Episode 8432 words1 views

অষ্টম পর্ব : অতীতের ছায়া

অরুণিমা ধর্মপালের সাথে আবার দেখা করার সিদ্ধান্ত নিল। সে ধর্মপালের কাছ থেকে গদ্দি উপজাতির আরও বিস্তারিত ইতিহাস জানতে চাইল। ধর্মপাল বললেন, বহু বছর আগে গদ্দি উপজাতির মধ্যে একটি বড় সংঘাত হয়েছিল। কিছু শিকারি প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত শিকার করত, যার ফলে উপজাতির মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তখন উপজাতির কিছু প্রবীণ ব্যক্তি তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য একটি প্রাচীন প্রথা ব্যবহার করেছিলেন। সেই প্রথা অনুযায়ী, যারা প্রকৃতির নিয়ম ভাঙবে, তাদের উপর ‘মৃত্যুর পাঞ্জা’র অভিশাপ নেমে আসবে। “এই প্রথা কি এখনও প্রচলিত?” অরুণিমা প্রশ্ন করল। ধর্মপাল মাথা নাড়লেন। “না। এখন আর এই প্রথা কেউ মানে না। কিন্তু কিছু মানুষ আছে, যারা এই পুরনো বিশ্বাসগুলোকে আঁকড়ে ধরে আছে।” “কালীচরণ কি সেই ধরনের মানুষ?” ধর্মপাল কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। “কালীচরণ খুব রহস্যময় মানুষ। সে প্রকৃতির পূজারি। সে বিশ্বাস করে, যারা প্রকৃতির ক্ষতি করে, তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত।” অরুণিমা ধর্মপালের কাছ থেকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেল। বহু বছর আগে, এই অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ছিলেন, যার নাম ছিল রঘুনাথ। তিনি ছিলেন একজন বড় শিকারি, যিনি বিরল প্রজাতির প্রাণী শিকার করতেন। তার কারণে গদ্দি উপজাতির অনেক ক্ষতি হয়েছিল। রঘুনাথের একটি ছেলে ছিল, যার নাম ছিল শঙ্কর। শঙ্করও তার বাবার মতোই শিকারি ছিল। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় শঙ্কর মারা যায়। গ্রামের মানুষজন বিশ্বাস করত, শঙ্করের মৃত্যু ছিল প্রকৃতির প্রতিশোধ। অরুণিমা এবং বিক্রম সিং এবার রঘুনাথ এবং শঙ্করের অতীত সম্পর্কে তদন্ত শুরু করলেন। তাদের মনে হচ্ছিল, এই খুনগুলো হয়তো রঘুনাথের সাথে সম্পর্কিত কোনো পুরনো প্রতিশোধের ফল। নিহত শিকারিরা হয়তো রঘুনাথের সাথে কোনোভাবে জড়িত ছিল, অথবা তারা শঙ্করের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল। তারা রঘুনাথের পুরনো বাড়িতে গেলেন। বাড়িটি ছিল জঙ্গলের গভীরে, জীর্ণ এবং পরিত্যক্ত। ভেতরে প্রবেশ করতেই এক অদ্ভুত নীরবতা তাদের স্বাগত জানাল। ঘরের ভেতরে ধুলো আর মাকড়সার জাল। অরুণিমা একটি পুরনো আলমারি খুলে দেখল, তার ভেতরে কিছু পুরনো ছবি। একটি ছবিতে রঘুনাথকে দেখা যাচ্ছে, তার পাশে একটি ছোট ছেলে, সম্ভবত শঙ্কর। আর তাদের সাথে আরও কয়েকজন শিকারি, যাদের মধ্যে নবীন থাপা এবং রতন সিংয়ের তরুণ বয়সের ছবিও ছিল। অরুণিমা চমকে উঠল। তাহলে নিহত শিকারিরা রঘুনাথের দলেরই সদস্য ছিল। তাদের খুন করার পেছনে রঘুনাথের সাথে সম্পর্কিত কোনো পুরনো প্রতিশোধের কারণ থাকতে পারে। হঠাৎই অরুণিমা একটি ছোট ডায়েরি দেখতে পেল। ডায়েরিটি পুরনো, তার পাতাগুলো হলদে হয়ে গেছে। অরুণিমা ডায়েরিটি হাতে নিয়ে দেখল, তাতে শঙ্করের হাতে লেখা কিছু কথা। শঙ্কর প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসার কথা লিখেছিল, এবং তার মনে এক ধরনের অপরাধবোধ ছিল। সে লিখেছিল, “প্রকৃতি একদিন প্রতিশোধ নেবে। যারা তার ক্ষতি করবে, তাদের শাস্তি পেতে হবে।” ডায়েরির শেষ পাতায় একটি অদ্ভুত চিত্র আঁকা ছিল – একটি শিকারি পাখির পাঞ্জা, যা ‘মৃত্যুর পাঞ্জা’র মতো দেখতে। আর তার নিচে একটি ছোট কালো পাথর। অরুণিমা বুঝতে পারল, খুনি শঙ্কর হতে পারে। কিন্তু শঙ্কর তো বহু বছর আগে মারা গেছে! তাহলে কে এই খুনগুলো করছে? (চলবে)

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion