Episode 7237 words1 views

সপ্তম পর্ব: নতুন রহস্যের জন্ম

অয়ন ফিরে এল। কিন্তু সে এখন আর যুক্তিবাদী নয়, সে এক ভারবাহী মানুষ। ফুলডুবি স্টেশনের সেই ঝোপ থেকে উঠে এসে সে সরাসরি সুরেশ মুখার্জির বাড়িতে গেল। সূর্য তখন সবে উঠেছে। অয়ন, সুরেশ মুখার্জিকে সেই ১৯৫০ সালের দুর্ঘটনার সব কথা বলল, যা সে হরিশঙ্কর বাবুর কাছ থেকে শুনেছিল এবং প্রসেনজিৎ-এর ডায়েরিতে দেখেছিল। অয়নের কথায়, সুরেশ মুখার্জির পরিবার এবং পুরো ফুলডুবি কেঁপে উঠল। সেই দিনের পর থেকে সুরেশ মুখার্জির পরিবার সমাজে একঘরে হয়ে গেল, তাদের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ দিতে হলো। ফুলডুবি তার পুরনো পাপ থেকে মুক্তি পেল। ফুলডুবি স্টেশনে এখন আর সেই রহস্যময়ী রাত্রিযান আসে না। অভিশাপ ছিন্ন হয়েছে। কিন্তু ট্রেনের অভিশাপ ছিল অয়নের ওপর। অয়ন প্রসেনজিৎ-এর বাবার ব্যবসা শুরু করল। সে প্রসেনজিৎ-এর স্বপ্ন পূরণ করল। ব্যবসা সফল হলো, কিন্তু অয়নের মনে শান্তি এল না। সে কোনো কিছুর মধ্যেই আর পূর্ণতা পায় না। সে যখন সফল হয়, তখন মনে হয়—এই সাফল্য তার নয়, প্রসেনজিৎ-এর। সে যখন হাসে, তখন মনে হয়—প্রসেনজিৎ তার হাসিটা হেসে যেতে পারত। তার জীবনটা হয়ে গেল একটি অপূর্ণ যাত্রা, যেখানে সে অন্যের স্বপ্ন বহন করে চলেছে। তার যুক্তিবাদী মন এখন একটি অলীক শূন্যতা দিয়ে ভরা। অয়ন প্রতিদিন রাতে ১টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত জেগে থাকে। ট্রেনের শব্দ আর আসে না, কিন্তু তার কানে প্রসেনজিৎ-এর ফিসফিসানি শোনা যায়—"আমার জন্য চিন্তা করিস না, বন্ধু...।" অয়ন জানে, প্রসেনজিৎ এখন তার অনন্ত যাত্রার একজন যাত্রী, আর সে নিজে সেই ট্রেনের ঋণী, যে আর কোনোদিন শান্তি খুঁজে পাবে না। ফুলডুবির অভিশাপের শেষ নিদর্শন—এক গভীর সত্যের ভার এবং এক চিরন্তন অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion