Episode 13281 words1 views

ত্রয়োদশ অধ্যায়: ছায়া-গ্রাহক

অন্ধকারের মধ্যেই রাতুল শুনতে পেলো। একটা হিসহিস শব্দ। আর সেই তীব্র রাসায়নিকের গন্ধ। তারপর সে দেখলো। কালীপদর কঙ্কালটা নড়ে উঠলো। ওটা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াচ্ছে। "তুমি আমায় মুক্ত করেছো," একটা ভাঙা, খসখসে গলা কঙ্কালটার ভেতর থেকে ভেসে এলো। "অমিশার বাঁধন থেকে। ধন্যবাদ।" কঙ্কালটা তার দিকে হাত বাড়ালো। "এবার তোমার পালা। আমার নতুন 'ক্যামেরা' হওয়ার পালা।" "রাতুল! সরে এসো!" পরান ডোমের চিৎকার শোনা গেলো। পরান তার ঝোলা থেকে দেশলাই বের করে কর্পূরের একটা বড় তাল জ্বালালো। কর্পূরের আলোয় ঘরটা ভরে উঠলো। সেই আলোয় রাতুল দেখলো, কঙ্কালটা একাই নয়। তার পেছনে, দেয়ালের ওপর, একটা বিশাল ছায়া দুলছে। কালীপদর সেই 'ছায়া-পুরুষ'। ওটা আর কঙ্কালের সাথে বাঁধা নেই। ওটা এখন মুক্ত। "আগুন!" কালীপদর আত্মা চিৎকার করে উঠলো। "আলো আমার শত্রু!" ছায়া-পুরুষটা কর্পূরের আলোর দিকে এগিয়ে এলো। "এবার!" পরান চিৎকার করলো। "যন্ত্রের ওপর গঙ্গার জল ছিটিয়ে দাও!" রাতুল মাটির কলসি থেকে গঙ্গার জল নিয়ে সেই রক্তের আঁকা যন্ত্রটার ওপর ছিটিয়ে দিলো। ছ্যাঁৎ করে একটা শব্দ হলো। যেন গরম তাওয়ায় জল পড়েছে। যন্ত্রটা থেকে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করলো। কালীপদর কঙ্কালটা যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলো। "না! আমার বেদি!" ছায়া-পুরুষটা এবার রাতুলের দিকে ধেয়ে এলো। "পরান দাদু!" "পেরেকগুলো নাও!" পরান বললো। "যন্ত্রের পাঁচটা কোণে পুঁতে দাও! তাড়াতাড়ি!" রাতুল পকেট থেকে লোহার পেরেকগুলো বের করলো। ছায়াটা তার ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। একটা বরফ-ঠান্ডা নিঃশ্বাস। রাতুলের শরীর অবশ হয়ে আসছিল। সে হাতুড়ি দিয়ে প্রথম পেরেকটা যন্ত্রের একটা কোণে পুঁতলো। দ্বিতীয়টা। তৃতীয়টা। ছায়াটা তাকে প্রায় ধরেই ফেলেছে। সে দেখলো, তার নিজের হাতটা কেমন স্বচ্ছ হয়ে যাচ্ছে। "চতুর্থ!" সে চিৎকার করে পুঁতলো। আর ঠিক তখনি ছায়াটা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। রাতুল মাটিতে পড়ে গেলো। তার মনে হলো, সে যেন বরফ-জলে ডুবে যাচ্ছে। "রাতুল! সাদা কাগজগুলো! যন্ত্রের মাঝখানে!" পরানের গলা ভেসে এলো। রাতুল কোনোমতে হামাগুড়ি দিয়ে ফটোগ্রাফিক পেপারের প্যাকেটটা সেই যন্ত্রের মাঝখানে ছুঁড়ে দিলো।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion