরা নিতে পারি?” প্রবীর সেন জিজ্ঞাসা করলেন।
“হ্যাঁ ইনস্পেক্টর। যদি এতে রাহুলের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের শান্তি হবে, আমরা ওকে ফিরে পাবো, আমাদের জীবন আবার স্বাভাবিক হবে,” সুবোধ সেন বললেন, তার চোখে এক ধরনের আশা, এক ক্ষীণ আলো।
প্রবীর সেন ডায়েরিটি নিয়ে নিলেন। রাহুল সেনের ডায়েরি এবং ডক্টর রায়ের নিখোঁজ ডায়েরি – দুটোই এখন তাদের তদন্তের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এই দুটো ডায়েরিই হয়তো তাদের সত্যের দিকে নিয়ে যাবে, এক অজানা রহস্যের গভীরে, এক প্রাচীন রহস্যের উন্মোচন।
অফিসে ফিরে প্রবীর সেন এবং অর্জুন রাহুল সেনের ডায়েরি নিয়ে বসলেন। ডায়েরির প্রতিটি পাতা যেন এক নতুন রহস্যের দ্বার খুলে দিচ্ছিল। রাহুল তার ডায়েরিতে প্রাচীন পুঁথি এবং তার ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছিল। সে বিশ্বাস করত, এই পুঁথিটি হিমালয়ের কোনো গোপন স্থানে লুকিয়ে আছে, এবং এটি এমন এক শক্তি ধারণ করে, যা মানবজাতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এমনকি তাদের ভাগ্যও পরিবর্তন করতে পারে, তাদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, মহাবিশ্বের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
ডায়েরিতে একটি নির্দিষ্ট স্থানের উল্লেখ ছিল: “শৈলশৃঙ্গ, যেখানে সূর্য প্রথম কিরণ দেয়।” এই স্থানটি দার্জিলিংয়ের কোনো এক গোপন জায়গা বলে মনে হচ্ছে, যা সাধারণ মানচিত্রের বাইরে, এক অজানা রহস্যময় স্থান, এক আধ্যাত্মিক স্থান। রাহুল তার ডায়েরিতে কিছু অদ্ভুত সাংকেতিক ভাষাও ব্যবহার করেছিল, যা প্রবীর সেন এবং অর্জুনের পক্ষে বোঝা কঠিন ছিল, যেন এটি কোনো প্রাচীন কোড, যা কেবল নির্দিষ্ট কিছু মানুষই বুঝতে পারে, এক হারিয়ে যাওয়া ভাষা।
“স্যার, এই সাংকেতিক ভাষাটা কি কোনো প্রাচীন ভাষার অংশ?” অর্জুন জিজ্ঞাসা করল, তার চোখে কৌতূহল, তার মস্তিষ্ক দ্রুত কাজ করছিল।
“হতে পারে। ডক্টর রায় হয়তো এই ভাষা সম্পর্কে জানতেন। আমাদের এমন কাউকে খুঁজে বের করতে হবে, যে এই ভাষা বুঝতে পারে। এটা হয়তো কোনো হারিয়ে যাওয়া ভাষা, যা বহু বছর ধরে গোপন রাখা হয়েছে, এবং যা খুব কম মানুষ জানে।”
ডায়েরিতে একটি নাম বারবার উল্লেখ করা হয়েছে: “গুরুজি”। রাহুল এই গুরুজির কাছ থেকে প্রাচীন জ্ঞান লাভ করেছিল বলে লিখেছে। এই গুরুজি কে? তিনি কি এই অপহরণের সাথে জড়িত? তিনি কি এই গোপন সংস্থার প্রধান? প্রবীর সেনের মনে প্রশ্ন জাগল, এই গুরুজি কি সত্যিই একজন ব্যক্তি, নাকি কোনো প্রতীকী নাম, কোনো ধারণা?
প্রবীর সেনের মনে হলো, এই রহস্যের জাল অনেক গভীরে বিস্তৃত। এটি কেবল একটি অপহরণ নয়, বরং এক প্রাচীন শক্তির উন্মোচন, যা মানবজাতির ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারে, এমনকি তাদের অস্তিত্বও বিপন্ন করতে পারে, এক বিশাল ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত, এক মহাজাগতিক যুদ্ধ।
রাত গভীর হলো। প্রবীর সেন এবং অর্জুন ডায়েরির প্রতিটি লাইন বিশ্লেষণ করতে লাগলেন। তাদের সামনে এখন দুটি পথ: হয় রাহুল সেনকে খুঁজে বের করা, অথবা সেই ‘গুরুজি’কে। আর এই দুটোই তাদের নিয়ে যাবে দার্জিলিংয়ের সেই রহস্যময় শৈলশৃঙ্গের দিকে, এক অজানা গন্তব্যের দিকে, যেখানে বিপদ অপেক্ষা করছে, এবং যেখানে তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে।
প্রবীর সেনের মনে এক নতুন সংকল্প জন্ম নিল। তিনি এই রহস্যের শেষ পর্যন্ত যাবেন, যত বিপদই আসুক না কেন। ডক্টর অমলকান্তি রায়কে খুঁজে বের করতেই হবে, এবং সেই প্রাচীন পুঁথিকে ভুল হাতে পড়তে দেওয়া যাবে না। এই ছিল তাদের নতুন মিশন, এক অজানা, বিপদসংকুল পথের দিকে, যেখানে প্রতিটি মোড়ে অপেক্ষা করছে নতুন রহস্য, এবং প্রতিটি রহস্যের পেছনে লুকিয়ে আছে এক ভয়ানক সত্য, যা মানবজাতির পরিচিত ইতিহাসকে বদলে দিতে পারে, এবং তাদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion