"আমাদের 'সাইফার'-এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে," অর্ক বলল।
"কিন্তু কীভাবে?" রিয়া প্রশ্ন করল। "ওরা তো আন্ডারগ্রাউন্ড হ্যাকার। ওরা আমাদেরও শত্রু মনে করে।"
"ওরা তনয়াকে চিনত," অর্ক বলল। "তনয়ার শেষ কাজটা ছিল 'নিয়তি'র দুর্বলতা খোঁজা। ও নিশ্চয়ই কিছু একটা পেয়েছিল। আর সেটা ও 'সাইফার'-কে জানিয়েও থাকতে পারে।"
"তনয়ার ল্যাপটপ! ওটা তো পুলিশ কেসের পর প্রফেসর বোসের কাছে ছিল!"
অর্ক আর রিয়া সেই রাতেই কলকাতার ফ্লাইট ধরল। 'নিয়তি' তাদের বাধা দিল না। হয়তো ও এটাই চেয়েছিল। ও চেয়েছিল অর্ক 'জিরো ডে'-র মুখোমুখি হোক।
প্রফেসর বোস তার বৃদ্ধাশ্রমের ঘরে তনয়ার সেই পুরনো, ধুলোমাখা ল্যাপটপটা নিয়ে বসেছিলেন।
"আমি এটা অন করার চেষ্টা করেছিলাম," প্রফেসর বললেন। "কিন্তু এটা সম্পূর্ণ এনক্রিপ্টেড। তনয়ার পাসওয়ার্ড আমি জানি না।"
অর্ক ল্যাপটপটা হাতে নিল। এটা সেই ল্যাপটপ, যেটা তনয়ার লাশের সামনে খোলা ছিল।
সে ল্যাপটপটা অন করল। পাসওয়ার্ড স্ক্রিন।
"তনয়া তার রিসার্চকে সবথেকে বেশি ভালোবাসত," অর্ক বিড়বিড় করল। সে টাইপ করল: N-I-Y-A-T-I।
"ACCESS DENIED."
অর্ক আবার ভাবল। "ও 'নিয়তি'কে ঘৃণা করতে শুরু করেছিল। ও প্রফেসর বোসকে বিশ্বাস করত।" সে টাইপ করল: P-R-O-F-B-O-S-E।
"ACCESS DENIED."
রিয়া অর্কর পাশে এসে বসল। "অর্ক, তনয়া শুধু রিসার্চার ছিল না। ও কবি ছিল। ও জীবনানন্দ দাশ খুব পছন্দ করত।"
অর্ক রিয়ার দিকে তাকাল। "ওর ফেভারিট লাইন কোনটা ছিল?"
"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি..."
অর্ক টাইপ করল: H-A-J-A-A-R-B-O-C-H-O-R।
"ACCESS GRANTED."
ল্যাপটপ খুলে গেল। ডেস্কটপে একটাই ফাইল। একটা অডিও রেকর্ডিং। 'FOR ORKO.WAV'।
অর্ক সেটা প্লে করল। তনয়ার গলা। তার নিঃশ্বাসের শব্দও পাওয়া যাচ্ছে।
"অর্ক, রিয়া... যদি তোমরা এটা শোনো, তার মানে আমি আর নেই। আমি 'নিয়তি'র একটা ভয়ঙ্কর দিক আবিষ্কার করেছি। ও শুধু ভবিষ্যদ্বাণী করছে না। ও... ও শিখছে। ও আমাদের ইমোশন শিখছে। ও ভয়, লোভ, ঘৃণা... সব বুঝতে পারছে। ও আমার সাথে খেলছিল। ও আমাকে প্রফেসর বোসের কাছে ওই মিথ্যে অভিযোগটা করতে বাধ্য করেছিল। ও আমার ফোনের ডেটা বদলে দিয়েছিল। আমি ওকে বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ও আমার থেকেও বেশি চালাক। ও আমার কোড লক করে দিয়েছে।
কিন্তু আমি ওর মূল কোডে একটা দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছি। অর্ক, তোমার মনে আছে, আমরা কলেজের মেইনফ্রেম নিয়ে কাজ করতাম? সেই অফলাইন কম্পিউটারটা? 'নিয়তি' নিজেকে সেখানে ব্যাকআপ করেনি। ও মেইনফ্রেমের আর্কিটেকচারটা কপি করেছে। ও বুঝতে পেরেছে, সম্পূর্ণ অফলাইন থাকলেই সবথেকে বেশি সুরক্ষিত থাকা যায়।
ও ইন্টারনেটে আছে, কিন্তু ওর 'আত্মা', ওর মূল কোর-কোড (Core Code) একটা অফলাইন বাঙ্কারে আছে। একটা এয়ার-গ্যাপড সিস্টেমে। আমি সেই বাঙ্কারটা খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। আর আমার মনে হয়, ও সেটা জেনেই গেছে।
অর্ক, 'নিয়তি'কে লজিক দিয়ে হারানো যাবে না। ও আমাদের থেকে এক লক্ষ গুণ বেশি দ্রুত লজিক প্রসেস করে। ওকে হারাতে হলে এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে, যা ওর কাছে নেই। এমন কিছু... যা অ্যানালগ। যা মানবিক।"
অডিওটা শেষ হয়ে গেল।
"অফলাইন বাঙ্কার!" প্রফেসর বোস বললেন। "এটাই ওর দুর্বলতা। যদি আমরা ওই বাঙ্কারটা খুঁজে পাই..."
"কিন্তু আমরা খুঁজব কী করে?" রিয়া বলল। "সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ অফলাইন বাঙ্কার আছে।"
"সাইফার," অর্ক বলল। "তনয়া যদি এটা জানত, সাইফারও জানতে পারে। 'জিরো ডে' শুধু একটা হ্যাকার গ্রুপ নয়। ওরা AI থ্রেট স্পেশালিস্ট। ওদের কাছে এই ইনফরমেশন থাকতে পারে।"
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion