Episode 3803 words0 views

অনুরাগের বাঁধন: পর্ব ৩

নীরবতার এক নতুন খেলা: অদৃশ্য হুমকি ও মৃত্যুর হাতছানি রাহুলের এই নীরবতা সোনালীর মনে আরও প্রশ্ন তৈরি করল, এক অজানা ভয় তার হৃদয়কে গ্রাস করছিল, তাকে এক গভীর অস্থিরতায় ফেলে দিচ্ছিল, তার জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলছিল। সে বুঝতে পারছিল না, এই নীরবতা ভালোবাসার গভীরতা নাকি এক অজানা বিপদের পূর্বাভাস, যা তাদের জীবনকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে, তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারে, তাদের সুখকে চুরমার করে দিতে পারে, তাদের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিতে পারে, তাদের শান্তি কেড়ে নিতে পারে। রাহুলের চোখ দুটি যেন আরও গভীর, আরও রহস্যময় হয়ে উঠছিল, যেন সে এক ভিন্ন জগতের বাসিন্দা, যেখানে সোনালীর প্রবেশাধিকার নেই, যেখানে সোনালী শুধু একজন বহিরাগত, তার কাছে অজানা, এক অন্য জগতে বাস করত। তার স্পর্শেও মাঝে মাঝে একধরনের অস্থিরতা টের পেত সোনালী, যেন তার হাতের উষ্ণতাতেও এক লুকানো আতঙ্ক ছিল, যা সোনালীর আত্মাকে স্পর্শ করছিল, তাকেও সেই অজানা ভয়ের অংশীদার করে তুলছিল, তার জীবনকে প্রভাবিত করছিল, তাকে এক গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছিল, তার মনকে অশান্ত করে তুলছিল। তাদের নিবিড় মুহূর্তেও রাহুল যেন মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে যেত, তার মন যেন কোথাও দূরে চলে যেত, কোনো এক অন্ধকার কোণে, যেখানে সোনালীর প্রবেশ নিষেধ, যেখানে সে একা, একাকী, তার নিজের চিন্তায় ডুবে থাকত, তার নিজের সমস্যায় জর্জরিত। সোনালী অনুভব করত, রাহুলের শরীর তার পাশে থাকলেও, তার মন যেন হাজার মাইল দূরে, এক অজানা গোলকধাঁধার মধ্যে আটকে আছে, যা থেকে সে বের হতে পারছে না, যা তাকে আরও বেশি আবদ্ধ করে তুলছিল, তাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছিল, তার জীবনকে এক কারাগারে পরিণত করছিল। একদিন রাতে, সোনালী যখন বিছানায় ঘুমানোর চেষ্টা করছিল, একটি অদ্ভুত শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেল। তার ফোনের স্ক্রিন আলো হয়ে উঠল। একটি অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ এল। মেসেজটি ছিল শুধু একটি ছবি—গঙ্গার ঘাটে সোনালী আর রাহুলের সেই ভোরবেলার ছবি, যেখানে তারা একে অপরের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছিল, তাদের প্রথম চুম্বনের মুহূর্তের ঠিক আগের মুহূর্ত। ছবিটি খুব অস্পষ্ট ছিল, যেন দূর থেকে তোলা, কিন্তু তাদের দু’জনকে চিনতে সোনালীর এক মুহূর্তও লাগেনি। সোনালীর বুক কেঁপে উঠল, তার হৃদস্পন্দন দ্রুত থেকে দ্রুততর হলো, যেন হৃদপিণ্ডটা তার বুকের খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে আসবে, তার শ্বাসরোধ হচ্ছিল, তার সারা শরীর কাঁপছিল, তার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল, তার রক্তচাপ কমে গিয়েছিল। কে এই ছবি তুলল? কে এই মেসেজ পাঠাল? কেন? তার মনে এক শীতল ভয় নেমে এল, যেন এক অদৃশ্য হাত তার গলা টিপে ধরেছে, তার জীবনকে বিপদে ফেলছিল, তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিল, তার সব স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছিল, তার সব আশা শেষ করে দিচ্ছিল। সে তৎক্ষণাৎ রাহুলকে ফোন করল, তার হাত কাঁপছিল, তার গলায় স্বর আটকে আসছিল, কিন্তু রাহুলের ফোন ব্যস্ত ছিল। বারবার চেষ্টা করেও পেল না, তার উদ্বেগ বাড়তে থাকল, তার মন অস্থির হয়ে উঠল, তার শান্তি কেড়ে নেওয়া হলো। সোনালীর উদ্বেগ বাড়তে থাকল, সারা রাত তার ঘুম এল না, সে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিল, কিন্তু সময় যেন থমকে গিয়েছিল, যেন প্রতিটা সেকেন্ড এক একটা ঘণ্টা, এক অনন্ত সময়, যা শেষ হচ্ছিল না, যা তাকে আরও বেশি অস্থির করে তুলছিল। সে বিছানায় ছটফট করছিল, প্রতিটি ছায়া তাকে ভয় দেখাচ্ছিল, প্রতিটি শব্দ তার মনে আতঙ্ক তৈরি করছিল, তাকে এক গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছিল, এক পৈশাচিক পরিবেশে, যেখানে শুধু ভয় আর হতাশা ছিল। পরের দিন সকালে, সোনালী রাহুলকে মেসেজটি দেখাল। রাহুলের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, তার চোখ দুটি যেন রক্তশূন্য হয়ে গিয়েছিল, তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন অসাড় হয়ে গিয়েছিল, তার রক্তচাপ কমে গিয়েছিল, সে যেন এক জীবন্ত লাশ, তার জীবনের স্পন্দন কমে গিয়েছিল। তার চোখে এক মুহূর্তের জন্য যে ভয় সোনালী দেখতে পেল, তা তাকে আরও বিচলিত করে তুলল। “কোথা থেকে এল এটা?” রাহুল অস্থিরভাবে জিজ্ঞেস করল, তার গলায় এক গভীর আতঙ্ক, যেন সে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে, যা সত্যি হয়ে যাচ্ছে, তার জীবনকে গ্রাস করছে, তার সব কিছু কেড়ে নিচ্ছে, তাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। সোনালীর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে সে দ্রুত নম্বরটা চেক করল। “এটা তো একটা আননোন নম্বর। সম্ভবত কেউ আমাদের পেছনে লেগেছে।” তার গলার স্বরে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট, তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল, তার হাত কাঁপছিল, তার নিঃশ্বাস দ্রুত চলছিল, তার ভেতরে এক তীব্র ঝড় বইছিল। “কিন্তু কে? কেন? আমরা তো কাউকে বলিনি! আমাদের এই গোপন সম্পর্ক সম্পর্কে কেউ তো জানে না! কীভাবে জানল? এটা কি কোনো বন্ধু, না শত্রু?” সোনালী প্রশ্ন করল, তার চোখে ছিল তীব্র জিজ্ঞাসা, তার কণ্ঠে ছিল এক গভীর অভিযোগ, যা রাহুলের মনে আঘাত করছিল, তাকে আরও বেশি অপরাধী করে তুলছিল, তাকে নীরব করে দিল, তার ভেতরের সব অনুভূতি প্রকাশ হয়ে যাচ্ছিল। রাহুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি জানি না, সোনালী। তবে আমাকে ব্যাপারটা দেখতে হবে।” রাহুলের জবাবটা সোনালীর কাছে অসম্পূর্ণ মনে হলো। সে বুঝতে পারছিল রাহুল তাকে পুরো সত্যিটা বলছে না, তার ভেতরের অজানা এক জগত এখনো সোনালীর কাছে অধরা, এক দুর্ভেদ্য রহস্য যা তাকে ভয় দেখাচ্ছিল, তাকে আরও বেশি বিচলিত করছিল, তার শান্তি কেড়ে নিচ্ছিল, তার সব স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছিল। রাহুলকে সে ভালোবাসে, কিন্তু তার এই গোপনীয়তা সোনালীর মনে এক গভীর সন্দেহ তৈরি করছিল, যা তাদের ভালোবাসার উপর এক কালো মেঘের মতো ভাসছিল, যা যেকোনো মুহূর্তে তাদের সম্পর্ককে গ্রাস করতে পারত, তাদের জীবনকে অন্ধকারময় করে পারত, তাদের সুখ কেড়ে নিতে পারত, তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারত, তাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলত। চলবে……

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion