অয়ন এবার ফিরে যাবে সম্পূর্ণ নতুন উদ্দেশ্য নিয়ে—ট্রেনকে মুক্তি দিতে, এবং প্রসেনজিৎ-এর আসল অবস্থা জানতে।
সে আবার সেই নীল ধূলি সংগ্রহ করল এবং তামার মুদ্রাটি হাতে নিয়ে রাত ১টা ১৫-তে স্টেশনে গেল।
১টা ১৭-তে ট্রেন এল। এবার ট্রেনটির শব্দ আরও তীব্র। অয়ন সরাসরি লাইব্রেরি বগিতে গেল। প্রহরী সেখানে তার অপেক্ষায় ছিল।
"আমি জানতাম তুমি ফিরবে, ঋণী যাত্রী। কিন্তু এবার তোমার হাতে মুক্তির মুদ্রা। তুমি কি সত্যিই আমার মুক্তি চাও?" প্রহরী জিজ্ঞেস করল।
"আমি প্রসেনজিৎ-এর মুক্তি চাই। আমি ফুলডুবিকে মুক্তি দিতে চাই," অয়ন দৃঢ় কণ্ঠে বলল।
"তুমি কি নিশ্চিত যে তোমার বন্ধু মুক্তি পেয়েছে?" প্রহরী একটি গোপন হাসি হাসল।
প্রহরী অয়নকে শেষ বগিতে নিয়ে গেল। প্রসেনজিৎ সেখানেই স্থির হয়ে বসে ছিল, তার মুখে সেই মৃদু হাসি।
প্রহরী অয়নের কানে ফিসফিস করে বলল, "তুমি যখন ওকে শান্তিতে থাকতে দিয়েছিলে, সেটা ছিল তোমার অনুতাপের সর্বোচ্চ প্রকাশ। কিন্তু প্রসেনজিৎ-এর বাসনা-বন্ধন ছিন্ন হয়নি। সে তার ভয়ের পুনরাবৃত্তি থামিয়েছে মাত্র। সে এখন চিরকালের জন্য স্থির হয়ে গেছে, কিন্তু তার আত্মা মুক্তি পায়নি। সে এখন ট্রেনের মেরুদণ্ড। প্রসেনজিৎ-এর সেই শান্ত হাসি হলো ট্রেনের সবচেয়ে বড় মিথ্যা।"
অয়ন কেঁপে উঠল। তার বন্ধু শান্তিতে নেই, সে এখন ট্রেনের স্থায়ী জ্বালানি।
অয়ন প্রসেনজিৎ-এর কাছে গেল। এবার তার আর আবেগ নেই, আছে কেবল কঠিন সিদ্ধান্ত। "আমি এই ঋণ শোধ করব, প্রহরী।"
অয়ন তামার মুদ্রাটি নিয়ে প্রসেনজিৎ-এর আসনে, যেখানে তার হলদেটে টিকিট ছিল, সেখানে স্থাপন করল।
মুদ্রাটি নীলচে ধূলিতে মিশে গিয়ে তীব্র আলো বিকিরণ করতে লাগল। বগির দেয়ালের উল্টোমুখী ঘড়িটি দ্রুত ঘুরতে শুরু করল।
প্রহরী চিৎকার করে উঠল, "তোমার যুক্তি শেষমেশ আবেগকে হার মানাল! ট্রেন ধ্বংস হচ্ছে! তুমিও ধ্বংস হবে!"
অয়ন প্রসেনজিৎ-এর পাশে দাঁড়াল। প্রসেনজিৎ-এর ছায়া-দেহটি কাঁপতে শুরু করল। তার ঠোঁটে সেই শান্ত হাসিটা মিলিয়ে গেল এবং তার চোখে শেষবারের মতো বন্ধুর স্বীকৃতি ফুটে উঠল।
ট্রেনের সমস্ত বগিতে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ শুরু হলো। এই বিস্ফোরণ শব্দের নয়, বরং কালের।
অয়ন চিৎকার করে উঠল, "আমরা দু'জনেই মুক্তি পেলাম, বন্ধু! যুক্তি আর আবেগ নয়, এবার শুধু মুক্তি!"
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion