অরুণিমা এবং বিক্রম সিং গুহার ভেতরেই শঙ্করের ডায়েরিটা খুঁটিয়ে পড়লেন। ডায়েরিতে শঙ্কর তার দুর্ঘটনার দিনের কথা লিখেছিল। সে লিখেছিল, কীভাবে সে খাদে পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিল। তাকে একজন বৃদ্ধ সাধু উদ্ধার করেছিলেন, যিনি এই অঞ্চলের গভীরে এক নির্জন জায়গায় বাস করতেন। সেই সাধুই ছিলেন কালীচরণ।
কালীচরণ শঙ্করকে বাঁচিয়েছিলেন এবং তাকে প্রকৃতির নিয়ম সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি শঙ্করকে শিখিয়েছিলেন, কীভাবে প্রকৃতির প্রতিশোধ নিতে হয়। শঙ্কর তার বাবার এবং তার দলের শিকারিদের উপর ক্ষুব্ধ ছিল, কারণ তারা প্রকৃতির সর্বনাশ করছিল। কালীচরণ শঙ্করকে এই প্রতিশোধের পথে চালিত করেছিলেন।
শঙ্কর বহু বছর ধরে কালীচরণের সাথে এই গুহায় লুকিয়ে ছিল। সে নিজেকে প্রকৃতির রক্ষক হিসেবে তৈরি করছিল। সে তার বাবার দলের শিকারিদের উপর নজর রাখছিল, এবং তাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল।
“তাহলে শঙ্করই খুনি,” বিক্রম সিং বললেন। “কিন্তু কেন এত বছর পর?”
অরুণিমা ডায়েরিটা আবার দেখল। “শঙ্কর লিখেছিল, সে তার বাবার মৃত্যুর পর প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করবে। রঘুনাথ মারা যাওয়ার পর শঙ্করের মনে প্রতিশোধের আগুন আরও তীব্র হয়েছিল।”
“আর এই প্রতীকগুলো?” বিক্রম সিং প্রশ্ন করলেন। “মৃত্যুর পাঞ্জা, আত্মার পাথর, শিকারি মূর্তি, ভাঙা গাছের ডালপালা… এগুলো কি শঙ্করের তৈরি?”
“হ্যাঁ। এগুলো শঙ্করের প্রতিশোধের প্রতীক। সে এই প্রতীকগুলো ব্যবহার করে শিকারিদের বার্তা দিচ্ছিল, এবং তাদের শাস্তি দিচ্ছিল।” অরুণিমা বলল। “আর এই বিষাক্ত ভেষজ… কালীচরণই তাকে এটা শিখিয়েছে।”
অরুণিমা বুঝতে পারল, কালীচরণ শুধু শঙ্করের গুরু নয়, সে এই খুনের পরিকল্পনার একজন মূল হোতা। সে শঙ্করকে ব্যবহার করে প্রকৃতির প্রতিশোধ নিচ্ছিল।
তারা যখন গুহার বাইরে বেরোচ্ছিলেন, তখনই গুহার মুখে একটি ছায়ামূর্তি দেখতে পেলেন। ছায়ামূর্তিটি ছিল বিশালদেহী, তার হাতে একটি ত্রিশূল। অরুণিমা এবং বিক্রম সিং প্রস্তুত হলেন। ছায়ামূর্তিটি ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে এল। সে ছিল কালীচরণ।
কালীচরণের চোখে এক ধরনের উন্মাদনা ছিল। তার মুখ জুড়ে ছিল দীর্ঘ শ্মশ্রু, তার পরনে ছিল কালো পোশাক।
“তোমরা খুব গভীরে প্রবেশ করেছ, গোয়েন্দা,” কালীচরণ বলল। তার কণ্ঠস্বর ছিল গম্ভীর এবং রহস্যময়। “প্রকৃতির নিয়ম ভাঙলে শাস্তি পেতে হয়। শঙ্কর প্রকৃতির প্রতিশোধ নিচ্ছে।”
“শঙ্কর কোথায়?” অরুণিমা প্রশ্ন করল।
কালীচরণ হাসল। “শঙ্কর প্রকৃতির সাথে মিশে গেছে। সে এখন এই গুহার রক্ষক।”
“তুমিই কি শঙ্করকে এই পথে চালিত করেছ?” বিক্রম সিং প্রশ্ন করলেন।
“আমি শুধু তাকে পথ দেখিয়েছি। প্রকৃতির নিয়ম বুঝিয়েছি। যারা প্রকৃতির ক্ষতি করে, তাদের শাস্তি পেতে হবে।” কালীচরণ বলল।
অরুণিমা বুঝতে পারল, কালীচরণ একজন উন্মাদ। সে প্রকৃতির প্রতিশোধের নামে খুন করছে।
“তুমি শঙ্করকে ব্যবহার করছ,” অরুণিমা বলল। “শঙ্কর কি সত্যিই জীবিত, নাকি তুমি তাকে ব্যবহার করেছ?”
কালীচরণ হাসল। “শঙ্কর জীবিত। সে এই গুহাতেই আছে। কিন্তু তোমরা তাকে খুঁজে পাবে না।”
হঠাৎই গুহার ভেতর থেকে একটি তীব্র আর্তনাদ ভেসে এল। অরুণিমা এবং বিক্রম সিং চমকে উঠলেন।
“কী হলো?” বিক্রম সিং প্রশ্ন করলেন।
কালীচরণ হাসল। “শঙ্কর তার কাজ শুরু করেছে। তোমাদের জন্য।”
অরুণিমা বুঝতে পারল, খুনি তাদের জন্য একটি ফাঁদ পেতেছে। তারা গুহার ভেতরে প্রবেশ করতেই গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তারা গুহার ভেতরে আটকা পড়লেন।
(চলবে)
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion