Episode 14497 words0 views

চতুর্দশ পর্ব : অরুণিমার লড়াই

গুহার ভেতরে প্রবেশ করতেই তারা দেখল, গুহাটি আরও গভীরে প্রবেশ করেছে। ভেতরের দেওয়ালে কিছু নতুন চিত্র আঁকা আছে, যা দেখে মনে হচ্ছে কোনো প্রাচীন দেবীর আরাধনার দৃশ্য। কিন্তু তার মাঝে কিছু অদ্ভুত প্রতীকও ছিল, যা ‘মৃত্যুর পাঞ্জা’র মতো দেখতে। অরুণিমা এবং বিক্রম সিং গুহার গভীরে প্রবেশ করতে শুরু করলেন। পথ ছিল পিচ্ছিল এবং পাথুরে। গুহার ভেতরে বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল, তাতে এক ধরনের অদ্ভুত গন্ধ ছিল, যা ‘মৃত্যু ভেষজ’র গন্ধের মতো। হঠাৎই তাদের সামনে একটি বড় পাথরের দরজা দেখা গেল। দরজাটি ছিল প্রাচীন, তার গায়ে কিছু খোদাই করা চিহ্ন। অরুণিমা দরজাটি খোলার চেষ্টা করল, কিন্তু সেটি বন্ধ ছিল। “এই দরজাটা কি সেই পবিত্র গুহার ভেতরে?” বিক্রম সিং প্রশ্ন করলেন। অরুণিমা মাথা নাড়ল। “হতে পারে। খুনি আমাদের এখানে আটকে ফেলেছে।” তারা দরজার চারপাশে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলেন। দরজার পাশে একটি ছোট পাথরের বেদি ছিল, তাতে কিছু শুকনো ফুল এবং ধূপের ছাই। অরুণিমা দেখল, বেদির উপর একটি ছোট মাটির পাত্র রাখা আছে, তার ভেতরে কিছু শুকনো ভেষজ। সেই ‘মৃত্যু ভেষজ’। অরুণিমা বুঝতে পারল, খুনি তাদের শ্বাসরোধ করে মারতে চাইছে। তারা গুহার ভেতরে আটকা পড়েছে, এবং বাতাস ধীরে ধীরে বিষাক্ত হয়ে উঠছে। হঠাৎই গুহার অন্ধকার থেকে একটি ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এল। সে ছিল শঙ্কর। শঙ্করের চোখ দুটো ছিল লাল, তার মুখে এক ধরনের উন্মাদনা। তার হাতে একটি ত্রিশূল। “তোমরা প্রকৃতির নিয়ম ভেঙেছ,” শঙ্কর বলল। তার কণ্ঠস্বর ছিল বিকৃত, যেন বহু বছর ধরে সে কথা বলেনি। “তোমাদের শাস্তি পেতে হবে।” অরুণিমা এবং বিক্রম সিং প্রস্তুত হলেন। শঙ্কর তাদের দিকে এগিয়ে এল। অরুণিমা জানত, এই লড়াই তাদের জীবনের শেষ লড়াই হতে পারে। শঙ্কর ছিল শক্তিশালী এবং উন্মাদ। অরুণিমা তার রিভলভার বের করল। “শঙ্কর, থামো! তুমি কী করছ?” শঙ্কর হাসল। “আমি প্রকৃতির প্রতিশোধ নিচ্ছি। আমার বাবা এবং তার দলের শিকারিরা প্রকৃতির ক্ষতি করেছে। তাদের শাস্তি পেতে হবে।” “কিন্তু তুমি নির্দোষ মানুষকে খুন করছ!” বিক্রম সিং বললেন। “তারাও শিকারি। তারাও প্রকৃতির শত্রু।” শঙ্কর বলল। শঙ্কর তাদের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। অরুণিমা এবং বিক্রম সিং তাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেন। গুহার ভেতরে এক শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই শুরু হলো। শঙ্কর ছিল শক্তিশালী, কিন্তু অরুণিমা ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন। সে শঙ্করের দুর্বল জায়গাগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। লড়াইয়ের এক পর্যায়ে অরুণিমা লক্ষ্য করল, শঙ্করের হাতে বাঁধা সেই তাবিজটা নেই। তার মনে হলো, তাবিজটা হয়তো তার দুর্বলতা। অরুণিমা শঙ্করের সাথে লড়াই করতে করতে গুহার গভীরে প্রবেশ করতে লাগল। শঙ্কর তাকে অনুসরণ করছিল। গুহার ভেতরে বাতাস আরও ভারী হয়ে উঠছিল। অরুণিমা অনুভব করল, তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎই অরুণিমা একটি ছোট ফাটল দেখতে পেল। ফাটলটি ছিল সংকীর্ণ, কিন্তু তার ভেতর দিয়ে বাইরের বাতাস প্রবেশ করছিল। অরুণিমা বুঝতে পারল, এটাই তাদের বাঁচার শেষ সুযোগ। সে বিক্রম সিংকে ইশারা করল। বিক্রম সিং শঙ্করের সাথে লড়াই করতে লাগলেন, আর অরুণিমা ফাটলের দিকে এগিয়ে গেল। শঙ্কর অরুণিমাকে থামানোর চেষ্টা করল, কিন্তু বিক্রম সিং তাকে আটকে রাখলেন। অরুণিমা কোনোমতে ফাটলের ভেতর দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। বাইরে তখন ঘন কুয়াশা। অরুণিমা দ্রুত শ্বাস নিল। তার মনে হলো, সে যেন নতুন জীবন ফিরে পেল। সে বিক্রম সিংকে সাহায্য করার জন্য গুহার ভেতরে প্রবেশ করতে চাইল, কিন্তু গুহার মুখ আবার বন্ধ হয়ে গেল। অরুণিমা বুঝতে পারল, কালীচরণ তাদের ফাঁদে ফেলেছে। সে শঙ্করকে ব্যবহার করে তাদের খুন করতে চাইছে। (চলবে)

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion