আরিস রোহানকে বললেন যে এলডোরিয়াকে রক্ষা করার জন্য তার শুধু জাদুর শক্তিই যথেষ্ট নয়, তার প্রয়োজন হবে সহযাত্রীদের। "প্রাচীন ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা আছে, তুমি একা নও, তোমার সাথে আরও তিনজন সঙ্গী থাকবে," আরিস বললেন, তার চোখে ছিল এক গভীর দৃষ্টি, যেন তিনি কোনো গোপন সত্য লুকাচ্ছেন, যা রোহানকে গ্রাস করতে পারে। "একজন হবে নির্ভীক যোদ্ধা, যে তার তলোয়ারের আঘাতে শত্রুদের পরাজিত করবে; একজন হবে চতুর চোর, যে যেকোনো ফাঁদ এড়াতে পারবে এবং যেকোনো গোপন পথে প্রবেশ করতে পারবে; আর একজন হবে জ্ঞানী নিরাময়কারী, যে যেকোনো রোগ সারাতে পারবে এবং আহতদের সুস্থ করে তুলবে। কিন্তু এই সঙ্গীদের খুঁজে পাওয়া সহজ হবে না, কারণ তাদের প্রত্যেকেই নিজেদের অন্ধকার অতীত নিয়ে বেঁচে আছে, যা তাদের তাড়া করে, আর তাদের দুর্বলতা ছায়া প্রভুর কাছে পরিচিত, যা সে ব্যবহার করতে চাইবে।"
রোহান অবাক হয়ে গেল। সে কীভাবে এই সঙ্গীদের খুঁজে পাবে? এলডোরিয়া ছিল বিশাল, আর তার প্রতিটি কোণায় ছিল বিপদ। আরিস তাকে একটি প্রাচীন মানচিত্র দিলেন, যা তাকে সঙ্গীদের খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। মানচিত্রটি ছিল জাদুর, এবং এটি রোহানকে সঠিক পথে নির্দেশ করবে, তার গন্তব্যের দিকে আলো দেখাবে, কিন্তু তার সাথে মিশে ছিল এক অস্পষ্ট হুমকি, যেন মানচিত্রটি নিজেই কোনো ফাঁদ, যা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
রোহান তার যাত্রা শুরু করল। তার প্রথম গন্তব্য ছিল উত্তর পর্বতমালার কাছে অবস্থিত একটি গ্রাম, যেখানে নাকি একজন নির্ভীক যোদ্ধা বাস করে। পথ ছিল বন্ধুর, আর তাকে অনেক বিপজ্জনক জায়গা পার হতে হলো। সে বনের গভীরে প্রবেশ করল, যেখানে ছায়া প্রভুর প্রভাব আরও বেশি ছিল। সে দেখল, বনের গাছগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, তাদের পাতাগুলো ছিল কালো এবং মৃতপ্রায়, আর প্রাণীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তাদের চোখগুলো ছিল নিস্তেজ, তাদের শরীর ছিল কঙ্কালসার। বাতাস ছিল ভারী, আর তার মধ্যে এক অদ্ভুত দুর্গন্ধ ভেসে আসছিল, যা তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল, যেন তারা কোনো পচা মাংসের গন্ধ পাচ্ছে। রোহান তার জাদু ব্যবহার করে কিছু গাছকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করল, কিন্তু তার শক্তি যথেষ্ট ছিল না। সে অনুভব করল যেন বনের প্রতিটি ছায়া তাকে দেখছে, প্রতিটি শব্দ যেন তাকে অনুসরণ করছে, আর তার কানে একটা চাপা ফিসফিস শব্দ শোনা যাচ্ছিল, যা তাকে উন্মাদ করে তুলছিল।
কয়েকদিন হাঁটার পর সে একটি ছোট গ্রামে পৌঁছাল। গ্রামটি ছিল পাহাড়ের পাদদেশে, আর তার চারপাশে ছিল ঘন বন। গ্রামটি ছিল শান্ত, কিন্তু তার মানুষের চোখে ছিল এক অজানা ভয়, যেন তারা যেকোনো মুহূর্তে বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। তাদের মুখগুলো ছিল ফ্যাকাসে, আর তাদের চোখে ছিল আতঙ্ক, যেন তারা কোনো দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছে। রোহান গ্রামের সরাইখানায় প্রবেশ করল, যেখানে সে একজন লম্বা, শক্তিশালী মানুষকে দেখতে পেল। মানুষটির হাতে একটি বড় তলোয়ার ছিল, যা তার পিঠে বাঁধা ছিল, আর তার চোখগুলো ছিল দৃঢ় এবং আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু তার গভীর চোখের নিচে ছিল এক গভীর দুঃখ আর এক চাপা ক্ষোভ, যা তাকে গ্রাস করছিল। তার মুখ ছিল পাথরের মতো কঠিন, যেন সে অনেক যুদ্ধ দেখেছে, এবং অনেক কিছু হারিয়েছে। তার চারপাশে একটা শীতল আভা ছিল, যা তার মনে ভয় জাগিয়ে তুলল, তার মনে হচ্ছিল যেন সে কোনো অশরীরী উপস্থিতি অনুভব করছে।
"আপনি কি আরিয়ান?" সে জিজ্ঞেস করল, তার কণ্ঠে ছিল কিছুটা দ্বিধা, তার মনে একটা চাপা ভয় ছিল, যে এই মানুষটি হয়তো তাকে বিশ্বাস করবে না, আর তাকে আক্রমণ করবে।
মানুষটি তার দিকে তাকাল, তার চোখগুলো ছিল তীক্ষ্ণ। "হ্যাঁ, আমি আরিয়ান। তুমি কে, তরুণ? আর আমার কাছে কী চাও?" তার কণ্ঠস্বর ছিল গভীর এবং গম্ভীর, যেন সে কাউকে বিশ্বাস করে না, আর তার প্রতিটি শব্দে ছিল একটা চাপা হুমকি, যা রোহানের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল।
রোহান আরিস এবং এলডোরিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে বলল। সে ছায়া প্রভুর উত্থান, এলডোরিয়ার দুর্দশা, এবং প্রাচীন ভবিষ্যদ্বাণীর কথা বর্ণনা করল। আরিয়ান প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইল না। সে ছিল একজন সাধারণ যোদ্ধা, যে তার গ্রামের মানুষকে রক্ষা করত, এবং সে জাদুতে বিশ্বাস করত না। তার চোখে ছিল অবিশ্বাস। কিন্তু যখন রোহান তাকে তার জাদুর কিছু নিদর্শন দেখাল – তার হাতের ইশারায় একটি ছোট পাথর বাতাসে ভাসিয়ে দিল, এবং একটি ছোট আলোর গোলক তৈরি করল – তখন আরিয়ান বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো। তার চোখে ছিল বিস্ময়, কিন্তু তার মুখে ছিল এক গভীর উদ্বেগ, যেন সে এক নতুন বিপদের সম্মুখীন হয়েছে, যা তাকে গ্রাস করতে পারে।
"আমি জানি, এলডোরিয়া বিপদে আছে," আরিয়ান বলল, তার কণ্ঠস্বরে ছিল দৃঢ়তা। "আমি আমার গ্রামের মানুষকে ছায়া প্রভুর হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি একা কিছুই করতে পারছি না। ছায়া প্রভুর অনুচররা আমাদের গ্রাম আক্রমণ করছে, আর আমাদের ফসল নষ্ট করছে। আমার পরিবারও তাদের হাতেই মারা গেছে, আমার চোখের সামনে, আর আমি তাদের বাঁচাতে পারিনি।" তার কণ্ঠে ছিল এক গভীর যন্ত্রণা, যা তার মনকে গ্রাস করছিল, তার চোখগুলো ছিল অশ্রুসিক্ত, যেন সে তার হারানো পরিবারের মুখ দেখছে।
রোহান তাকে এলডোরিয়াকে রক্ষা করার জন্য তার সাথে যোগ দিতে অনুরোধ করল। আরিয়ান কিছুক্ষণ ভাবল, তার চোখে ছিল এক গভীর চিন্তা, যেন সে তার অতীতকে আবার দেখছে, তার হারানো পরিবারের মুখ, তাদের শেষ চিৎকার। তারপর রাজি হলো। "আমি তোমার সাথে যাব, তরুণ। যদি আমি আমার গ্রামের মানুষকে রক্ষা করতে পারি, তাহলে আমি আমার জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। আমার তলোয়ার তোমার জন্য। কিন্তু মনে রেখো, আমার অতীত আমাকে তাড়া করে, আর আমি প্রায়শই আমার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমি হয়তো তোমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারি, হয়তো তোমাদের সবাইকে মেরে ফেলতে পারি।"
আরিয়ান ছিল একজন অসাধারণ যোদ্ধা। তার তলোয়ারের দক্ষতা ছিল অতুলনীয়, তার প্রতিটি আঘাত ছিল নির্ভুল এবং শক্তিশালী। সে ছিল নির্ভীক, যেকোনো বিপদের মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। রোহান তাকে তার প্রথম সঙ্গী হিসেবে পেয়ে খুশি হলো। আরিয়ান ছিল তার দলের শক্তি, কিন্তু তার মনে ছিল এক গভীর ক্ষত, যা যেকোনো মুহূর্তে ফেটে যেতে পারত, আর তার কারণে তাদের বিপদ হতে পারত।
তাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল পশ্চিমের মরুভূমি, যেখানে নাকি একজন চতুর চোর বাস করে। মরুভূমির পথ ছিল আরও কঠিন। দিনের বেলায় সূর্য ছিল তীব্র, তার আলোয় মাটি ঝলসে যাচ্ছিল, আর রাতে ঠান্ডা ছিল হাড় কাঁপানো, যেন বরফ পড়ছে। তাদের জল আর খাবারের অভাব দেখা দিল, তাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছিল। রোহান তার জাদু ব্যবহার করে কিছু জল তৈরি করার চেষ্টা করল, কিন্তু সে সফল হলো না, তার শক্তি যথেষ্ট ছিল না। মরুভূমির বাতাস ছিল শুষ্ক, আর তার মধ্যে এক অদ্ভুত নীরবতা ছিল, যা তাদের মনে ভয় জাগিয়ে তুলল। মাঝে মাঝে তারা দেখত, দূরে বালির ঝড় উঠছে, যা দেখে মনে হতো যেন কোনো দৈত্য তাদের দিকে এগিয়ে আসছে, তাদের গ্রাস করতে চাইছে। তাদের মনে হচ্ছিল যেন মরুভূমি নিজেই তাদের বিরুদ্ধে, আর তার প্রতিটি বালুকণা যেন তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
কয়েকদিন পর তারা একটি ছোট মরুদ্যান দেখতে পেল। মরুদ্যানের কাছেই একটি ছোট গুহা ছিল। গুহার ভেতরে প্রবেশ করতেই তারা দেখল, একজন ছোট, চতুর চেহারার মানুষ গুহার ভেতরে বসে আছে। মানুষটির হাতে একটি ছোট ছুরি ছিল, যা তার আঙুলে ঘুরছিল, আর তার চোখগুলো ছিল তীক্ষ্ণ এবং সতর্ক, যেন সে প্রতিটি নড়াচড়া লক্ষ্য করছে, প্রতিটি শব্দ শুনছে। তার পোশাক ছিল কালো, যা তাকে অন্ধকারে মিশে যেতে সাহায্য করত। তার মুখে ছিল এক অদ্ভুত হাসি, যা দেখে মনে হচ্ছিল সে কিছু লুকাচ্ছে, তার হাসি ছিল রহস্যময়, আর তার চারপাশে একটা চাপা হুমকি ছিল, যা রোহানের মনে ভয় জাগিয়ে তুলল।
"আপনি কি লিয়ানা?" আরিয়ান জিজ্ঞেস করল, তার তলোয়ারের হাতল শক্ত করে ধরে।
মানুষটি তাদের দিকে তাকাল, তার মুখে ছিল এক রহস্যময় হাসি। "তোমরা কে, আর আমার কাছে কী চাও?" তার কণ্ঠস্বর ছিল মৃদু কিন্তু দৃঢ়, যেন সে প্রতিটি শব্দ মেপে বলছে, তার প্রতিটি শব্দে ছিল একটা চাপা হুমকি, যা রোহানের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল।
রোহান তাকে আরিস এবং এলডোরিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলল। লিয়ানা ছিল একজন চতুর চোর, যে তার বুদ্ধিমত্তা এবং দ্রুততার জন্য পরিচিত ছিল। সে যেকোনো তালা খুলতে পারত, যেকোনো ফাঁদ এড়াতে পারত, এবং যেকোনো গোপন পথে প্রবেশ করতে পারত। সে প্রথমে তাদের বিশ্বাস করতে চাইল না, কারণ সে ছিল একা থাকতে অভ্যস্ত, এবং সে কাউকে বিশ্বাস করত না। তার চোখে ছিল অবিশ্বাস। কিন্তু যখন রোহান তাকে এলডোরিয়ার দুঃখজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলল, কীভাবে ছায়া প্রভু সবকিছু ধ্বংস করছে, তখন লিয়ানা কিছুটা নরম হলো।
"আমি জানি, ছায়া প্রভু আমাদের সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে," লিয়ানা বলল, তার চোখে ছিল এক গভীর দুঃখ। "আমি আমার নিজের পরিবারকে হারিয়েছি তার হাতে। আমার গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি শুধু প্রতিশোধ চাই, আর তার জন্য আমি যেকোনো কিছু করতে পারি, এমনকি আমার আত্মাকেও বিক্রি করতে পারি, বা তোমাদের সবাইকে মেরে ফেলতে পারি।" তার কণ্ঠে ছিল এক চাপা ক্ষোভ, যা তার মনকে গ্রাস করছিল।
রোহান তাকে এলডোরিয়াকে রক্ষা করার জন্য তাদের সাথে যোগ দিতে অনুরোধ করল। লিয়ানা কিছুক্ষণ ভাবল, তার চোখে ছিল এক গভীর চিন্তা, যেন সে তার অতীতকে আবার দেখছে, তার হারানো পরিবারের মুখ, তাদের শেষ চিৎকার। তারপর রাজি হলো। "আমি তোমাদের সাথে যাব, কিন্তু আমার নিজের শর্তে। আমি শুধু আমার নিজের জন্য কাজ করি। আর আমি কোনো নিয়ম মানি না। যদি তোমরা আমাকে ব্যবহার করতে চাও, তাহলে তোমাদের মূল্য দিতে হবে, আর সেই মূল্য হয়তো তোমাদের জীবন, বা তার চেয়েও বেশি কিছু, যা তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না।"
লিয়ানা ছিল একজন অসাধারণ চোর। সে যেকোনো তালা খুলতে পারত, যেকোনো ফাঁদ এড়াতে পারত, এবং যেকোনো গোপন পথে প্রবেশ করতে পারত। তার বুদ্ধিমত্তা ছিল অতুলনীয়, এবং সে যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারত। রোহান তাকে তার দ্বিতীয় সঙ্গী হিসেবে পেয়ে খুশি হলো। লিয়ানা ছিল তাদের দলের মস্তিষ্ক, কিন্তু তার মন ছিল রহস্যে ঘেরা, এবং তার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল অপ্রত্যাশিত, যা তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারত।
তাদের শেষ গন্তব্য ছিল দক্ষিণের জাদুর বন, যেখানে নাকি একজন জ্ঞানী নিরাময়কারী বাস করে। জাদুর বন ছিল রহস্যময় এবং বিপজ্জনক। তার গাছগুলো ছিল অদ্ভুত আকারের, তাদের ডালপালাগুলো ছিল পেঁচানো, আর তার প্রাণীগুলো ছিল জাদুর, তাদের চোখগুলো ছিল উজ্জ্বল। বাতাস ছিল মিষ্টি ফুলের গন্ধে ভরা, কিন্তু তার মধ্যে এক অদ্ভুত নীরবতা ছিল, যা তার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে তুলল। মাঝে মাঝে তারা দেখত, গাছের ছায়াগুলো যেন নড়ছে, আর তাদের মনে হতো যেন কেউ তাদের দেখছে, তাদের প্রতিটি নড়াচড়া অনুসরণ করছে। বনের গভীরে একটা চাপা গোঙানির শব্দ ভেসে আসছিল, যা তাদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল, তাদের আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছিল।
কয়েকদিন পর তারা একটি ছোট কুঁড়েঘর দেখতে পেল। কুঁড়েঘরের ভেতরে প্রবেশ করতেই তারা দেখল, একজন বৃদ্ধা মহিলা কুঁড়েঘরের ভেতরে বসে আছে। মহিলাটির চোখগুলো ছিল শান্ত এবং জ্ঞানী, যেন তারা মহাবিশ্বের রহস্য ধারণ করে আছে, আর তার হাতে একটি ছোট ভেষজ গাছ ছিল, যা থেকে মৃদু আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। তার মুখ ছিল বলিরেখায় ভরা, কিন্তু তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত শান্তি, যা দেখে মনে হচ্ছিল তিনি অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছেন, এবং অনেক কিছু হারিয়েছেন। তার চারপাশে একটা শীতল আভা ছিল, যা রোহানের মনে ভয় জাগিয়ে তুলল, তার মনে হচ্ছিল যেন সে কোনো অশরীরী উপস্থিতি অনুভব করছে।
"আপনি কি ইভলিন?" রোহান জিজ্ঞেস করল, তার কণ্ঠে ছিল শ্রদ্ধা, কিন্তু তার মনে ছিল একটা চাপা ভয়।
মহিলাটি তাদের দিকে তাকাল, তার মুখে ছিল এক মৃদু হাসি। "হ্যাঁ, আমি ইভলিন। তোমরা কে, আর আমার কাছে কী চাও?" তার কণ্ঠস্বর ছিল শান্ত এবং মধুর, কিন্তু তার মধ্যে ছিল এক গভীর দুঃখ, যা তার মনকে গ্রাস করছিল, তার প্রতিটি শব্দে ছিল এক চাপা যন্ত্রণা।
রোহান তাকে আরিস এবং এলডোরিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলল। ইভলিন ছিলেন একজন জ্ঞানী নিরাময়কারী, যিনি তার ভেষজ জ্ঞান এবং জাদুর জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি এলডোরিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতেন, এবং তিনি ছায়া প্রভুর দ্বারা প্রভাবিত মানুষদের সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। তিনি অনেক অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলেছিলেন, কিন্তু তার নিজের শক্তিও কমে আসছিল, আর তার মনে ছিল সেই সব মানুষের মুখ, যাদের তিনি বাঁচাতে পারেননি, তাদের শেষ শ্বাস, তাদের চিৎকার তার কানে বাজছিল।
"আমি জানি, এলডোরিয়া বিপদে আছে," ইভলিন বললেন, তার কণ্ঠে ছিল দুঃখ। "আমি আমার সাধ্যমতো মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি একা কিছুই করতে পারছি না। ছায়া প্রভুর অন্ধকার শক্তি বাড়ছে, আর মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমি অনেক মানুষকে বাঁচাতে পারিনি, আর তাদের আত্মা আমাকে তাড়া করে, তাদের চিৎকার আমার কানে বাজে, আমাকে ঘুমাতে দেয় না।" তার চোখে ছিল এক গভীর যন্ত্রণা, যা তার মনকে গ্রাস করছিল।
রোহান তাকে এলডোরিয়াকে রক্ষা করার জন্য তাদের সাথে যোগ দিতে অনুরোধ করল। ইভলিন কিছুক্ষণ ভাবলেন, তার চোখে ছিল এক গভীর চিন্তা। তারপর রাজি হলেন। "আমি তোমাদের সাথে যাব। আমি আমার জ্ঞান দিয়ে তোমাদের সাহায্য করব। এলডোরিয়াকে রক্ষা করা আমারও দায়িত্ব। কিন্তু মনে রেখো, নিরাময়কারীর জীবন সবসময়ই দুঃখের, আর আমি হয়তো তোমাদের সবাইকে বাঁচাতে পারব না। কিছু ক্ষত সারানো যায় না, আর কিছু যন্ত্রণা চিরকাল থাকে।"
ইভলিন ছিলেন একজন অসাধারণ নিরাময়কারী। তিনি যেকোনো রোগ সারাতে পারতেন, যেকোনো আঘাত সারিয়ে তুলতে পারতেন, এবং যেকোনো বিষের প্রতিষেধক তৈরি করতে পারতেন। তার জ্ঞান ছিল অতুলনীয়, এবং তিনি প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত ছিলেন। রোহান তাকে তার তৃতীয় সঙ্গী হিসেবে পেয়ে খুশি হলো। ইভলিন ছিল তাদের দলের প্রাণ, কিন্তু তার মনে ছিল এক গভীর ক্ষত, যা তাকে প্রতি মুহূর্তে তাড়া করত, আর তার কারণে তাদের বিপদ হতে পারত।
এখন রোহানের সাথে ছিল আরিয়ান, লিয়ানা, এবং ইভলিন। তারা চারজন মিলে এলডোরিয়াকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হলো। তাদের যাত্রা ছিল কঠিন, কিন্তু তারা জানত যে তারা একসাথে সবকিছু মোকাবিলা করতে পারবে। তাদের মধ্যে এক নতুন বন্ধন তৈরি হয়েছিল, যা তাদের আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল, কিন্তু তাদের প্রত্যেকের মনেই ছিল নিজস্ব অন্ধকার, যা তাদের তাড়া করত, আর তাদের দুর্বলতা ছায়া প্রভুর কাছে পরিচিত ছিল, যা সে ব্যবহার করতে চাইবে।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion