Episode 7448 words0 views

সপ্তম অধ্যায়: সুস্মিতার ভয়

রতন দাসের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তারা সুস্মিতা সেনের বাড়ির দিকে রওনা হলো। সল্টলেকের একটি অভিজাত আবাসনে সুস্মিতা সেন থাকেন। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত নার্স। তার বয়স প্রায় ৬৫। সুস্মিতা সেন তাদের দেখে কিছুটা অবাক হলেন। অর্ঘ্য পরিচয় দিয়ে খুনের ঘটনা এবং রুদ্রপুর লজের যোগসূত্রের কথা বললো। সুস্মিতা দেবী শুনেই শিউরে উঠলেন। “বিশ্বাস করতে পারছি না! ওরা মারা গেছে?” সুস্মিতা দেবী আতঙ্কিত কণ্ঠে বললেন। “হ্যাঁ। আমরা আপনার কাছ থেকে গত বছরের সেই আগুন লাগার ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।” অর্ঘ্য বললো। সুস্মিতা সেন চিন্তিত হয়ে পড়লেন। “আগুন? হ্যাঁ, লেগেছিল। খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমি আর আমার বোন সেই সময় লজে ছিলাম।” “আপনি কি সেই রাতে কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখেছিলেন?” অনির্বাণ জিজ্ঞেস করলো। সুস্মিতা দেবী কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর ফিসফিস করে বললেন, “আমি একটা জিনিস দেখেছিলাম, যা কাউকে বলিনি।” অনির্বাণ আর অর্ঘ্য একে অপরের দিকে তাকালো। “কী দেখেছিলেন, ম্যাডাম?” অনির্বাণ জানতে চাইলো। “আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে, আমি বাথরুমে গিয়েছিলাম। আমার রুমের জানালার ঠিক বাইরেই জঙ্গলটা দেখা যায়। সেখান থেকে আমি একটা অদ্ভুত শব্দ শুনেছিলাম। যেন কেউ কিছু চাপা দিচ্ছে বা মাটি খুঁড়ছে। খুব নিচু শব্দ, কিন্তু আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিলাম।” সুস্মিতা দেবী বললেন। “আমি কৌতূহলী হয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়েছিলাম। দেখলাম, অন্ধকারে একজন লোক মাটিতে কিছু পুঁতছে।” “আপনি লোকটাকে দেখতে পেয়েছিলেন?” অনির্বাণ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো। “স্পষ্ট নয়। অন্ধকারে একটা ছায়ার মতো। সে মাটির নিচে কিছু পুঁতেছিল। তারপর খুব দ্রুত জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গেল। তার মিনিটখানেক পরেই আগুনটা লেগেছিল।” সুস্মিতা দেবী বললেন। তার চোখে এখনও সেই রাতের ভয় স্পষ্ট। “লোকটার চেহারা বা পোশাক সম্পর্কে কিছু মনে আছে?” অর্ঘ্য জিজ্ঞেস করলো। “না। অন্ধকারে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। তবে সে খুব দ্রুত কাজ করছিল।” সুস্মিতা দেবী বললেন। “আমি ভেবেছিলাম, হয়তো লজের কেউ কিছু পুঁতছে। তাই তেমন গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু এখন…” তিনি থেমে গেলেন। অনির্বাণ রতন দাসের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে সুস্মিতা দেবীর কথা মেলালো। দুজনেই একজন রহস্যময় লোককে দেখেছিল, যে আগুন লাগার আগে ঘটনাস্থল থেকে সরে গিয়েছিল। একজন দেখেছিল জঙ্গলে ঢুকতে, আরেকজন দেখেছিল কিছু পুঁতে বেরিয়ে যেতে। “আপনি কি মনে করেন, সেই লোকটার সঙ্গে এই খুনের কোনো সম্পর্ক আছে?” অর্ঘ্য জিজ্ঞেস করলো। সুস্মিতা দেবী ভয়ে কুঁকড়ে গেলেন। “আমি জানি না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, সেই রাতে কিছু একটা ভুল হয়েছিল। এমন কিছু, যা কাউকে বলা হয়নি।” অনির্বাণ সুস্মিতা দেবীকে আশ্বস্ত করলো। “আপনারা নিরাপদ। আমরা আপনাদের সুরক্ষার সব ব্যবস্থা করব।” সুস্মিতা দেবীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারা গাড়িতে উঠলো। অনির্বাণ নোটবুকটা বের করলো। “একজন লোক, জঙ্গলে কিছু পুঁতেছিল। আর তার পর আগুন লেগেছিল। এটা কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, অর্ঘ্য। এটা সাজানো ছিল।” “কিন্তু কেন? কী পুঁতেছিল?” অর্ঘ্য প্রশ্ন করলো। “জানি না। তবে এই ‘জলের গভীরে লুকানো বীজ’ – ধাঁধার এই লাইনটা এখন আরও অর্থপূর্ণ লাগছে।” অনির্বাণ বললো। “হয়তো সে এমন কিছু পুঁতেছিল, যা এই খুনগুলোর কারণ।” তাদের শেষ সাক্ষী রিকি মুখার্জী। একজন ফটোগ্রাফার। তার কাছ থেকে কিছু ছবি বা অন্য কোনো সূত্র পাওয়া যেতে পারে।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion