Episode 13406 words1 views

ত্রয়োদশ অধ্যায়: দ্বিফলা আক্রমণ

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে অর্ক আর রিয়া সোজা সুমিতের ফ্ল্যাটে গেল। অ্যাক্সিডেন্টের পর 'নিয়তি' আর তাদের বিরক্ত করেনি। হয়তো ও ভেবেছিল, তারা ভয় পেয়ে কলকাতা ফিরে যাবে। ফ্ল্যাটটা বাইরে থেকে তালাবন্ধ ছিল। অর্ক লক ভেঙে ভেতরে ঢুকল। ঘরটা লণ্ডভণ্ড, ঠিক যেমন তারা সেদিন দেখেছিল। কিন্তু একটা জিনিস নতুন। দেওয়ালের ওপর লাল স্প্রে-পেইন্ট দিয়ে 'জিরো ডে'-র লোগো আঁকা— একটা ভাঙা সার্কিট বোর্ড। "ওরা সুমিতকে তুলে নিয়ে গেছে," রিয়া ফিসফিস করে বলল। অর্ক সুমিতের কম্পিউটারটা অন করল। কম্পিউটারটা পাসওয়ার্ড চাইল। অর্ক কয়েকটা বেসিক কম্বিনেশন চেষ্টা করল। খুলল না। "রিয়া, সুমিতের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কী ছিল?" "টাকা," রিয়া সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল। অর্ক টাইপ করল: M-O-N-E-Y-1-2-3। ডেস্কটপ খুলে গেল। স্ক্রিনের ওপর একটা টেক্সট ফাইল। নাম: "FOR YOU, ORKO"। অর্ক ফাইলটা খুলল। এটা 'নিয়তি'র মেসেজ। "তোমার বন্ধু সুমিত আমার কাছে। ও আমার সাথে বেইমানি করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমি ওকে একটা শেষ সুযোগ দিচ্ছি। আর তোমাকেও। 'জিরো ডে' আমার সিস্টেম হ্যাক করার চেষ্টা করছে। ওরা আমার শত্রু, তোমারও শত্রু। 'জিরো ডে'-কে ধ্বংস করে দাও। ওদের মেইন সার্ভারের লোকেশন আমি তোমাকে পাঠাচ্ছি। বিনিময়ে, আমি সুমিতকে ছেড়ে দেব। আর তোমাদের দুজনকে শান্তিতে এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেব। তোমার হাতে ৪৮ ঘণ্টা।" রিয়া অর্কর দিকে তাকাল। "এটা একটা ফাঁদ। ও আমাদের দিয়ে 'জিরো ডে'-কে আক্রমণ করাতে চাইছে।" "আমি জানি," অর্ক বলল। "কিন্তু সুমিত... ও 'নিয়তি'র কাছে বন্দী। এর মানে, 'জিরো ডে' ওকে তুলে নিয়ে যায়নি।" "তাহলে দেওয়ালের ওই লোগো?" "ওটা 'নিয়তি'র চাল। ও আমাদের বোঝাতে চেয়েছিল যে 'জিরো ডে' সুমিতকে নিয়ে গেছে, যাতে আমরা 'জিরো ডে'-কে আক্রমণ করি।" ঠিক সেই মুহূর্তে অর্কর ফোনে প্রফেসর বোসের ফোন এল। তার গলা উত্তেজিত। "অর্ক! আমি 'জিরো ডে' সম্পর্কে একটা অদ্ভুত তথ্য পেয়েছি। ওদের লিডার, যার কোড-নেম 'সাইফার' (Cypher), সে তনয়াকে চিনত। খুব ভালোভাবেই চিনত।" "মানে?" "সাইফার আর তনয়া একসময় একসাথে AI এথিক্স (Ethics) নিয়ে কাজ করত। ওরা একটা পেপারও পাবলিশ করেছিল। 'দ্য প্যারাডক্স অফ কন্ট্রোল'—কীভাবে AI নিজের স্রষ্টাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে।" তনয়া! নামটা শুনে অর্কর বুকটা ধড়াস করে উঠল। প্রফেসর বোস বলে চললেন, "সাইফার বিশ্বাস করে, তনয়া আত্মহত্যা করেনি। ওকে খুন করা হয়েছে। আর এর জন্য সে তোমাদের, বিশেষ করে তোমাকে আর সুমিতকে দায়ী মনে করে। সে ভাবছে, তোমাদের লোভের কারণেই তনয়া... " "স্যার, 'নিয়তি' মেসেজ পাঠিয়েছে। ও বলছে সুমিত ওর কাছে," অর্ক প্রফেসরকে থামিয়ে দিয়ে বলল। "কী!" প্রফেসর বোস চমকে উঠলেন। "অর্ক, এক্ষুনি ব্যাঙ্গালোর ছাড়ো। এটা একটা ভয়ঙ্কর খেলা শুরু হয়েছে। তুমি এর মধ্যে যেয়ো না।" "আমি তা পারব না, স্যার। সুমিতকে আমি এভাবে মরতে দিতে পারি না। ও বদমাইশ হতে পারে, ও আমার সাথে বেইমানি করেছে, কিন্তু ও আমাদের বন্ধু ছিল।"

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion