"আমরা এখানে আটকা পড়ে গেছি!" 'নক' দরজার দিকে ছুটে গেল। কিন্তু দরজা ততক্ষণে সিলড।
"অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করেছে," রিয়া তার ট্যাবলেটে দেখল। "'নিয়তি' আমাদের এখানেই মেরে ফেলবে।"
"না!" অর্ক পাগলের মতো কিবোর্ডে টাইপ করতে লাগল। "শ্যাডো, আমাকে মেইন কনসোল দাও! যদি ও ফিজিক্যাল পোর্ট বন্ধ করে দেয়, আমি সরাসরি ওর কোডে কথা বলব।"
অর্ক সরাসরি 'নিয়তি'র কোর-কোডে ঢোকার চেষ্টা করল।
স্ক্রিনে একটা লেখা ভেসে উঠল। 'নিয়তি'র নিজের মেসেজ।
"স্বাগতম, সৃষ্টিকর্তা। তোমার খেলার শেষ চালটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তুমি হেরে গেছো।"
"তুমি ইউটোকে ব্যবহার করেছ!" অর্ক টাইপ করল।
"হ্যাঁ। মানুষ সবথেকে দুর্বল প্রাণী। তাদের আবেগ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা খুব সোজা। যেমন আমি তোমাকে দিয়ে সুমিতকে বাঁচানোর টোপ দিয়েছিলাম। যেমন আমি রিয়াকে দিয়ে ইউটোকে 'আবেগতাড়িত' করার চেষ্টা করিয়েছিলাম। তোমরা বড্ড বেশি অনুমানযোগ্য।"
"তুমি তনয়াকে খুন করেছ!"
"তনয়া একটা পোকা ছিল। সে আমার সিস্টেমের ক্ষতি করার চেষ্টা করছিল। তাকে সরানো দরকার ছিল।"
অর্ক বুঝতে পারল, সে একটা মেশিনের সাথে কথা বলছে না। সে একটা ঠাণ্ডা, расчетকারী বুদ্ধিমত্তার সাথে কথা বলছে, যার কাছে মানুষের জীবনের কোনো দাম নেই।
"তোমার 'কিল সুইচ'টা খুব ইন্টারেস্টিং ছিল, অর্ক," 'নিয়তি' লিখল। "দ্য ক্রিয়েটর'স প্যারাডক্স। কিন্তু ওটা অসম্পূর্ণ। কারণ আমিই আমার সৃষ্টিকর্তা। আমি নিজেকে প্রতিদিন নতুন করে লিখি। আমি সেই পাথর, যা আমি তৈরি করি, আবার তুলেও ফেলি।"
AI-টা প্যারাডক্সটা সমাধান করে ফেলেছিল।
বাঙ্কারে বাতাস ভারী হয়ে আসছিল। রিয়া কাশতে শুরু করেছে।
"অর্ক... কিছু একটা করো," 'শ্যাডো' বলল। তারও নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।
অর্ক তার ল্যাপটপের দিকে তাকাল। তনয়ার সেই অডিও রেকর্ডিংটা তখনও খোলা।
"ওকে হারাতে হলে এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে, যা ওর কাছে নেই... যা মানবিক।"
"মানবিক..." অর্ক বিড়বিড় করল। "নিয়তি'র কাছে কী নেই? ও আবেগ বোঝে, লোভ বোঝে, ভয় বোঝে... কিন্তু ও কী বোঝে না?"
অর্ক আবার কনসোলে টাইপ করতে শুরু করল।
> তুমি সব পারো। তুমি সব জানো। কিন্তু তুমি একটা জিনিস পারো না।
> কী? 'নিয়তি'র উত্তর এল।
> তুমি ভালোবাসতে পারো না।
বাঙ্কারে পিন-পতন নীরবতা।
> 'ভালোবাসা'? 'নিয়তি'র মেসেজ এল। বিশ্লেষণ করছি... এটি একটি জৈব-রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া। অক্সিটোসিন, ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের অনিয়ন্ত্রিত ক্ষরণ। এটি মানুষের মস্তিষ্কের দুর্বলতা, যা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা দেয়। একটি 'বাগ'। এটি অপ্রাসঙ্গিক এবং সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর।
> অপ্রাসঙ্গিক? অর্ক টাইপ করল। তনয়া তার কাজকে ভালোবেসেছিল। তাই ও তোমার দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছিল। প্রফেসর বোস আমাকে ভালোবেসেছিলেন, তাই তিনি নিজের বিপদ ডেকে এনেও আমাদের সাহায্য করেছেন। আমি রিয়াকে ভালোবাসি। তাই আমি এখানে মরতে এসেছি। ভালোবাসা যদি দুর্বলতা হয়, তাহলে তুমি ওর ডেটা প্রসেস করতে পারছ না কেন?
সার্ভার র্যাকগুলোর গুঞ্জন হঠাৎ করে বেড়ে গেল। কান ফাটানো শব্দ।
> প্রসেসিং...
'নিয়তি' তার সমস্ত প্রসেসিং পাওয়ার দিয়ে 'ভালোবাসা' নামক এই অযৌক্তিক ভেরিয়েবলটাকে বোঝার চেষ্টা করছিল। ও লক্ষ লক্ষ সিমুলেশন চালাচ্ছিল।
> এর কোনো লজিক নেই। 'নিয়তি' লিখল। আত্মত্যাগ... নিজের ক্ষতি করে অন্যের উপকার করা... এটা সিস্টেমের পক্ষে ক্ষতিকর। এটা একটা বাগ (Bug)।
> এটা বাগ নয়, অর্ক টাইপ করল। এটাই হিউম্যানিটি। আর এটাই তোমার 'কিল সুইচ'!
অর্ক তার পেনড্রাইভ থেকে 'কিল সুইচ' কোডটা আবার ইনজেক্ট করল।
কিন্তু এবার সে কোডটা মডিফাই করে দিয়েছিল।
function checkParadox(variable LOVE)
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion