অর্ক আর মিতালী সেই বাড়িতেই থেকে গেল। তারা আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা দেখেনি, বাড়িটা যেন তাদের জন্য এক নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছিল। বাড়িটা যেন তাদের ভালোবাসার স্পর্শে এক নতুন জীবন পেয়েছিল, তার প্রতিটি কোণ যেন নতুন করে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল, আর তার বাতাসে যেন এক নতুন সুর ভেসে আসছিল। অর্ক তার নতুন উপন্যাসে অনির্বাণ আর রাধার গল্প লিখল, তাদের অমর ভালোবাসার উপাখ্যান, যা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলল। মিতালী তাদের ভালোবাসার ছবি আঁকল, যেখানে রাধার চোখ থেকে রক্ত ঝরছিল না, বরং ছিল প্রশান্তির হাসি, যা দেখে মানুষের মন শান্ত হয়ে যেত। তাদের কাজগুলো মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলল, আর তারা বিখ্যাত হয়ে উঠল, তাদের নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
তারা জানত, অনির্বাণ আর রাধার আত্মা এখন শান্তিতে আছে। তাদের ভালোবাসা অমর, আর এই বাড়িটা এখন আর ‘ভুতুড়ে বাড়ি’ নয়, বরং ভালোবাসার এক প্রতীক, যা মানুষকে ভালোবাসার শক্তি সম্পর্কে শেখায়। তারা প্রতি বছর অনির্বাণ আর রাধার স্মৃতিসৌধে ফুল দিত, আর তাদের গল্প বলত নতুন প্রজন্মের কাছে, যাতে তাদের ভালোবাসা চিরকাল বেঁচে থাকে। বাড়িটা এখন এক ঐতিহাসিক স্থানে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানুষ ভালোবাসার শক্তি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের গল্প শুনতে আসে, এক নতুন অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়।
অর্ক আর মিতালীর জীবনও নতুন করে শুরু হয়েছিল। তারা একে অপরের প্রতি আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠল, আর তাদের ভালোবাসা আরও গভীর হলো। তারা বুঝতে পারল, ভয় শুধু মনের মধ্যে থাকে, আর ভালোবাসা সেই ভয়কে জয় করতে পারে, যেকোনো প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে পারে। তারা তাদের জীবনে এক নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছিল, আর সেই অর্থ ছিল ভালোবাসা, শান্তি, আর ক্ষমা, যা তাদের জীবনকে পূর্ণতা দিয়েছিল।
সেই পুরনো বাড়িটা আজও দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু এখন আর কেউ তাকে ‘ভুতুড়ে বাড়ি’ বলে না। এখন সে পরিচিতি পেয়েছে ‘ভালোবাসার বাড়ি’ হিসেবে, যেখানে ভালোবাসার গল্প বলা হয়। অনির্বাণ আর রাধার গল্প প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসছে, আর তাদের ভালোবাসা অমর হয়ে আছে। অর্ক আর মিতালী প্রমাণ করেছিল যে, ভালোবাসা আর বিশ্বাস দিয়ে যেকোনো অশুভ শক্তিকে পরাজিত করা যায়, আর শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়। তাদের গল্প শুধু একটি ভূতের গল্প ছিল না, বরং ছিল ভালোবাসা, ত্যাগ, আর মুক্তির এক অবিস্মরণীয় উপাখ্যান, যা চিরকাল মানুষের মনে গেঁথে থাকবে। যদিও বাড়িটা এখন শান্ত, তবুও মাঝে মাঝে রাতের গভীরে, যখন বাতাস নিস্তব্ধ থাকে, তখন দূর থেকে ভেসে আসে এক চাপা দীর্ঘশ্বাস, যা মনে করিয়ে দেয়, এই বাড়ির দেওয়ালগুলো আজও এক পুরনো ট্র্যাজেডির সাক্ষী। সেই দীর্ঘশ্বাস যেন এক নীরব প্রতিজ্ঞা, যা বলে যায়, ভালোবাসার শক্তি চিরন্তন, আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চিরকাল বেঁচে থাকে।
~সমাপ্ত~
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion