অরুণিমা যখন রঘুনাথের বাড়ি থেকে ফিরছিল, তখনই বিক্রম সিংয়ের ফোন এল। চতুর্থ খুন। এবার শিকারি ছিল একজন তরুণ, যে সম্প্রতি এই অঞ্চলে শিকার শুরু করেছিল। তার নাম ছিল অজয়। অজয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে একটি পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে অরুণিমা দেখল, অজয়ের মৃতদেহও একইরকমভাবে ক্ষতবিক্ষত। গলায় সেই ‘মৃত্যুর পাঞ্জা’র চিহ্ন, আর বুকের উপর সেই কালো ‘আত্মার পাথর’। কিন্তু এবার আরও একটি নতুন জিনিস ছিল। অজয়ের মৃতদেহের পাশে একটি ছোট গাছের ডাল রাখা ছিল, তাতে একটি ছোট পাখির বাসা। বাসাটিতে একটি মৃত পাখির ছানা ছিল।
অরুণিমা চমকে উঠল। এই প্রতীকটা নতুন। এর অর্থ কী হতে পারে?
প্রীতি শর্মা মৃতদেহ পরীক্ষা করে বললেন, “এই আঘাতগুলো আগের মতোই। কিন্তু এই পাখির বাসা… এটা কোনো সাধারণ প্রতীক নয়।”
অরুণিমা ধর্মপালের দেওয়া বইয়ের ছবিগুলো দেখছিল। ‘শিকারি পাখির বাসা’ – এমন কোনো প্রতীক ছিল না।
হঠাৎই অরুণিমার মনে একটি চিন্তা এল। শঙ্কর। শঙ্কর তার ডায়েরিতে প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসার কথা লিখেছিল। সে পাখির বাসা নষ্ট করতে বা পাখির ছানা মারতে পছন্দ করত না। তাহলে এই পাখির বাসা কি শঙ্করের সাথে সম্পর্কিত কোনো বার্তা?
অরুণিমা বিক্রম সিংকে বলল, “ইনস্পেক্টর, শঙ্কর কি মারা গেছে, নাকি সে বেঁচে আছে?”
বিক্রম সিং অবাক হলেন। “শঙ্কর? সে তো বহু বছর আগে মারা গেছে। তার দেহও পাওয়া গিয়েছিল।”
“কিন্তু যদি সে বেঁচে থাকে? যদি সে তার বাবার এবং তার দলের শিকারিদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে?”
অরুণিমার এই সন্দেহ বিক্রম সিংকে ভাবিয়ে তুলল। তারা শঙ্করের মৃত্যুর পুরনো ফাইলগুলো দেখতে শুরু করলেন। শঙ্করের দেহ পাওয়া গিয়েছিল একটি গভীর খাদে। কিন্তু তার দেহ এতটাই ক্ষতবিক্ষত ছিল যে তাকে শনাক্ত করা কঠিন ছিল। শুধু তার পোশাক এবং কিছু ব্যক্তিগত জিনিস দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছিল।
অরুণিমা বুঝতে পারল, এই কেসে একটি বড় ফাঁক রয়েছে। শঙ্কর হয়তো মারা যায়নি। সে হয়তো বেঁচে আছে, এবং সে তার বাবার এবং তার দলের শিকারিদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। কিন্তু কেন এত বছর পর? এবং কেন এই প্রাচীন প্রথাগুলোকে ব্যবহার করে?
রাতের অন্ধকারে কুল্লুর পাহাড়ি বাতাস যেন আরও রহস্যময় হয়ে উঠছিল। অরুণিমার মনে হচ্ছিল, খুনি তাদের খুব কাছাকাছিই আছে। সে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করছে, এবং তাদের সাথে একটি বিপজ্জনক খেলা খেলছে। হিমাচলের হিমশীতল অভিশাপের রহস্য আরও গভীর হয়ে উঠছিল।
(চলবে)
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion