নতুন বিপদ ও কঠিন পথ: প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুভয় ও পাশবিক হুমকি
রাহুলের অতীত যখন তাদের বর্তমানকে গ্রাস করতে শুরু করল, সোনালী আর রাহুলকে আরও সতর্ক হতে হলো। ‘দ্য শ্যাডো উলফস’ সংগঠনের লোকরা তাদের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দিল, তাদের জীবনকে hell করে তুলছিল, তাদের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বিপদে পূর্ণ, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল ঝুঁকির মুখে, প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল তাদের নজরদারিতে, তাদের প্রতিটি গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। অপরিচিত ফোন কল, তাদের বাড়ির সামনে সন্দেহজনক গাড়ি, এমনকি সোনালীর অফিসেও অদ্ভূত ঘটনার সূত্রপাত হলো – তার কম্পিউটারে হ্যাক করার চেষ্টা, ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়া, সহকর্মীদের কাছে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, যা তার সম্মান নষ্ট করতে পারতো, তার কর্মজীবন শেষ করে দিতে পারতো, তাকে সামাজিকভাবে কোণঠাসা করতে পারতো। সোনালীর সহকর্মীরাও যেন তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করল, তাদের চোখে ছিল এক অদ্ভূত ভয়, যেন সোনালীও তাদের কাছে এখন বিপদের প্রতীক, এক অশুভ বার্তা, যা থেকে তারা দূরে থাকতে চাইছিল, তাদের থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল, সোনালীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। সোনালী বুঝতে পারল, রাহুলের বিপদ একা রাহুলের নয়, এই বিপদ এখন তাদের দুজনের জীবনকে গ্রাস করছে, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের নিঃশ্বাসকেও, তাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলছে, তাদের সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে, তাদের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে।
একদিন সন্ধ্যায়, সোনালী যখন তার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে এল, দরজার সামনে একটি কালো খাম দেখতে পেল। তাতে কোনো নাম বা ঠিকানা লেখা ছিল না, শুধু একটি কালো উলফ মাস্কের ছোট স্টিকার লাগানো ছিল, যা দেখেই সোনালীর সারা শরীর হিম হয়ে গেল, তার হৃদপিণ্ড যেন থেমে গিয়েছিল, তার রক্তচাপ কমে গিয়েছিল, সে যেন এক জীবন্ত লাশ, তার জীবনের স্পন্দন কমে গিয়েছিল। সোনালীর হাত কাঁপছিল যখন সে খামটি খুলল। ভেতরে ছিল সোনালীর পরিবারের ছবি, তার ভাই-বোনের ছবি, এমনকি তার বাবা-মায়েরও। প্রতিটি ছবি ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট, যা ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে তাদের উপর খুব কাছ থেকে নজর রাখা হচ্ছে, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করা হচ্ছে, তাদের ব্যক্তিগত জীবন তাদের কাছে খোলা বই, তাদের কোনো গোপনীয়তা নেই, তাদের সবকিছু প্রকাশ হয়ে যাচ্ছিল। ছবির নিচে রক্তিম অক্ষরে লেখা ছিল, “তুমি যদি রাহুলের সাথে সম্পর্ক না ছাড়ো, তবে তোমার প্রিয়জনদের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে তুমি এর মূল্য দেবে। তাদের মৃত্যু হবে ধীর এবং যন্ত্রণাদায়ক। আর যদি সাহস দেখাও, তবে তুমিও তাদের মতো পরিণতি ভোগ করবে, তার চেয়েও ভয়ংকর কিছু, যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না, যা তোমার জীবনকে নরক করে তুলবে, যা তোমাকে চিরতরে শেষ করে দেবে।” সোনালীর বুক শুকিয়ে গেল, তার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছিল না, তার সারা শরীর অসাড় হয়ে গেল, যেন সে এক পাথর হয়ে গিয়েছিল, এক জীবন্ত লাশ। এটা শুধু রাহুলের জন্য হুমকি নয়, এখন তার পরিবারও বিপদে, তাদের জীবনও ঝুঁকিতে, তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন, তাদের সামনে শুধু অন্ধকার, তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারময়, তাদের সব আশা শেষ।
সে তক্ষুনি রাহুলকে ফোন করল, তার গলায় ছিল আতঙ্ক, তার শ্বাস দ্রুত চলছিল, তার প্রতিটি শব্দে ছিল ভয়, তার কণ্ঠস্বর আবেগে কেঁপে উঠছিল, তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল, তার শরীর কাঁপছিল। রাহুল দ্রুত তার অ্যাপার্টমেন্টে ছুটে এল। ছবিগুলো দেখে রাহুলের মুখ আরও কঠিন হয়ে উঠল, তার চোখে ছিল এক গভীর হতাশা, যা সোনালীর মনকে বিদ্ধ করছিল, তাকে আরও বেশি অসহায় করে তুলছিল, তার সব আশা ভেঙে দিচ্ছিল, তাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছিল, তাকে নীরব করে দিল। “ওরা আমার সব দুর্বলতা জানে,” রাহুল বলল, তার গলায় ছিল এক গভীর যন্ত্রণার সুর, “আমি ওদের কাছ থেকে বাঁচতে চেয়েছিলাম, কিন্তু মনে হচ্ছে তা সম্ভব নয়। ওরা এতটাই শক্তিশালী, ওরা যেকোনো কিছু করতে পারে, ওদের কোনো সীমা নেই, ওদের কাছে কোনো নীতি নেই, ওদের কাছে মানুষের জীবন তুচ্ছ, ওদের কাছে আবেগ অর্থহীন।” রাহুলের চোখে ছিল গভীর হতাশা, সে জানত, এই প্রভাবশালী চক্র কতটা ভয়ংকর হতে পারে। তারা সবকিছু করতে পারে, এমনকি নিরীহ মানুষের জীবনও নিতে দ্বিধা করে না, তাদের কোনো মানবতা নেই, কোনো দয়া নেই, তারা এক পৈশাচিক রূপ ধারণ করেছিল, এক দানবীয় শক্তি, এক অন্ধকার শক্তি।
সোনালী তার হাত ধরল, তার চোখে ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, এক অদম্য শক্তি, যা তাকে নতুন করে বাঁচতে শেখাচ্ছিল, তাকে সাহস দিচ্ছিল, তাকে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করছিল, তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। “আমরা পালাব না, রাহুল। আমরা কোনোদিনও হার মানবো না। এখান থেকে অনেক দূরে, যেখানে ওরা আমাদের খুঁজে পাবে না, আমরা লড়ব, শেষ পর্যন্ত লড়ব, আমাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ব, আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়ব।” তার কণ্ঠস্বরে ছিল এক তীব্র আবেগ, এক নতুন শক্তি, যা তাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করছিল, তাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করছিল, তাদের আত্মাকে একীভূত করছিল।
রাহুল মাথা নাড়ল, তার চোখে ছিল গভীর ক্লান্তি, তার শরীর যেন আর সইতে পারছিল না, তার মনও ভেঙে যাচ্ছিল, তার সব আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল, তার বেঁচে থাকার ইচ্ছা চলে গিয়েছিল। “পালিয়ে যাওয়া সহজ নয়, সোনালী। ওরা সারা পৃথিবী জুড়ে জাল বিছিয়ে রেখেছে। এক জায়গা থেকে বাঁচলেও, অন্য কোথাও ওরা ঠিক খুঁজে বের করবে। তার চেয়ে বরং আমরা আত্মসমর্পণ করি, ওরা হয়তো আমাদের বাঁচতে দেবে, শুধু আমাদের জীবনটা নিয়ে খেলবে, কিন্তু তোমাকে আর তোমার পরিবারকে ছেড়ে দেবে, এটাই হয়তো আমাদের একমাত্র পথ, এটাই আমাদের শেষ আশা, আমাদের জীবনের শেষ উপায়।”
সোনালীর মনে সেই ভয়ংকর চিন্তাটি এলো। আত্মসমর্পণ? না, সে কিছুতেই হার মানবে না, রাহুলকে একা ছাড়বে না। তাদের সামনে তখন কঠিন এক সিদ্ধান্ত। হয় তারা এই সম্পর্কের বাঁধন ছিঁড়ে ফেলবে, নয়তো এক অজানা এবং বিপজ্জনক ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াবে, এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শুরু করবে, যেখানে জীবন-মৃত্যু খেলা করবে, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত ছিল অনিশ্চিত, প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল মৃত্যুর দিকে। কিন্তু ভালোবাসার টান এত সহজে ছিন্ন করার নয়। সোনালী আর রাহুল একে অপরের চোখে তাকিয়ে সেই উত্তর খুঁজে পেল – তারা একসাথে এই বিপদ মোকাবেলা করবে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত, তাদের ভালোবাসার জন্য, তাদের জীবনের জন্য, তাদের আত্মসম্মানের জন্য, তাদের স্বাধীনতার জন্য, তাদের অস্তিত্বের জন্য, তাদের স্বপ্নের জন্য।
চলবে……..
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion