Episode 21597 words0 views

অভিশপ্ত পিয়ানো : দ্বিতীয় অধ্যায়

সেই বিভীষিকাময় রাত ৩টা প্রথম রাতের ভয়াবহতা ছিল অর্কের কল্পনারও বাইরে, এক এমন বাস্তবতা যা তার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে আঘাত হানছিল, তার প্রতিটি স্নায়ুকে বিদ্ধ করছিল। রাত তখন ৩টে। বাইরের অন্ধকার আর কুয়াশার রাজত্ব ছিল এক অশুভ, ভয়ঙ্কর চাদরের মতো, যা পুরো ভিলাকে গ্রাস করে রেখেছিল, যেন সে নিজেই এক জীবন্ত সত্তা, যা অন্ধকারকে ধারণ করে। ঘড়ির কাঁটাগুলো যেন অনন্তকালের জন্য থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি সেকেন্ড যেন একটি শতাব্দীর সমান দীর্ঘ, প্রতিটি টিকটিক শব্দ যেন তার কানের পাশে বোমা ফাটছে, তার মস্তিষ্কের কোষে কোষে আঘাত হানছে, তাকে পাগল করে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তার মানসিক ভারসাম্যকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল, তাকে এক ভয়ঙ্কর উন্মাদনার দিকে ঠেলে দিচ্ছিল, তাকে তার নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করতে বাধ্য করছিল, তার আত্মাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল, তাকে ভেতর থেকে ধ্বংস করছিল, তার sanity কেড়ে নিচ্ছিল, তার সবকিছু ভেঙে দিচ্ছিল, তাকে এক অসহনীয় যন্ত্রণায় ডুবিয়ে দিচ্ছিল, যেন হাজারো পিন তার মস্তিষ্কে বিঁধছে, আর তার প্রতিটি স্নায়ু শিহরিত হচ্ছিল, তার চেতনা লুপ্ত হতে চাইছিল। অর্ক বিছানায় ছটফট করছিল, ঘুমাতে পারছিল না, তার শরীর ঘামে ভিজে গেছে, হৃদপিণ্ড দ্রুতগতিতে ধুকপুক করছে, মনে হচ্ছে যেন এক্ষুনি বুকের খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে আসবে, প্রতিটি স্পন্দনে যেন তার শিরায় শিরায় রক্ত উথলে উঠছে, কিন্তু তা ভীতির রক্ত, উষ্ণতার নয়। ভিলার প্রতিটি কোণা থেকে আসা অস্পষ্ট শব্দ, বাতাসের শিস, পুরনো কাঠের ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ এবং দূর থেকে ভেসে আসা পেঁচার অদ্ভুত, ভীতিময় ডাক তার মনকে অস্থির করে তুলেছিল, প্রতিটি শব্দই যেন এক অশুভ বার্তা বহন করছিল, তাকে মৃত্যুর কাছে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই, সে স্পষ্ট শুনতে পেল – পিয়ানোর করুণ, মর্মস্পর্শী সুর! যে পিয়ানো দিনের বেলা সে দেখে এসেছে, যা বহু বছর ধরে অচল, তার ঢাকনার উপর ধুলোর আস্তরণ জমে আছে, তার কাঠের রঙ বিবর্ণ হয়ে গেছে, সেই পিয়ানো থেকে প্রাণহীন, অভিশপ্ত সুর বেরিয়ে আসছে, যা তার আত্মাকে বিদ্ধ করছিল, যেন হাজারো ছুরির ফলা তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গে আঘাত হানছে, তাকে প্রতিটি মুহূর্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে, তাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। এই সুর ছিল অর্কের কাছে পরিচিত, এক গভীর বেদনার সুর যা সে জীবনে কখনো শোনেনি, অথচ তার আত্মায় গেঁথে গিয়েছিল, যেন তার প্রতিটি রক্তকণিকায় মিশে আছে। সে অনলাইনে এলিজাবেথ জনসনের কিছু পুরনো নোট খুঁজে পেয়েছিল, যেখানে তার সুরের কথা লেখা ছিল, তার প্রতিটি নোট ছিল একটি দীর্ঘশ্বাস, একটি আর্তনাদ, এক অসীম যন্ত্রণার প্রকাশ। এটি এলিজাবেথেরই সুর, যা এখন এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বন্দি এক আত্মার আর্তনাদ হয়ে বাজছিল, তার হৃদয়ের গভীরে আঘাত হানছিল, তার অস্তিত্বকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল, তাকে এক অকল্পনীয় যন্ত্রণায় ডুবিয়ে দিচ্ছিল, তার আত্মাকে পীড়িত করছিল, তাকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছিল। সুরের সাথে সাথে ভিলার প্রতিটি কোণা থেকে এক অস্পষ্ট ফিসফিস শব্দ ভেসে আসতে লাগল, যেন হাজারো কণ্ঠস্বর এক সাথে তার নাম ধরে ডাকছে, “অর্ক… অর্ক…”, তাদের কণ্ঠস্বর যেন তার মস্তিষ্কের কোষে কোষে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, তাকে পাগল করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল, তার মানসিক ভারসাম্য কেড়ে নিচ্ছিল, তাকে এক ভয়াবহ উন্মাদনার দিকে ঠেলে দিচ্ছিল, তার চারপাশের বাস্তবতা যেন ভেঙে যাচ্ছিল, সে আর তার নিজের মনকে বিশ্বাস করতে পারছিল না, তার নিজের পরিচয় লুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল, সে কে তা ভুলে যাচ্ছিল, তার সত্তা বিলীন হয়ে যাচ্ছিল, তার অস্তিত্বই যেন মিথ্যা হয়ে উঠছিল, সে যেন এক জীবন্ত প্রেতাত্মা, একটি ফাঁকা খোলস, প্রাণহীন এবং অনুভূতিহীন। হলঘরের পুরনো ঝাড়বাতিগুলো হঠাৎ তীব্রভাবে দুলতে শুরু করল, তাদের কাঁচের টুকরোগুলো থেকে এক ভয়ংকর, তীক্ষ্ণ, কাঁচ-ভাঙা শব্দ ভেসে আসছিল, যেন এক্ষুনি ভেঙে পড়বে, আর তাদের ছায়াগুলো দেওয়ালের উপর দৈত্যের মতো নাচছিল, তাদের ভয়ঙ্কর নৃত্য যেন তার মৃত্যুকে উপহাস করছিল, তাকে উপহাস করে হাসছিল, এক বিকৃত হাসি, যা তার মনকে ক্ষতবিক্ষত করছিল, তার আত্মাকে পীড়িত করছিল, তাকে এক গভীর শূন্যতায় ঠেলে দিচ্ছিল, তাকে এক অন্তহীন যন্ত্রণায় ডুবিয়ে দিচ্ছিল, তাকে এক অসহনীয় কষ্ট দিচ্ছিল। অর্ক আর বিছানায় শুয়ে থাকতে পারল না। তার ভেতরের কৌতূহল এবং একই সাথে এক অদম্য ভয় তাকে ঠেলে দিল বিছানা থেকে। তার শরীরের প্রতিটি শিরায় যেন এক অদেখা টান অনুভব করছিল, যা তাকে পিয়ানোর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, এক অদৃশ্য শক্তি তাকে নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে আস্তে আস্তে তার ঘরের দরজা খুলে হলঘরের দিকে পা বাড়াল, প্রতিটি পদক্ষেপে তার হৃদপিণ্ড যেন কানে বাজছিল, তার রক্তচাপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। হলঘরে চাঁদের আবছা আলো এসে পড়েছে ভাঙা কাঁচের জানালা দিয়ে, লম্বা, ব্যাংকিং সাধুসন্ত কঙ্কালের হাতের মতো প্রশস্ত হয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেল , তাদের লম্বা, শীর্ণ, কঙ্কালসার আঙুলগুলো যেন তার গলা টিপে ধরতে চাইছে, তাকে টেনে নিতে চাইছে গভীর অন্ধকারে, যেখানে অনন্ত নিস্তব্ধতা, যেখানে কেবল আত্মার চিৎকার, আর যেখানে জীবিতের কোনো স্থান নেই, কেবল মৃতদের রাজত্ব, এক চিরন্তন নরক, এক অসহনীয় যন্ত্রণা, এক বীভৎসতা যা মানুষের কল্পনার বাইরে, যা তার স্বপ্নকেও তাড়া করবে। বাতাসে এক তীব্র পচাগন্ধ, যেন বহুদিনের পুরনো কোনো মৃতদেহ পিয়ানোর নিচে লুকিয়ে আছে, তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন বিষাক্ত হয়ে উঠেছে, তার ফুসফুস যেন জমাট বাঁধছে, তার শ্বাস নেওয়া যেন অসম্ভব হয়ে পড়ছিল, তার ফুসফুসে পচা পাতা আর কবরের মাটি ঢুকে পড়েছে, তার প্রতিটি শ্বাসে যেন মৃত্যু মিশে আছে, তার ফুসফুস যেন পচে যাচ্ছে, তার শরীর যেন পচে যাচ্ছে, তার অস্তিত্ব যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সে যেন জীবন্ত পচে যাচ্ছিল, তার চারপাশে যেন পোকামাকড়ের আনাগোনা, তাদের গুঞ্জনও যেন কানে বাজছিল, এক বীভৎস সিম্ফনি, যা তাকে আরও উন্মাদ করে তুলছিল। সে দেখল, পিয়ানোর পাশে একটি ছায়া মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। মূর্তিটি একজন মহিলার, তার পরনে পুরনো ভিক্টোরিয়ান পোশাক, যা বহু বছর ধরে কবরের নিচে চাপা পড়ে ছিল, তার ভাঁজে ভাঁজে জমেছিল শতবর্ষের ধুলো আর অতৃপ্ত আত্মার দীর্ঘশ্বাস, তার প্রতিটি সেলাই যেন এক পুরনো গল্পের নীরব সাক্ষী, এক ভয়াবহ ইতিহাসের প্রতীক। পোশাকের রঙ এখন বিবর্ণ, যেন সময়ের সাথে সাথে তার সব সৌন্দর্য বিলীন হয়ে গেছে, তার জীর্ণতা যেন এক প্রাচীন দুঃখের প্রতীক, এক নীরব আর্তনাদ, এক বিভীষিকা যা কালের গভীরে ডুবে আছে, তার প্রতিটি তন্তুতে যেন যন্ত্রণা মিশে আছে, যা তাকে স্পর্শ করতে চাইছে, তার আত্মাকে পীড়িত করতে চাইছে, তাকে নিজের কাছে টেনে নিতে চাইছে, তাকে চিরতরে বন্দি করতে চাইছে, তাকে অস্তিত্বহীন করে তুলতে চাইছে। মহিলাটির মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, শুধু একটি অস্পষ্ট, ধোঁয়াটে রূপ, যা ঘন কুয়াশার মতো মিলিয়ে যাচ্ছে আবার ফিরে আসছে, যেন তার অস্তিত্ব সময়ের গণ্ডিতে আটকে নেই, এক চিরন্তন দুঃস্বপ্ন, এক অবিরত যন্ত্রণা, এক বিভীষিকা যা তাকে পাগল করে দিতে পারে, তাকে নিজের কাছে টেনে নিতে পারে, তাকে চিরতরে গ্রাস করতে পারে, তাকে অস্তিত্বহীন করে তুলতে পারে, তার আত্মাকে ধ্বংস করতে পারে, তার মানসিক শান্তি কেড়ে নিতে পারে, তাকে এক জীবন্ত ফ্রিজে পরিণত করতে পারে। কিন্তু অর্ক অনুভব করল তার দৃষ্টি অর্কের দিকেই নিবদ্ধ, যেন এক অতৃপ্ত আত্মা বহু বছরের অপেক্ষার পর এক নতুন শিকার খুঁজে পেয়েছে, আর সেই শিকার অর্ক নিজে, যার জীবন এখন সেই আত্মার হাতের মুঠোয়, এক অলক্ষ্য জালে সে আটকা পড়েছে, আর তার পালানোর কোনো পথ নেই, কেবল আত্মসমর্পণ। তার মনে হলো, এলিজাবেথের নিষ্প্রাণ চোখ দুটো তাকে গভীর অন্ধকারে টানছে, এক অতল গহ্বরে, যেখানে কোনো আলো নেই, কেবল অনন্ত নিস্তব্ধতা, আর অগণিত মৃত আত্মার আর্তনাদ, তাদের শীতল শ্বাস তার কানের পাশে, তার মস্তিষ্কের ভেতরে, তাকে উন্মাদ করে দিচ্ছিল, তার sanity কেড়ে নিচ্ছিল, তাকে এক জীবন্ত নরকে পরিণত করছিল। ছায়া মূর্তিটি ধীরে ধীরে পিয়ানোর দিকে এগিয়ে গেল, যেন শূন্যে ভাসতে ভাসতে, কোনো অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা এক পুতুলের মতো, যার নড়াচড়ায় কোনো ওজন নেই, কোনো বাস্তবতা নেই, সে যেন বাতাসে মিশে আছে, তার প্রতিটি নড়াচড়া যেন বাতাসেরই অংশ, যা তাকে আরও অশরীরী করে তুলছে, আরও ভীতিময়, এক জীবন্ত দুঃস্বপ্ন, এক চলমান বিভীষিকা, এক অশুভ সত্তা, এক প্রেতাত্মা, এক ভয়ঙ্কর ছায়া, যা তার আত্মাকে গ্রাস করতে প্রস্তুত, তার চিরন্তন দাসে পরিণত করতে প্রস্তুত। তার পায়ের কোনো শব্দ নেই, শুধু বাতাসে এক শীতলতার ঢেউ বয়ে গেল, যা অর্কের শরীরের লোম খাড়া করে দিল, তার শিরায় শিরায় রক্ত যেন জমাট বাঁধতে শুরু করল, তার পুরো শরীর যেন অবশ হয়ে গেল, প্রতিটি স্নায়ু যেন অকার্যকর হয়ে পড়ল, সে যেন এক জীবন্ত মৃতদেহ, যা কেবল অনুভূতিহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে, মৃত্যুর অপেক্ষায়, তার আত্মাও যেন শরীর ছেড়ে চলে যেতে চাইছে, তাকে এক জীবন্ত নরকে রেখে, তার জীবনের শেষ নিঃশ্বাসের অপেক্ষায়, তার মৃত্যুর অপেক্ষায়, তার অন্তিম পরিণতির অপেক্ষায়, এক চিরন্তন অন্ধকার, এক অসীম শূন্যতা। আর তারপর সে পিয়ানোতে হাত রাখল। এবার পিয়ানোর সুর আরও স্পষ্ট, আরও করুণ হয়ে বাজতে শুরু করল, প্রতিটি নোট যেন তার হৃদয়ে বিঁধছিল, প্রতিটি শব্দ যেন তার আত্মাকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল। এটা এলিজাবেথের সুর, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বন্দি এক আত্মার আর্তনাদ, যা তার হৃদয়ের গভীরে আঘাত হানছিল, তার অস্তিত্বকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল, তাকে এক অকল্পনীয় যন্ত্রণায় ডুবিয়ে দিচ্ছিল, তার আত্মাকে পীড়িত করছিল, তাকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছিল। যে পিয়ানো বহু বছর ধরে অচল ছিল, সেই পিয়ানো থেকে প্রাণহীন, অভিশপ্ত সুর বেরিয়ে আসছে, যা তার আত্মাকে বিদ্ধ করছিল, যেন হাজারো ছুরির ফলা তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গে আঘাত হানছে, তাকে প্রতিটি মুহূর্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে, তাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে, তাকে এক জীবন্ত নরকে পরিণত করছে, যেখানে শান্তি নেই, কেবল যন্ত্রণা, এক অবিরত কষ্ট, এক অনন্ত নরক, এক বীভৎসতা যা মানুষের কল্পনার বাইরে, যা তার স্বপ্নকেও তাড়া করবে, তার নিদ্রাকেও কেড়ে নেবে, তার জীবনকে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে পরিণত করবে, তাকে এক নিরন্তর যন্ত্রণায় ডুবিয়ে দেবে, তার সত্তাকে পঙ্গু করে দেবে। সুরের সাথে সাথে ভিলার প্রতিটি কোণা থেকে এক অস্পষ্ট ফিসফিস শব্দ ভেসে আসতে লাগল, যেন হাজারো কণ্ঠস্বর এক সাথে তার নাম ধরে ডাকছে, “অর্ক… অর্ক…”, তাদের কণ্ঠস্বর যেন তার মস্তিষ্কের কোষে কোষে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, তাকে পাগল করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল, তার মানসিক ভারসাম্য কেড়ে নিচ্ছিল, তাকে এক ভয়াবহ উন্মাদনার দিকে ঠেলে দিচ্ছিল, তার চারপাশের বাস্তবতা যেন ভেঙে যাচ্ছিল, সে আর তার নিজের মনকে বিশ্বাস করতে পারছিল না, তার নিজের পরিচয় লুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল, সে কে তা ভুলে যাচ্ছিল, তার সত্তা বিলীন হয়ে যাচ্ছিল, তার অস্তিত্বই যেন মিথ্যা হয়ে উঠছিল, সে যেন এক জীবন্ত প্রেতাত্মা, একটি ফাঁকা খোলস, যা কেবল মৃত্যুর জন্য শ্বাস নিচ্ছে। হলঘরের পুরনো ঝাড়বাতিগুলো হঠাৎ তীব্রভাবে দুলতে শুরু করল, তাদের কাঁচের টুকরোগুলো থেকে এক ভয়ংকর, তীক্ষ্ণ, কাঁচ-ভাঙা শব্দ ভেসে আসছিল, যেন এক্ষুনি ভেঙে পড়বে, আর তাদের ছায়াগুলো দেওয়ালের উপর দৈত্যের মতো নাচছিল, তাদের ভয়ঙ্কর নৃত্য যেন তার মৃত্যুকে উপহাস করছিল, তাকে উপহাস করে হাসছিল, এক বিকৃত হাসি, যা তার মনকে ক্ষতবিক্ষত করছিল, তার আত্মাকে পীড়িত করছিল, তাকে এক গভীর শূন্যতায় ঠেলে দিচ্ছিল, তাকে এক অন্তহীন যন্ত্রণায় ডুবিয়ে দিচ্ছিল, তাকে এক অসহনীয় কষ্ট দিচ্ছিল, তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে নরক করে তুলছিল। চলবে….

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion