সেই রাতে অর্ক ঘুমাতে পারল না। সে সোফায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। তার মাথার ভেতরে সব কিছু জট পাকিয়ে যাচ্ছে।
সে যদি নিজেই এই ভয়ঙ্কর প্রজেক্টের অংশ হয়? সে কি একজন অপরাধী?
হঠাৎ তার চোখের সামনে একটা দৃশ্য ভেসে উঠল।
...একটা সাদা ল্যাবরেটরি। সে একটা সাদা কোর্ট পরে আছে। তার সামনে একজন লোক বসে আছে, তার চোখেমুখে আতঙ্ক। লোকটার মুখটা অস্পষ্ট।
"প্লিজ, ডক্টর বোস... আমার ওপর এটা প্রয়োগ করবেন না।"
"ভয় পেও না। এটা শুধু তোমার খারাপ স্মৃতিগুলো মুছে দেবে। তুমি একটা নতুন জীবন পাবে।"
সে লোকটার হাতে একটা ইঞ্জেকশন দিল। লোকটা নিস্তেজ হয়ে পড়ল।...
"না!" অর্ক চিৎকার করে উঠে বসল। সে হাঁপাচ্ছে, ঘামে ভিজে গেছে।
রিয়া দৌড়ে এল। "কী হয়েছে, অর্ক? দুঃস্বপ্ন দেখেছ?"
"আমি... আমি ওদের একজন ছিলাম, রিয়া," অর্কর গলা কাঁপছিল। "আমি ডক্টর বোস। আমিই 'অবলিভিয়ন' তৈরি করেছি।"
রিয়া তার পাশে বসল। তার মুখটা কঠিন। "তুমি নিশ্চিত?"
"আমি দেখেছি। আমি একজন লোকের ওপর ওটা প্রয়োগ করছিলাম।"
রিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল, "অর্ক, স্মৃতি খুব জটিল জিনিস। বিশেষ করে যখন সেটাকে টেম্পার করা হয়েছে। তুমি যা দেখেছ, সেটা হয়তো সত্যি। কিন্তু সেটা হয়তো পুরো সত্যি নয়।"
"মানে?"
"চিঠিতে লেখা ছিল, 'ওরা শহরের জল শোধনাগারের মাধ্যমে একটা ভয়ঙ্কর জিনিস পরীক্ষা করতে চাইছে'। তুমি যদি ওদের লোক হতে, তবে তুমি কেন সেটা আটকানোর চেষ্টা করবে? কেন প্রমাণ লুকিয়ে রাখবে?"
অর্কর কাছে কোনও জবাব ছিল না।
"হয়তো তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছিলে," রিয়া বলল। "হয়তো তুমি প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছিলে।"
"আমার প্রথম আঁকা ছবি..." অর্ক আবার বিড়বিড় করল। "আমাকে এটা মনে করতেই হবে।"
"চলো, আমরা এমন কোথাও যাই, যেটা তোমার ছোটবেলার সাথে যুক্ত হতে পারে," রিয়া প্রস্তাব দিল। "তোমার পিসি যখন উত্তর কলকাতায় থাকতেন না, তখন তিনি কোথায় থাকতেন? তুমি ছোটবেলায় কোথায় যেতে?"
"আমি জানি না..."
"ভাবো, অর্ক। এমন কোনও জায়গার নাম কি তোমার অস্পষ্টভাবে মনে পড়ছে? পার্ক, স্কুল, কোনও বাড়ি?"
অর্ক চোখ বন্ধ করল। সে খুব জোরে চাপ দিল।
...একটা সবুজ রঙ... অনেক গাছ... একটা লেক... আর একটা সাদা বাড়ি...
"লেক ভিউ রোড," অর্ক ফিসফিস করে বলল।
"লেক ভিউ রোড? সেটা তো রবীন্দ্র সরোবরের কাছে!" রিয়া উত্তেজিত হয়ে উঠল। "চলো, আমরা কাল সকালেই ওখানে যাব।"
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion