কলকাতায় ফিরে এসে অনির্বাণ প্রথমেই রিকি মুখার্জীর স্টুডিওতে গেল। রিকির ছবিই ছিল তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র।
“রিকি, তোমার সেই ছবিটা আরও ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার।” অনির্বাণ বললো। “আমরা রতন বাবু আর সুস্মিতা দেবীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বর্ণনার সঙ্গে তোমার ছবিতে থাকা লোকটার অবয়ব মিলে যাচ্ছে।”
রিকি তার কম্পিউটারে ছবিটি আবার খুললো। অনির্বাণ ছবিটির প্রতিটি পিক্সেল খুঁটিয়ে দেখছিল। “তুমি কি এই ছবিটা আরও বেশি স্পষ্ট করতে পারবে?”
“আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, স্যার। ফ্ল্যাশ ছাড়া আর অন্ধকারে এর থেকে বেশি স্পষ্ট করা কঠিন।” রিকি বললো।
অনির্বাণ ছবিটি জুম করে দেখছিল। সেই অস্পষ্ট অবয়ব। তার হাতে যে বস্তুটি ছিল, সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। তবে রিকি বলেছিল, সেটা একটা ঝোলা ব্যাগ ছিল।
“তুমি কি নিশ্চিত যে লোকটা জঙ্গলের দিকে যাচ্ছিল, তোমার মনে হচ্ছে না সে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছিল?” অনির্বাণ প্রশ্ন করলো।
রিকি আবার ছবিটা দেখলো। “আসলে, সে জঙ্গলের পাশ দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিল। তার গতির কারণে দিকটা ঠিক স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। তবে সে লজ থেকে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে, নাকি জঙ্গল থেকে লজের দিকে আসছে – তা বলা কঠিন।”
“ঠিক আছে।” অনির্বাণ কিছুক্ষণ ভাবলো। “তুমি যখন এই ছবিটা তুলেছিলে, তখন তোমার আশেপাশে আর কেউ ছিল? লজের অন্য কোনো অতিথি?”
রিকি কিছুক্ষণ ভাবলো। “হ্যাঁ। আমার মনে পড়ছে। আমার কটেজের ঠিক পাশেই যে কটেজ ছিল, সেখান থেকে একজন লোক বেরিয়ে এসেছিলেন। তিনি বেশ ভয় পেয়েছিলেন। তাকে দেখে মনে হয়েছিল, তিনি হয়তো কিছু দেখেছেন।”
“কে ছিল সেই লোকটা? তার নাম মনে আছে?” অর্ঘ্য জিজ্ঞেস করলো।
“নাম মনে নেই, স্যার। তবে তিনি একটু মোটা ধরনের ছিলেন, আর তার মুখে বেশ দাড়ি ছিল। বয়স আমার থেকে অনেক বেশি ছিল।” রিকি বললো।
অনির্বাণ তার বাবার ডায়েরির সেই পাঁচজনের ছবির দিকে তাকালো। নিহত তিনজন, তার বাবা আর একজন রহস্যময় ব্যক্তি। ছবির সেই রহস্যময় ব্যক্তিটিকে মনে পড়ছে না রিকির বর্ণনা থেকে। সে ছিল একজন যুবক।
“আচ্ছা, সেই রাতে লজের গেস্ট লিস্টে আর কারা ছিল?” অনির্বাণ জিজ্ঞেস করলো। “লজের মালিক বলেছিলেন, প্রায় দশ-বারো জন গেস্ট ছিল।”
অর্ঘ্য তার ফাইল থেকে গেস্ট লিস্টটা বের করলো। “রতন দাস, সুস্মিতা সেন, রিকি মুখার্জী, রঞ্জন সাহা (মৃত), অমল দাস (মৃত), শংকর রায় (মৃত)। আর তিনজন ছিলেন: ডঃ সুমিত দেবরায় (অনির্বাণের বাবা), এবং আরও দু’জন। তাদের নাম জয়ন্ত বিশ্বাস এবং দীপক সেন।”
অনির্বাণ আর অর্ঘ্য একে অপরের দিকে তাকালো। এই জয়ন্ত বিশ্বাস আর দীপক সেনই কি সেই ছবির বাকি দুজন?
“তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, অর্ঘ্য। দ্রুত!” অনির্বাণ বললো। “এই দুজনই এখন সেই রাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। হয়তো তাদের কাছে সেই রহস্যময় ব্যক্তির পরিচয় আছে।”
অনির্বাণের মন বলছিল, খুনি তাদেরই মধ্যে একজন। অথবা খুনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এবং সেই রাতেই সে উপস্থিত ছিল।
রিকির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারা জয়ন্ত বিশ্বাস আর দীপক সেনের খোঁজে বের হলো। এই দুজনই এখন তাদের সবচেয়ে বড় ভরসা। এই অন্ধকার রহস্যের জট খুলতে হলে তাদের মুখের কথা খুবই জরুরি।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion