অয়ন ফুলডুবির অভিশাপের মূল খুঁজতে শুরু করল। সে ফিরে গেল হরিশঙ্কর বাবুর কাছে।
"হরিশঙ্কর কাকু, ১৯৫০ সালের ট্রেন দুর্ঘটনার কথা বলুন। সেটা কি শুধু দুর্ঘটনা ছিল?"
হরিশঙ্কর বাবু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, "আসলে... ওটা দুর্ঘটনা ছিল না, বাবা। ওটা ছিল বিশ্বাসঘাতকতা। আমার দাদু ছিলেন স্টেশনের সহকারী মাস্টার। তখন এই ট্রেনটা ছিল একটা সাধারণ যাত্রীবাহী ট্রেন। ১৯৫০ সালের ১লা নভেম্বর, একটা নতুন প্রযুক্তি আমদানি করা হচ্ছিল এই লাইনে—একটা অত্যাধুনিক সিগন্যালিং সিস্টেম। কলকাতার এক ধনী কন্ট্রাক্টর সেই প্রজেক্টের দায়িত্বে ছিলেন।"
"কিন্তু?"
"সেদিন রাতে ওই কন্ট্রাক্টর তার নিজের জিনিসপত্র, হীরা-জহরত চুরি করে একটা বগিতে লুকিয়ে রেখেছিল, যাতে কেউ সন্দেহ না করে। সে নিজেই সিগন্যালিং সিস্টেমে গোলমাল করে দেয়। ট্রেনটা ভুল লাইনে ঢুকে যায়, তেল ট্যাঙ্কারের সাথে সংঘর্ষ হয়। বহু নিরীহ যাত্রী মারা যায়। কিন্তু কন্ট্রাক্টর তার জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই কন্ট্রাক্টরের বংশধর নাকি এখনও ফুলডুবিতে থাকে। তারা শহরের সবচেয়ে ধনী পরিবার—মুখার্জি পরিবার।"
অয়ন স্তম্ভিত। সে প্রসেনজিৎ-এর ডায়েরিতে পাওয়া পুরোনো ছবিটি দেখাল—প্রসেনজিৎ-এর বাবা আর এক বৃদ্ধ কন্ট্রাক্টর। ছবির পেছনে লেখা: "আমার ঠাকুরদা এবং এই অভিশাপের মূল।"
অয়ন দ্রুত তার বাবার কাছে গেল।
"বাবা, প্রসেনজিৎ-এর বাবার কি কোনো শত্রু ছিল? সুরেশ মুখার্জি কি তাকে ভয় দেখাত?"
তার বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। "হ্যাঁ, ছিল। সুরেশ মুখার্জি। এই গ্রামের জমিদার। সেই পুরোনো কন্ট্রাক্টরের ছেলে। প্রসেনজিৎ-এর বাবা একবার সুরেশকে ভয় দেখিয়েছিল যে সে পুরোনো চুরির ঘটনা প্রকাশ করে দেবে। তারপর থেকেই সুরেশ প্রসেনজিৎ-এর পরিবারকে নানাভাবে কোণঠাসা করেছে। এমনকি প্রসেনজিৎ-এর ব্যবসার পুঁজিও সে বন্ধ করে দিয়েছিল।"
অয়ন বুঝতে পারল, সুরেশ মুখার্জির প্রভাবেই প্রসেনজিৎ ভয় পেয়েছিল, তার ব্যবসা শুরু করার সাহস হয়নি। তার অনুতাপের মূলে ছিল অন্যের চাপিয়ে দেওয়া ভয়।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion