কুল্লুতে ফিরে আসার পর অরুণিমা অনুভব করল, কেউ যেন তার উপর নজর রাখছে। হোটেলের ঘরে ফিরে সে দেখল, তার ল্যাপটপের পাশে একটি ছোট, কালো পালক রাখা আছে। পালকটি কোনো সাধারণ পাখির নয়, বরং একটি শিকারি পাখির পালক। অরুণিমা চমকে উঠল। সে নিশ্চিত ছিল, ঘর ছাড়ার সময় পালকটি সেখানে ছিল না।
পরের দিন সকালে সে যখন হোটেলের বাইরে বেরোচ্ছিল, তখন একটি অচেনা লোক তাকে অনুসরণ করছিল। অরুণিমা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে একটি জনবহুল বাজারে প্রবেশ করল, কিন্তু লোকটা তার পিছু ছাড়ল না। অরুণিমা একটি দোকানে ঢুকে লোকটাকে লক্ষ্য করল। লোকটা একটি গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছিল। তার মুখ ঢাকা ছিল, কিন্তু অরুণিমা তার চোখে এক ধরনের হিংস্রতা দেখতে পেল।
অরুণিমা বুঝতে পারল, খুনি তাকে ভয় দেখাচ্ছে। সে তার প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করছে। এই ঘটনা অরুণিমাকে আরও সতর্ক করে তুলল। সে বিক্রম সিংকে ঘটনাটা জানাল। বিক্রম সিং হোটেলের নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিলেন।
রাতে অরুণিমা যখন তার ঘরে ফিরছিল, তখন সে দেখল, তার দরজার সামনে একটি ছোট কালো পাথর রাখা আছে। সেই একই ‘আত্মার পাথর’। অরুণিমা পাথরটি হাতে নিল। তার মনে এক চাপা ভয়। খুনি তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। সে জানে অরুণিমা কেসটা নিয়ে কতটা গভীরে প্রবেশ করেছে।
অরুণিমা তার ল্যাপটপ খুলে ধর্মপালের দেওয়া বইয়ের ছবিগুলো দেখছিল। ‘মৃত্যুর পাঞ্জা’, ‘আত্মার পাথর’, ‘শিকারি মূর্তি’। প্রতিটি প্রতীকই খুনের সাথে সম্পর্কিত। সে প্রীতি শর্মাকে ফোন করল।
“ডক্টর, গুহায় একটা ত্রিশূল পেয়েছি। তাতে ‘মৃত্যুর পাঞ্জা’র চিহ্ন খোদাই করা আছে। আর কাপড়ের টুকরোটা দেখেছেন? তাতে একটা অদ্ভুত গন্ধ আছে।”
প্রীতি শর্মা বললেন, “আমি ত্রিশূলটা পরীক্ষা করছি। কাপড়ের টুকরোটা থেকে একটা বিশেষ ভেষজের গন্ধ পাচ্ছি, যা এই অঞ্চলের কিছু প্রাচীন উপজাতি তাদের আচারে ব্যবহার করে। এটা এক ধরনের বিষাক্ত ভেষজ, যা স্নায়ুতন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়।”
“তার মানে, খুনি শিকারিদের দুর্বল করে তারপর খুন করত?” অরুণিমা প্রশ্ন করল।
“হতে পারে। অথবা, এই ভেষজটা কোনো প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।”
প্রীতি শর্মা আরও জানালেন, সুশীল থাপার মৃতদেহের পাশে যে কাঠের মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল, তার ভেতরে একটি ছোট ধাতব টুকরো ছিল। সেটা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাতে কিছু প্রাচীন লেখা খোদাই করা আছে, যা গদ্দি উপজাতির ভাষায় লেখা।
অরুণিমা বুঝতে পারল, খুনি শুধু খুন করছে না, সে একটি নির্দিষ্ট বার্তা দিতে চাইছে। এই বার্তাগুলো হয়তো শুধু শিকারিদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য।
(চলবে)
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion