Episode 9264 words1 views

নবম পর্ব: দিবাকর ঠাকুরের কাহিনি

অয়ন এই নীল ধূলি নিয়ে গবেষণা করতে থাকে। একদিন সে গ্রামের এক প্রবীণ, দিবাকর ঠাকুর-এর কাছে গেল। দিবাকর ঠাকুর গ্রামের লোককথা ও প্রাচীন পুঁথি সংরক্ষণ করতেন। দিবাকর ঠাকুর বৃদ্ধ হলেও তার চোখ দুটি ছিল অসম্ভব উজ্জ্বল। তিনি অয়নের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। "তুমি সেই ট্রেনের কথা বলছো, বাবা? এটা নিছক অভিশাপ নয়," দিবাকর ঠাকুর বললেন। "আমার ঠাকুর্দার কাছে একটা পুরোনো পুঁথি ছিল। সেখানে লেখা ছিল, কন্ট্রাক্টর শুধু চুরি করেনি। সে আসলে ব্রিটিশ আমলে পাওয়া একটা পুরোনো 'সময় যন্ত্র' (Temporal Device) পরীক্ষা করছিল।" "সময় যন্ত্র?" অয়ন অবিশ্বাস করতে পারল না। তার যুক্তিবাদী মন নড়ে উঠল। "হ্যাঁ। কন্ট্রাক্টরের ধারণা ছিল, সে সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে ট্রেনকে এমন একটি স্পিড আর ফ্রিকোয়েন্সিতে নিয়ে যেতে পারবে, যা ট্রেনটিকে তার নিজের অতীতে ফিরিয়ে দেবে। কন্ট্রাক্টর তার চুরি করা সম্পত্তি অতীতে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু যন্ত্রটি ফেল করে," দিবাকর ঠাকুর শ্বাস নিলেন। "ট্রেনটি পুরোপুরি অতীতে যায়নি, বরং স্থান ও কালের মধ্যে আটকা পড়ে গেল। সেই থেকেই প্রতি রাতে একই সময়ে সেই 'Temporal Echo' ফিরে আসে।" "আর প্রহরী?" অয়ন প্রশ্ন করল। দিবাকর ঠাকুর চোখ বন্ধ করলেন। "প্রহরী হলো সেই ট্রেনের ইঞ্জিনিয়ার। সে কন্ট্রাক্টরের লোক ছিল না। সে দুর্ঘটনার আগে যন্ত্রটি বন্ধ করতে গিয়েছিল। কিন্তু সে নিজেই ট্রেনের সাথে কালের ফাঁদে পড়ে যায়। সে এখন আর রক্ত-মাংসের মানুষ নয়। সে হলো কালের নিয়ন্তা, যে ট্রেনের যাত্রীদের বাসনা দিয়ে তার ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করে। প্রহরী চায়—ট্রেনটা মুক্তি পাক, ধ্বংস হোক।" দিবাকর ঠাকুর অয়নের হাতে একটি পুরোনো তামার মুদ্রা দিলেন, যার একদিকে উল্টোমুখী ঘড়ির প্রতীক খোদাই করা। "ট্রেন ধ্বংস করতে হলে এমন একটি জিনিস লাগবে, যা সময় এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এই মুদ্রা সেই সময়ের যন্ত্রটির অংশ ছিল। তুমি এটা নিয়ে যাও। এটাই তোমার শেষবারের টিকিট।"

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion