পরদিন সকালে তারা খুব সাবধানে সেফ হাউস থেকে বেরোল। রিয়া তার মুখটা স্কার্ফে ঢেকে নিয়েছে, অর্ক একটা টুপি পরেছে।
তারা বাসে করে রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় গেল। লেক ভিউ রোড একটা শান্ত, অভিজাত পাড়া। পুরনো সব বাড়ি।
অর্ক হাঁটছিল। প্রত্যেকটা বাড়ি সে খুঁটিয়ে দেখছিল।
"কিছু মনে পড়ছে?" রিয়া জিজ্ঞেস করল।
"না। সব কিছুই অচেনা।"
তারা প্রায় রাস্তার শেষ মাথায় চলে এসেছে। অর্ক হতাশ হয়ে পড়েছিল।
হঠাৎ সে দাঁড়িয়ে পড়ল।
একটা পুরনো সাদা বাড়ি। গেটটা মরচে ধরা। বাড়ির সামনে একটা বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ।
"এই বাড়িটা..." অর্কর বুকটা ধড়াস করে উঠল।
সে এগিয়ে গিয়ে গেটটা ঠেলল। গেটটা খোলা ছিল। ভেতরে বাগানটা আগাছায় ভরা।
"অর্ক, এটা কি তোমার বাড়ি?"
"আমি... আমি নিশ্চিত নই।"
তারা বাড়ির দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। দরজায় একটা আধুনিক তালা ঝুলছে।
"এটা তোমার সেই চাবির গোছা দিয়ে খুলবে না," রিয়া বলল।
অর্ক পকেট থেকে চাবির গোছাটা বের করল। তাতে একটা খুব ছোট, সরু চাবি ছিল, যেটা সে আগে খেয়াল করেনি।
সে চাবিটা তালায় ঢোকাল।
তালাটা খুলে গেল।
তারা ভেতরে ঢুকল। বাড়িটা ধুলোয় ঢাকা। আসবাবপত্র সব সাদা চাদরে ঢাকা। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, এটা একটা সম্পন্ন পরিবারের বাড়ি।
অর্ক বসার ঘরের মধ্যে দিয়ে হাঁটছিল। তার মনে হচ্ছিল, সে এখানে আগেও এসেছে।
একটা দেওয়ালে অনেকগুলো ছবি টাঙানো। একটা ছোট ছেলের ছবি। সে তার বাবা-মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্ক ছবিটার কাছে এগিয়ে গেল।
"এটা... এটা কি আমি?"
রিয়া তার পাশে এসে দাঁড়াল। "অর্ক, তোমার মুখের আদলটা... হ্যাঁ, এটা তুমিই।"
অর্কর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। সে তার বাবা-মায়ের মুখ দেখল। একটা অস্পষ্ট স্মৃতি তার মাথায় এসে ধাক্কা দিল।
...বাবা তাকে আঁকা শেখাচ্ছেন। "দেখ, অরুণ, এইভাবে শেড করতে হয়।"
"বাবা, আমি একটা ড্রাগন আঁকব!"...
"ড্রাগন," অর্ক ফিসফিস করে বলল।
"কী বললে?"
"ড্রাগন! আমার প্রথম আঁকা ছবি! রিয়া, আমার মনে পড়েছে! আমি একটা সবুজ রঙের ড্রাগন এঁকেছিলাম!"
"অর্ক, তুমি নিশ্চিত?"
"হ্যাঁ! হ্যাঁ! পাসওয়ার্ডটা হলো 'গ্রিন ড্রাগন'!"
"তাড়াতাড়ি ল্যাপটপ খোলো!" রিয়া বলল।
ঠিক তখনই, তারা বাইরে একটা গাড়ির শব্দ পেল। একটা গাড়ি এসে বাড়ির সামনে থামল।
"ওরা এখানেও এসে গেছে!" রিয়া আতঙ্কিত হয়ে বলল।
"তাড়াতাড়ি, এদিকে!" অর্ক রিয়ার হাত ধরে টানল।
সে দেওয়ালের একটা বইয়ের তাকের দিকে এগিয়ে গেল। "আমার ছোটবেলার হাইডআউট।"
সে একটা বই টানতেই তাকটা একটা গোপন দরজার মতো খুলে গেল। ভেতরে একটা সরু, অন্ধকার প্যাসেজ।
তারা প্যাসেজের মধ্যে ঢুকে পড়ল। ঠিক সেই মুহূর্তে সদর দরজা খোলার শব্দ হলো। ওরা তালা ভেঙে ঢোকেনি, তার মানে ওদের কাছেও চাবি আছে।
"বাড়িটা ভালো করে খোঁজো," মিস্টার বসুর গলা। "ও এখানেই আসবে।"
অর্ক আর রিয়া সুড়ঙ্গের অন্ধকারে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion