Episode 7798 words0 views

অনুরাগের বাঁধন : পর্ব ৭

আত্মহনন নাকি আত্মসমর্পণ?: চরম পরীক্ষা ও ভালোবাসার অগ্নিপরীক্ষা দিনের পর দিন তাদের উপর চাপ বাড়তে থাকল। ‘দ্য শ্যাডো উলফস’ এর লোকরা তাদের আরও বেশি করে হুমকি দিতে শুরু করল। ফোন কলগুলো আরও বেশি ভয়ংকর হতে শুরু করল, যেখানে সরাসরি মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হচ্ছিল, এমনকি তাদের প্রতিটি ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল, যা তাদের সামাজিক সম্মান নষ্ট করতে পারতো, তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারতো, তাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলতো, তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারতো। কখনও তাদের উপর শারীরিক হামলার হুমকি, কখনও সোনালীর পরিবারের সদস্যদের জীবন বিপন্ন করার হুমকি, যা তাদের মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল, তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছিল, তাদের প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্ক গ্রাস করছিল, তাদের শান্তি কেড়ে নিচ্ছিল, তাদের জীবনকে hell করে দিচ্ছিল। সোনালী আর রাহুলকে প্রতিনিয়ত নিজেদের লুকিয়ে রাখতে হচ্ছিল, তারা একে অপরের ছায়া হয়ে গিয়েছিল, যেন তারা এক শরীর, দুই আত্মা, এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা এক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে অন্য অ্যাপার্টমেন্টে পালাচ্ছিল, প্রতিটি নতুন ঠিকানা ছিল সাময়িক আশ্রয়, প্রতিটি স্থান ছিল তাদের জন্য এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র, এক অজানা বিপদ, যা তাদের অনুসরণ করছিল, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ লক্ষ্য করছিল। কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন দেয়ালেরও কান আছে, শহরের প্রতিটি কোণায় যেন ওদের চোখ, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ নজর রাখা হচ্ছে, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস তাদের নিয়ন্ত্রনে ছিল, তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের জীবন যেন একটি বন্দীশালায় পরিণত হয়েছিল, যেখানে তারা বন্দী ছিল, মুক্তির কোনো আশা ছিল না, শুধু অন্ধকার। তাদের রাতে ঘুম আসত না, দিনের বেলায়ও তারা সন্ত্রস্ত থাকত, প্রতিটি অচেনা মুখ তাদের কাছে শত্রু মনে হতো, তাদের পৃথিবী যেন সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল, এক অন্ধ কারাগারে পরিণত হয়েছিল, যেখানে তারা বন্দী ছিল, মুক্তির কোনো আশা ছিল না, শুধু হতাশা। এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল। তাদের শরীরের উপর চাপ যেমন বাড়ছিল, তেমনি মানসিক চাপও চরমে পৌঁছেছিল। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল এক অগ্নিপরীক্ষা, তাদের ভালোবাসার পরীক্ষা, তাদের আত্মিক শক্তির পরীক্ষা, তাদের সহ্যশক্তির পরীক্ষা। রাহুল খুব বিচলিত হয়ে সোনালীর কাছে এল। তার মুখে এক গভীর হতাশা, চোখে ছিল ক্লান্তি আর অসহায়তা, তার শরীর কাঁপছিল, তার গায়ে জ্বর আসছিল, সে আর সইতে পারছিল না, তার সব শক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল, তার বেঁচে থাকার ইচ্ছা চলে গিয়েছিল, তার মন ভেঙে গিয়েছিল। “আমি আর পারছি না, সোনালী,” রাহুল বলল, তার গলায় ছিল এক গভীর যন্ত্রণার সুর, এক তীব্র আর্তনাদ, যা সোনালীর হৃদয় বিদ্ধ করছিল, তার আত্মাকে আঘাত করছিল, তাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছিল, তাকে নীরব করে দিচ্ছিল। “আমি তোমাকে বিপদে ফেলতে চাই না। আমার মনে হয়, আমাদের সম্পর্ক শেষ করে দেওয়া উচিত। আমার সাথে থাকলে তুমিও বিপদে পড়বে, তোমার পরিবারেরও ক্ষতি হবে, তাদের জীবনও ঝুঁকিতে পড়বে, আর আমি তা চাই না, আমি তোমাকে হারাতে চাই না, আমি তোমাকে বিপদমুক্ত রাখতে চাই।” তার চোখ দুটি জলে ভরে উঠল, তার প্রতিটি শব্দে ছিল অসহায়তা, তার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল সে আর এক মুহূর্তও বাঁচবে না, তার সব শক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল, তার বেঁচে থাকার ইচ্ছা চলে গিয়েছিল, তার শেষ নিঃশ্বাস ফেলার মতো অবস্থা ছিল। সোনালীর হৃদয় ভেঙে গেল। সে রাহুলকে এত গভীরভাবে ভালোবাসে, আর এখন রাহুল তাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছে, তাকে একা ফেলে যেতে চাইছে এই কঠিন পরিস্থিতিতে। “কেন এমন বলছ, রাহুল? তুমি আমাকে একা ছেড়ে যাবে? তুমি জানো, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। আমার জীবন তুমি, আমার অস্তিত্ব তুমি, আমার সব তুমি, আমার পৃথিবী তুমি, আমার সবকিছু তুমি।” সোনালীর চোখ জলে ভরে উঠল, তার কণ্ঠস্বর আবেগে কেঁপে উঠল, তার প্রতিটি শব্দে ছিল অসীম ভালোবাসা আর আকুতি, যা রাহুলকে থামিয়ে দিল, তাকে ভাবতে বাধ্য করল, তাকে নতুন করে শক্তি জোগাল, তাকে সাহস দিল। “আমাকে ছেড়ে থাকলে তুমি নিরাপদ থাকবে, সোনালী,” রাহুল বলল, তার চোখেও জল, “আমি চাই না আমার কারণে তোমার কোনো ক্ষতি হোক। আমি তোমাকে ভালোবাসি, সোনালী, আর সেই ভালোবাসার জন্য আমি তোমাকে মুক্তি দিতে চাই। আমি ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করব, ওরা হয়তো তোমাকে ছেড়ে দেবে, আমার জীবনের বিনিময়ে, আমার রক্তের বিনিময়ে, আমার সবকিছুর বিনিময়ে, এটাই আমাদের শেষ পথ, আমাদের শেষ সংগ্রাম।” তার প্রতিটি শব্দে ছিল আত্মত্যাগের দৃঢ়তা, এক গভীর বেদনা, এক তীব্র আত্মাহুতি, এক মহান সিদ্ধান্ত, যা সে সোনালীর জন্য নিতে প্রস্তুত ছিল, তার ভালোবাসার জন্য। সোনালী মাথা নাড়ল, তার চোখে ছিল দৃঢ়তা, এক নতুন শক্তি তার মধ্যে জেগে উঠেছিল, এক অদম্য সাহস, এক অসীম বিশ্বাস, যা তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তাকে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করছিল। “আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না, রাহুল। আমি জানি তুমি আমার জীবন। আমি তোমার সাথে আছি, যে কোনো পরিস্থিতিতে। আমি এই পরিস্থিতি থেকে তোমাকে মুক্তি দেবো। আমরা লড়ব, রাহুল। আমরা কোনোদিন আত্মসমর্পণ করব না, কোনোদিনও হার মানবো না। আমরা একসাথে এই চক্রকে ধ্বংস করব, তাদের সাম্রাজ্য ভেঙে দেবো, তাদের পতন ঘটিয়ে ছাড়ব, তাদের শেষ করে দেবো, তাদের অস্তিত্ব বিলীন করে দেবো।” সোনালীর গলায় ছিল এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, এক নতুন শক্তি। সে বুঝতে পারছিল, এই লড়াই একা রাহুলের নয়, এটা তাদের দুজনের লড়াই, তাদের ভালোবাসার লড়াই, তাদের অস্তিত্বের লড়াই, তাদের স্বাধীনতার লড়াই, তাদের জীবনের চূড়ান্ত পরীক্ষা, তাদের বেঁচে থাকার লড়াই। সে রাহুলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, যেন তার সমস্ত শক্তি রাহুলকে দিতে চায়, যেন তারা একে অপরের পরিপূরক, এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, এক অটুট বন্ধনে, যা কোনোদিনও ভাঙবে না, যা তাদের চিরদিনের জন্য এক করে দেবে। চলবে……

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion