Episode 8476 words0 views

অষ্টম অধ্যায়: রিকির লেন্স

রিকি মুখার্জী একজন তরুণ, প্রতিভাবান ফটোগ্রাফার। তার স্টুডিও ছিল দক্ষিণ কলকাতার একটি ব্যস্ত এলাকায়। অনির্বাণ এবং অর্ঘ্য যখন তার স্টুডিওতে পৌঁছালো, রিকি তার কম্পিউটারে কাজ করছিল। অর্ঘ্য তাদের পরিচয় দিয়ে খুনের ঘটনা এবং রুদ্রপুর লজের যোগসূত্রের কথা বললো। রিকি শুনেই হতবাক হয়ে গেল। “কী বলছেন স্যার! ওরা মারা গেছে? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না!” রিকি বললো। “আমরা রুদ্রপুর ইকো-লজের আগুন লাগার ঘটনা সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে কিছু তথ্য চাই। আপনি সেই সময় লজে ছিলেন।” অনির্বাণ বললো। রিকি কিছু সময় চুপ করে রইলো। “হ্যাঁ, আমি ছিলাম। সেদিন রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমার ক্যামেরা ব্যাগে ছিল। যখন আগুন লেগেছিল, তখন আমি ক্যামেরা বের করে কিছু ছবি তুলেছিলাম।” অনির্বাণ আর অর্ঘ্য একে অপরের দিকে তাকালো। “ছবি তুলেছিলেন?” অর্ঘ্য জিজ্ঞেস করলো। “সেই ছবিগুলো কি এখন আছে আপনার কাছে?” “হ্যাঁ স্যার। লজের ভেতরে আর আগুনের কিছু ছবি তুলেছিলাম। তবে তেমন কিছু আসেনি। অন্ধকারে ফ্ল্যাশ ছাড়া ছবি তোলা কঠিন ছিল।” রিকি বললো। “তবুও। যদি সম্ভব হয়, ছবিগুলো আমরা দেখতে চাই।” অনির্বাণ বললো। রিকি তার কম্পিউটারে ছবিগুলো খুললো। লজের কটেজগুলোর ছবি, অন্ধকারে আগুনের শিখা, আর কিছু অস্পষ্ট ছবি। অনির্বাণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। হঠাৎ একটা ছবিতে তার চোখ আটকে গেল। ছবিটা অস্পষ্ট। কিন্তু লজের পেছনে জঙ্গলের ধার ঘেঁষে কিছু একটা নড়াচড়া করছে। খুব ক্ষীণভাবে বোঝা যাচ্ছে একটা অবয়ব। অন্ধকার আর আগুনের ধোঁয়ার কারণে স্পষ্ট নয়। “এই ছবিটা জুম করতে পারবে?” অনির্বাণ জিজ্ঞেস করলো। রিকি ছবিটা জুম করলো। এবার আরও একটু স্পষ্ট হলো। একটা ছায়ার মতো অবয়ব। লোকটা জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে। তার হাতে কিছু একটা ছিল। আর তার পরনে ছিল অদ্ভুত পোশাক। অনেকটা গ্রামের মানুষের মতো, কিন্তু সাধারণ নয়। কেমন যেন এলোমেলো, নোংরা। “এই লোকটাকে আপনি দেখেছিলেন?” অনির্বাণ জিজ্ঞেস করলো। “না স্যার। আমি তখন আগুন নিভানোর চেষ্টা করছিলাম। পরে ছবিগুলো দেখতে গিয়ে এই অস্পষ্ট অবয়বটা দেখেছিলাম। কিন্তু কে ছিল বুঝতে পারিনি।” রিকি বললো। “তার পরনের পোশাকটা কি সাধারণ ছিল?” অর্ঘ্য জিজ্ঞেস করলো। “না। কেমন যেন পুরনো ধরনের পোশাক। আর তার পিঠে একটা ঝোলা ব্যাগ ছিল। যেন কিছু বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।” রিকি বললো। অনির্বাণ রিকির কাছ থেকে ছবিটার একটি কপি চেয়ে নিলো। রতন দাস এবং সুস্মিতা সেনের বর্ণনার সঙ্গে রিকির ছবির অবয়বটা মিলে যাচ্ছে। এই রহস্যময় ব্যক্তিই খুনের মূল সূত্র। লজ থেকে বেরিয়ে এসে অনির্বাণ অর্ঘ্যকে বললো, “আমাদের কাছে এখন একজন সন্দেহভাজন আছে, যে আগুন লাগার সময় ঘটনাস্থলে ছিল। সে জঙ্গলে কিছু পুঁতেছিল, আর তার পর পরই আগুন লেগেছিল। সে সম্ভবত এই খুনের সঙ্গে জড়িত।” “কিন্তু সে কে? আর তার উদ্দেশ্য কী?” অর্ঘ্য প্রশ্ন করলো। “এখনও জানি না। তবে তার পোশাক আর তার হাতে যে ঝোলা ছিল, তা দেখে মনে হচ্ছে, সে হয়তো সুন্দরবনেরই কোনো লোক। আর সে হয়তো সেই ‘জলের গভীরে লুকানো বীজ’ পুঁতেছিল, যা এই খুনগুলোর কারণ।” অনির্বাণ বললো। তার মনে পড়লো তার বাবার ডায়েরির সেই লাইনটা: “নিশীথের ছায়া যখন গ্রাসে, পুরনো পাপের হিসেব কষে।” অনির্বাণ বুঝতে পারছিল, খুনি শুধু খুন করছে না, সে এক পুরনো পাপের হিসেব কষছে। এই পাপ সুন্দরবনের গভীরে লুকিয়ে আছে, আর অনির্বাণকে এখন সেই পাপের শিকড় খুঁজে বের করতে হবে। তার অতীত এবং বর্তমানের ছায়া এখন একাকার হয়ে গেছে।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion