রাত ১টা ১৫ মিনিট। অয়ন ফুলডুবি স্টেশনের ভাঙা বেঞ্চে বসে আছে। তার মন শান্ত। সে তার অনুতাপ খুঁজে পেয়েছে।
তার অনুতাপ হলো—প্রসেনজিৎ-এর ভয়টা দেখেও সে তার পাশে দাঁড়ায়নি। নিজের যুক্তির অহঙ্কারে সে প্রসেনজিৎ-এর অলীক রহস্যের নেশাকে উড়িয়ে দিয়েছিল।
অয়ন অনুভব করল, তার হাতে টিকিটটা আবার স্পষ্ট হচ্ছে।
১টা ১৭ মিনিটে ট্রেন এল। অয়ন উঠল। প্রহরী এবার ট্রেনের একদম মাঝখানে দাঁড়িয়ে।
"তোমার অনুতাপ খুঁজে পেয়েছো, ঋণী যাত্রী? তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা?" প্রহরীর চোখে জ্বলন্ত কণাগুলো যেন অয়নকে বিঁধছে।
অয়ন বলল, "হ্যাঁ। আমার অনুতাপ হলো—আমি আমার বন্ধুকে বুঝতে পারিনি। তার ভয়কে গুরুত্ব দিইনি। আমি আমার যুক্তির অন্ধ অহঙ্কারে তাকে একা করে দিয়েছি। এটাই আমার অপূর্ণতা। কিন্তু আমি বিদ্রোহ করব। আমি এই সত্য প্রকাশ করে ফুলডুবির অভিশাপ দূর করব।"
প্রহরী অয়নের দিকে তার কালো ধোঁয়াময় হাতটা বাড়িয়ে দিল। "তুমি যদি এই অনুতাপ আমাকে দাও, তবে তুমি ফিরে যাবে। কিন্তু বিনিময়ে, তুমি এই ট্রেনের কাছে আজীবন ঋণী থাকবে। তোমার মনে আর কখনো পূর্ণতা আসবে না। তুমি আজীবন তোমার বন্ধুর স্বপ্ন আর নিজের অনুতাপ বহন করবে। এটাই তোমার মুক্তি।"
অয়ন তার টিকিটটা প্রহরীর হাতে তুলে দিল। "আমি রাজি। আমি আমার অপূর্ণতা নিয়ে বাঁচব, কিন্তু ফুলডুবিকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে।"
মুহূর্তেই ট্রেনটি প্রচণ্ড বেগে ছুটতে শুরু করল। প্রহরীর ছায়া বিলীন হয়ে গেল।
ট্রেনটি যখন চলতে শুরু করে, অয়ন দেখতে পেল, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে সুরেশ মুখার্জি দাঁড়িয়ে আছে। সুরেশ-এর হাতে একটি হলদেটে টিকিট। সে হাসছে।
সুরেশ যখন ট্রেনের দরজায় হাত দিতে গেল, অয়ন তখন চলন্ত ট্রেন থেকে তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করল, "সুরেশ! প্রসেনজিৎ-এর স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার অনুতাপ ছিল তোমার চাপানো ভয়! তুমিই এই অভিশাপের মূল! তুমি আমার বন্ধুকে মুক্তি দিয়ে নিজেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলে! কিন্তু ট্রেনের ঋণ শোধ হবে না মিথ্যা দিয়ে!"
সুরেশ মুখার্জির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কিন্তু ট্রেন থামল না। অয়ন চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিল বাইরের অন্ধকারে।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion