Episode 4953 words0 views

অনুরাগের বাঁধন: পর্ব ৪

অনুরাগের বাঁধন: পর্ব ৪ এক দীর্ঘ ও সাহসী প্রেমের গল্প এরপর থেকে সোনালী আরও সতর্ক হতে শুরু করল। সে লক্ষ্য করতে শুরু করল রাহুলের প্রতিটি গতিবিধি, প্রতিটি ছোটখাটো পরিবর্তন। রাহুল যখন ফোন করত, সোনালী লুকিয়ে তার কথা শোনার চেষ্টা করত, তার প্রতিটি শব্দ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করত, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসকে অনুভব করতে চাইত, প্রতিটি ইঙ্গিত ধরতে চাইত, প্রতিটি রহস্য ভেদ করতে চাইত, কিন্তু রাহুল এতটাই সতর্ক ছিল যে সে কিছুই বুঝতে পারত না, তার সব চেষ্টা ব্যর্থ হতো, তাকে হতাশ করে তুলত, তাকে আরও বেশি সন্দিহান করে তুলত, তাকে এক অজানা পথে ঠেলে দিচ্ছিল। সোনালীর মনে এক নতুন খেলা শুরু হলো, যেখানে সে রাহুলকে বোঝার চেষ্টা করছিল, তার ভেতরের গোপন জগতটাকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছিল, যেন সে এক গোয়েন্দা, যার একমাত্র লক্ষ্য হলো সত্য উন্মোচন করা, তার প্রিয় মানুষের রহস্য ভেদ করা, তার জীবনকে বোঝা, তার সব কিছু জানতে চাওয়া। তার ভালোবাসা তাকে এই অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিচ্ছিল, তাকে এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করছিল, এক অজানা বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, যা তাকে নিঃশেষ করে দিতে পারতো, তার সব স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারতো। একদিন সন্ধ্যায়, রাহুল তার অফিসের কাজ শেষ করে ফিরে এল, খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল তাকে, তার চোখে ছিল গভীর অবসাদ, তার শরীর যেন আর চলতে পারছিল না, তার মনও অবসাদে পূর্ণ ছিল, তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। সে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে গেল, তার শরীর অবসাদে ভরা ছিল, তার মন ছিল অস্থির, তার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল ভারী, তার ঘুম ছিল না। সোনালী দেখল, রাহুল তার বেডসাইড ড্রয়ারের দিকে বারবার তাকাচ্ছে, যেন সেখানে কিছু লুকানো আছে, যা তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, তার জীবনের রহস্য, তার বেঁচে থাকার কারণ, তার সব সুখ, তার অস্তিত্ব। কৌতূহল তাকে তাড়িত করল, এক অদম্য ইচ্ছা তাকে পরিচালিত করছিল, তাকে সেই গোপন রহস্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল, তাকে আবিষ্কারের পথে নিয়ে যাচ্ছিল, তার সব দ্বিধা দূর করে দিচ্ছিল, তাকে এক অজানা পথে নিয়ে যাচ্ছিল। সে সুযোগের অপেক্ষায় রইল, এক উপযুক্ত মুহূর্তের সন্ধানে, যখন রাহুল পুরোপুরি ঘুমের গভীরে হারিয়ে যাবে, যখন সে নিরাপদ থাকবে, যখন সে একা থাকবে, যখন কোনো ঝুঁকি থাকবে না। রাহুল যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তার নিঃশ্বাস শান্ত, সোনালী আলতো করে বিছানা থেকে উঠল। তার বুক ধড়ফড় করছিল, যেন হৃদপিণ্ডটা লাফিয়ে বেরিয়ে আসবে, এক তীব্র ভয় এবং উত্তেজনার মিশ্রণ তার রক্তে বইছিল, তাকে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা দিচ্ছিল, তাকে এক অজানা পথে নিয়ে যাচ্ছিল, তার সারা শরীর কাঁপছিল। সে ধীরে ধীরে রাহুলের ড্রয়ার খুলল, তার হাত কাঁপছিল, তার প্রতিটি স্পর্শ যেন এক নতুন রহস্যের উন্মোচন করছিল, এক নতুন সত্যের দরজা খুলছিল, এক অজানা জগতের দিকে ইশারা করছিল, এক অন্ধকার পথের দিকে। পুরোনো ডায়েরিটা সেখানেই ছিল, একটি বইয়ের নিচে লুকানো, যেন এটি নিজেই একটি গোপন রহস্য, যা কারো চোখে না পড়ে, যা সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায়নি, যা এতদিন অন্ধকারেই ছিল, যা তার জন্য অপেক্ষা করছিল। তার হাত কাঁপছিল যখন সে ডায়েরিটা বের করল। সে দ্রুত ডায়েরির পাতা ওল্টাতে শুরু করল, তার চোখগুলো প্রতিটি শব্দ স্ক্যান করছিল, প্রতিটি অক্ষরে সে রহস্য খুঁজছিল, প্রতিটি পৃষ্ঠায় সে রাহুলের জীবনের এক ঝলক দেখতে পাচ্ছিল, তার অতীতকে জানতে পারছিল, তার জীবনকে বুঝতে পারছিল। প্রথম দিকের পাতাগুলোতে ছিল সাধারণ কিছু লেখা, কিছু স্বপ্ন, কিছু পরিকল্পনা, যা যেকোনো সাধারণ মানুষের ডায়েরিতে থাকে, যা সোনালীর পরিচিত রাহুলকে তুলে ধরছিল, তার সাধারণ জীবনকে প্রকাশ করছিল। কিন্তু ভেতরের দিকে যেতেই সোনালী এমন কিছু দেখল যা তাকে স্তম্ভিত করে দিল, তার শরীর হিমশীতল হয়ে গেল, যেন এক বরফখণ্ড তার উপর নেমে এসেছে, তার সমস্ত অনুভূতি অসাড় হয়ে গিয়েছিল, তার বিশ্ব ভেঙে যাচ্ছিল, তার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছিল। ডায়েরির পাতায় কিছু নাম, কিছু তারিখ, আর কিছু অস্পষ্ট সংকেত লেখা ছিল, যেন কোনো গুপ্তলিপি, যা এক ভয়ংকর সত্যের ইঙ্গিত দিচ্ছিল, এক অন্ধকার জগতের কথা বলছিল, যেখানে রাহুল হারিয়ে গিয়েছিল, যা তার কাছে এক বিশাল রহস্য। কিছু শব্দ ছিল যা সোনালী চিনতে পারছিল না, যেন কোনো কোড ল্যাঙ্গুয়েজ, যা কোনো গোপন জগতের ভাষা, যা রাহুলের অন্ধকার অতীতকে ইঙ্গিত করছিল, এক অচেনা জগত, যেখানে রাহুল হারিয়ে গিয়েছিল, যা তার কাছে এক বিশাল রহস্য, যা তাকে ভয় দেখাচ্ছিল। আরও কিছু পাতায় লেখা ছিল, “বিপদ ঘনিয়ে আসছে,” “পালিয়ে যেতে হবে,” “ওরা সব জেনে গেছে,” “আর কোনো উপায় নেই।” কিছু স্থানে একটি বিশেষ লোগো আঁকা ছিল, একটি কালো উলফ মাস্কের ছবি। সোনালীর মনে পড়ল, একদিন রাহুলকে একটি কালো উলফ মাস্কের লকেট পরতে দেখেছিল, কিন্তু সে ভেবেছিল ওটা রাহুলের স্টাইল, এক সাধারণ ফ্যাশন। এখন তার মনে হলো, ওটা হয়তো কোনো সংকেত, এক গোপন সংস্থার প্রতীক, যা রাহুলের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যা তার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে একটি পুতুলের মতো নাচায়, তাকে নিঃশেষ করে দেয়, তার সব স্বপ্ন ভেঙে দেয়। সোনালীর হাত কাঁপতে শুরু করল, ডায়েরিটা তার হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল, যেন সেটি কোনো বিষাক্ত বস্তু, যা তাকে গ্রাস করতে চাইছে, তার জীবন কেড়ে নিতে চাইছে, তার সব স্বপ্ন ভেঙে দিতে চাইছে, তার অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে চাইছে। কে ‘ওরা’? কিসের বিপদ? তার চোখের সামনে রাহুলের পরিচিত মুখটা যেন অচেনা মনে হতে লাগল, যেন সে কোনো ভিনগ্রহের মানুষকে দেখছে, যার সাথে তার কোনো পরিচয় নেই, যাকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না, তার সব বিশ্বাস ভেঙে গিয়েছিল। সে রাহুলকে যতটা চেনে, তার চেয়েও যেন অনেক বেশি কিছু অজানা রয়েছে, এক অন্ধকার দিক যা রাহুলের জীবনের একটি বড় অংশ, যা তাকে সম্পূর্ণ অজানা করে তুলছিল, তাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছিল, তাকে হতাশ করে তুলছিল, তাকে একাকী করে তুলছিল। তার মনের গভীরে এক প্রবল ঝড় বইতে লাগল, তার ভেতরের সব অনুভূতি তোলপাড় হতে লাগল, তাকে এক চরম অনিশ্চয়তায় ফেলে দিচ্ছিল, তাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছিল, তার জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলছিল। এই মানুষটাকে সে ভালোবাসে, তার সাথে এক নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখেছে, অথচ সে তাকে কত বড় রহস্য থেকে আড়াল করে রেখেছে! এই গোপনীয়তা কি তাদের ভালোবাসাকে ভেঙে দেবে, তাদের সম্পর্ককে ছিন্নভিন্ন করে দেবে, তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেবে, তাদের জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে? সোনালী বুঝতে পারছিল না কি করবে, তার পৃথিবী যেন মুহূর্তের মধ্যে উল্টে গিয়েছিল, তার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছিল, তাকে এক গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছিল, এক নতুন পথে যেতে বাধ্য করছিল, এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছিল, যা তার জীবন বদলে দেবে। চলবে…..

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion