ধর্মপালের সাথে কথা বলার পর অরুণিমা এবং বিক্রম সিং যখন কুল্লু থানায় ফিরছিলেন, তখনই একটি ফোন এল। তৃতীয় খুন। এবার শিকারি ছিল আরও পরিচিত, সুশীল থাপার ভাই, যে একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী। তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে কুল্লুর কাছেই একটি জনবহুল পর্যটন এলাকার বাইরে, একটি নির্জন ঝর্ণার পাশে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে অরুণিমা দেখল, সুশীল থাপার মৃতদেহও একইরকমভাবে ক্ষতবিক্ষত। গলায় সেই ‘মৃত্যুর পাঞ্জা’র চিহ্ন, আর বুকের উপর সেই কালো ‘আত্মার পাথর’। কিন্তু এবার আরও একটি নতুন জিনিস ছিল। মৃতদেহের পাশে একটি ছোট কাঠের মূর্তি রাখা ছিল, যা একটি শিকারির মতো দেখতে, এবং তার বুকে একটি ছোট পেরেক বিঁধে ছিল।
“এটা কী?” বিক্রম সিংয়ের চোখে আতঙ্ক।
অরুণিমা মূর্তিটি হাতে নিল। “এটা ‘ভoodoo’ বা ‘জাদুকরী’র মতো কিছু। খুনি এবার আরও স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।”
প্রীতি শর্মাও ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছালেন। তিনি মৃতদেহ পরীক্ষা করে বললেন, “আঘাতগুলো আগের মতোই সুনির্দিষ্ট। আর এই মূর্তি… এটা কোনো সাধারণ মানুষের কাজ নয়। খুনি খুব ঠান্ডা মাথায় কাজ করছে।”
অরুণিমা বুঝতে পারল, খুনি তাদের চ্যালেঞ্জ করছে। সে জনবহুল এলাকায় এসে খুন করছে, যেন পুলিশকে বোঝাতে চাইছে যে তাকে ধরা অসম্ভব। এই খুনগুলো শুধু প্রতিশোধের জন্য নয়, এর পেছনে আরও গভীর কোনো উদ্দেশ্য আছে। খুনি হয়তো কোনো বার্তা দিতে চাইছে, যা শুধু শিকারিদের জন্য নয়, হয়তো পুরো সমাজের জন্য।
রাতে কুল্লু থানায় অরুণিমা, বিক্রম সিং এবং প্রীতি শর্মা মিলে কেসটা নিয়ে আলোচনা করলেন।
“আমাদের কালীচরণকে খুঁজে বের করতে হবে,” অরুণিমা বলল। “সে এই প্রথাগুলো সম্পর্কে জানে। হয়তো সে খুনি, অথবা সে খুনিকে সাহায্য করছে।”
বিক্রম সিং মাথা নাড়লেন। “কালীচরণকে খুঁজে বের করা সহজ হবে না। সে খুব রহস্যময় মানুষ। কেউ জানে না সে কোথায় থাকে। সে মাঝে মাঝে এই অঞ্চলে আসে, কিছু তন্ত্রমন্ত্রের কাজ করে আবার চলে যায়।”
অরুণিমা তার ল্যাপটপ খুলে নিহতদের ছবিগুলো দেখছিল। নবীন থাপার ট্যাটু, রতন সিংয়ের হাতের পোড়া দাগ, আর সুশীল থাপার কাঠের মূর্তি। প্রতিটি খুনের সাথে একটি নতুন প্রতীক যুক্ত হচ্ছে। খুনি যেন একটি গল্প বলছে, একটি প্রাচীন অভিশাপের গল্প।
অরুণিমার মনে তার নিজের অতীতের কিছু স্মৃতি ভেসে উঠল। সেও একসময় এমন একটি কেস নিয়ে কাজ করছিল, যেখানে খুনি প্রতীক ব্যবহার করে বার্তা দিচ্ছিল। সেই কেসটা তার ব্যক্তিগত জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। সে অনুভব করল, এই কেসটাও তাকে মানসিকভাবে আরও দুর্বল করে তুলছে। হিমাচলের হিমেল বাতাস যেন তার ভেতরের ভয়গুলোকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
“আমাদের এই অঞ্চলের পুরনো নথিগুলো দেখতে হবে,” অরুণিমা বলল। “বহু বছর আগে গদ্দি উপজাতির মধ্যে কোনো বড় ঘটনা ঘটেছিল কিনা, যা এই খুনের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।”
বিক্রম সিং বললেন, “সেটা বেশ কঠিন হবে, ম্যাম। পুরনো নথিগুলো খুব একটা সংরক্ষিত নেই। আর গ্রামের মানুষজনও এসব নিয়ে কথা বলতে চায় না।”
কিন্তু অরুণিমা হাল ছাড়ার পাত্রী ছিল না। সে জানত, এই রহস্যের গভীরে প্রবেশ করতে হলে তাকে প্রতিটি ছোট ছোট সূত্রকে গুরুত্ব দিতে হবে। হিমাচলের এই হিমশীতল অভিশাপের পেছনে যে মানুষটি লুকিয়ে আছে, তাকে খুঁজে বের করতেই হবে। রাতের অন্ধকারে কুল্লুর পাহাড়ি বাতাস যেন আরও ভারী হয়ে উঠছিল, আর অরুণিমার মনে হচ্ছিল, খুনি তাদের খুব কাছাকাছিই আছে। সে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করছে।
(চলবে)..
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion